ভারতীয় সংসদ | |
---|---|
ধরন | |
ধরন | |
কক্ষ | |
নেতৃত্ব | |
খালি | |
গঠন | |
আসন | ৭৮৮
|
রাজ্যসভা রাজনৈতিক দল | |
লোকসভা রাজনৈতিক দল | |
নির্বাচন | |
সিঙ্গল ট্রান্সফারেবল ভোট | |
ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট | |
রাজ্যসভা সর্বশেষ নির্বাচন | ১০ জুন ২০২২ |
লোকসভা সর্বশেষ নির্বাচন | ১১ এপ্রিল–১৯ কে ২০১৯ |
রাজ্যসভা পরবর্তী নির্বাচন | ২০২৩ |
লোকসভা পরবর্তী নির্বাচন | মে ২০২৪ |
সভাস্থল | |
নতুন সংসদ ভবন, সংসদ মার্গ, নয়াদিল্লি | |
ওয়েবসাইট | |
www | |
সংবিধান | |
ভারতের সংবিধান |
ভারতীয় সংসদ (ইংরেজি: Parliament of India) ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রীয় ন্যায়বিভাগ। ভারতের রাষ্ট্রপতি, লোকসভা নামক নিম্নকক্ষ ও রাজ্যসভা নামক উচ্চকক্ষ নিয়ে ভারতের সংসদ গঠিত। নয়াদিল্লির সংসদ মার্গের সংসদ ভবনে এটি অবস্থিত। কোনও প্রস্তাব আইনে পরিণত করতে সংসদের উভয় কক্ষে তা উত্তীর্ণ হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। ভবনের কেন্দ্রীয় কক্ষটি সংসদের যৌথ অধিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সংসদের কক্ষদুটির মধ্যে যেকোনো একটি কক্ষে নির্বাচিত বা রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত সদস্যদের সংসদ সদস্য (এমপি) বা সাংসদ বলে। লোকসভার সাংসদগণ ভারতীয় জনগণের দ্বারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে, রাজ্যসভার সাংসদগণ রাজ্য বিধায়কদের দ্বারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। সংসদের আসনের মধ্যে ৫৪৩টি লোকসভা আসন এবং ২৪৫টি রাজ্যসভা আসন, যার মধ্যে ১২টি আসন সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, ও সামাজিক পরিষেবার বিশেষজ্ঞদের জন্য সংরক্ষিত।[৭] সংসদের বর্তমান সভাস্থল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত নতুন সংসদ ভবন।
১৮৬১ সালে ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৬১ দ্বারা সাম্রাজ্যিক বিধান পরিষদ তৈরি করা হয়েছিল, যা ব্রিটিশ ভারতের আইনসভা।[৮][৯] স্বাধীনতার পর সাম্রাজ্যিক বিধান পরিষদের পরিবর্তে ভারতের গণপরিষদ নির্বাচিত হয়েছিল, যা ভারতের সংবিধান তৈরি করেছিল।[১০] ১৯৫০ সালে সংবিধান বলবৎ হওয়ার পর গণপরিষদের অবসান ঘটানো হয়েছিল,[১১] এবং তার জায়গায় ভারতের সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল।
মে ২০২৩ পর্যন্ত পুরনো সংসদ ভবন ভারতীয় সংসদের সভাস্থল ছিল। পরবর্তীকালে নবনির্মিত নতুন সংসদ ভবনে সংসদের কার্যকলাপ হয়।
পুরনো সংসদ ভবন ভারতের সংসদের আসন। এটি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ৭৫০ মিটার দূরত্বে সেন্ট্রাল ভিস্তাকে অতিক্রম করা সংসদ মার্গ বরাবর অবস্থিত; ভবনটি ইন্ডিয়া গেট, যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আবাস, মন্ত্রিসভা ও ভারত সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক একক দ্বারা বেষ্টিত। এটিতে লোকসভা ও রাজ্যসভা রয়েছে, যা ভারতের দ্বিখণ্ডিত সংসদে যথাক্রমে নিম্ন ও উচ্চতর সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে।
বিদ্যমান ভবনটি মোরেনার চৌসথ যোগিনী মন্দিরের অনুপ্রেরণায় নির্মিত এবং ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের জন্য নির্মিত হয়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরে, এটি ভারতের গণপরিষদ দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়, যা ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পরে ভারতের সংসদ হিসাবে পরিচিত হয়।[১২]
২০১০-এর দশকে, সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ এবং ২০২৪ সালে সমাপ্তির প্রত্যাশায় একটি কর্মসূচী শুরু করায় বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন পুনর্নির্মাণ বা স্থানান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।[১৩] যেহেতু ভারত তার সংসদের সদস্যপদ সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েছে, সেই কারণে নতুন সংসদ ভবনটি অধিক আসনবিধানের জন্য ১,৩৫০ জন সদস্য আসন বিশিষ্ট হবে। ২৮ মে ২০২৩-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনটি উদ্বোধন করেছেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি সংসদের একটি অংশ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬০ ও অনুচ্ছেদ ১১১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হলো, সংসদে পাস করা আইন যেন সংবিধানের আদেশ মেনে চলে, এবং বিল গ্রহণের আগে যেন নির্ধারিত নিয়ম মানা হয় ত নিশ্চিত করা। ভারতের রাষ্ট্রপতি সাংসদ ও বিধায়কদের দ্বারা নির্বাচিত হন, এবং তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর।[১৬]
রাজ্যসভা হল ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ। এই সভার সর্বোচ্চ সদস্য বা কোরাম সংখ্যা ২৪৫। ভারতের রাষ্ট্রপতি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজসেবার ক্ষেত্র থেকে ১২ জন সদস্যকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেন; এঁরা মনোনীত সদস্য বা কোরাম নামে পরিচিত। অন্যান্য সদস্যরা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা, বিধান পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। রাজ্যসভার সাংসদদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর এবং প্রতি দুই বছর অন্তর সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ অবসর নেন। রাজ্যসভা চিরস্থায়ী ও অধিকতর স্থায়ী কক্ষ। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লোকসভার বিলুপ্তি ও পুনঃনির্বাচন ঘটে। কিন্তু রাজ্যসভা ভেঙে দেওয়া প্রায় অসম্ভব এবং অসাংবিধানিক। সংগ্ৰহসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাজ্যসভা লোকসভার সমান মর্যাদা মধ্যমণি হয়। সংগ্ৰহসংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার ক্ষমতা রাজ্যসভার চেয়ে অধিকতর বেশি। কোনো বিষয় নিয়ে দুই কক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়। তবে লোকসভার আকার রাজ্যসভার প্রায় দশগুণ হওয়ায়, যৌথ অধিবেশনে লোকসভারই শক্তি বেশি থাকে। আজ পর্যন্ত সংসদে মাত্র তিনটি যৌথ অধিবেশন বসেছে। শেষ যৌথ অধিবেশনটি বসেছিল ২০০২ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন পোটা পাস করানোর জন্য।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান সভার দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান সদস্যদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন। রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন বসেছিল ১৩ মে, ১৯৫২।[১৭]লোকসভা (ইংরেজি: Lok Sabha বা House of the People; হিন্দি: लोक सभा) ভারতের দ্বিকক্ষ সংসদের নিম্নকক্ষ, যার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। এই কক্ষের সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন, এবং লোকসভার সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর বা যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রণাবলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক লোকসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। নয়াদিল্লির সংসদ ভবনে লোকসভার অধিবেশন আয়োজিত হয়।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী লোকসভার সদস্যদের সর্বোচ্চ আসনসংখ্যা ৫৫২টি,[১৮] যা ১৯৫০ সালে ছিল ৫০০টি। বর্তমানে লোকসভাতে ৫৪৩টি আসন রয়েছে এবং নির্বাচনের পর এই আসনগুলো সর্বোচ্চ ৫৪৩ জন নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ১৯৫২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রণা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় থেকে সর্বোচ্চ দুইজন সদস্যকে মনোনীত করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধান (একশত চতুর্থ সংশোধন) আইন, ২০১৯ বলবৎ করে এই প্রথার অবসান ঘটানো হয়েছিল।[১৯][২০] নতুন সংসদ ভবনের লোকসভা কক্ষের ধারণক্ষমতা ৮৮৮ জন।[২১]
মোট ১৩১টি আসন (২৪.০৩%) তফসিলি জাতি (৮৪টি) ও তফসিলি জনজাতির (৪৭টি) মধ্যে সংরক্ষিত। লোকসভার কোরাম মোট সদস্যের ১০%। আগেই বিলুপ্ত না হলে লোকসভা তার প্রথম অধিবেশনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অবধি পরিচালনা করে। তবে জরুরি অবস্থা জারি থাকলে সংসদ আইনবিধির মাধ্যমে এর মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে।[২২][২৩]
ভারতের জনগণনার ভিত্তিতে ভারতের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশন লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে, এবং ২০১১ সালে লোকসভা কেন্দ্রের সর্বশেষ সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল।[২৪] আগে এই পুনর্নির্ধারণের মধ্যে জনপরিসংখ্যানের পরিবর্তনের ভিত্তিতে আসন পুনর্বণ্টন করা হতো, কিন্তু ১৯৭৬ সালে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির প্রভাব এড়াতে একটি বিশেষ সংবিধান সংশোধনের দ্বারা এই কাজ স্থগিত করা হয়েছে।[২৫]
লোকসভার লাইভ কর্মকাণ্ড সংসদ টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হয়, যার সদরদপ্তর সংসদ ভবন চত্বরেই অবস্থিত।[২৬]১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দ্বারা চালু করা জরুরি অবস্থা ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে অন্যতম। এই জরুরি অবস্থা ২১ মাস ধরে চলেছিল এবং এর ফলে নাগরিক স্বাধীনতা হরণ, সংবাদমাধ্যমের বিবাচন, এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাবন্দীর মতো ঘটনা ঘটেছিল।[২৭]
১৩ ডিসেম্বর ২০০১-এ লশকর-ই-তাইয়েবা (এলইটি) ও জইশে মুহাম্মদের (জেইএম) মতো ইসলামি সন্ত্রাসবাদী দল ভারতীয় সংসদে আক্রমণ করেছিল। এই আক্রমণের ফলে ৫ জন সন্ত্রাসবাদী, ৬ জন দিল্লি পুলিশ কর্মী, ২ জন সংসদ নিরাপত্তা পরিষেবা কর্মী, ও এক মালির মৃত্যু হয়েছিল, অর্থাৎ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৪। এই ঘটনার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার ফলাফল ২০০২ সাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে স্থবিরতা।[২৮]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; পুরনো সংসদ ভবন (ভারত) HT20
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; পুরনো সংসদ ভবন (ভারত) Drishti
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি