ভারতের স্বাধীনতা ও বিভাজনের পর দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হিন্দি ভাষাকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যার উল্লেখ সংবিধানের ৩৪৩ নং অনুচ্ছেদে পাওয়া যায়।[৬] কিন্তু হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অহিন্দিভাষীরা, বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয়রা, বিক্ষোভ শুরু করেছিল, যার ফলে সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ লাগু হয়েছিল এবং সমস্ত সরকারি কাজকর্মে অনির্দিষ্টকাল ধরে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হতে লাগল।[৮]
বহু ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজি ভাষা নিয়ে মনোভাব সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। আগে ইংরেজি ভাষা মূলত উপনিবেশবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল; পরে এটি অর্থনৈতিক প্রগতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে লাগল এবং সরকারি ভাষা হিসাবে ইংরেজির মর্যাদা বহাল রয়েছে।[৯]
যদিও এটি মনে করা হয় যে ইংরেজি ভারতে সহজলভ্য, গবেষণা থেকে পাওয়া যাচ্ছে যে ভারতীয় জনসংখ্যার বড় অংশে উপযুক্ত শিক্ষার অভাবের জন্য দেশে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার আদতে এলিটদের মধ্যে সীমিত।[১০] মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষা পদ্ধতির ব্যবহার এবং অনেক পাঠ্যপুস্তকের লেখকদের মধ্যে ইংরেজির উপলব্ধির অভাব সেইসব ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধায় ফেলবে যারা এই বইগুলো অনুসরণ করে। এর ফলে ভারতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা মধ্যম মানের।[১১]
বহুভাষিক দেশ হওয়ার জন্য ইংরেজি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা, অর্থাৎ লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় পরিণত হয়েছে।[১২]দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের সম্পাদক মানু জোসেফ ২০১১ সালে বলেছিলেন যে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব ও ব্যবহার এবং ইংরেজি শিক্ষার আকাঙ্ক্ষার জন্য এটি ভারতের ডি ফ্যাক্টোজাতীয় ভাষা।[১৩] রঞ্জন কুমার ঔড্ডি তাঁর ইন সার্চ অব ইন্ডিয়ান ইংলিশ গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জাগরণ এবং ভারতীয় ইংরেজির ইতিহাস ও আবির্ভাব পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।[১৪]
২০০১ জনগণনা অনুযায়ী, ১২.১৮% ভারতীয় ইংরেজি জানতেন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ভারতীয় জানিয়েছিলেন যে এটি তাঁদের প্রথম ভাষা, ৮ কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় জানিয়েছিলেন যে এটি তাঁদের দ্বিতীয় ভাষা এবং ৩ কোটি ৯০ লাখ ভারতীয় জানিয়েছিলেন যে এটি তাঁদের তৃতীয় ভাষা।[১৫][১৬]
২০১১ জনগণনা অনুযায়ী, ১২ কোটি ৯০ লাখ ভারতীয় (১০.৬%) ইংরেজি ভাষার বক্তা এবং ২,৫৯,৬৭৮ জন ভারতীয়দের (০.০২%) প্রথম ভাষা ইংরেজি।[১] এছাড়া, প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ ভারতীয় (৬.৮%) জানিয়েছিলেন যে ইংরেজি তাঁদের দ্বিতীয় ভাষা এবং প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় (৩.৮%) জানিয়েছিলেন যে ইংরেজি তাঁদের তৃতীয় ভাষা। এর ফলে ইংরেজি ভারতের দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষায় পরিণত হয়েছে।[২]
সংবিধানের ভাগ ১৭ ভারতীয় সংঘের সরকারি ভাষা সম্বন্ধে আলোচনা করে। ৩৪৩ নং অনুচ্ছেদে সংঘের সরকারি ভাষা হিসেবে দেবনাগরী লিপিতে হিন্দি এবং ইংরেজির নাম উল্লেখ আছে।[৬]
এটা ভাবা হয়েছিল যে ১৯৬৫ সালের মধ্যে হিন্দি ভাষা ভারত সরকারের একমাত্র সরকারি ভাষা হবে (৩৪৪ (২) ও ৩৫১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী)।[১৭] কিন্তু হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অহিন্দিভাষীরা, বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয়রা, বিক্ষোভ শুরু করেছিল, যার ফলে সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ লাগু হয়েছিল এবং সমস্ত সরকারি কাজকর্মে অনির্দিষ্টকাল ধরে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হতে লাগল।[১৮]
ভারতীয় ইংরেজির ব্যঞ্জনধ্বনির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিম্নরূপ:
ভারতীয় ইংরেজিতে অঘোষস্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি/p/,/t/,/k/ সর্বদা অল্পপ্রাণ, যেখানে আরপি, জেনারেল আমেরিকান ও বেশিরভাগ ইংরেজি উপভাষায় শব্দের শুরুতে বা শ্বাসাঘাতযুক্ত সিলেবলে এই ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো মহাপ্রাণ হিসাবে উচ্চারিত হয়। সুতরাং, ভারতীয় ইংরেজিতে pin শব্দটি উচ্চারিত হয় [pɪn] (পিন্), যেখানে বেশিরভাগ উপভাষায় উচ্চারিত হয় [pʰɪn] (ফিন্)। ভারতের প্রধান ভাষা পরিবার ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহে এই অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ স্পর্শধ্বনির মধ্যে পার্থক্য ধ্বনিমূলক, এবং ইংরেজি স্পর্শধ্বনি বোঝানোর জন্য স্থানীয় ভাষাদের মহাপ্রাণ ধ্বনির জায়গায় অল্পপ্রাণ ধ্বনি ব্যবহার করা হয়।[২২] স্থানীয় অঘোষ মহাপ্রাণ স্পর্শধ্বনিদের বরং ইংরেজি উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি/f/ ও /θ/ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
বাংলা ভাষায় ইংরেজি /v/ বোঝানোর জন্য /bʱ/ এবং /w/ বোঝানোর জন্য /o̯/ বা /u̯/ ব্যবহার করা হয়। যেমন: visa শব্দটি উচ্চারিত হয় /bʱisa/ ("ভিসা") এবং washing শব্দটি উচ্চারিত হয় /o̯aʃiŋ/ ("ওয়াশিং")।
অসমীয়া ভাষায় /tʃ/ ও /ʃ/ ধ্বনিদুটো /s/ হিসাবে এবং /dʒ/ ও /ʒ/ ধ্বনিদুটো /z/ হিসাবে উচ্চারিত হয়। অসমীয়া ভাষায় বেশিরভাগ ভারতীয় ভাষার মতো পৃথক মূর্ধন্য ও দন্ত্য ব্যঞ্জনধ্বনি নেই, বরং সেখানে কেবল দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। বাংলার মতোই অসমীয়া ভাষায় /v/ ধ্বনিটি /bʱ/ বা /β/ হিসাবে উচ্চারিত হয়। যেমন: change শব্দটি উচ্চারিত হয় /sɛɪnz/ (সেইন্জ়্) এবং vote শব্দটি উচ্চারিত হয় /bʱʊt/ (ভুট্)।[২৪]
↑"India - Languages"। ethnologue.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "ভারতীয় ইংরেজি"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
↑"Case Studies - Asian English"। British Library। University of Leeds। ২৭ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Chelliah, Shobhana L. (জুলাই ২০০১)। "Constructs of Indian English in language 'guidebooks'"। World Englishes। 20 (2): 161–178। ডিওআই:10.1111/1467-971X.00207।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Rajbhasha"(পিডিএফ) (হিন্দি and ইংরেজি ভাষায়)। india.gov.in। ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Delhi (২৮ এপ্রিল ২০১৬)। "Use of Hindi Language in Courts"। Business Standard India। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)