বিষাক্ত উদ্ভিদ

বিষাক্ত উদ্ভিদ হচ্ছে সেই সব উদ্ভিদ বা উদ্ভিদজাত দ্রব্য যা মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর দেহে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে অথবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে যে উদ্ভিদ তাজা অবস্থায় বিষাক্ত কিন্তু শুকালে বা রান্না করলে বিষাক্ততা হারায় তারা বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য হবে না। এসব উদ্ভিদের পাতা, ছাল, ফুল এবং ফলে বিষ থাকতে পারে। অনেক উদ্ভিদের ল্যাটেক্স খুব বিষাক্ত হয়ে থাকে। বনের প্রাণীরাও এসব গাছ থেকে দূরে থাকে। সব উদ্ভিদই ভক্ষণযোগ্য কিংবা স্পর্শ করার মতো নয়। বিছুটি গাছ গায়ে জ্বালা ধরায়, ইউফোবিয়া এবং পয়জন আইভি ত্বকে ফুসকুড়ির সৃষ্টি করে।[]

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে তখনই গণ্য হবে যখন উদ্ভিদের কোষে কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য যেমন অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড, টক্সালবুমিন বা এদের মতো অন্য রাসায়নিক দ্রব্য মাত্রাতিরিক্ত থাকে। তবে এসব দ্রব্য যখন পরিমিত মাত্রায় থাকে তখন অধিকাংশ আপাত বিষাক্ত উদ্ভিদ একই রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে চিকিৎসাক্ষেত্রে উপকারী উদ্ভিদ হিসেবে হতে পারে। তাই বিষাক্ত উদ্ভিদ ও ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানা বেশ দূরহ কাজ। কিছু কিছু উদ্ভিদ মারাত্মক বিষাক্ত অর্থাৎ এগুলি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই এগুলি মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করার ও মানুষ মারার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। বেশ কিছু উদ্ভিদ অপরাধমূলক গর্ভপাত এবং অন্যান্য অসৎ উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে বিষাক্ত উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে প্রায় ৫,০০০ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ জন্মায়। এদের মধ্যে ভেষজ উদ্ভিদের সংখ্যা প্রায় ৫০০, কারণ এসব উদ্ভিদের ঔষধি গুণাবলি আছে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে কিছু উদ্ভিদকে বিষাক্ত উদ্ভিদ শ্রেণিভুক্ত করা হয়, কারণ এগুলোকে সতর্ক ভাবে ব্যবহার করা না হলে বা পরিমিত মাত্রায় ব্যবহৃত না হলে প্রাণী দেহে বিষের প্রভাব সৃষ্টি করে।

বিষাক্ত উদ্ভিদের তালিকা

[সম্পাদনা]
নাম বৈজ্ঞানিক নাম বিষাক্ত অংশ বিষক্রিয়ার ধরন ছবি
বিছুটি Tragia involucrata পাতা, রস, পাতার গুড়ো চুলকানি হয়,ফুলে যায়, রস হয়।
কুঁচ Abrus precatorius বীজ, শিকড় গর্ভপাতক, বমনকারক, রেচক ও পশুবিষ।
শিয়ালকাঁটা Argemone Mexicana বীজ, গাছের কষ বীজ মারাত্মক শোথ, বমন ও উদারাময় সৃজক এবং এর কষ উপদাহক।
হিজল Barringtonia acutangula ফল ফল মারাত্মক বমনকারক
আকন্দ Calotropis gigantea, C. procera পাতা, গাছের কষ কষ ভীষণ রেচক, গর্ভপাতক, শিশু হন্তারক, পাতা মানুষ হন্তারক বিষ।
স্বর্ণলতা Cuscuta Reflexa পুরো উদ্ভিদ প্রজনন ক্ষমতারোধি, বমন সৃজক, গর্ভপাতক।
ছিটা Plumbago zeylanica পুরো উদ্ভিদ এর রস পঙ্গুত্ব সৃষ্টি করে।
রক্তকরবী Nerium indicum সকল অঙ্গ খেলে মৃত্যুর কারণ হয়, স্থানিক প্রয়োগে গর্ভপাত ঘটে।
টগর Tabernaemontana divaricata ফল, বীজ ফল মারাত্মক বিষাক্ত, বীজ মাদক ও প্রলাপসৃজক
কলকে ফুল বা হলদে করবী Thevetia peruviana বাকল, বীজ, কষ ফল মারাত্মক অবসাদক, পঙ্গুত্ব আরোপক ও ঘাতক।
ধুতুরা Dutura metel সমস্ত উদ্ভিদ চেতনানাশক, প্রলাপসৃজক।
আপেল Malus domestica বীজ মৃদু বিষাক্ত যাতে সামান্য পরিমাণ এমাগডালিন, সায়ানাইড এবং গ্লাইকোসাইড থাকে বীজের এসব রাসায়নিক মানুষের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর নয় তবে অধিক মাত্রায় বীজ খেলে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]