শায়খুল হাদিস, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী | |
---|---|
মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ | |
অফিসে ১৫ নভেম্বর ২০২০ – ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | |
পূর্বসূরী | জুনায়েদ বাবুনগরী |
উত্তরসূরী | নুরুল ইসলাম জিহাদী |
সহ সভাপতি, আল হাইআতুল উলয়া | |
অফিসে ৩ অক্টোবর ২০২০ – ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | |
পূর্বসূরী | আব্দুল কুদ্দুস |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ ওয়াক্কাস |
মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ | |
অফিসে ৭ নভেম্বর ২০১৫ – ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | |
পূর্বসূরী | মুহাম্মদ ওয়াক্কাস |
উত্তরসূরী | মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী |
মহাপরিচালক, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা | |
অফিসে ১৯৮৮ – ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | |
উত্তরসূরী | মুনির হোসাইন কাসেমী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১০ জানুয়ারি ১৯৪৫ চড্ডা, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা জেলা |
মৃত্যু | ১৩ ডিসেম্বর ২০২০(৭৫) ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
সন্তান |
|
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদিস, ফিকহ, তাসাউফ, রাজনীতি, শিক্ষা সংস্কার, ইসলামের ইতিহাস |
উল্লেখযোগ্য কাজ | |
যেখানের শিক্ষার্থী | |
মুসলিম নেতা | |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
নূর হুসাইন কাসেমী (১০ জানুয়ারি ১৯৪৫ — ১৩ ডিসেম্বর ২০২০) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় বক্তা। তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ইসলামি নেতা হিসেবে মুসলিম জনসাধারণের মাঝে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।
কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল ওয়াদুদ। [১]
বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে চতুর্থ শ্রেনী শেষ করে চড্ডার কাশিপুর কাশেমুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হন বরুডার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায়। এখানে হেদায়া জামাত (স্নাতক ২য় বর্ষ) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। [২]
এরপর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার উদ্দেশ্যে ভারতে গমন করেন। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ভর্তি হন ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায়। এখানে জামাতে জালালাইন (স্নাতক) সমাপ্তির পর দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান। দেওবন্দ মাদ্রাসায় তার অধ্যয়নকাল মোট ৩ বছর। এখানে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্তির পর আরবি সাহিত্য ও দর্শনে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। [২]
তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী, আনজার শাহ কাশ্মীরি, ফখরুদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী, মুহাম্মদ সালেম কাসেমি, তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি। [২]
ভারতের মজঃফরনগর জেলায় অবস্থিত মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুরাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। এখানে ১ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় চলে যান। এখানে তিনি ৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ছাত্রাবাস পরিচালক ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি কাজী মুতাসিম বিল্লাহ প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে চলে আসেন। এখানে তার অধ্যাপনাকাল মোট ৬ বছর। [২]
এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং ১৯৯৮ সালে জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। [২]
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। [৩] আইন অনুসারে একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। [৪]
২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন। [৫][৬]
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [২]
১৯৭৫ সালে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন এবং ৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে তিনি এর মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৩ ডিসেম্বর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর দেশব্যাপী সংগঠন বিস্তৃত লাভ করে। [২][৭]
ভারতের মুরাদিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে তিনি মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির কাছে বাইআত গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহীর নিকট বায়’আত হন এবং খেলাফত [ক] লাভ করেন। কাসেমীর খলিফা [খ] মোট ৭ জন। ১.মাওলানা ইছহাক, মানিকনগর ২. মাওলানা বশির আহমদ, সৈয়দপুর ৩. মাওলানা মাসউদুল করীম, দারুল উলূম টঙ্গী ৪. মাওলানা নোমান, হেমায়েতপুর ৫. মাওলানা আবুল খায়ের, জামিয়া সুবহানিয়া ৬. মাওলানা আবু হানীফা নোমান,মোমেনশাহী ৭. মাওলানা জালালুদ্দিন হক্কানী, সিলেটর)। [২]
পারিবারিক জীবনে তিনি ২ ছেলে যুবায়ের হুসাইন ও জাবের কাসেমী এবং দুই মেয়ের জনক। তার ছোট ছেলে জাবের কাসেমী একজন ইসলামি পণ্ডিত ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার অধ্যাপক ও মুহাদ্দিস। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয় ভারতের বিশেষ আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাসেমী বলেন, ‘ভারতীয় আদালত উগ্র হিন্দুত্ববাদের পক্ষ নিয়ে সত্য, ন্যায়-ইনসাফ ও বাস্তবতার সঙ্গে শুধু তামাশাই করেনি, বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে শুরু করেছে। এই রায়ে ভারতের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়াই কেবল প্রমাণ করে না; বরং দেশটির বিচার বিভাগের ওপরও যে হিন্দুত্ববাদিরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে সেটাও স্পষ্ট হয়েছে।’ [৮]
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ছোট ছেলে জাবের কাসেমীর ইমামতিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তারই প্রতিষ্ঠিত সোবহানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজ জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সরকারি অনুমতি দেওয়া হয় নি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। [৯][১০]