প্যাথেইন ပုသိမ်မြို့ প্যাথেইন, ইরাবতী, মিয়ানমার | |
---|---|
শহর | |
মিয়ানমারে প্যাথেইনের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১৬°৪৬′ উত্তর ৯৪°৪৩′ পূর্ব / ১৬.৭৬৭° উত্তর ৯৪.৭১৭° পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
অঞ্চল | ইরাবতী অঞ্চল |
জেলা | প্যাথেইন জেলা |
শহরাঞ্চল | প্যাথেইন শহরাঞ্চল |
জনসংখ্যা (২০১৪) | |
• মোট | ১,৬৯,৭৭৩ |
• নৃগোষ্ঠী | বামার বর্মী ভারতীয় কারেন মন |
• ধর্ম | বৌদ্ধধর্ম |
সময় অঞ্চল | মায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+৬.৩০) |
এলাকা কোড | ৪২[১] |
প্যাথেইন (বর্মী: ပုသိမ်မြို့; মন ভাষা: ဖာ သီ), মিয়ানমারের (বার্মা) বৃহত্তম শহর এবং ইরাবতী অঞ্চলের রাজধানী। পূর্বে এর নাম ছিল বাসেইন। এটি ইয়াঙ্গুনের ১৯০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) পশ্চিমে প্যাথেইন নদীর তীরে অবস্থিত, যা ইরাবতী নদীর পশ্চিম শাখা।[২] শহরটির জনসংখ্যা ২৩৭,০৮৯ (২০১৭ আদমশুমারি) যদিও শহরটি একসময় মন রাজ্যের অংশ ছিল, প্যাথেইনের আজ মন জাতিগোষ্ঠীর খুব কম মানুষ আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলো বামার, বর্মী ভারতীয় এবং কারেন গোষ্ঠী। তবে, এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু রাখাইন গোষ্ঠী রয়েছে।
শহরের নামটি পুরানো মন ভাষার নাম, ဖာ သီ (ফা সেম) থেকে উদ্ভূত বলে বিশ্বাস করা হয়। [৩]"ফা" এর অর্থ বিশাল বা প্রশস্ত এবং ''সেম'' অর্থ নদী বা সমুদ্র। ফা-সেম অর্থ একটি বিশাল সমুদ্র। নামটি ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে বাসেইনে পরিণত হয়েছিল।
একটি বিকল্প উৎস মনে করে যে শহরের নামটি প্যাথেইনের পুরাতন নাম, কুসিমানাগারা থেকে এসেছে। প্রাচীন লেখা এবং কল্যাণী শিলালিপিতে এই নাম ব্যবহৃত হয়েছে।[৪] 'প্যাথেইন' শব্দটিই মন শব্দ "কুথেন" থেকে এসেছে, যা নিজেই ''কুসিমানাগারের'' সংকোচন।[৪] পর্তুগিজরা প্যাথেইনকে "কসমিম" নামে ডাকত, যা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।[৪]
প্যাথেইন মন রাজ্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশরা প্রথম অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের পরে ১৮২৬ সালে এখানে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল এবং দুর্গরক্ষক সৈন্যদল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৮৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে জনসংখ্যা ছিল ১,৪৪,০৯২ জন।
প্যাথেইন ইয়াঙ্গুনের ১৯০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) পশ্চিমে ইরাবতী নদীর পশ্চিম প্রান্তে, প্যাথেইন নদীর তীরে অবস্থিত। তাই, সমুদ্র থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও, বড় নৌকা এখানে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এটি ইয়াঙ্গুনের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব-দ্বীপ বন্দর। এটি ইয়াঙ্গুনের শহরের মূল রেললাইনের একটি শাখার শেষ গন্তব্য যা পাথেইনকে হিনতাদা, লেটপাদান এবং ইয়াঙ্গুনের সাথে সংযুক্ত করে। ১৯৯০-এর দশকে, ইরাবতী থেকে মৌন্যা পর্যন্ত রাস্তার উন্নতি করা হয়েছিল।[২]
বঙ্গোপসাগর উপকূলরেখা আরাকান পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এই অঞ্চলে ১.৫ মাইল (২.৪ কিমি) দীর্ঘ এবং ১ মাইল (১.৬ কিমি) প্রশস্ত ইনিয়ে হ্রদ অবস্থিত, যা মাছ ধরার জন্য পরিচিত। ডায়মন্ড দ্বীপে একটি সমুদ্রতীরাতিক্রান্ত প্রবালপ্রাচীর রয়েছে যা গোসল করার জন্য জনপ্রিয়। ডায়মন্ড দ্বীপ কচ্ছপের প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবেও খ্যাত।[২]
শহরটি একটি চালকল এবং রপ্তানি কেন্দ্র। একাধিক চালকল ছাড়াও, শহরে রয়েছে অসংখ্য কাঠের কারখানা এবং ছাতা কর্মশালা। পাথেইনে তৈরি রঙিন হস্তনির্মিত প্যারাসোল (রোদে ব্যবহৃত ছাতা) পুরো বার্মা জুড়েই সুপরিচিত।[২] তারা স্থানীয়ভাবে "প্যাথেইন হটি" নামে পরিচিত।[৫] প্যাথেইন মৃৎশিল্প এবং হাতে তৈরি রঙিন ঝুড়ি এবং বালতির জন্যও পরিচিত। প্যাথেইনের সবচেয়ে বিশিষ্ট শিল্পের মধ্যে লবণ, মাদুর এবং পাথেইন হালাওয়া (মিষ্টি খাবার) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৬]
প্যাথেইনের আশেপাশের অঞ্চল কৃষিতে নিযুক্ত এবং সেখানে তিল, চিনাবাদাম, পাট, ভুট্টা, ডাল, তামাক, মরিচ ইত্যাদি চাষ করা হয়।[৫]
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
১৯৭৩ | — | |
১৯৮৩ | — | |
২০১৪ | ১,৬৯,৭৭৩ | — |
উৎস: Ministry of Labor, Immigration, and Population data |
২০১৪ সালের মিয়ানমার আদমশুমারি অনুসারে প্যাথেইনের জনসংখ্যা ১,৬৯,৭৭৩ জন যা পাথেইন শহরাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৫৯.১%।[৭] প্যাথেইনকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে।[৭]
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অনুসারে প্যাথেইনের ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে প্যাথেইনে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে শুকনো মরসুমে সাধারণত বছরের অন্যান্য অংশের তুলনায় শীতল তাপমাত্রা থাকে।
পাথেইণ (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩১.৯ (৮৯.৪) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩৫.৫ (৯৫.৯) |
৩৬.৬ (৯৭.৯) |
৩৪.২ (৯৩.৬) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩০.৩ (৮৬.৫) |
৩০.০ (৮৬.০) |
৩১.০ (৮৭.৮) |
৩২.১ (৮৯.৮) |
৩২.২ (৯০.০) |
৩১.৩ (৮৮.৩) |
৩২.৫ (৯০.৫) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৭.৫ (৬৩.৫) |
১৯.২ (৬৬.৬) |
২১.৭ (৭১.১) |
২৪.৪ (৭৫.৯) |
২৫.২ (৭৭.৪) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.২ (৭৫.৬) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
২২.২ (৭২.০) |
১৮.৮ (৬৫.৮) |
২২.৫ (৭২.৫) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১.৮ (০.০৭) |
৯.৪ (০.৩৭) |
৭.৪ (০.২৯) |
২৬.৯ (১.০৬) |
২৭৫.৫ (১০.৮৫) |
৬০৫.৭ (২৩.৮৫) |
৬৪৬.৯ (২৫.৪৭) |
৬৩৬.২ (২৫.০৫) |
৩৮৫.০ (১৫.১৬) |
২০৫.৬ (৮.০৯) |
৮০.৩ (৩.১৬) |
৭.০ (০.২৮) |
২,৮৮৭.৭ (১১৩.৬৯) |
উৎস: Norwegian Meteorological Institute[৮] |
প্যাথেইনে শোয়েমখতাও প্যাগোডার প্রধান দৃশ্যসহ বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির আছে। এছাড়াও নদীর নিকটে সুন্দর স্থান আছে।
এই শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য প্যাথেইন শিক্ষা কলেজ আছে। মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর জন্য প্যাথেইন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাথেইন) কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয়ের সুযোগ আছে। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করার সুযোগ আছে।
৬ হাজার আসনের আয়ার স্টেডিয়ামটি স্থানীয় ফুটবল টুর্নামেন্টগুলোর জন্য অন্যতম প্রধান স্থান। এই স্টেডিয়ামে মিয়ানমার ন্যাশনাল লিগের ফুটবল ক্লাব, ইরাবতী যুক্ত ফুটবল ক্লাবের সূচনা হয়েছে।
প্যাথেইন সাধারণ হাসপাতাল প্যাথেইন ও এর আশেপাশের অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি বা উ (১৯৫২-১৯৫৭) ১৮৮৭ সালে প্যাথেইনে জন্মগ্রহণ করেন। মিয়ানমারের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি মাহন উইন মাউং (১৯৫৭-১৯৬২) ১৯১৬ সালে প্যাথেইনের নিকটে একটি মফস্বলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অষ্টম রাষ্ট্রপতি থিন সিন ১৯৪৪ সালে প্যাথেইনের নিকটবর্তী একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি প্যাথেইনের উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন। দশম রাষ্ট্রপতি উইন মিন্তও ১৯৪৫ সালে প্যাথেইনের কাছে দানুফিউ মফস্বলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং প্যাথেইনে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।