ভরত | |
---|---|
পূর্বসূরি | দুষ্মন্ত |
উত্তরসূরি | ভূমন্যু |
গ্রন্থসমূহ | মহাভারত |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | দুষ্মন্ত (পিতা), শকুন্তলা (মাতা) |
দম্পত্য সঙ্গী | সুনন্দা[১] দুই নামহীন স্ত্রী[২] |
সন্তান | ভূমন্যু, ভরদ্বাজ (দত্তক) |
রাজবংশ | চন্দ্রবংশ |
ভরত (সংস্কৃত: भरत)[৩][৪] হিন্দু পুরাণের উল্লেখিত একজন কিংবদন্তি রাজা। তিনি চন্দ্র রাজবংশের একজন সদস্য এবং চক্রবর্তী (সর্বজনীন রাজা) হন।[৫] তাকে পাণ্ডব, কৌরব, বৃহদ্রতা এবং জরাসন্ধের পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হয়। ঋগ্বেদে উল্লিখিত একটি বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গোত্র ভরতদেরকে ভরতের বংশধর বলে গণ্য করা হয়।[৬]
ভরতের কিংবদন্তি মহাভারতের আদিপর্বে তার উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে তাকে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৭][৮] কালিদাসের বিখ্যাত অভিজ্ঞানাশকুন্তলা নামক নাটকে তাঁর পিতামাতা এবং তাঁর জন্মের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে ।
জনপ্রিয় ঐতিহ্য অনুসারে, ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যগত ভারত নামকরণ করা হয়েছে।[৯][১০]
মহাভারত (আদিপর্ব) অনুসারে, ভরত রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুত্র। তিনি ছিলেন একজন ক্ষত্রিয় চন্দ্রবংশীয় রাজা। তার প্রকৃত নাম ছিল সর্বদমন। পরে তার নামকরণ হয় ভরত।
মহাভারত-এর উপাখ্যান অনুসারে, মহর্ষি বিশ্বামিত্র এক কঠোর তপস্যায় রত হলে দেবরাজ ইন্দ্র তার তপোভঙ্গের জন্য দিব্যাঙ্গনা মেনকাকে প্রেরণ করেন। মেনকা আপন রূপসৌন্দর্যে মোহিত করে বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ করেন। বিশ্বামিত্রের ঔরসে তার গর্ভে একটি কন্যার জন্ম হয়। সদ্যোজাত এই কন্যাকে হিমালয়ের শীর্ষে মালিনী নদীর তীরে ফেলে স্বর্গে ফিরে যান মেনকা। ঋষি কন্ব কন্যাটিকে কুড়িয়ে পেয়ে আপন কুটিরে নিয়ে আসেন এবং নিজ কন্যারূপে পালন করে। তিনি এই কন্যার নাম রাখেন শকুন্তলা। কয়েক বছর পর, মহারাজ দুষ্মন্ত মৃগয়া করতে এসে কন্বের তপোবনে শকুন্তলার সাক্ষাৎ পান। শকুন্তলার রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেন ও তার সঙ্গে সহবাস করে তার গর্ভসঞ্চার করেন। পরে তিনি রাজধানীতে ফিরে আসেন এবং ঋষি দুর্বাশার অভিশাপে শকুন্তলার কথা বিস্মৃত হন।
এদিকে দুষ্মন্তের ঔরসে শকুন্তলার গর্ভে এক পুত্রের জন্ম হয়। ঋষি কন্ব এই পুত্রের নামকরণ করেন সর্বদমন। শকুন্তলা দুষ্মন্তের প্রাসাদে উপস্থিত হলে দুর্বাসার অভিশাপের প্রভাবে দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারেন না। পরে অবশ্য ঘটনাচক্রে শাপপ্রভাব উত্তীর্ণ হলে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে দুষ্মন্তের মিলন ঘটে। সর্বদমনের নতুন নামকরণ হয় ভরত।
তিনি সমগ্র ভারতীয় ভূখণ্ড জয় করেন। এই কারণে তার রাজত্ব ভারতবর্ষ নামে পরিচিত হয়।
ভরতের স্ত্রীর নাম ছিল সুনন্দাদেবী। সুনন্দাদেবী ছিলেন সাধ্বী রমণী। তবু তার সকল সন্তানই জন্মের পরমুহুর্তেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পুত্রাকাঙ্ক্ষায় তিনি গঙ্গাতীরে মরুৎসোম যজ্ঞ করেন। ফলে ভরতের ভুমণ্যু নামে এক পুত্র জন্মে। তার বংশেই পরে পাণ্ডবদের জন্ম হয়।
ভরতের বাল্যজীবন কালিদাস বিরচিত অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এই গ্রন্থ অবলম্বনে বাংলাতেও শকুন্তলা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।