প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | বিকিরণজনিত বিষক্রিয়া, বিকিরণজনিত অসুস্থতা |
বিকিরণ আত্মভক্ষণের মাধ্যমে কোষীয় মানের অবনতির কারণ হয় | |
বিশেষত্ব | সংকটকালীন সেবা চিকিৎসাবিজ্ঞান |
লক্ষণ | প্রাথমিক: বমি বমি ভাব, বমি, চামড়া পুড়ে যাওয়া, খাওয়ার রুচি নষ্ট[১] পরবর্তীতে: জীবাণু সংক্রমণ, রক্তপাত, পানিশূন্যতা, বিভ্রান্তি[১] |
জটিলতা | কর্কটরোগ (ক্যানসার)[২] |
রোগের সূত্রপাত | কয়েক দিনের মধ্যে[১] |
প্রকারভেদ | অস্থিমজ্জা সংলক্ষণ, পাকান্ত্রিক সংলক্ষণ, স্নায়ুবাহ সংলক্ষণ[১][৩] |
কারণ | স্বল্প সময়ের পরিসরে বৃহৎ মাত্রায় আয়নীকারক বিকিরণ শোষণ[১] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | সংস্পর্শে আসা ও লক্ষণ-উপসর্গের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে[৪] |
চিকিৎসা | সহায়ক সেবা (রক্ত প্রতিস্থাপন, ব্যাকটেরিয়া-নিরোধক ঔষধ, উপনিবেশ উদ্দীপক উপাদান, মূলকোষ প্রতিস্থাপন)[৩] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | কতটুকু মাত্রার সংস্পর্শে এসেছে, তার উপর নির্ভরশীল[৪] |
সংঘটনের হার | বিরল[৩] |
প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণ (Acute radiation syndrome বা ARS) (বিকিরণজনিত অসুস্থতা বা বিকিরণজনিত বিষক্রিয়া নামেও পরিচিত) স্বাস্থ্যের উপর কতগুলি নেতিভাচক প্রভাবের সংগ্রহকে দেওয়া নাম, যা অত্যন্ত স্বল্প সময়কালের মধ্যে উচ্চ পরিমাণের আয়নীকারক বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে সৃষ্ট হয়।[১] সংস্পর্শে আসার এক ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষণ-উপসর্গের প্রকাশ শুরু হতে পারে এবং একাধিক মাস ধরে এগুলি বজায় থাকতে পারে।[১][৩][৫] প্রাথমিক লক্ষণ-উপসর্গগুলির মধ্যে আছে বমি বমি ভাগ, বমি, ক্ষুধামন্দা বা খাবারে অরুচি।[১] পরবর্তী ঘণ্টা ও সপ্তাহগুলিতে প্রাথমিক লক্ষণ-উপসর্গগুলি আপাতদৃষ্টিতে প্রশমিত হয়, কিন্তু তার পরেই অতিরিক্ত আরও কিছু লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেয়, যার পরে হয় রোগী সেরে ওঠে কিংবা মৃত্যুমুখে পতিত হয়।[১]
মোট বিকিরণ মাত্রা ০.৭ গ্রে (৭০ র্যাড) এককের বেশি হলে প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত দেহের বহিঃস্থ কোনও উৎস থেকে এই বিকিরণটি ঘটে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে তা দেহে প্রযুক্ত হয়।[১] ঐ ধরনের বিকিরণের উৎস ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনামূলক হতে পারে।[৬] পারমাণবিক চুল্লী, সাইক্লোট্রন, ক্যানসার বা কর্কটরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্র, পারমাণবিক অস্ত্র কিংবা তেজস্ক্রিয় অস্ত্র এর উৎস হতে পারে।[৪] প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণের তিনটি প্রকার আছে: অস্থিমজ্জা সংলক্ষণ, পাকান্ত্রিক সংলক্ষণ ও স্নায়ু-বাহ সংলক্ষণ। ০.৭ থেকে ১০ গ্রে এককের মধ্যে অস্থিমজ্জা সংলক্ষণ এবং ৫০ গ্রে এককের বেশি মাত্রায় স্নায়ুবাহ সংলক্ষণ ঘটে।[১][৩] যেসব কোষ দ্রুত বিভাজনশীল, সেগুলির উপরেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।[৩] উচ্চ মাত্রার বিকিরণে ডিএনএ-র অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।[৪] সংস্পর্শ ও লক্ষণ-উপসর্গের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে রোগনির্ণয় করা হয়।[৪] বারংবার (পৌনঃপুনিক) সম্পূর্ণ রক্ত গণনার মাধ্যমে সংস্পর্শ কতটুকু গুরুতর, তা নির্ণয় করা যায়।[১]
প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণের চিকিৎসা সাধারণত সহায়তামূলক। রক্ত প্রতিস্থাপন (blood transfusions), ব্যাকটেরিয়ারোধক ঔষধ (antibiotics), উপনিবেশ উদ্দীপক উপাদান (colony-stimulating factors) বা মূলকোষ প্রতিস্থাপন (stem cell transplant) এরূপ কিছু চিকিৎসা।[৩] ত্বক (চর্ম) বা পাকস্থলীতে অবশিষ্ট তেজস্ক্রিয় পদার্থ অপসারণ করতে হয়। যদি তেজস্ক্রিয় আয়োডীন শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে বা গলধকরণ করা হয়, তাহলে পটাসিয়াম আয়োডাইড ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের রক্তের কর্কটরোগ (লিউকিমিয়া) ও অন্যান্য ক্যানসার (কর্কট) রোগের বিরুদ্ধে প্রথাগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিকিরণের মাত্রার উপর স্বল্পমেয়াদী ফলাফল নির্ভর করে।[৪]
প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণ সাধারণত বিরল।[৩] একটিমাত্র ঘটনা বিরাত সংখ্যক মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।[৭] হিরোশিমা ও নাগাসাগিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ এবং চেরনোবিলের পারমাণবিক চুল্লী বিপর্যয়ে এরকমই ঘটেছিল।[১] প্রকট বিকিরণজনিত সংলক্ষণের সাথে দীর্ঘমেয়াদী বিকিরণজনিত সংলক্ষণের পার্থক্য করা হয়। শেষোক্তটি দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষাকৃত স্বল্প মাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে থাকার কারণে সৃষ্ট হয়।[৮][৯]