সিন্ধি লোককাহিনী لوڪ ڪهاڻيون |
---|
এই নিবন্ধটি সিরিজের অংশ |
সিন্ধি |
নূরী জাম তামাচি (সিন্ধি: نوري ڄام تماچي ) যুবরাজ জাম তামাচি সর্ম্পকে একটি বিখ্যাত গল্প, যে গল্পে জাম তামাচি নূরী নামের এক অপূর্ব জেলে কন্যার প্রেমে পরেছিলেন। নূরী তার যথাযথ বশ্যতা স্বীকার ও আনুগত্যের মাধ্যমে জামকে সুখী করেছিল এবং এই কারণেই সে জামের অন্য ছয় রাণীর উপর স্থান করে নিতে পেরেছিল।[১]
গল্পটি শাহ জো রিসালোতেও বর্নিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের জনপ্রিয় সাতটি বিয়োগান্ত প্রেমের ঘটনার অংশ হয়ে রয়েছে। অন্য ছয়টি গল্প হলো উমর মারভি,সাসি পুনহুন, সোহনি মেহার, লিলান চানেসার, সোরাথ রায় দিয়াচ এবং মূমল রনো এগুলো সাধারন ভাবে সিন্ধের সাত রানী কিংবা শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাইয়ের সাত নায়িকা হিসেবে পরিচিত।
উপরের গল্পগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র এই গল্পটিতে ভালবাসা এবং সুখ পূর্ণতা পেয়েছে, আর অন্য গল্পগুলোতে আছে ভালবাসার যন্ত্রণা এবং ভালবাসার মানুষকে অসহায়ভাবে খোজাঁখুজিঁর ঘটনা।
জাম তামাচি ছিলেন একজন সাম্মা যুবরাজ, পাকিস্তানের, সিন্ধের থাহটা এলাকার শাসক। ঝেররুক এবং থাহটার মাঝখানে তিনটি হ্রদ আছে, এগুলো হল কীনঝার, ছোলমারী এবং সোনাহরি। কীনঝারের তীরে, পুরনো জেলে পাড়ার চিহ্ন হিসেবে ভাঙ্গা দেয়াল এখনও দেখা যায়। জেলে গোত্রের মেয়ে নূরী জাম তামাচির মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল এবং জাম তামাচি পাগলের মত তার প্রেমে পরে গিয়েছিলেন। তার রাজবংশীয় অন্য স্ত্রীদের উপরে নূরীর স্থান দিয়েছিলেন। অন্য ছয় জন রানী এতে ঈর্ষায় ভুগতে থাকেন এবং যুবরাজ তামাচির কাছে নূরীর বিরুদ্বে বিষোদগার করতে থাকেন। তারা বলেন নূরী তার ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ছোট কাঠের বাক্সে না না রকম রত্ন তার গ্রামে পাচার করছেন। যুবরাজ একদিন নিজে দেখতে চান এবং দেখতে পান এ বাক্সে কিছু রুটি আর মাছের কাটা। জানতে চাইলে নূরী জানায় রাজ প্রাসাদের এত দামী খাবারে তার তৃপ্তি না হওয়ায়, তার অনুরোধে তার মা কিছু রুটি আর মাছ পাঠিয়ে দিত। কিন্তু যুবরাজ মনে কষ্ট পাবেন মনে করে সে ব্যাপারটি গোপন করে এবং রাজ প্রাসাদের কেউ যেন না জানে সে কারণে উচ্ছিষ্টগুলো বাক্সে করে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিত। যুবরাজ অভিভূত হয়ে যান এবং এর পর থেকে কখনও আর নূরীকে অবিশ্বাস করেন নি। [২] নূরীকে তার গোত্রের পদবী গানদ্রি বলেও ডাকা হতো।
এই কিংবদন্তি অসংখ্যবার বলা হয় এবং সূফীদের স্বর্গীয় ভালবাসা বর্ণনা করার জন্য এই গল্প প্রায়ই উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর সবচেয়ে সুন্দর তরজমা পাওয়া যায় শাহ আবদুল লতিফ ভিটাইয়ের শাহ জো রিসালোর কাব্যিক সংক্ষিপ্তসারে।
এই কাহিনী দিয়ে শাহ এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, নম্রতা আসলে তার সৃষ্টিকর্তার মহিমাকেই তুলে ধরে।[৩]
কিংবদন্তি অনুযায়ী, পাকিস্তানের কীনঝার হ্রদের মাঝখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। কথিত আছে যে, এখানেই যুবরাজ তামাচির নূরীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়।[২] তার এই অন্তিম সমাধি প্রতিদিন শত শত পর্যটক দেখতে আসে।