ভালুক এবং মালী গল্পটি প্রাচীন ভারতীয় পাঠ্য পঞ্চতন্ত্রের অন্তর্গত একটি কল্পকাহিনী যা নির্বোধের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার বার্তা দেয়।[১] সারা বিশ্ব জুড়ে এই গল্পের বিভিন্ন সাহিত্যিক এবং মৌখিক সংস্করণ রয়েছে। এই গল্পের বিষয়বস্তুকে আর্নে-থম্পসন -উথার নামক বিশেষ শ্রেনীবিন্যাসের অন্তর্গত করা হয়েছে। এই গল্পের লা ফন্টেইন সংস্করণটি বিভিন্ন দার্শনিক শিক্ষার প্রকাশ হিসাবে গৃহীত হয়।
এই গল্পটি পশ্চিমদেশীয় লা ফন্টেইনের উপকথায় (৮.১০) প্রথম উপস্থাপন করা হয়েছিল।[২] গল্পটির বিষয়বস্তু হল এই যে কিভাবে একজন একাকী মালীর একটি একাকী ভাল্লুকের দেখা হয় এবং তারা সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাল্লুকের অন্যতম কর্তব্য ছিল তার বন্ধু যখন ঘুমায় তখন মাছিকে দূরে রাখা। কিন্তু একটি মাছিকে তাড়াতে বারবার অসফল হওয়ায় ভালুক এটিকে পিষে ফেলার জন্য একটি বড় পাথর নেয় এবং ঘটনাক্রমে সে মালীকেও হত্যা করে। মনে করা হয় লা ফন্টেইন স্টোইক নীতির চিত্র তুলে ধরেন। গল্পটির মাধ্যমে এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে সমস্ত কাজ বিচারবুদ্ধি করে করা উচিত, এমনকী বন্ধু নির্বাচনও বিচার বিবেচনা করে করা উচিত।[৩] ব্যবহারিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে, গল্পটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করে। দেখানো হয় যে ভালুকটি তাৎক্ষণিক মুহুর্তে এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় যে মাছিকে বন্ধুর থেকে দূরে রাখাটা দরকার কিন্তু তার চূড়ান্ত কর্তব্য হল তার বন্ধুর জীবন রক্ষা করা।[৪]
এই গল্পটি কবিতা আকারেই বেশি পরিচিত ছিল এবং সেই কবিতায় ব্যবহৃত বিভিন্ন পংক্তি নীতিকথা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উপকথাটির ফরাসি ভাষায় লে পাভে দে ল'ওরস (ভাল্লুকের ছোড়া পাথর) নামে প্রকাশিত[৫] এবং জার্মান ভাষায় বারেন্ডিয়েনস্ট (ভাল্লুকের পরিচর্যা) নামে পরিচিত।[৬] কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত কর্মের জন্য যে দুর্ভাগ্যজনক ফলাফল হয়, তা এই গল্পে উপদেশের মাধ্যমে বলা হয়েছে। অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় 'ভাল্লুকের সেবা' এই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।[৭]
গল্পটি ১৮ শতক থেকে লা ফন্টেইনের অনুবাদ বা অনুকরণের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রচার লাভ করে। রবার্ট ডডসলির সিলেক্ট ফেবলস অফ ঈসপ অ্যাণ্ড আদার ফ্যাবুলিস্ট (১৭৬৪) কল্পকাহিনী সংকলনে প্রথম এটির উপস্থিতি দেখা যায়, যেখানে এটিকে "দ্য হারমিট অ্যান্ড দ্য বিয়ার" শিরোনামে প্রকাশ করা হয়। এই গল্পের মাধ্যমে এই উপদেশ দেওয়া হয় যে অনৈতিক এবং অবিবেচক বন্ধুদের এলোমেলো উদ্যোগ প্রায়শই শত্রুদের ক্রোধের মতোই ক্ষতিকর সিদ্ধ হয়। এই সংস্করণে একজন সন্ন্যাসী এক ভাল্লুকের থাবা থেকে একটি কাঁটা বের করে তার উপকার করে। এটি এন্ড্রোক্লিস এবং সিংহের গল্পের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে মনে করা হয়। পরে কৃতজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে সন্ন্যাসীর মুখের কাছ থেকে একটি মাছিকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় ভালুকটি ঘটনাবশত তার মুখে আঘাত করে এবং তারপরে দুজনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[৮] গল্পের এই সংস্করণটিই ১৯ শতকের প্রথম দিকে শিশুদের জন্য ছড়ার আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। এর সাথে ১৮১৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় মেরি অ্যান ডেভিসের ফেবলস ইন ভার্স: বাই ঈশপ, লা ফন্টেইন অ্যাণ্ড আদার্স।[৯] জেফারিস টেলরের ঈশপ ইন রাইম ১৮২০ সালে প্রকাশিত হয়।[১০] পরবর্তী শতাব্দীতে গল্পটি ঈশপের রূপকথা হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল।