বমি

বমি

বমি (সংস্কৃতে বমন, ইংরাজী Vomiting, emesis) হল পাকস্থলীর মধ্যের পরিপাক-রত খাদ্যসমূহ (কঠিন বা তরল) অনৈচ্ছিকভাবে সজোরে মুখ দিয়ে কখনো কখনো নাক দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসা।[] বাচ্চারা খাবার পছন্দ না হলে গলা থেকে যখন "তুলে দেয়", তা বমি নয়, উগরে দেওয়া (উদ্গার, regurgitation)। গ্যাসীয় পদার্থ উঠে এলে তাকেও বমি বলে না, তাকে বলে ঢেঁকুর বা বায়ু-উদ্গার (Belching, burping, eructation)।

গবাদি পশুর রোমন্থন (জাবর কাটা, rumination) অনেকটা বমির মত হলেও তার ঐচ্ছিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব (এবং তা শরীরস্থানগতভাবে উদ্গার কারণ এদের জটিল চতুঃপ্রকোষ্ঠ "পাকস্থলীর" প্রথম তিনটি অংশ আদতে পরিবর্তিত ইসোফেগাস/অন্ননালী) তাই জাবর কাটাকে বমি বলেনা। গবাদি পশু ছাড়াও আরো অনেক স্তন্যপায়ী (যেমন ক্যাঙ্গারু) খাবার দ্বিতীয়বার চিবায় যাকে merycism বলে [১]

বমি পাকস্থলি থেকে মস্তিষ্ক নানা উৎসজাত কারণে হতেপারে। মানসিক কারণে বমি অযাচিতভাবে হতে পারে বা কিছু পরিস্থিতিতে বমি উদ্রেককারী পদার্থ খেয়ে বা গলায় আঙুল ভরে কেউ যেচে বমির চেষ্টা করে (উদাঃ "Bulimia nervosa" মানসিক রোগ)। বিষপানের প্রাথমিক চিকিৎসাতেও বমি করানো হতে পারে।

বমির আগে বমিভাব (Nausea) হয়। কিন্তু বমিভাব হলেই বমি হবে এমন কোন কথা নেই।

খুব বমি বা বমি ভাব ওষুধ দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব। তবে বমির কারণ পরিষ্কার না হলে ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ দিয়ে বন্ধ করা ঠিক নয়। বেশি পরিমাণ তরল বমিতে বেরিয়ে গেলে শরীরে জলাভাব হতে পারে তাই ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুয়িড (শিরা দেবার তরল পদার্থ) দিতে হতে পারে।

বমির কারণ

[সম্পাদনা]

বমি বমি ভাব এবং বমি কি?

বমি বমি ভাব এবং বমি হল খুবই সাধারণ লক্ষণ যা মূলত নাড়িভুঁড়ির রোগের সাথে সম্পর্কিত, কিছু অবস্থা খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপতিক্রিয়ার ফলে হয়। অনেক সময়, এই উপসর্গগুলি সাধারণ অ্যানেস্থিয়ার পরবর্তী প্রভাব হিসাবে দেখা যায়। বমি করা হল মুখ দিয়ে পেটের খাবার বার করে পেট খালি করে দেওয়া যেখানে বমি বমি ভাব হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যা বমি করার আগে অভিজ্ঞতা করা হয়। দুটো অবস্থাই সারানো যায় এবং সাধারণত এই রোগ খুব গুরুতর স্বাস্থ্যের সমস্যা বোঝায় না।

এর সাথে জড়িত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?

বমি বমি ভাব এবং বমি করা হল কোন রোগের অবস্থা কে চিহ্নিতকরণ করা। যদিও, বমি বমি ভাব এবং বমির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:

দ্রুত নাড়ির স্পন্দন। শুকনো মুখ। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরা। হালকা মাথাচাড়া। বিহ্বলতা। তলপেটে ব্যথা। এর প্রধান কারণগুলি কি কি?

বমি বমি ভাব এবং বমি করা অনেকগুলো কারণের জন্য হতে পারে যেমন:

মোটর সিকনেস বা সী সিকনেস। পেটের সংক্রমণ। গলব্লাডারে প্রদাহ। মাইগ্রেন। ভার্টিগো। ব্রেন ইনজিউরি বা ব্রেন টিউমার। পেটের আলসার। হাইপারঅ্যাসিডিটি। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস। ভয়। অপ্রীতিকর গন্ধ। খাওয়া দাওয়ার ব্যাধি। খাদ্যে বিষক্রিয়া। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। সাধারণ অ্যানাস্থেসিয়া। কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি।

বমির নিরাময়

[সম্পাদনা]

এটি কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?

বমি বমি ভাব এবং বমি করার অনেক কারণ হতে পারে, তাই নির্দিষ্ট কারণ খুজে বার করাটা জরুরী সফলভাবে চিকিৎসা করার জন্য। এই উপসর্গগুলি কি কারণে দেখা দিচ্ছে তা বোঝার জন্য রোগীর চিকিত্‍সাগত ইতিহাস এবং তার ব্যক্তিগত ইতিহাস সাহায্য করে, আর সাধারণত অন্য নির্দিষ্ট উপসর্গগুলিও রোগের অন্তরনিহিত কারণ বুঝতে সাহায্য করে। ইমেজ স্টাডিং, রক্ত পরীক্ষা বা কোন নির্দিষ্ট রোগের জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে যাতে আমরা রোগের অবস্থা জানতে পারি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বমি স্ব সীমিত এবং পেটের সব জিনিস বেড়িয়ে যাওয়ার পরে বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন পরে। চিকিৎসার মধ্যে শুধু বমি বমি ভাবের এবং বমি করার যত্ন নেওয়াই নয় বরং অন্তরনিহিত কারণের চিকিৎসা করাও হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসার পদ্ধতির উপদেশ দেওয়া হয়।

অ্যান্টি নসিয়া এবং অ্যান্টি এমেটিক ওষুধ। যদি আপনি গর্ভবতী হন, তাহলে আপনি নিজের গায়নোকোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে তবে ওষুধ খাবেন। অ্যান্টি-মোশান অসুস্থতার প্রতিরধকারক ওষুধ। যে তরল ক্ষয় হয়েছে তার ভরণ করার জন্য, মৌখিক হাইড্রেশনের মিশ্রণ বা স্যালাইনের মাধ্যমে রিহাইড্রেশন থেরাপি দেওয়া হয়। কিছু প্রাকৃতিক টোটকা যেমন আদার ছোট টুকরো বা লবঙ্গ মুখে রাখলে বমি বমি ভাব থেকে রেহাই দিতে পারে। বমি বমি ভাব এড়াতে অল্প অল্প করে খাওয়া এবং খাবার খাওয়ার পর জল খাওয়া, খাওয়ার সময় জল খাওয়ার থকে বেশি সাহয্য করবে। যদি বমি করা ওষুধের মধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে ডাক্তার দেখান।

বমন প্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

বমিতে নিসৃত পদার্থ

[সম্পাদনা]
  • অম্লস্বাদ => পাকস্থলী উৎস (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড)
  • তিক্ত স্বাদ ও পীত(হলুদ) বা হরিৎ (সবুজ) বর্ণ => ক্ষুদ্রান্ত্র উৎস (পিত্ত)
  • সদ্যভুক্ত খাদ্য => স্বাভাবিক
  • কয়েকদিন আগে খাওয়া খাবার => খাদ্যনালীর অবরোধ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Tintinalli, Judith E. (২০১০)। Emergency Medicine: A Comprehensive Study Guide (Emergency Medicine (Tintinalli))। New York: McGraw-Hill Companies। পৃষ্ঠা 830। আইএসবিএন 978-0-07-148480-0