ফজলে হক খায়রাবাদি (১৭৯৭[১] – ১৮৬১) ছিলেন ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের একজন প্রধান ব্যক্তি। তিনি একজন দার্শনিক, লেখক, কবি, ধর্মীয় পণ্ডিত ছিলেন। ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া দেয়ার কারণে তাকে সহীদ করা হয়।[২][৩][৪]
ফজলে হক খয়রাবাদি লক্ষ্ণৌর প্রধান বিচারক ছিলেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।[৫] বিদ্রোহে উৎসাহ প্রদান ও নেতৃত্বের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি নিজেই তার পক্ষে কথা লড়াই করেন। মিথ্যা বলতে পারবেন না উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি তার ফতোয়া দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে কালাপানি পাঠানো হয় এবং অযোধ্যা আদালতের বিচারিক কমিশনার কর্তৃক তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১৮৫৯ সালে ৮ অক্টোবর তিনি আন্দামান পৌছান।
তার পুত্র আবদুল হক রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে আবেদন ও তারপর ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে পিতার মুক্তির আদেশ জারি করাতে সক্ষম হন। লিখিত মুক্তিনামাসহ তিনি ১৮৬১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পোর্ট ব্লেয়ার পৌছান। কিন্তু এসময় অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনি পৌছার পর একটি জানাজা দেখতে পান এবং জানতে পারেন যে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইসলামি ধর্মতত্ত্বের পণ্ডিত হলেও ফজলে হক খায়রাবাদি একজন সাহিত্যিক ব্যক্তি ছিলেন, বিশেষত উর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষায়। মির্জা গালিবের অনুরোধে তিনি তার প্রথম দিওয়ান সম্পাদনা করেন। পান্ডিত্যের জন্য তাকে আল্লামা বলা হত এবং একজন মহান সুফি হিসেবে তাকে সম্মান করা হয়। তাকে ইমাম হিকমত ও কালাম (যুক্তি, দর্শন ও সাহিত্যের ইমাম) হিসেবেও সম্বোধন করা হয়। ফতোয়া প্রদানের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হত।[৬]
ফজলে হক খায়রাবাদি বুদ্ধিদীপ্তিক ব্যক্তি ছিলেন। মির্জা গালিব ও সমসাময়িক অন্যান্য খ্যাতনামা কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবিদের সাথে তার শাণিত কথোপকথনের বেশ কিছু গল্প রয়েছে।
ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের প্রাক্কালে ইংরেজ বিরােধী ফতােয়া দেওয়ার অভিযােগে আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন।[৭] সে দ্বীপে তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল তার এক হৃদয় বিদারক বর্ণনা এবং উপ মহাদেশে ইংরেজদের ইসলাম বিরােধী কার্যকলাপের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে সাথে থাকা কাপনের কাপড়ে কয়লা দিয়ে তিনি এক কিতাব লিখেছিলেন। অবশেষে সারা দুনিয়া ব্যাপী বিশ্বখ্যাত এ জ্ঞান সাধকের কারা নির্যাতনের প্রতিবাদ ও আল্লামা খায়রাবাদী (রাহঃ) এর জ্ঞান প্রতিভার প্রতি আকৃষ্ট ঊর্ধ্বতন এক ইংরেজ কর্মকর্তার জোর তদবিরে কয়েক বছর পর তাকে বৃটেনের প্রিভি কাউন্সিল মুক্তির নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়। এ মুক্তির নির্দেশ নামা নিয়ে খায়রাবাদী এর ছেলে যখন আন্দামানে গিয়ে উপস্থিত হলেন, দেখলেন আন্দামানবাসীরা একটি জানাজার নামাজে মিলিত হচ্ছেন।উক্ত জানাজায় শরীক হয়ে জানতে পারলেন এটা তার পিতা বিশ্বখ্যাত জ্ঞান সাধক আল্লামা খায়রাবাদী 'র জানাজা।অবশেষে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা অবতারণার পর পিতার কাফনে লিখিত কিতাব খানি নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছিল তাকে। আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী’র শত শত কিতাবের মধ্যে এটিও একটি আলােড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব যাতে ব্রিটিশ শাসনের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।[৮]