ভূবিজ্ঞান হল পৃথিবীগ্রহের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞানগুলির একটি সমগ্রবাচক পরিভাষা।[১] এটিকে গ্রহ বিজ্ঞানের একটি সুবিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা যায়। সমস্ত জ্ঞাত গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই জীবনের উপস্থিতি আছে।
ভূবিজ্ঞানকে ভৌত বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে এবং ভৌত বিজ্ঞানকে আবার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়। উল্টোদিকে ভূবিজ্ঞানের নিজের বহু শাখা-প্রশাখা আছে।
১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক সামুদ্রিক ও স্থলভাগীয় আলোক-স্বভোজী (photoautotroph) জীবের প্রাচুর্যের একটি অসদবর্ণ (false-color) সংযুতিচিত্র (সরবরাহে সিওয়াইফস (SeaWiFS) প্রকল্প, নাসা/গডার্ড মহাকাশ যাত্রা কেন্দ্র ও অর্বিমেজ (ORBIMAGE)
বাস্তমণ্ডল (Ecosphere)[২][৩] – বহু উপতন্ত্র মিলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ (গ্রহীয় বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুমণ্ডল) গঠন করেছে। এদের মধ্যে অনেকগুলি উপতন্ত্রকে "মণ্ডল" হিসেবে চরিত্রায়িত করা হয়েছে, যেগুলি পৃথিবীর মতোই গোলকাকার। মূল চারটি মণ্ডল হল বায়ুমণ্ডল (বা আবহমণ্ডল), জীবমণ্ডল, বারিমণ্ডল ও ভূমণ্ডল। বাকি মণ্ডলগুলিকে এই চারটি মণ্ডলের অংশ হিসেবে কল্পনা করা হয়। এগুলি সবচেয়ে বহিস্থ থেকে সবচেয়ে অন্তস্থ পর্যন্ত তালিকাবদ্দ করা হল:
চৌম্বকমণ্ডল (Magnetosphere) – পৃথিবী বা অন্য কোনও নভোবস্তু বা খ-বস্তুর চারপাশের সেই এলাকা যেখানে আহিত কণাসমূহ সেটির চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আয়নমণ্ডল (Ionosphere) – পৃথিবীর ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের আয়নিত অংশ
জীবমণ্ডল (Biosphere) – পৃথিবীর সমস্ত বাস্তুতন্ত্রের সমষ্টি।
নৃমণ্ডল (Anthroposphere) – পরিবেশের যে অংশটি বাসস্থান ও মানুষের অন্যান্য ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষ দ্বারা সৃষ্ট বা পরিবর্তিত।
বারিমণ্ডল (Hydrosphere) – ভূপৃষ্ঠ (বা অন্য কোনও গ্রহ, গৌণ গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠ), ভূপৃষ্ঠের উপরে বা নিচে প্রাপ্য জল বা পানির সামগ্রিক ভর
হিমমণ্ডল (Cryosphere) – ভূপৃষ্ঠের যেসব অংশে পানি বরফ রূপে বিদ্যমান
ভূমন্ডল/কঠিন পৃথিবী (Geosphere/Solid Earth) – পৃথিবীর সমস্ত কঠিন অংশগুলির সমষ্টি; কখনও কখনও অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, হিমমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলকেও ভূমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
মৃত্তিকামণ্ডল (Pedosphere) – পৃথিবীর সর্ববহিঃস্থ স্তর যেটি মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত ও যেখানে মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াগুলি ঘটে।
মোহো ছেদ (Moho Discontinuity) – ভূত্বক ও কেন্দ্রমণ্ডলের সীমারেখা
গুরুমণ্ডল (Earth's mantle) – ভূত্বক ও কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যবর্তী অংশ
ভূকম্প তরঙ্গসমূহের সঞ্চার অনুযায়ী (diffusion of seismic waves)
অশ্মমণ্ডল (Lithosphere) – পৃথিবী বা পৃথিবী-জাতীয় গ্রহের সর্ববহিস্থ কঠিন স্তর, যার যান্ত্রিক ধর্ম কঠিন প্রকৃতির।
ক্ষীণমণ্ডল (Asthenosphere) – পৃথিবীর ঊর্ধ্ব-গুরুমণ্ডলের উচ্চমাত্রায় সান্দ্র, যান্ত্রিকভাবে দুর্বল ও নমনীয় অঞ্চল।
মধ্য-গুরুমণ্ডল) (Mesozone (mantle)) – গুরুমণ্ডলের যে অংশ অশ্মমণ্ডল ও ক্ষীণমণ্ডলের নিচে কিন্তু বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলের উপরে অবস্থিত।
গুটেনবের্গ ছেদ (Gutenberg discontinuity) – গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের সীমারেখা।
কেন্দ্রমণ্ডল – গ্রহের (পৃথিবীর) সবচেয়ে ভেতরের অংশ, যেটি ভিন্ন ভিন্ন প্লবতাবিশিষ্ট গাঠনিক উপাদান দিয়ে গঠিত ও যেখানে অপেক্ষাকৃত বেশি ঘন উপাদানগুলি কেন্দ্রের কাছে জড়ো হয়।
বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল (Outer core) – কেন্দ্রমণ্ডলের বাইরের অংশ, মূলত লোহা ও নিকেলের তৈরি একটি তরল স্তর যা অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের উপরে ও গুরুমণ্ডলের নিচে অবস্থিত।
লেমান ছেদ (Lehmann Discontinuity) – অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল ও বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলের সীমারেখা
অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল (Inner core) – কেন্দ্রমণ্ডলের ভেতরের অংশ, লোহা ও নিকেলের তৈরি কঠিন গোলক
বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানসমূহ (Atmospheric sciences) – বায়ুমণ্ডল, সেটির প্রক্রিয়াসমূহ ও অন্যান্য তন্ত্রের বা ব্যবস্থার সাথে সেটির আন্তঃক্রিয়াসমূহের অধ্যয়ন
জলবায়ুবিজ্ঞান (Climatology) – জলবায়ুর বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন, যেখানে দীর্ঘকাল যাবৎ আবহাওয়ার অবস্থার গড়ের উপর গবেষণা করা হয়।
বর্ণনামূলক জলবায়ুবিজ্ঞান (descriptive climatology) – কোনও নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে আবহাওয়াবৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণসমূহের যে ভৌগোলিক ও কালিক বিন্যাস লক্ষ করা যায়, তার অধ্যয়ন
বৈজ্ঞানিক জলবায়ুবিজ্ঞান (scientific climatology) – পৃথিবীর জলবায়ু প্রকৃতি ও নিয়ন্ত্রকসমূহ এবং যেকোনও সময় মাপনীতে জলবায়ুর ভিন্নতা ও পরিবর্তনের কারণসমূহের অধ্যয়ন।
ফলিত জলবায়ুবিজ্ঞান (applied climatology) – জলবায়ুর প্রতি সংবেদনশীল পরিকল্পনা, পরিচালনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণ জাতীয় কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বিভিন্ন সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট জলবায়ুজনিত নিয়ামকসমূহের গবেষণা
প্রাকৃতিক জলবায়ুবিজ্ঞান (physical climatology) – বিভিন্ন আবহাওয়া উপাদানের ও সেগুলি মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কের পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ, যাদের মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
সমুদ্রবিজ্ঞান (Oceanography) – সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের প্রাকৃতিক (ভৌত) ও জীববৈজ্ঞানিক দিকের অধ্যয়ন
জীববৈজ্ঞানিক সমুদ্রবিজ্ঞান (Biological oceanography) – সমুদ্রব্যবস্থার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ভূতত্ত্ব কীভাবে জীবদের উপর প্রভাব ফেলে এবং জীবরাও সেগুলির উপর কী প্রভাব ফেলে, তার অধ্যয়ন।
প্রাকৃতিক সমুদ্রবিজ্ঞান (Physical oceanography) – সমুদ্রের ভৌত অবস্থা ও প্রক্রিয়াসমূহের অধ্যয়ন
চন্দ্রপৃষ্ঠ বিজ্ঞান (Selenography) – চাঁদের পৃষ্ঠ ও ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহের অধ্যয়ন
তাত্ত্বিক গ্রহবিজ্ঞান (Theoretical planetology) – গ্রহসমূহের অভ্যন্তরীণ গঠনকাঠামোর তাত্ত্বিক অধ্যয়ন, যেখানে সেগুলির রাসায়নিক গঠন ও উপাদানের অবস্থা সম্পর্কে অনুমান করা হয় ওি গ্রহের অভ্যন্তরে উপাদানগুলির তাপমাত্রা, চাপ, ঘনত্ব, ইত্যাদির অরীয় বিন্যাস (radial distribution) গণনা করা হয়।