বৃষ্টিচ্ছায়

বৃষ্টিচ্ছায়ের প্রভাব

বৃষ্টিচ্ছায় হ'ল একটি পার্বত্য অঞ্চলের অনুবাত ঢালের দিকের শুষ্ক অঞ্চল (বাতাস থেকে দূরে)। পর্বতমালা, বৃষ্টি উৎপাদনকারী আবহাওয়া ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে না দিয়ে তার "ছায়া" হিসাবে একটি শুষ্ক অংশ (পর্বত) পিছনের দিকে পাঠিয়ে দেয়। বায়ু এবং আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হ'য়ে পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছে, যেখানে সেই শীর্ষ অতিক্রম করার আগে ঘনীভূত হ'য়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাতাস, যথেষ্ট আর্দ্রতা-ছাড়া হ'য়ে, পর্বত অতিক্রম ক'রে অগ্রসর হওয়ার সময় "বৃষ্টিচ্ছায়" নামক একটি শুষ্কতর দিক তৈরি করে।

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

এই অবস্থার সৃষ্টি হয় কারণ, উষ্ণ আর্দ্র বায়ু অরোগ্রাফিক উত্তোলন-এর ফলে পর্বতমালার শীর্ষে উঠে যায়। ক্রমবর্ধমান উচ্চতার সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হ্রাস পেতে থাকার জন্য, বায়ু প্রসারিত হয় এবং রুদ্ধতাপীয় ঠান্ডা বিন্দুতে গিয়ে, বাতাস তার রুদ্ধতাপীয় শিশির বিন্দুতে পৌঁছোয়। প্রসঙ্গত, সাধারণত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যে ধ্রুব চাপ শিশির বিন্দুর উল্লেখ থাকে, তার সাথে এই রুদ্ধতাপীয় শিশির বিন্দু এক নয়। এই রুদ্ধতাপীয় শিশির বিন্দুতে, আর্দ্রতা, পাহাড়ের উপর ঘনীভূত হয় এবং পর্বতের শীর্ষে প্রতিবাত বা বাতাসের দিকের ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর অনুবাত ঢাল বরাবর বাতাসের অবতরণের সময় আগেই প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটানোর কারণে, তার আর্দ্রতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে। সাধারণত, পর্বতের অনুবাত ঢালে বাতাস নীচে নামার সময় রুদ্ধতাপীয় সংঙ্কোচন (দেখুন ফোহেন বাতাস) এর কারণে উষ্ণতর হ'তে থাকে। এর ফলে তার আর্দ্রতার শোষণ বেড়ে যায় এবং সেখানে একটি শুষ্ক অঞ্চল তৈরি করে। []

উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল

[সম্পাদনা]
তিব্বতি মালভূমি (শীর্ষ), সম্ভবত বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের সেরা উদাহরণ। হিমালয় পেরিয়ে বৃষ্টিপাত হতে পারে না ব'লে পর্বতমালার অনুবাত ঢালে জলবায়ু হয় শুষ্ক প্রকৃতির।

পৃথিবীর নিরক্ষ অঞ্চলকে ঘিরে নিয়মিত ধরনের বাতাস নিয়ন্ত্রক নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রায় ৩০° N এবং ৩০° S এর মধ্যবর্তী অংশে, মূলত উত্তর গোলার্ধ-এ উত্তর-পূর্ব দিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধ-এ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বাণিজ্য বাতাস প্রবাহিত হয়। পশ্চিমা হ'ল ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশ-এর মধ্যবর্তী অক্ষাংশ-এ অবস্থান করা বাতাস, যা মূলত উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। মধ্য অক্ষাংশের সবচেয়ে শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাস ৩০ থেকে ৫০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে গর্জনশীল চল্লিশায় আসতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

কিছু উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:

এশিয়া

[সম্পাদনা]
আগাস্থিয়ামালাই পাহাড় মৌসুমী বৃষ্টি থেকে তিরুনেলভেল্লিকে (ভারত) বাধা দেয়। ফলে তৈরী হয়েছে একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।

দক্ষিণ আমেরিকা

[সম্পাদনা]
  • চিলির আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর শুষ্কতম অ-মেরু মরুভূমি। কারণ এখানে উভয় দিক থেকেই আদ্রতা ঢুকতে বাধা পায়। আন্দিজ পর্বতমালা পূর্ব দিক থেকে অ্যামাজন অববাহিকার বাতাসের আদ্রতা আসা থেকে বিরত রাখে এবং চিলিয়ান কোস্ট রেঞ্জ পশ্চিম দিক থেকে মহাসাগরীয় প্রভাব আসা থেকে বিরত রাখে।
  • ক্যুয়ো এবং পূর্ব পাটাগোনিয়া বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। আন্দিজ-এর উচ্চতা কমার সাথে সাথে, তার পূর্ব পাদদেশের পাশের জমির শুষ্কতাও দক্ষিণে হ্রাস পায়। ফলে আটলান্টিক উপকূলীয় জলবায়ুর নিদর্শন গঠনে অবদান রাখে। আর তারই ফলে প্যাটাগোনিয়ান মরুভূমি আরও পুরোপুরি বিকাশ লাভ করেছে, যা শুকনো ডায়াগোনাল নামে পরিচিত।[] ক্যুয়ো এবং উত্তর প্যাটাগোনিয়ার আর্জেন্টিনিয়ান ওয়াইন অঞ্চলটি পুরোপুরি সেচের উপর নির্ভরশীল। আন্দিজ-এর হিমবাহ নিসৃত বরফ গলা জলে পুষ্ট বহু নদী থেকে নেওয়া জল ব্যবহার করে এই সেচের কাজ চলে।
  • উত্তর কলম্বিয়ার গুয়াজিরা উপদ্বীপ, সিয়েরা নেভাদা দে সান্তা মার্তার একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। এর ক্রান্তীয় অক্ষাংশ প্রায় শুষ্ক। বছরের সাত থেকে আট মাস প্রায় বৃষ্টিপাত হয় না এবং সেচ ছাড়া সেখানে কৃষি কাজ অসম্ভব।

উত্তর আমেরিকা

[সম্পাদনা]

বৃহত্তর ক্ষেত্রে, উত্তর আমেরিকার আভ্যন্তরীণ সমতল পুরোপুরি উত্তর আমেরিকান কর্ডিলেরা পর্বত দ্বারা প্রশান্ত মহাসাগরের বহু পরিচিত পশ্চিমা থেকে রক্ষা পেয়েছে। কর্ডিলেরার মধ্যে নির্দিষ্ট উপত্যকার অঞ্চলগুলিতে নির্দিষ্ট পর্বতমালার প্রত্যক্ষ ফাঁকে আরও স্পষ্ট করে প্রভাব দেখা যায়। পশ্চিম ইউনাইটেড স্টেটস-এর বেশিরভাগ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সিয়েরা নেভাডা এবং ক্যাসকেডস কারণে হয়েছে।[]

ইউরোপ

[সম্পাদনা]

উত্তর ইংল্যান্ডের পেনাইন, ওয়েলশ পর্বতমালা, লেক ডিস্ট্রিক্ট এবং স্কটল্যান্ডের উচ্চভূমি একটি বৃষ্টিচ্ছায় তৈরি করেছে। এর বেশিরভাগ অংশই পূর্ব যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রচলিত দক্ষিণ-পশ্চিমের বাতাসের কারণেই এটি ঘটেছে। উদাহরণ হিসাবে, ম্যানচেস্টার এবং গ্লাসগোতে যথাক্রমে শেফিল্ড এবং এডিনবার্গ-এর দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয় (যদিও এডিনবার্গ এবং গ্লাসগোয়ের মধ্যে কোনও পর্বত নেই)। বৈসাদৃশ্যটি উত্তরে আরও শক্তিশালী। সেখানে আবেরডিন-এ ফোর্ট উইলিয়াম বা স্কাই (Skye)-এর এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টিপাত হয়। ফেনস অফ ইস্ট অ্যাঞ্জেলিয়া এবং সেভিলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একই রকম।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Whiteman, C. David (২০০০)। Mountain Meteorology: Fundamentals and Applications। Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-513271-8 
  2. Bruniard, Enrique D. (১৯৮২)। "La diagonal árida Argentina: un límite climático real"। Revista Geográfica (Spanish ভাষায়): 5–20। 
  3. "How mountains influence rainfall patterns"USA Today। ২০০৭-১১-০১। ২০১১-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৯ 
  4. Glossary of Meteorology (২০০৯)। "Westerlies"। American Meteorological Society। ২০১০-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৫ 
  5. Sue Ferguson (২০০১-০৯-০৭)। "Climatology of the Interior Columbia River Basin" (পিডিএফ)। Interior Columbia Basin Ecosystem Management Project। ২০০৯-০৫-১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-১২ 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  7. "UK Rainfall averages"। ২০১০-০২-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।