ব্লু লেগুন: দি অ্যাওয়েকেনিং | |
---|---|
ধরন | |
ভিত্তি | হেনরি ডে ভেরে স্ট্যাকপুল কর্তৃক দ্য ব্লু লেগুন |
চিত্রনাট্য |
|
পরিচালক | |
অভিনয়ে |
|
সঙ্গীত রচয়িতা | ট্রি অ্যাডামস |
মূল দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মূল ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণ | |
নির্বাহী প্রযোজক |
|
প্রযোজক |
|
চিত্রগ্রাহক | |
সম্পাদক | জোশ বেল |
ব্যাপ্তিকাল | ৮৯ মিনিট |
নির্মাণ কোম্পানি |
|
পরিবেশক | সোনি পিকচার্স টেলিভিশন |
মুক্তি | |
মূল নেটওয়ার্ক | লাইফটাইম |
মূল মুক্তির তারিখ | ১৬ জুন ২০১২ |
বহিঃসংযোগ | |
ওয়েবসাইট |
ব্লু লেগুন: দি অ্যাওয়েকেনিং (ইংরেজি: Blue Lagoon: The Awakening) হল একটি মার্কিন টেলিভিশন চলচ্চিত্র। ২০১২ সালের ১৬ জুন লাইফটাইমে এই ছবিটির প্রথম প্রদর্শিত হয়।[১] হেনরি ডে ভেরে স্ট্যাকপুল রচিত উপন্যাস দ্য ব্লু লেগুন এবং সেই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির ছায়া অবলম্বনে এই ছবিটি নির্মিত। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন ইন্ডিয়ানা ইভানস ও ব্রেন্টন থোয়াইটস। পূর্ববর্তী ব্লু লেগুন ছবিগুলির থেকে ব্লু লেগুন: দি অ্যাওয়েকেনিং ছবিটি অনেকটাই আলাদা। প্রথমত, আগের ছবিগুলির প্রেক্ষাপট ছিল ভিক্টোরীয় যুগ; কিন্তু এই ছবিটি নির্মিত হয় সমসাময়িক কালের প্রেক্ষাপটে। দ্বিতীয়ত, আগের ছবিগুলিতে প্রধান চরিত্রদের শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবন অতিবাহিত হয়েছিল এক নির্জন দ্বীপে; কিন্তু এই ছবিতে দেখা যায় তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক হাইস্কুলের ছাত্র, প্রথম যৌবনে একটি দুর্ঘটনার ফলে কিছুদিনের জন্য তাদের একটি নির্জন দ্বীপে আশ্রয় নিতে হয়। তৃতীয়ত, যে দ্বীপে তারা নির্বাসিত হয়েছিল, পূর্ববর্তী ছবিগুলিতে সেটি ছিল একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ, কিন্তু এই ছবিতে সেই দ্বীপটি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত। এছাড়া নির্জন দ্বীপের জগৎ এবং নগরসভ্যতার জীবনযাত্রা দেখানোর জন্য এই ছবিটিতে প্রায় সমান সময় ব্যয়িত হয়েছে। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য ব্লু লেগুন ছবির নায়ক ক্রিস্টোফার অ্যাটকিনসও এই ছবিতে অভিনয় করেন।[১]
হাইস্কুলের শিক্ষার্থী এমা ও ডিন ত্রিনিদাদে গরিব শিশুদের বিদ্যালয় গুড়ে তোলার জন্য একটি ক্লাস ট্রিপে যায়। এমা মেধাবী ছাত্র। স্কুলেও জনপ্রিয়। জীবনে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে তার। হাইস্কুলের কোয়ার্টারব্যাক তার সঙ্গে লঘু প্রেমের ভান করে চলে। যদিও এমা আকর্ষিত হয় ডিনের প্রতি। অন্তর্মুখী ডিন একা থাকতে ভালোবাসে এবং প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছিল সে। একটি ছুরি তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করার পর ডিনের বাবা ডিনকে পাঠিয়ে দেন ট্রিপে। ত্রিনিদাদে দ্বিতীয় দিনে ডিন ও এমা আলাদা আলাদা ভাবে একটি বোট পার্টিতে যোগ দেয়। পার্টি চলাকালীন পুলিশ সেখানে খানাতল্লাশি করতে এলে এমা বোট থেকে পড়ে যায়। ডিন জলে ঝাঁপ দিয়ে এমাকে একটি ডিঙিতে উঠে আসতে সাহায্য করে। ঝামেলা এড়াতে ডিন বোট থেকে ডিঙিটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু তারপরই তারা বুঝতে পারে যে সেই ডিঙিতে কোনও মোটর নেই।
দু’জনে উপস্থিত হয় একটি দ্বীপে। দ্বীপটি যে জনশূন্য সেটা জানার পর তারা দেখে যে জোয়ারের জলে তাদের ডিঙিটিও ভেসে গিয়েছে। কেউ এসে যে তাদের উদ্ধার করতে পারে সে ব্যাপারে অনিশ্চিত ডিন ও এমা প্রাণ বাঁচানোর জন্য একে অপরের উপর নির্ভর করার সিদ্ধান্ত নেয়। দু’জনে একসঙ্গে আগুন জ্বালাতে, মাছ ধরতে ও খাবার খুঁজতে শেখে। প্রথম দিকে তারা ছিল নিছকই বন্ধু। ক্রমে তাদের মধ্যে একটি প্রণয়সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন এক নরকঙ্কাল আবিষ্কার করার পর উত্তেজিত এমাকে চুম্বন করে শান্ত করে ডিন। তারপর তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়।
ডিনের বাবা জ্যাক ও এমার মা বারবারা ত্রিনিদাদে এসে উপস্থিত হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ত্রিনিদাদ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান বন্ধ করে দিল। কিন্তু জ্যাক ও বারবারা থেকে গেলেন ও ব্যক্তিগত খরতে একসঙ্গে ডিন ও এমাকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করলেন। কিন্তু খোঁজ না পেয়ে নিজেদের কাজকর্ম উপেক্ষা করতে না পারায় তাঁরাও ফিরে গেলেন। এদিকে যে রাতে ডিন ও এমার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, তার পরদিন সকালে এমা উঠে দেখল ডিন সেই নরকঙ্কালটির জন্য কবর খুঁড়ছে। ডিনকে প্রশ্ন করলে সে বিরক্ত হল। কথায় কথায় সে স্বীকার করল যে, তার মায়ের মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী এবং সেই কারণে সে অপরাধবোধে ভোগে। সেই অপরাধবোধ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাও করছে সে। এমাও বলল যে, তার বাবা-মা তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোনও দিন তার সঙ্গে পরামর্শ করেন না, বরং নিজেদের ইচ্ছাই চাপিয়ে দেন তার উপরে। এই ঘটনার পরেও বারবার তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে থাকে এবং তারাও নিজেদের মনের কথা একে অপরকে খুলে বলতে শুরু করে। দু’জনের মধ্যে সন্তানগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা নিয়েও আলোচনা করে তারা। কিন্তু দ্বীপে জীবনধারণের জটিলতা এবং পরিবার সম্পর্কে দুশ্চিন্তা এমাকে আস্তে আস্তে বিষাদগ্রস্থ করে তোলে।
১০০ দিন সেই নির্জন দ্বীপে অতিবাহিত করার পর পর্যটকদের একটি হেলিকপ্টার এমা ও ডিনকে উদ্ধার করে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আবার দেখা হয় তাদের। স্কুলে এমা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ডিন অনেকটা অন্তরালেই থাকে এবং সর্বসমক্ষে এমার সঙ্গ এড়িয়ে চলতে শুরু করে। রোজকার জীবনের সঙ্গে আবার নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে নিতে দু’জনে একে অপরের থেকে খানিকটা দূরে সরে যায়। কিছুদিন পরে এমা একটি প্রমে অংশ নেয়। বাবার তাড়নায় সেখানে যেতে বাধ্য হয় ডিন। এমা দেখতে পায়, ডিন বাইরে দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে তাকে দেখছে। এমার বন্ধু লিজি তাকে ডিনের কাছে যেতে উৎসাহিত করে। এমা ও ডিন আবেগপূর্ণভাবে পরস্পরকে চুম্বন করে এবং তারপর একসঙ্গে নৃত্য করে।
প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয়কারী ব্রেন্টন থোয়াইটস স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনি আগে কখনও ব্লু লেগুন ছবিগুলির নামই শোনেননি। তারপর এই ছবিতে নির্বাচিত হওয়া পর গবেষণার জন্য পূর্ববর্তী দু’টি ছবি দেখেন। তবে তিনি এও স্বীকার করেন যে রিটার্ন টু দ্য ব্লু লেগুন ছবিটি তিনি সম্পূর্ণ দেখে উঠতে পারেননি।[২]
উপহ্রদের দৃশ্যগুলির শ্যুটিং চলাকালীন থোয়াইটস ও তাঁর সহ-অভিনেত্রী ইভানস শীতে এতটাই কাতর হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁরা ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। তাই সেই দৃশ্যগুলি ডাব করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।[২]
পূর্ববর্তী ছবি দু’টির তুলনায় ব্লু লেগুন: দি অ্যাওয়েকেনিং ছবিটি অধিকতর পরিমাণে মিশ্র সমালোচনা লাভ করে। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত ছবিটির সঙ্গে তুলনা করে এই ছবিটির ইতিবাচক সমালোচনাই করা হয়। নিউ ইয়র্ক পোস্ট পত্রিকার লিন্ডা স্ট্যাসি ছবিটিকে সামগ্রিকভাবে মামুলি হলেও উপভোগ্য বলে উল্লেখ করেন।[৩] পিটসবার্গ পোস্ট-গেজেট পত্রিকার রব ওয়েন যৌনদৃশ্যগুলি যথেষ্ট খোলামেলা না হওয়াটিকে ছবির অন্যতম প্রধান দুর্বলতা এবং ছবির সমাপ্তির অংশটিকে নির্দিষ্টভাবে দুর্বল ও নির্বোধোচিত বলে উল্লেখ করেন।[৪] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার মাইক হেলও ছবিটি সম্পর্কে স্ট্যাসির মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেন। তিনি বলেন যে, দ্য ব্লু লেগুন ছবির অস্কার-মনোনীত সিনেম্যাটোগ্রাফার নেস্টর অ্যালমেনড্রোসের সমতুল্য কাজ এই ছবিতে না দেখা গেলেও হাস্যরস ও কৈশোরের উৎকণ্ঠার ব্যাপারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই ছবির চিত্রায়ন অনেক প্রাঞ্জল এবং ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয়কারী দুই অভিনেতাকেও পূর্ববর্তী ছবির মুখ্য অভিনেতাদের তুলনায় ভালো কাজ করেছেন।[৫]