পাটওয়া গোষ্ঠী হল মূলত হিন্দি বলয়ের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। এরা ঐতিহ্যগতভাবে মুক্তো এবং সোনা রুপো সুতোয় গেঁথে অলঙ্কার তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়াও এরা তাঁতি সম্প্রদায়ের একটি ব্যবসায়িক জাতি। এদের বলা হয় বেনিয়া।[১][২]
'পাটওয়া' হিন্দি শব্দটি 'পাট' শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ রেশম। রেশম এবং সুতীর সুতার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের 'পাটওয়া' বলা হয়। ধর্মগতভাবে এরা হিন্দু হয় এবং দেবী ভগবতী ও জগদম্বার পূজা করে। পরম্পরাগতভাবে, তাদের বিবাহবিচ্ছেদ, ছোটখাটো বিবাদ এবং ব্যভিচারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি জাতি পরিষদ ছিল।[১]
পৌরাণিক কাহিনী বর্ণনায় বলা হয়েছে যে ভগবান শঙ্কর এবং পার্বতীর বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় অনুষ্ঠানটি করার জন্য কোনও পুরোহিত ছিল না। এই সময় বিষ্ণুর বক্ষ থেকে এক দম্পতি আবির্ভূত হয়েছিল এবং পুরুষটি পুরোহিতের কাজগুলি সম্পাদন করেছিল। বিবাহ অনুষ্ঠানের পর ভগবান বিষ্ণু তাকে জীবিকার জন্য রেশম সুতোর গহনা তৈরি করতে বলেছিলেন। এইভাবে এরা পাটওয়া নামে পরিচিত হয়। তারা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং গুজরাটে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে। এই কারিগরদের নানা জিনিসপত্রের সঙ্গে তাদের সুতোয় মোড়ানো গহনা বিক্রি করতে গ্রাম থেকে গ্রামে ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে।[৩]
বলা হয় আকবরের নবরত্নের অন্যতম রাজা মান সিং পাটওয়াদের রাজস্থান থেকে বিহারের গয়ায় নিয়ে আসেন এবং ফল্গুর (নিরঞ্জনা নদী) বিষ্ণু পদ মন্দিরের অন্য পারে তাদের বসতি স্থাপন করেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, পিণ্ডদানের সময় (পূর্বপুরুষদের উপাসনার জন্য নিবেদিত একটি প্রথা) পূজায় এক টুকরো বস্ত্র অর্পণ করা বাধ্যতামূলক। এই প্রয়োজন পূরণের জন্য রাজা মানসিংহ তাদের স্থানান্তর করেন। সেজন্য পাটওয়াদের উপনিবেশটি মানপুর নামে পরিচিত, যা রাজা মানসিংহকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানকার গয়না এবং মন্দিরের শৈলী থেকে প্রমাণিত হয় যে যা গয়ার পাটওয়াদের সঙ্গে রাজস্থানের সংযোগ রয়েছে।
পাটওয়ারা মহিলাদের সাজসজ্জার সামগ্রী যেমন কানের দুল, গলার হার এবং প্রসাধনী বিক্রির সাথে জড়িত। তারা ছোট ছোট গৃহস্থালির জিনিসপত্রও বিক্রি করে, যেমন, তালপাতা দিয়ে তৈরি হাত পাখা। সম্প্রদায়টি ঐতিহ্যগতভাবে সোনা, রুপো বা মুক্তো সুতোয় গেঁথে অলঙ্কার সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ছিল, অনেকেই অন্যান্য ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে। এখন তাদের সমগ্র ভারতেই দেখতে পাওয়া যায়, প্রধানত মহারাষ্ট্র, গোয়া, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, দক্ষিণ ভারতে তারা বসবাস করে।
বিহারে, সম্প্রদায়টি পাটওয়া এবং তন্তু পাটওয়া নামে উপ-বিভক্ত। পাটওয়ারা প্রধানত তাঁতি এবং গয়না প্রস্তুতকারক। তন্তু পাটওয়াদের তিনটি উপ-গোষ্ঠী রয়েছে, গৌরিয়া, রেওয়ার এবং জুরিহার। তন্তু পাটওয়াদের প্রধানত নালন্দা, গয়া, ভাগলপুর, নওয়াদা এবং পাটনা জেলায় পাওয়া যায়। [৪]
সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যগত সংগঠিত কাঠামো রয়েছে যাকে পরিচালনা করে পঞ্চায়েত। মুখ্যপঞ্চ এই সংগঠনের প্রধান। নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর নাম শ্রী পাটওয়া সংঘ। এই সংঘটি সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ এবং কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত। সংগঠনের প্রধান কাজ হল সমস্ত পাটওয়াদের একত্রিত করা এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। যারা নিজেকে পাটোয়া বলে দাবি করে তাদের জন্য এই সঙ্ঘের সদস্যপদ উন্মুক্ত। নতুন ব্যবসা খোলা, শিক্ষা এবং বিবাহের সময় সদস্যদের সহায়তা করার জন্য সংস্থার দ্বারা একটি তহবিল রাখা আছে। সংগঠনটি সদস্যদের শারীরিকভাবে শাস্তি দেয় না, কিন্তু যারা বিশৃঙ্খল তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে সামাজিক বয়কট এবং নগদ জরিমানা ধার্য করে।[৩]