প্রুডেন্সিয়া আয়ালা | |
---|---|
জন্ম | সোঞ্জাকেট, এল সালভদর | ২৮ এপ্রিল ১৮৮৫
মৃত্যু | ১১ জুলাই ১৯৩৬ স্যান সালভেদর, এল সালভাদর | (বয়স ৫১)
জাতীয়তা | সালভাদোরীয় |
পেশা | লেখিকা, সমাজকর্মী, নারীবাদী |
প্রুডেন্সিয়া আয়ালা (স্পেনীয়: Prudencia Ayala; জন্ম: ২৮ এপ্রিল, ১৮৮৫ - মৃত্যু: ১১ জুলাই, ১৯৩৬) সোঞ্জাকেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা সালভাদোরীয় লেখিকা ও সমাজকর্মী ছিলেন। এল সালভাদরে মহিলাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
মূলতঃ তিনি আদিবাসী পরিবার থেকে এসেছেন। অরেলিয়া আয়ালা ও ভিসেন্তে চিফ দম্পতির সন্তান তিনি। তার বয়স দশ বছর থাকাকালে পরিবারের সদস্যরা সান্তা অ্যানা সিটিতে স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার মারিয়া লুইস ডে ক্রিস্তোফাইন্স এলিমেন্টারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন।[১] তবে তার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা না থাকার কারণে তিনি কখনো তার শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে পারেননি।[২]
তিনি সেলাই শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি দাবী করেন যে, ‘রহস্যময় শব্দ’ শুনেছেন যাতে ভবিষৎবাণী করতে সক্ষমতা লাভ করেছেন। এরফলে তিনি তার নিকটতম আত্মীয়দের কাছ থেকে জনপ্রিয়তা পান, যদিও এর কোন সত্যতা ছিল না। তার এ দাবীর প্রেক্ষিতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয় ও কিছু সামাজিক সংগঠন থেকে বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি শুনতে হয়েছিল। তবে, তার এ অদ্ভুত শক্তির কথা সান্তা অ্যানার সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হতে থাকে। সেখানে তাকে ‘লা সিবিলা সান্তানেকা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯১৪ সালেই তিনি জার্মানির কায়সারের পতন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরিভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ভবিষৎবাণী করেছিলেন। তারপর থেকেই নারীবাদী ধ্যান-ধারণায় তার নাম সমোচ্চারিত হতে থাকে।
১৯১৩ সালের শুরুতে এল সালভাদরের পশ্চিম অঞ্চলে ভ্রমণকালে ‘ডায়রি অব দি ওয়েস্টে’ পাক্ষিকভিত্তিতে তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। সেখানে তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে অবস্থান, নারীবাদ ও মধ্য আমেরিকার শ্রমবাদের বিষয়সহ নিকারাগুয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিষয়ে ব্যাপক অসন্তুষ্টিজ্ঞাপনের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও, এল সালভাদরের অনেক সংবাদপত্রে কবিতা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯১৯ সালে আতিজায়ার মেয়রের বিপক্ষে সংবাদপত্রে মতামত তুলে ধরায় কারাভোগ করতে হয়। এছাড়াও, গুয়াতেমালায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেক মাস কারাগারে থাকতে হয়। ১৯২১ সালে রচিত ‘এসক্রাইবল’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গুয়াতেমালায় তার ভ্রমণ অভিযানে স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল এস্ত্রাদা কাবরেরার শেষের মাসগুলোর কথা বিবৃত করেন। পাশাপাশি ১৯২৫ সালে ‘ইমমর্টাল’, ‘আমোরেস ডে লোকা’ ও ১৯২৮ সালে ‘ওয়াই ফুমাদা মোতা’ প্রকাশ করেন তিনি। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে তার অর্থায়নে ও পরিচালনায় ‘রেন্দেনসিওন ফেমেনিনা’ সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি মহিলাদের অধিকারের বিষয়ে তার অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন।[৩]
১৯৩০ সালে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান। তবে, সালভাদোরীয় আইনে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা তখনো অনুমোদন করা হয়নি। তার সরকারে নির্বাচনী অঙ্গীকারে শ্রমিক সংগঠনের সহায়তা, সততা ও সরকারী প্রশাসনের দূর্নীতি দূরীকরণ, মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও উৎপাদনে সীমিতকরণ, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অবৈধ সন্তানদের স্বীকৃতির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। তার ইচ্ছার সমর্থনে বৈধ ও রাজনৈতিক আলোচনায় উন্মুক্ত বিতর্কের আহ্বান জানান। তার প্রার্থীতার সমর্থনে প্রখ্যাত দার্শনিক, শিক্ষক, লেখক ও কংগ্রেস মুখপত্র আলবার্তো মাসফেরার ‘পাত্রিয়া’ সংবাদপত্রে লিখেন। কিন্তু, তার প্রার্থীতার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট থেকে খারিজ করে দেয়া হয়। তবে বিতর্ক অব্যাহত থাকে। তার প্রার্থীতা বাতিলের ফলে নারীবাদী আন্দোলন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ১৯৩৯ সালে মহিলাদের ভোটাধিকারের বিষয়টি অনুমোদন লাভ করে।[৪] ১৯৫০ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি অস্কার অসোরিও ভোটাধিকারের বিষয়ে এল সালভাদরের মহিলাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেন।[৫]
২১ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে প্রুডেন্সিয়া আয়ালার দেহাবসান ঘটে। এরফলে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দূরে অবস্থান করলেও সাধারণ ও সামাজিক আন্দোলনে তার প্রভাব থেকে যায়। ১৯৩২ সালে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততার কথা প্রমাণিত হয়নি। তবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্যান সালভাদরের কেন্দ্রস্থলে মেট্রোপলিটন ক্যাথেড্রালের কাছাকাছি এলাকায় আয়ালার নামে ছোট্ট একটি প্লাজার নামকরণ তার নামে করা হয়।
ঐ এলাকার একটি খোদাইকৃত প্লাকে লেখা রয়েছে:
অনেকগুলো সংগঠন তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তেমনি একটি সংগঠন হচ্ছে ‘কনসার্তেসিওন ফেমেনিস্তা প্রুডেন্সিয়া আয়ালা’। মার্চ, ২০০৯ সালে নারী দিবস পালনকালে প্রুডেন্সিয়া আলায়া শীর্ষক একটি নাটক ‘প্রুডেন্সিয়া এন টাইমপোস ডে ব্রুজেরিয়ায়’ মঞ্চস্থ হয়।[৬]