ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | বিজয়সিংহ মাধবজী মার্চেন্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | বোম্বে, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | ১২ অক্টোবর ১৯১১|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৭ অক্টোবর ১৯৮৭ বোম্বে, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৭৬)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১৫) | ১৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২ নভেম্বর ১৯৫১ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৯-১৯৫১ | বোম্বে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ |
বিজয়সিংহ মাধবজী মার্চেন্ট (মারাঠি: विजय मर्चंट; জন্ম: ১২ অক্টোবর, ১৯১১ - মৃত্যু: ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৭) ব্রিটিশ ভারতের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল বিজয় মাধবজী থাকেরসে। ১৯২৯ থেকে ১৯৫১ সময়কালে ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন বিজয় মার্চেন্ট।
;১৯১১ সালে সম্পদশালী পরিবারের সন্তানরূপে বোম্বেতে মার্চেন্টের জন্ম। কলেজ পর্যায়েই অসাধারণ ক্রিকেটার ছিলেন। বোম্বের সাইডেনহাম কলেজে অধ্যয়নকালীন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাইডেনহামে তার সফলতা লাভের প্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের বোম্বে চতুর্দেশীয় প্রতিযোগিতায় হিন্দু ক্রিকেট দলের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন তিনি। ১৯৩১ সালের বোম্বে আন্তঃকলেজ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ৫০৪ রানের পাশাপাশি ২৯ উইকেট লাভ করে রেকর্ড গড়েন।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে অন্যতম ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিজয় হাজারের সাথে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। বোম্বে পঞ্চদেশীয় খেলায় বহিঃএকাদশের বিপক্ষে হাজারের গড়া ২৪২ রানের বিপরীতে তিনি মুসলিম দলের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ২৫০। পরের ইনিংসেই হাজারে দলের ৩৮৭ রানের মধ্যে করেন ৩০৯ রান। পরবর্তীতে রঞ্জি ট্রফিতে মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে মনোরম ৩৫৯ রান তুলেন তিনি।
মার্চেন্টের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের ব্যাপ্তিকাল ১৮ বছরের ছিল। এ সময়ে তিনি মাত্র দশ টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন যার সবগুলোই ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে সফলতা লাভের ফলে ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলার জন্য অন্তর্ভুক্ত হন। সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে বোম্বে জিমখানা তথা ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অংশ নেন।[১] ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এর পূর্বে ১৯৩২ সালে ভারত দল প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলায় অংশ নেয়। শুরুতে তাকে দলের সদস্য করা হলেও বিজয় মার্চেন্টসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও জানুয়ারি, ১৯৩২ সালে মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এতে অংশ নেননি।[২]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সময় নষ্ট হয়। এছাড়াও দূর্বল স্বাস্থ্যের কারণে অস্ট্রেলিয়া সফরে যেতে পারেননি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেননি। তবে দিল্লি টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে ১৫৪ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন। এটিই তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল। এরফলে ভারতের বয়োঃজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে সেঞ্চুরিকালীন তার বয়স ছিল ৪০ বছর ২১ দিন। ফিল্ডিং চলাকালে কাঁধে আঘাত পেলে তাকে জোরপূর্বক খেলার জগৎ থেকে বিদায় নিতে হয়।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১০টি টেস্টে ভারত দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টেস্টে সীমিত পর্যায়ে অংশগ্রহণ করলেও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত প্রভাববিস্তার করেছেন। ৭১.৬৪ গড়ে রান সংগ্রহ করে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড়ের অধিকারী হন। কেবলমাত্র ডন ব্র্যাডম্যানই তার তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। বোম্বে স্কুল থেকে আগত ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে তিনি তার সঠিক কৌশল অবলম্বন, ইস্পাততুল্য ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনভাবে ব্যাট করতে অনাগ্রহতা প্রকাশের কারণে অনেকের কাছেই তা অনুসরণীয়। পরবর্তীতে শচীন তেন্ডুলকরের আবির্ভাবে এ দৃষ্টিভঙ্গীটি ভেঙ্গে পড়ে ও নতুনভাবে লিখিত হয়।
সমগ্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি দুইবার ইংল্যান্ড সফরে যান ও আট শতাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার সিবি ফ্রাই মন্তব্য করেন যে, তার মুখে রঙ লাগিয়ে শ্বেতাঙ্গের তকমা লাগিয়ে আমাদের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামাই।[৩]
মাত্র দশ টেস্টে অংশগ্রহণ করলেও বিজয় মার্চেন্ট তার সময়কালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। চমৎকার পায়ের কারুকাজ, দৃষ্টিনন্দন কাটে আকর্ষণীয় স্ট্রোক মারতেন। এছাড়াও গ্ল্যান্স ও লেট-কাটের সমারোহতায় গড়া খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে হুক স্ট্রোকও মারতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৭১.৬৪ যা অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যানের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ঘরোয়া রঞ্জি ট্রফিতে ৪৭ ইনিংসে ৯৮.৭৫ গড়ে রান তুলেছেন। উইকেটে আবরণবিহীন অবস্থায় তার এ রানগুলো আসে।
১৯৩৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন।
ক্রিকেটের পাশাপাশি তিনি হিন্দুস্তান স্পিনিং এন্ড ওয়েভিং মিলসের (থাকেরসে গ্রুপ) সাথে জড়িত ছিলেন। তার ভাই উদয় মার্চেন্ট প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি ক্রিকেট প্রশাসক মনোনীত হন। এছাড়াও ধারাভাষ্যকার, লেখক ও জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন বিজয় মার্চেন্ট। ‘বিজয় মার্চেন্টের সাথে ক্রিকেট’ শিরোনামীয় বেতার অনুষ্ঠান বিবিধ ভারতীতে প্রত্যেক রোববার বিকেলে বিজয় মার্চেন্টের উপস্থাপনায় প্রচারিত হতো।[৪] আনু ডি. আগরওয়াল এক জরীপ চালিয়ে দেখেছেন যে, অনুষ্ঠানটি অন্যতম সেরা শ্রোতাপ্রিয় অনুষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছিল।[৫]
৭৬ বছর বয়সে ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় বিজয় মার্চেন্টের দেহাবসান ঘটে।