প্ল্যানচেট ( /plɑːnˈʃɛt/ or /plænˈʃɛt/ ), ফরাসি শব্দ "লিটল প্ল্যাঙ্ক " থেকে আগত যা দ্বারা সাধারণত হৃৎপিন্ডের আকৃতির সমতল কাঠের টুকরো বুঝায় যেটি অতিপ্রাকৃতিক কোনো কিছুকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। প্লানচেটের গঠন কাঠামোতে একটি চাকাযুক্ত কাস্টার এবং একটি পেন্সিল-হোল্ডিং অ্যাপারচার নীচের দিকে নির্দেশিত থাকে। যেটি স্বয়ংক্রিয় লেখার উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়। রহস্যময় লিখিত বার্তাগুলোর মাধ্যমে প্ল্যানচেটের ব্যবহার এই বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে ডিভাইসগুলো একটি মাধ্যম হিসাবে আত্মার সাথে যোগাযোগে সাহায্য করে। প্লানচেট ডিভাইসগুলো ভিক্টোরিয়ান যুগে বেশ জনপ্রিয় ছিলো। বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন যে প্লানচেটের গতি, ইডিওমোটর প্রভাবের কারণে হয়েছে। [১] [২] [৩] তবে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসীদের মতে প্লানচেট, আত্মা বা সূক্ষ্ম শক্তির কোনো প্রকারের উপস্থিতি দ্বারা চালিত হয়। [৪]
প্ল্যানচেটগুলো জনপ্রিয়তার আদলে বিভিন্ন ধরনের রূপ ধারণ করেছিল। আমেরিকান প্লানচেটগুলো হৃৎপিন্ড -আকৃতির ছিল। কিন্তু নির্মাতারা ১৮৬০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিযোগিতামূলক এবং লাভজনক বাজারে নিজেদের আলাদা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আশায় বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির প্লানচেট সৃষ্টি করেছিলেন। প্লানচেট নির্মাতারা বিভিন্ন উপকরণ (বিভিন্ন শক্ত কাঠ, ইন্ডিয়া রাবার, কাচ ইত্যাদি ), ইনসুলেটেড কাস্টার এবং বিভিন্ন সংযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। যাতে করে নৃশংস আত্মা থেকে ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখা যায়। [৫] গ্রেট ব্রিটেনে, প্লানচেটগুলো গোলাকার, ভোঁতা নাক এবং চ্যাপ্টা পিঠ সহ সংবাদপত্রের চিত্রণে জনপ্রিয় আকার ধারণ করেছিল।[৬] ভিক্টোরিয়ান যুগে প্লানচেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। ১৯ শতকের মাঝামাঝি আধ্যাত্মবাদী আন্দোলনের শুরুতে প্ল্যানচেট পুনরায় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আমেরিকায় আধ্যাত্মবাদ প্রতিষ্ঠার পরের বছরগুলোতে প্ল্যানচেট প্রাধান্য লাভ করে। যা ১৮৪৮ সালে ফক্স সিস্টারদের কথিত আত্মা যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ প্লানচেটের আদলে অতিপ্রাকৃত-থিমযুক্ত পার্লার গেমস, সিয়েন্স, মিডিয়াশিপ, টেবিল-টার্নিং এর প্রচলন শুরু হয়। এই ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা টেবিলের অদ্ভুত নড়াচড়ার অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং আত্মার সাথে যোগাযোগ করবে যা তাদের বার্তাগুলিকে কোডেড নেতিবাচক বা ইতিবাচক নকগুলির একটি সিরিজের মাধ্যমে নির্দেশ করে। [৭] এই আত্মা যোগাযোগে বিশ্বাসীরা শীঘ্রই যোগাযোগের বিভিন্ন রূপ পরিমার্জন এবং ত্বরান্বিত করার সাথে পরীক্ষা শুরু করে, যার মধ্যে বর্ণমালার কার্ডে মুদ্রিত অক্ষরগুলিকে নির্দেশ করা, স্বয়ংক্রিয় লেখা, সরাসরি চ্যানেলিং এবং অন্যান্য পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত। [৮]
১৮৫২-৫৩ সালের শীতকালে, আধুনিক আধ্যাত্মবাদ আন্দোলন এবং আত্মার সাথে যোগাযোগের উৎসাহ ইউরোপে পৌঁছে যায়। [৭] ফরাসি শিক্ষাবিদ এবং আধ্যাত্মবাদের প্রতিষ্ঠাতা, অ্যালান কার্দেক ১৮৫৩ সালের ১০ জুন তারিখে প্লানচেটের আবিষ্কার রেকর্ড করেছিলেন। তিনি একটি ছোট উল্টানো ঝুড়িতে একটি পেন্সিল রেখে দিয়েছিলেন। যাতে একাধিক অংশগ্রহণকারীরা আত্মার কাছে সহযোগিতামূলক বার্তা লিখতে পারে। কার্দেকের ধারণাটি জনমনে আশ্চর্যজনক প্রভাব ফেলেছিলো। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই আরও শক্ত কাঠের তক্তা তৈরি করে এবং কিছু পরিমার্জনা করার পর আবিষ্কারের কথাটা প্যারিস এবং ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে প্যারিস এবং ইংল্যান্ডে প্লানচেট ডিভাইস তৈরী করার জন্য কুটির শিল্প গড়ে উঠেছিলো।