চতুর্দশ শতাব্দী হতে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্রুনাইয়ের সুলতান ব্রুনাইকে শাসন করছে। এই অঞ্চলটি বোর্নিও এর উত্তরাঞ্চল এবং ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।ইউরোপিয়ানরা ধীরে ধীরে এই আঞ্চলিক ক্ষমতা অবসানে প্রভাব খাটায়। পরে স্পেনের সাথে একটি ছোট যুদ্ধ হয়, যেখানে ব্রুনাই জয় লাভ করে। এই ব্রুনাই সম্রাজ্ঞ্য উনবিংশ্ব শতাব্দীতে দ্রুত লোপ পেতে থাকে যখন তারা সারাওয়াক এর সাদা রাজাদের কাছে বিরাট সংখক ভূমি হারায়, যার ফলস্রুতিতে এটি একটি দুইজায়গায় বিচ্ছিন্ন একটি ছোট অঞ্চলে পরিণত হয়। ব্রুনাই ১৮৮৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে ছিল।
মাগেল্লানের জাহাজ আসার আগে এই ব্রুনাইয়ের ইতিহাস সম্পর্কেআমরা যা জানি তা হলো চীনাদের ব্যাখ্যা এবং স্থানীয় কিংবদন্তিদের কাহিনী। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন বর্তমান সুলতানীয় ব্রুনাইয়ের আদিরাষ্ট্র রয়েছে। রয়েছে। একটি সম্ভাব্য আদিরাষ্ট্র ছিল বিজয়পুর, যেটি সম্ভবতঃ সপ্তম শতাব্দীতে বোর্নিওতে অবস্থিত ছিল।[ক] এটি সম্ভবতঃ সুমাত্রার উপর বেড়্রে উঠা শ্রীবিজয় রাজ্যের অধীনস্থ রাষ্ট্র ছিল। আরেকটি সম্ভাব্য আদিরাষ্ট্রর নাম ছিল পো-নি(পিনয়িনঃ বোনি) [১] ্দশম শতাব্দি পর্যন্ত এই পো-নি রাষ্ট্রের সাথে সং সম্রাজ্ঞ্যর যোগাযোগ ছিল এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে চীনাদের সাথে পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে এটি জাভান মাজাপাহিত রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৩৬৫ সালে প্রাপানসা রচিত, নগরক্রিতগামা বইয়ের ১৪তম অধ্যায়ে বেরুন কে মাজাহপাহিত এর একটি রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা আছে।[২]
১৪৬৭ সালে ব্রুনাই সাম্রাজ্ঞ্য হিসেবে
১৭৭০ সালে ব্রুনাইয়ের সুলতানী হিসেবে
পিগাফেত্তা আসার আগ পর্যন্ত পাওয়া বেশীরবাগ ঐতিহাসিক তথ্য হচ্ছে রুপকথা এবং অনুমান নির্ভর। তবে ১৩৭০ সালে আমরা দেখতে পাই, ঝু ইয়ুয়ান ঝ্যাং ব্রুনাইতে ইন্দোনেশিয়া হয়ে রাষ্ট্রদূত পাঠান, এবং, মিং সম্রাজ্ঞ্যকে ব্রুনাই কর দিতো তখন। এটি মিং সম্রাজ্ঞ্যের প্রভাভকে নির্দেশ করে, এবং একইসাথে ওং সুম পিং এরও ব্রুনাইয়ের উপর প্রভাব নির্দেশ করে। ৩০ বছরে এই দুই শক্তি দ্রুত একভূত হয়। চীনারা পূর্বের কিনাবাতাঙ্গান নদী হতে উত্তরের বোর্নিও পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে।
১৪০২ সালে, সুলতান মুহাম্মাদ শাহের ( তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে আওাং আলাক বেতাতার নামে পরিচিত ছিলেন)মৃত্যুর পর তার পুত্র মজিদ হাসান তার সিংহাসনে বসেন। ওং সুম পিং এবং পেঙ্গিরস্ন তেমেংগং হন রাজদুত। হাসানকে ব্রুনাইয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় সুলতান হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। ১৪০৬ সালে, সুলতান মজিদ হাসানের মৃত্যুর পরের দুই বছর ক্ষমতার শুন্যতা দেখা যায়। এই দুই বছরে, ব্রুনাইয়ের উচ্চশ্রেণীরা ক্ষমতা দখলের জন্য প্রতিযোগিতাইয় মগ্ন ছিল; শেষে ওং সুম পিং এর চেষ্টায় সুলতান আহমাদ বিজিত হিসেবে আসেন এবং পেঙ্গিরান তেমেংগং এ দল পরাজিত হয়। আহমাদ এভাবে ব্রুনাইয়ের আনুষ্ঠানিক ২য় সুলতান হোন। সুলতান আহমাদ ওং সুম পিং এর বোনকে বিয়ে করেন। ্সুলতানের উপর তার প্রভাব থাকায় সে সুলতানকে তখনকার আঞ্চলিক ক্ষমতাধর চীনে ভ্রমণে উপদেশ দেন। তাই সুলতান মিং সম্রাজ্ঞ্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যে ওং সুম পিংকে ভীনে রাষ্ট্রদুত হিসেবে প্রেরণ করেন। ওং সুম পিং এবং তার সফরসঙ্গীরা ফুজিয়ান অঞ্চলের উপকূলে নামেন; শাসক ইয়ং লে ওং সুম পিং এর জন্য ওখানে তাদের জন্য উৎসবের আয়োজন করেন।
পরে ওং সুম পিং সেই দীর্ঘ যাত্রা শেষে ব্রুনাই ফিরতে পারেননি, তিনি নানজিং এ মারা যান। তার মৃত্যুর সময় সে সম্রাট ইয়ং লে কে কিছু প্রতিজ্ঞা করেন যা হচ্ছে (১) ব্রুনাই একটি উপরাষ্ট্র হিসেবে থাকবে, (২) অনেক আগে চীনের মঙ্গোল তুয়ান সম্রাজ্ঞ্যের অধীনে থাকা সুঙ্গাই কিনাবাতাঙ্গান এবং এর আশেপাশের অঞ্চল চীনের অধীনে আবার যুক্ত হবে, (৩) এইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ উচ্চতার পাহাড়টির নাম হবে "কিনাবালু" বা "নতুন চীন" অথবা অন্য কথায় "চীনা বিধবা"। সম্রাট ইয়ং লে তার ইচ্ছা গ্রহণ করেন এবং ওং এর পুত্র আওাংকে নতুন শাসক হিসেবে হিয়গ দেন। এবং ব্রুনাই পাহাড়কে চ্যং নিং পাহাড় নামকরণ করেন যা মানে আরবিতে হচ্ছে جبل السلام-জাবালে আলসালাম( শান্তির পাহাড়)
১৪০৮ সালে আওাং চীনা অফিসার, সেনাদের নিরাপত্তায় ব্রুনাইতে ফিরেন। আওাং ব্রুনাই ফিরে তার বাবার পদে আদিষ্ট হন এবং সুলতানের রাজনৈতিক পরামর্শক হোন।. চীনারা তাকে তখনও জেনারেল ছুং পিং নামে ডাকতো। ১৪১২ সালে সে সম্রাট ইয়উং লেকে কর পাঠায়। ওং সুম পিং এর স্ত্রীর সমাধী ব্রুনাইয়ের বুকিত চিনাতে অবস্থিত। তার বোন, যিনি সুলতানের স্ত্রী, একটি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সেই কন্যাই পরে সুলতানের উত্তরাধীকার হোন এনং তার স্বামী সুলতান শরীফ আলি سلطان شريف عل (তিনিও সায়্যিদিনা ছিলেন-سيدنا) হোন সুলতান, তিনি আরব উপদ্বীপ لشبة الجزيرة العربية হতে আসেন। সুলতান শরীফ আলি নবী মুহাম্মাদ النبي محمد এর বংশধর ছিলেন। তার নাতী-নাত্নী এবং এইসব আরবরা হচ্ছে আজকের ব্রুনাইয়ের সুলতানের পূর্বসূরী।
ব্রুনাইবাসীরা বিশ্বাস করে যে, এই ওং সুম পিং হচ্ছেন ব্রুনাই রাজপরিবারের পূর্বসূরী। যদিও ব্রুনাই রাজপরিবার মেলায়ু ইসলাম বেরাজা ملاي إسلام براج এই ধারণার বিশ্বাসী, তবুও তারা চীনা সম্পর্ক অস্বীকার করে না। ওং সুম পিং এর নাম ব্রুনাই সুলতানের বংশতালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেই বেগওয়ানে( সংস্কৃতিতে श्री भगवान्) بندر سري بغاوان, জালান ওং সুম পিং(আরবীতে: سارع ونغ سوم بينغ) নামে রাস্তা রয়েছে এবং মুরিউম ব্রুনাইয়তেও ওং সুম পিং এর বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। ওং সুম অইং এর পুত্রের সমাধীও সকরকারের সংরক্ষণে রয়েছে।
ইতিহাসবিদ " সিলসিলাহ রাজা-রাজা সুলু" ওং সুম পিং এর অস্তিত্বে আরো প্রমাণ দেন। সিলসিলাহ রাজা সুলু এর মতে, ওং সুম পিং ব্রুনাইয়ে কিছু চীনা সেনাদের সাথে উত্তর বোর্নিওতে আসেন অমুল্য রত্ন খুজতে, যেটা পাহাড়ের সর্বোচ্চ স্থানে ড্রাগন দ্বারা পাহারাকৃত অবস্থায় ছিল। পরে ওং সুম পিং ও তার সঙ্গীরা উত্তর বোর্নিওর পূর্ব উপকূলে ভিড়েন। চীনারা তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বলে পাহাড় উঠার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই যানত, ফলে তারা যাত্রা শুরু করে একটি বড় নদীর মুখ হতে এবং ঐ নদী বেয়ে তার উৎসে তারা আসে। ওং সুম পিং কিনাবাতাঙ্গান নদীতে অবস্থান করে তার কিছু সঙ্গীকে উপরে পাটান। দুর্ভাগ্যবশত তারা দেখতে পায় এই কিনাবাতাঙ্গান নদীর উৎস কিনাবালু পাহাড় না। ওং সুম পিং এর মারা যাবার পর, আওাং যিনি কিয়াবাতাঙ্গান এর রাজা, লাবুক নদীরে আভিযানে যান। পরে তারা লিওাগু কগিবাঙ্গান এবং লিওাঙ্গু কাওানানান এর সঙ্গমে আরেকটি স্থাপনা তৈরী করতে সমর্থ হয়।
ওং সুম পিং এর লোকরা তাইওয়ানের উপজাতির ছিল, এবং তারা ফরমসান রক্ষী এবং সৈন্য ছিল। দূরের অভিযানের ক্ষেত্রে মিং সম্রাজ্ঞ্যের সৈন্যরা তাদের স্ত্রীদের সাথে যেতে পারত না।.ওং সুম পিং এর লোকেরা স্থানীয়দের বিয়ে করতো, এবং তাদের উত্তরসূরী হচ্ছে এখনকার কাদাযান দুসুন যিনি লং হাউসে স্ট্যাজিং স্টেশন করেছিলেন, যা পরবর্তিতে নুনুক রাগাং এর আবাসস্থান হয়েছিল। ১৪১১ সালে ওং সুম পিং এর আগমনের ৩৬ বছর পর, ওং সুম পিং এর পুত্র আওয়াং দ্বারা সেইসব সৈন্য এবং রক্ষীদের লাবুক নদীতে পাঠানো হয়। দুই নদীর সঙ্গমস্থল, লিওাগু কগিবাঙ্গান(বাম শাখা) এবং লিওাগু কাওানানান(ডদান শাখা), এ আরা পৌছায়, যেখানে ড্রাগন কর্তৃক রক্ষিত অমূল্য রত্নপাওয়ার জন্য অস্থায়ী নিবাস গড়ে তুলা হয়। সব শাখার উৎস নিশ্চিত হবার জন্য সব শাখাতেই দল পাঠানো হয়েছিল। বাম শাখার উৎস ছিল ত্রুস মাদি রানজে পাহাড় এবং ডান খাখার উৎস ছিল কিনাবালু পাহাড়।. পরে এই অস্থায়ী নিবাসটি নুনুক রাগাং নামে স্থায়ী নিবাসে পরিনত হয়, যা কাদাযা-দুসুন লোকদের মূল নিবাসে পরিণত হয়। অস্থায়ী নিবাসে চীনারা অন্য লোকদের কাছে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য লাল রঙের কাপড়ের খন্ড এবং রাল রঙের ব্যানার ঝুলিয়ে রাখত। লাল রঙ চীনা সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, এমনকি এখনও কোনো উনষ্ঠানে যেমন ভূমি উন্নয়ন কর্মসূচীতে লাল রঙ ব্যবহার করতে ভুলে না।[৩] বৈজ্ঞানিকভাবে বান্যান গাছের লাল রঙ হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই, তাই মানুষের কথার উপর ভিত্তি করেই এটি লাল রঙ হিসেবে ধরা হয়, আর এভেবেই নুনুক রাগাং নামটি এসেছে। সৈন্য এবং স্থানীয় মহিলাদের উত্তরসূরীরা হচ্ছে কাদাযান-দুসুন দলের পূর্বপুরুষ। আর এটা কাদাযান-দুসুন এবং তাইওয়ানের ভাষার মিলকে ব্যাখ্যা করে। তাগাহাস গোষ্ঠি কঠোরভাবে দাবি করে তারা হচ্ছে সৈন্যদের উত্তরসূরী।