বিশ্ব রঞ্জন নাগ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৬ এপ্রিল ২০০৪ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৭১)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
পরিচিতির কারণ | অর্ধপরিবাহী বিষয়ক গবেষণা |
পুরস্কার |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | |
ডক্টরাল উপদেষ্টা |
|
বিশ্ব রঞ্জন নাগ (১ অক্টোবর ১৯৩২ – ৬ এপ্রিল ২০০৪) ছিলেন একজন ভারতীয় পদার্থবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের শিশির কুমার মিত্র চেয়ার অধ্যাপক। অর্ধপরিবাহী পদার্থবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার জন্য পরিচিত, বিশ্ব রঞ্জন নাগ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী ও ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর নির্বাচিত ফেলো। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারত সরকারের শীর্ষ সংস্থা বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, তাঁকে ভৌত বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে ভূষিত করে, যা সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক পুরস্কারসমূহের মধ্যে একটি।[১][টীকা ১]
বিশ্ব রঞ্জন নাগ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ব রঞ্জন নাগ ১৯৪৯–৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতাস্থিত প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতক অধ্যয়ন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ বিদ্যায়তনে (রাসবিহারী শিক্ষাপ্রাঙ্গন) ইনস্টিটিউট অব রেডিওফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স (আইআরই) থেকে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমটেক) অর্জন করেন।[২] তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আইআরই-এর একজন অনুষদ সদস্য হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই সাথে অরুণ কে. চৌধুরীর পরামর্শে ডক্টরেট অধ্যয়ন করেন। এর মধ্যে, তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে এমএস অর্জনের জন্য উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর অতিবাহিত করেন। বিশ্ব রঞ্জন নাগ তাঁর ডক্টর অব ফিলোসফি বা পিএইচডি উপাধি অর্জনের জন্য পুনরায় গবেষণা ও অধ্যয়ন (ডক্টরাল) শুরু করার জন্য কলকাতায় ফিরে আসেন, এবং ১৯৬১ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষকতা পেশা অব্যাহত রেখে তিনি ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে একজন পূর্ণ অধ্যাপক হয়ে ওঠেন।[৩] আরও গবেষণার কারণে তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪] তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিয়মিত একাডেমিক কর্মজীবনের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে শিশির কুমার মিত্র অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন সম্পন্ন করার পরেও তার সহযোগীতা অব্যাহত রাখেন।[৫] এর মধ্যে, তিনি গুইনেডের ব্যাঙ্গরে কমনওয়েলথ অনাবাসিক অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।[৪]
বিশ্ব রঞ্জন নাগের বিবাহ হয়েছিল মৃদুলা রায় চৌধুরীর সহিত, এবং এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে, বিশ্বদীপ ও মৃদুচন্দ। তিনি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এপ্রিল ৭১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[২]
বিশ্ব রঞ্জন নাগের গবেষণা অর্ধপরিবাহীসমূহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল এবং এটি সেই উচ্চ বৈদ্যুতিক প্রতিরোধী কঠিন পদার্থের বৈদ্যুতিক পরিবহন প্রপঞ্চ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি প্রসারিত করতে সাহায্য করেছে।[৬] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রাথমিক বছরগুলিতে, তিনি একদল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন যারা অর্ধপরিবাহী বৈশিষ্ট্যের মাইক্রোওয়েভ পরিমাপের উপর গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন এবং গান প্রভাব ও অণুতরঙ্গ বিকিরণ বিষয়ক উন্নত গবেষণা করেছিলেন।[২] তিনি দ্বি-মাত্রিক ইলেকট্রন গ্যাসের তাপমাত্রার স্বতন্ত্রতা এবং এর অ্যালয় স্ক্যাটারিং সীমিত গতিশীলতা প্রদর্শন করেন, যা ছিল প্রথমবারের মতো আবিষ্কার।[৪][৭] তাঁর গবেষণায় সংকীর্ণ কোয়ান্টাম ওয়েল-এ ইলেকট্রন শক্তির বিচ্ছুরণের অ-পরাবৃত্তীয় প্রকৃতি প্রকাশ পেয়েছে, এবং এটি সীমিত বাধা উচ্চতা ও ওয়েল প্রস্থ সহ কোয়ান্টাম ওয়েলসের জন্য সীমিত গতিশীলতার ইন্টারফেস রুক্ষতা বিক্ষিপ্তকরণের তত্ত্বকে পরিবর্তন করেছে। তরল-পর্যায়ে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি অর্ধপরিবাহী III-V যৌগসমূহ, অ্যাকোস্টো-ইলেকট্রিক ইফেক্ট ও ফ্রি ক্যারিয়ার শোষণ, জিনি সহগ এবং হট-ইলেক্ট্রন গ্যালভানোম্যাগনেটিক ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত সি সহগ ছিল তাঁর গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্র।[২] তিনি অর্ধপরিবাহী সম্পর্কিত ইলেক্ট্রন পরিবহন তত্ত্বের বিকাশে অবদান রেখেছিলেন, এবং বেগের পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রসারণ ও শব্দের পরামিতি সম্পর্কিত সহগ গণনার জন্য মন্টে কার্লো পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।[৩] অণুতরঙ্গ যোগাযোগ ও রাডার, বিশেষ করে অণুতরঙ্গ অর্ধপরিবাহী যন্ত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর কাজের মূল অংশের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।[৮] তাঁর অধ্যয়ন বেশ কয়েকটি নিবন্ধের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হয়েছে[টীকা ২] এবং তাদের মধ্যে ইন্ডিয়ান একাডেমী অব সায়েন্সেস-এর নিবন্ধ ভাণ্ডার ১৯০ টি নিবন্ধকে তালিকাভুক্ত করেছে।[৯] তিনি তিনটি মনোগ্রাফ রচনা করেন, থিওরি অব ইলেকট্রিকাল ট্রান্সপোর্ট ইন সেমিকন্ডাক্টরস,[১০] ফিসিক্স অব কোয়ান্টাম ওয়েল ডেভিসেস[১১] এবং ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট ইন কম্পাউন্ড সেমিকন্ডাক্টরস[১২] যার মধ্যে সর্বশেষ উল্লিখিতটি গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র পাঠ্য বলে জানা গেছে।[২] তিনি অন্যদের দ্বারা প্রকাশিত বইতে অধ্যায় রচনার মধ্যদিয়ে অবদান রেখেছিলেন[১৩][১৪][১৫], এবং তাঁর কাজ অনেক বইতে উদ্ধৃত হয়েছে।[১৬][১৭][১৮][১৯][২০]
বিশ্ব রঞ্জন নাগ, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফেলো,[২] ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশ ইনস্টিটিউশন অব রেডিও ইঞ্জিনিয়ার্সের জে.সি. বোস মেমোরিয়াল পুরস্কার পান।[৩] বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাঁকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করে, যা ভারতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি।[২১] তিনি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হন[২২] এবং ভারতীয় ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমী তাঁকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে একজন ফেলো হিসেবে নির্বাচিত করে;[২৩] একাডেমী তাকে আবার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে উপাদান বিজ্ঞানের জন্য আইএনএসএ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে।[২৪] তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের নির্বাচিত ফেলো হন।[২৫] বিশ্ব রঞ্জন নাগ একাডেমিক চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার এক বছর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্মানে একটি বার্ষিক সম্মেলন – "ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার অ্যান্ড ডিভাইসস ফর কমিউনিকেশন (সিওডিইসি)" – প্রতিষ্ঠা করে।[৫]