পোলিও ভাইরাস (ইংরেজি: Poliovirus) হলো একধরনের এন্টারোভাইরাস ও পিকর্নাভাইরিডি পরিবারের সদস্য। এটা মানব শরীরে পোলিওমায়েলাইটিস রোগ সৃষ্টি করে যা সাধারণত পোলিও নামে পরিচিত।[২] পোলিও ভাইরাস একটি আরএনএ (RNA) জিনোম ও একটি প্রোটিন ক্যাপসিড নিয়ে গঠিত। এর জিনোমটি একসূত্রক পজিটিভ সেন্স আরএনএ (RNA) জিনোম যা ৭৫০০ নিউক্লিওটাইড নিয়ে গঠিত।[৩] ভাইরাস কণাটি আইকোসাহেড্রাল ও ৩০ ন্যানোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট।[৪]
পোলিও ভাইরাস হচ্ছে এন্টারোভাইরাস গ্রুপের সদস্য।[৮]
এন্টারোভাইরাসগুলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেপ্লিকেশন বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অ্যাসিড সহনশীল হওয়ায় পাকস্থলীর অ্যাসিডিক পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। [৯] পোলিও ভাইরাসের পোষক শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়ে থাকে। এর কারণ হলো এর ভাইরাল ক্যাপসিড প্রোটিন শুধু এমন এক রিসেপ্টরের সাথে বন্ধন করে যা কেবল স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষঝিল্লিতে বিদ্যমান। পোলিও ভাইরাস আবরণবিহীন ভাইরাস হওয়ায় পরিবেশে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে ফলে মল বা দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। বাহ্যিক ক্যাপসিডের অ্যান্টিজেনিক বৈচিত্র্য অনুযায়ী তিনটা সেরোলজিক টাইপের পোলিও ভাইরাস পাওয়া যায় (PV1, PV2, PV3)।[১০]
The replication cycle of poliovirus is initiated (1) by binding to the cell surface receptor CD155. The virion is taken up via endocytosis, and the viral RNA is released (2). Translation of the viral RNA occurs by an IRES-mediated mechanism (3). The polyprotein is cleaved, yielding mature viral proteins (4). The positive-sense RNA serves as template for complementary negative-strand synthesis, producing double-stranded replicative form (RF) RNA(5). Many positive strand RNA copies are produced from the single negative strand (6). The newly synthesized positive-sense RNA molecules can serve as templates for translation of more viral proteins (7) or can be enclosed in a capsid (8), which ultimately generates progeny virions. Lysis of the infected cell results in release of infectious progeny virions (9).[১১]
ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে রেপ্লিকেশন বলে। কোষঝিল্লিতে অবস্থিত CD155 রিসেপ্টর (পোলিও ভাইরাস রিসেপ্টর) এর সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কোষে প্রবেশ করে।[১২][১৩] এবং ক্যাপসিড প্রোটিন দূরীভূত হয়। [১৪][১৫][১৬] পোলিও ভাইরাস পজিটিভ সেন্স RNA ভাইরাস হওয়ায় এর জিনোম mRNA হিসেবে কাজ করে এবং ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পলিপেপটাইড তৈরি করে যাকে নন-ক্যাপসিড ভাইরাল প্রোটিন বলে।[১৭][১৮]
পোলিওভাইরাস পার্টিকলে CD155 অণুর কমপ্লেক্সকৃত রূপ। ক্রাইও-ইলেকট্রন মাইক্রেস্কোপি থেকে প্রাপ্ত রিকনস্ট্রাকটেড ইমেজ বা ছবি।
একটি ভাইরাস-এনকোডেড প্রোটিয়েজ উক্ত পলিপেপটাইডকে কয়েক ধাপে ভেঙে পোজেনি ভিরিওন এর ক্যাপসিড প্রোটিন, কিছু নন-ক্যাপসিড প্রোটিন ও RNA পলিমারেজ এনজাইম তৈরি করে যা প্রোজেনি RNA জিনোম সংশ্লেষণে ভূমিকা রাখে।[১৯][২০]
জিনোমের রেপ্লিকেশন হয় একটি পরিপূরক নেগেটিভ স্ট্রান্ড সংশ্লেষণের মাধ্যমে যা পজিটিভ স্ট্রান্ড তৈরিতে টেম্পলেট বা ছাঁচ হিসেবে কাজ করে।[২১][২২] ক্যাপসিড প্রোটিনের দ্বারা জিনোম RNA আবরিত হওয়ার মাধ্যমে প্রোজেনি ভিরিওনগুলো একত্রিত হয়। কোষীয় সাইটোপ্লাজমে ভিরিওনগুলো একত্রিত হয় এবং কোষের মৃত্যুর পর অবমুক্ত হয়।[২৩]
টাইপ ১ পোলিও ভাইরাসের জিনোমিক স্ট্রাকচার বা গঠন।[১১]
মানুষ হলো একমাত্র প্রাকৃতিক পোষক। পোলিও মানব দেহের ওরোফ্যারিংস ও ইন্টেস্টিনাল ট্রাক্টে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। এরা ফিকাল-ওরাল রুটে ছড়ায় অর্থাৎ মানুষের মলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়ায় এবং সেখান থেকে দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে আরেকজনের দেহে প্রবেশ করে।[২৪] একবার পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত মলের মাধ্যমে এই ভাইরাস নির্গত হতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৫ সালের মধ্যে প্যারালাইটিক পোলিও দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০৭ সালেও ১৬ টি দেশে পোলিওর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১৯৮৮ সালে সারাবিশ্বে ৩,৮৮,০০০ পোলিও রোগী ছিল যেখানে ২০০৫ সালে তা কমে প্রায় ২০০০ জনে নেমে আসে। গুটিবসন্ত একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি যা টিকার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১ টি দেশ কে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করে।[২৫]
সুপ্তাবস্থা সাধারণত ৭-১৪ দিন। পোলিও ভাইরাস সংক্রমণের চার ধরনের অবস্থা পরিলক্ষিত হয় যেমন-
সুপ্তাবস্থা বা উপসর্গবিহীন সংক্রমণ
উপসর্গবিহীন সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রায় এক শতাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পায়।
অ্যাবর্টিভ পোলিওমায়েলাইটিস
ক্লিনিক্যাল প্রেক্ষাপটে অ্যাবর্টিভ পোলিওমায়েলাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এতে হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, বমিভাব, বমন হতে পারে। অধিকাংশ রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।[২৬]
নন-প্যারালাইটিক পোলিওমায়েলাইটিস
এক্ষেত্রে রোগীর অ্যাসেপ্টিক মেনিনজাইটিস হয় যার ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। এধরনের রোগীরাও এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
প্যারালাইটিক পোলিওমায়েলাইটিস
এই রোগে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। মটর স্নায়ু স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অন্যান্য স্নায়ুকোষ সক্রিয় হওয়ার ফলে মাংসপেশির কার্যক্ষমতা কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে পারে। ব্রেইন স্টেম আক্রান্ত হলে রেস্পিরেটরি মাসল প্যারালাইসিস হতে পারে যা এই রোগে মৃত্যুর অন্যতম কারণ।[২৭]
পোলিও ভাইরাস ওরোফ্যারিংস ও ক্ষুদ্রান্ত্রের লিম্ফয়েড টিস্যুতে রেপ্লিকেশন করে। অতঃপর সেখান থেকে রক্তের সংস্পর্শে এসে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌছায়। নার্ভ অ্যাক্সনের মধ্য দিয়েও ছড়াতে পারে। [২৮][২৯] এরা স্পাইনাল কর্ডের অ্যান্টেরিওর হর্ন কোষে অবস্থিত মটর নিউরনে রেপ্লিকেশন করে। আস্তে আস্তে উক্ত কোষগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ফলে উক্ত নিউরনগুলো যে সমস্ত মাংসপেশিকে স্নায়ু উদ্দীপনা প্রদান করত তারা প্যারালাইসিস বা অবশ হয়ে যায়। মাংসপেশিতে ভাইরাস সংক্রমণের জন্য প্যারালাইসিস হয় না। ভাইরাস ব্রেইন স্টেম কেও আক্রান্ত করতে পারে ফলে বালবার পোলিওমায়েলাইটিস হয়।[৩০]
দুটি টিকায় তিনটি সেরোটাইপ রয়েছে। উভয় টিকায় হিউমোরাল অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা রক্তে প্রবেশকৃত ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র রক্ষা পায় এবং রোগ প্রতিরোধ হয়। পোলিও মূলোৎপাটনে লাইভ ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর তাই ভারতীয় উপমহাদেশে মনোভ্যালেন্ট ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। [৩৩]
তবে লাইভ ভ্যাকসিনের কিছু অসুবিধা রয়েছে যেমন:
যদিও বিরল, কখনো কখনো অ্যাটেনুয়েটেড ভাইরাস সক্রিয় হয়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই টিকা দেওয়া যায় না কারণ এটা তাদের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে।
অন্ত্রে অন্য এন্টারোভাইরাস সংক্রমণ করলে পোলিও ভাইরাসের রেপ্লিকেশন কমে যায়, ফলে টিকার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
অধিক তাপমাত্রায় এই টিকার কার্যকারিতা কমে যায় তাই এটাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্রিজে রাখতে হয়।[৩৪]
ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের একটি সুবিধা হচ্ছে এটি অন্ত্রে সিক্রেটরি ইমিউনোগ্লোবিউলিন -এ (IgA) তৈরি করে যা ভিরুলেন্ট (রোগ সৃষ্টিকারী) পোলিও ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করে এবং রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়ানো রোধ করে। এর ফলে একটি সম্প্রদায়ের একাংশ কে টিকা প্রদানের মাধ্যমে পুরো সম্প্রদায়ের সমগ্র জনগণ কে রোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব যা হার্ড ইমিউনিটি (Herd immunity) নামে পরিচিত।[৩৫]
↑Kitamura N, Semler B, Rothberg P ও অন্যান্য (১৯৮১)। "Primary structure, gene organization and polypeptide expression of poliovirus RNA"। Nature। 291 (5816): 547–53। ডিওআই:10.1038/291547a0। পিএমআইডি6264310।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: ও অন্যান্য স্পষ্টভাবে ব্যবহার করছে (link)
↑Mendelsohn Cl; Wimmer E; Racaniello VR (১৯৮৯)। "Cellular receptor for poliovirus: molecular cloning, nucleotide sequence, and expression of a new member of the immunoglobin superfamily"। Cell। 56 (5): 855–865। ডিওআই:10.1016/0092-8674(89)90690-9। পিএমআইডি2538245।
↑Gomez Yafal A, Kaplan G, Racaniello VR, Hogle, JM (১৯৯৩)। "Characterization of poliovirus conformational alteration mediated by soluble cell receptors"। Virology। 197 (1): 501–5। ডিওআই:10.1006/viro.1993.1621। পিএমআইডি8212594।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link)
↑Attardi, G. and Smith, J. Virus specific protein and a ribonucleic acid associated with ribosomes in poliovirus infected HeLa cells. Cold Spring Harbor Symp. Quant. Biol. 27: 271–292. 1962
↑Chen CY, Sarnow P (১৯৯৫)। "Initiation of protein synthesis by the eukaryotic translational apparatus on circular RNAs"। Science। 268 (5209): 415–7। ডিওআই:10.1126/science.7536344। পিএমআইডি7536344।
↑Pelletier J, Sonenberg N (১৯৮৮)। "Internal initiation of translation of eukaryotic mRNA directed by a sequence derived from poliovirus RNA"। Nature। 334 (6180): 320–5। ডিওআই:10.1038/334320a0। পিএমআইডি2839775।
↑Davidson's principles snd practice of medicine, 21st edition, page-1210
↑Ohka S. Yang WX; Terada E; Iwasaki K; Nomot A (১৯৯৮)। "Retrograde transport of intact poliovirus through the axon via the first transport system"। Virology। 250 (1): 67–75। ডিওআই:10.1006/viro.1998.9360। পিএমআইডি9770421।
Goodsell, David। "Poliovirus and Rhinovirus"। August 2001 Molecule of the Month। ৩ মার্চ ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০২১।