ভেন রেখাচিত্র

গ্রিক, ল্যাটিন ও রাশিয়ান ভাষার বর্ণমালার বড় হাতের অক্ষর দিয়ে প্রদর্শিত ভেন রেখাচিত্র

ভেন রেখাচিত্র ( "প্রাথমিক রেখাচিত্র", "সেট রেখাচিত্র" বা "যুক্তি রেখাচিত্র" নামেও পরিচিত) হল এমন একটি রেখাচিত্র যা বিভিন্ন সেটের সসীম সংগ্রহের মাঝে সকল সম্ভাব্য ও যৌক্তিক সম্পর্ক প্রদর্শন করে। এসকল রেখাচিত্রে উপাদানগুলোকে একটি সমতলে বিন্দু রূপে, আর সেটগুলোকে আবদ্ধ বক্ররেখার মাঝে অবস্থিত অঞ্চল হিসেবে চিত্রিত করা হয়। একটি ভেন রেখাচিত্রে কতিপয় অধিক্রমণকারী আবদ্ধ বক্ররেখা (সাধারণত বৃত্ত) থাকে এবং প্রতিটি বক্ররেখা একেকটি সেটকে নির্দেশ করে। S দ্বারা চিহ্নিত বক্ররেখার মাঝের বিন্দুগুলো S সেটের উপাদান নির্দেশ করে, আর যে বিন্দুগুলো এই সীমারেখার বাইরে থাকে তারা S সেটের উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যে উপাদানগুলো S ও T উভয় সেটের সদস্য অর্থাৎ S ∩ T,তাদেরকে S ও T এর মাঝের অধিক্রমণকারী অঞ্চল দিয়ে চিত্রে প্রদর্শন করা যায়। ভেন রেখাচিত্রে বক্ররেখাগুলো সম্ভাব্য সকল উপায়ে অধিক্রমণ করে, যার মাধ্যমে সেটগুলোর মাঝে বিদ্যমান সম্ভাব্য সকল সম্পর্ক দেখানো যায়। তাই তাদেরকে অয়লার রেখাচিত্রের বিশেষ রূপ বলা যায়- যদিও অয়লার রেখাচিত্র যথাযথ কারণেই সকল সম্পর্ক দেখায় না। ১৮৮০ সালে জন ভেন প্রথম ভেন রেখাচিত্রের স্বরূপ কল্পনা করেন। বর্তমান সময়ে এই ভেন রেখাচিত্র প্রাথমিক সেট তত্ত্ব শিক্ষাদানে এবং সম্ভাব্যতা, যুক্তিবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, ভাষাতত্ত্ব ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে সেটগুলোর মাঝে সাধারণ সম্পর্ক চিত্রিত করতে ব্যবহৃত হয়।

যে ভেন রেখাচিত্রে প্রতিটি আকৃতি বা শেপের ক্ষেত্রফল তার উপাদান সংখ্যার সমানুপাতিক, তাকে ক্ষেত্র-সমানুপাতিক বা স্কেলড ভেন রেখাচিত্র বলা হয়।

উদাহরণ

[সম্পাদনা]
সেট A (দ্বিপদী প্রাণী) ও B (উড়তে পারে এমন প্রাণী)।

এ উদাহরণে দুইটি সেট রয়েছে- A ও B, যাদেরকে রঙিন বৃত্ত দিয়ে দেখানো হয়েছে। কমলা রঙের বৃত্তটি হল সেট A যা দুইপায়ী সকল প্রাণীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আর নীল বৃত্তটি হল সেট B যেটি উড়তে পারে এমন প্রাণীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রতিটি ভিন্ন ধরনের প্রাণীকে এই রেখাচিত্রের কোন এক জায়গায় অবস্থিত বিন্দু হিসেবে কল্পনা করা যায়। যে সকল প্রাণী উড়তেও পারে, আবার দুই পা-ও আছে, যেমন- টিয়াপাখি- তারা উভয় সেটেই থাকতে পারে,তাই তাদেরকে নীল ও কমলা বৃত্ত অধিক্রমণ করেছে এমন অঞ্চলে অবস্থিত বিন্দুগুলো দিয়ে সূচিত করা যায়। ওই অঞ্চলে কেবল ও কেবলমাত্র সে ধরনের প্রাণীরাই থাকতে পারবে (অর্থাৎ যারা দুই পায়ী ও উড়তে পারে)।

মানুষ ও পেঙ্গুইন দ্বিপদী- তাই তারা কমলা বৃত্তে জায়গা করে নেবে; আবার যেহেতু তারা উড়তে পারে না, তাই তারা কমলা বৃত্তের বাম পার্শ্বে অর্থাৎ কমলা বৃত্তের যে অংশটি নীল বৃত্তের সাথে অধিক্রমণ করছে না, সেখানে অবস্থান করবে। মশার ছয়টি পা আছে এবং উড়তে পারে, তাই মশার অবস্থান বিন্দু হবে নীল বৃত্তের সেই অংশে যেটি কমলা বৃত্তকে অধিক্রমণ করছে না। যে সকল প্রাণী দ্বিপদী নয়, আবার উড়তেও পারে না (যেমন- তিমিমাছ ও মাকড়সা) তারা উভয় বৃত্তের বাইরে অবস্থিত বিন্দুগুলো দিয়ে সূচিত হবে।

A ও B সেটের সমন্বিত অঞ্চলকে বলা হয় A সংযোগ B এবং A ∪ B দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে A সংযোগ B দ্বিপদী বা উড়তে পারে (বা উভয় বৈশিষ্ট্য-ই বিদ্যমান) এমন প্রাণীদের নির্দেশ করে।

A ও B উভয় সেট অধিক্রমণ করেছে, এমন অঞ্চলকে A ছেদ B লেখা হয় এবং A ∩ B লিখে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, এই দুই সেটের ছেদকৃত অংশ ফাঁকা নয়, কারণ কমলা ও নীল উভয় বৃত্তে থাকতে পারে, এমন প্রাণীগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করার মত বিন্দু এখানে রয়েছে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
ক্যামব্রিজে ভেন রেখাচিত্র অংকিত রঙ্গিন কাচের জানালা

১৮৮০ সালে জন ভেন " ফিলোসোফিক্যাল ম্যাগাজিন এন্ড জার্নাল অফ সায়েন্স" এ প্রকাশিত তার " যুক্তি ও প্রস্তাবের রেখাচিত্রগত ও যান্ত্রিক উপস্থাপন" শীর্ষক নিবন্ধে প্রথম ভেন রেখাচিত্র উপস্থাপন করেন।[] এই নিবন্ধে রেখাচিত্রের দ্বারা যুক্তি উপস্থাপনের বিভিন্ন উপায় বর্ণনা করা হয়। ফ্রাঙ্ক রুসকি ও মার্ক ওয়েস্টনের মতে, আনুষ্ঠানিক যুক্তিবিজ্ঞানে এমন ধরনের রেখাচিত্র ব্যবহারের " ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ভেন রেখাচিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ও পরিচিত রেখাচিত্রগুলো আসলে বেশ আগেই উৎপত্তি লাভ করেছিল। সেগুলো ভেনচিত্রের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কারণ তিনি (ভেন) ব্যাপকভাবে সেগুলোর ব্যবহার নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন, তাদের ব্যবহারকে নির্দিষ্ট রূপ দান করেছিলেন এবং প্রথমবারের মত সর্বজনীনভাবে প্রকাশ করেছিলেন।" []

ভেন নিজে "ভেন রেখাচিত্র" শব্দটি ব্যবহার করেন নি এবং তার আবিষ্কারকে "অয়লারিয়ান বৃত্ত" হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।[] উদাহরণস্বরূপ, ১৮৮০ সালে তার লিখিত প্রবন্ধের প্রথম বাক্যে ভেন লিখেছিলেন, " গত শতাব্দীতেই রেখচিত্র দিয়ে উপস্থাপনের বিভিন্ন পদ্ধতি যুক্তিশাস্ত্রে বহুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সে কারণে, যুক্তিবিজ্ঞান নিয়ে পেশাদার পর্যায়ের পড়াশোনা না করা অনেক পাঠকও হয়তো এ ধরনের নকশাচিত্রের সাধারণ প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত আছেন। এসব পদ্ধতির মধ্যে- "অয়লারিয়ান বৃত্ত" বলা যায়, এমন একটি পদ্ধতিই শুধু সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে..."[] লুইস ক্যারল ( চার্লস ডজসন) তার বই " সিম্বলিক লজিক"-এর (১৮৯৬ সালে প্রকাশিত চতুর্থ সংস্করণে) "শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে লিখিত একটি পরিশিষ্টে" " রেখচিত্রের ভেন পদ্ধতি" তথা " রেখাচিত্রের অয়লার পদ্ধতি" অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্লারেন্স ইরভিং লুইস ১৯১৮ সালে তার " অ্যা সার্ভে অফ সিম্বলিক লজিক" গ্রন্থে " ভেন রেখাচিত্র" শব্দটি ব্যবহার করেন। [][]

ভেন রেখাচিত্রের সাথে অষ্টাদশ শতকে লিওনার্ড অয়লার উদ্ভাবিত "অয়লার রেখাচিত্র"-এর অনেক মিল আছে।[] এ প্রসঙ্গে এম.ই. ব্যারন উল্লেখ করেছিলেন, অয়লারের পূর্বেই লিবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬) সপ্তদশ শতকে একই ধরনের কিছু রেখাচিত্র তৈরি করেছিলেন-যদিও এর বেশিরভাগ অপ্রকাশিত থেকে গিয়েছিল।[] এছাড়াও তিনি লক্ষ্য করেন,আরও পূর্বে-ত্রয়োদশ শতাব্দিতে রামন লুল-ও অয়লারের মত রেখাচিত্র তৈরি করেছিলেন।[]

বিংশ শতাব্দিতে ভেন রেখাচিত্রের আরও উন্নতি সাধন করা হয়। ডি. ডব্লিউ. হেন্ডারসন ১৯৬৩ সালে দেখিয়েছিলেন যে, একটি n-ভেন রেখাচিত্রের n গুণ ঘূর্ণন প্রতিসাম্য থাকার অর্থ হল n একটি মৌলিক সংখ্যা।[] তিনি আরও দেখান, এ ধরনের প্রতিসম ভেন রেখাচিত্র থাকতে পারে যখন n এর মান ৫ বা ৭ হয়। ২০০২ সালে পিটার হ্যামবার্গার n=১১-র জন্য প্রতিসম ভেন রেখচিত্র বের করেন এবং ২০০৩ সালে, গ্রিগস, কিলান ও স্যাভ্যাজ দেখান যে, অন্য সকল মৌলিক সংখ্যার জন্যও প্রতিসম ভেন রেখাচিত্র আছে। এভাবেই দেখা যায়, ঘূর্ণন প্রতিসম ভেন রেখাচিত্র থাকতে পারে যদি ও কেবল যদি n মৌলিক সংখ্যা হয়।[১০] [১১]

১৯৬০ সালে নব্য গণিত আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেট তত্ত্বের নির্দেশনায় ভেন রেখাচিত্র ও অয়লার রেখাচিত্র অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে এ দুইটি রেখাচিত্র অন্যান্য শাস্ত্রের পাঠ্যক্রম ও অধ্যয়নে গৃহীত হয়েছে।[১২]

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

[সম্পাদনা]

ভেন রেখাচিত্র একই সমতলে অবস্থিত কয়েকটি সাধারণ-আবদ্ধ বক্ররেখা নিয়ে গঠিত হয়। লুইসের মতে, " এসব রেখাচিত্রের মূলনীতি হল, নির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে প্রকাশিত শ্রেণী বা সেটগুলোর একে অন্যের সাথে এমন সম্পর্ক থাকবে যেন এসব শ্রেণীর মধ্যে সকল যৌক্তিক সম্পর্ক একই রেখাচিত্র দিয়ে সূচিত করা যায়। যার মানে, রেখাচিত্রটিতে প্রাথমিক অবস্থায় শ্রেণীগুলোর মধ্যে যে কোন সম্ভাব্য স্থাপনের সুযোগ থাকে এবং ওই নির্দিষ্ট এলাকাটি ফাঁকা নাকি ফাঁকা না তার ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত বা সম্ভাব্য সম্পর্ক ঠিক করা হয়।" []

ভেন রেখাচিত্র সাধারণত কয়েকটি বৃত্তের অধিক্রমণ দ্বারা গঠিত হয়। বৃত্তের ভেতরের অংশ প্রতীকী অর্থে সেটের উপাদানগুলোকে নির্দেশ করে, যেখানে বৃত্তের বাইরের অংশ সেটের বাইরে থাকা উপাদানগুলোকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দুই সেট সংবলিত ভেন রেখাচিত্রে, একটি বৃত্ত হয়তো কাঠের তৈরি তৈজসপত্রের গ্রুপকে নির্দেশ করতে পারে যেখানে আরেকটি বৃত্ত সকল টেবিল (আসবাব)-এর সেটকে প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে বৃত্তদ্বয়ের অধিক্রমণকারী এলাকা বা ছেদকৃত অংশ কাঠের তৈরি সকল টেবিলের সেটকে নির্দেশ করবে। বৃত্ত ছাড়া অন্য আকৃতিগুলো ভেনের নিজস্ব উচ্চতর সেট সংবলিত রেখাচিত্রে নিচে প্রদর্শিত উপায়ে ব্যবহার করা যায়। ভেন রেখাচিত্রে সাধারণত সেটের আপেক্ষিক বা পরম আকার (অঙ্কবাচকতা)-এর ব্যাপারে যেমন- সেটগুলো সুবিন্যস্ত রেখাচিত্র কী না সে ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না।

ভেন রেখাচিত্র অয়লার রেখাচিত্রেরই অনুরূপ। তবে n সংখ্যক উপাদান নিয়ে গঠিত ভেন রেখাচিত্রের জন্য অবশ্যই 2^n সংখ্যক প্রকল্পিত-সম্ভাব্য এলাকা থাকবে যারা প্রতিটি উপাদান সেটের অন্তর্ভুক্তি বা বর্জনের সমন্বয়ে গঠিত হবে। অয়লার রেখাচিত্রে শুধু প্রদত্ত কোন প্রসঙ্গ বা পরিস্থিতির জন্য আসলেই সম্ভব এমন এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভেন রেখাচিত্রে, কোন ছায়াময় এলাকা ফাঁকা অঞ্চল প্রকাশ করতে পারে, যেখানে অয়লার রেখাচিত্রে অনুরূপ অঞ্চলটি রেখাচিত্রের মধ্যে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি সেট দুগ্ধজাত পণ্য আর আরেকটি সেট পনিরকে প্রকাশ করে, তাহলে ভেন রেখাচিত্রে এমন একটি এলাকা থাকবে যেখানে দুগ্ধজাত নয় এমন পনিরগুলো জায়গা করে নেবে। কিন্তু অয়লার রেখাচিত্রে ধরেই নেয়া হবে- এ প্রসঙ্গে যে পনিরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা দুগ্ধজাত পণ্য আর সেজন্য পনিরের জন্য নির্দিষ্ট পুরো এলাকাটি দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই থাকবে- দুগ্ধজাত নয় এমন পনিরের জন্য কোন এলাকা থাকবে না। এর মানে দাঁড়ায়, সীমানাসূচক রেখার সংখ্যা যত বাড়বে, অয়লার রেখাচিত্র এর সমতুল্য ভেন রেখাচিত্রের তুলনায় তত কম জটিল দেখাবে, বিশেষ করে যদি ফাঁকা নয় এমন ছেদকৃত অংশের সংখ্যা কম হয়। [১৩]

অয়লার ও ভেন রেখাচিত্রের মধ্যে সম্পর্ক নিম্নোলিখিত উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায়। তিনটি সেট নেয়া হল-

এসকল সেটের ভেন আর অয়লার রেখাচিত্র হবে-

বেশি সংখ্যক সেটের জন্য সম্প্রসারণ

[সম্পাদনা]

যদিও ভেন রেখাচিত্র সচরাচর দুই বা তিনটি সেটকে প্রকাশ করে, কিন্তু আরও বেশি সংখ্যক সেটকে প্রকাশ করার জন্য আরও পদ্ধতি আছে। নিচে যেমনটি দেখানো হয়েছে, একে অপরকে ছেদ করে এমন চারটি গোলোক উচ্চতর ক্রমের ভেন রেখাচিত্র গঠন করেছে যার সরল প্রতিসমতা রয়েছে এবং দৃশ্যত উপস্থাপন করা যায়। ১৬ টি ছেদকৃত অংশ একটি "ট্যাসেরাক্ট" ( বা যথাক্রমে ১৬ ঘর সংবলিত কোষ) নির্দেশ করে।




বেশি সংখ্যক সেটের জন্য, রেখাচিত্রে প্রতিসমতার খানিকটা হ্রাস অনিবার্য হয়ে ওঠে। ভেন বেশি সংখ্যক সেটকে প্রকাশ করে এমন "নিজেদের মধ্যে মার্জিত...প্রতিসম চিত্র" খুঁজে বের করতে আগ্রহী ছিলেন আর তাই তিনি উপবৃত্ত (নিচে দেখুন) ব্যবহার করে একটি চার সেট সংবলিত মার্জিত রেখাচিত্র উদ্ভাবন করেন। তিনি যে কোন সংখ্যক সেটের জন্য ভেন রেখাচিত্রের কাঠামো-ও প্রণয়ন করেন যাতে তিন বৃত্ত সংবলিত রেখাচিত্র থেকে শুরু করে সেটের সীমানা নির্দেশ করে এমন প্রতিটি ক্রমিক বক্ররেখা পূর্বোক্তটির সাথে সন্নিবেশিত হয়।

এডওয়ার্ডস-ভেন রেখাচিত্র

[সম্পাদনা]

এন্থনি উইলিয়াম ফেয়ারব্যাংক এডওয়ার্ডস একটি গোলক পৃষ্ঠ টুকরো করে করে অধিক সংখ্যক সেটের জন্য ভেন রেখাচিত্র তৈরি করেন যা এডওয়ার্ডস-ভেন রেখাচিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, সমকোণে তিনটি গোলার্ধ (x = 0, y = 0 ও z = 0) নিয়ে তিনটি সেটকে সহজেই প্রকাশ করা যায়। এরপর নিরক্ষরেখার উপর-নিচ বরাবর উঠবে আর নামবে এমন একটি টেনিস বলের খাঁজের মত একটি বক্ররেখা নিয়ে চতুর্থ সেটটি প্রকাশ করা যায়। এরপর ফলাফল সেটটিকে প্রদর্শিত উপায়ে ক্রমবর্ধমান খাঁজসংবলিত দাঁতওয়ালা চাকা-র মত রেখাচিত্র দিয়ে প্রকাশ করার জন্য কোন সমতলে অভিক্ষিপ্ত করা যায়। ভেনের স্মরণে রঙিন কাচের জানালা ডিজাইন করার সময় এ সকল রেখাচিত্র উদ্ভাবিত হয়েছিল।[১৪] [১৫]

অন্যান্য রেখাচিত্র

[সম্পাদনা]

এডওয়ার্ডস-ভেন রেখাচিত্রটি টপোলজি-গত ভাবে ব্রাংকো গ্রুনবাউম প্রণীত রেখাচিত্রের অনুরূপ যাতে ক্রমবর্ধমান পার্শ্ব-সংখ্যা সংবলিত, একে অপরকে ছেদকৃত বহুভুজকে ভিত্তি করে গঠিত হয়। এরা "অধি-ঘনক"-এর দ্বিমাত্রিক প্রকাশও বটে।

হেনরি জন স্টিফেন স্মিথ সাইন বক্ররেখা দিয়ে অনুরূপ n-সেট সংবলিত রেখাচিত্র প্রণয়ন করেন যাতে এক গুচ্ছ সমীকরণ ব্যবহার করা হয়- [১৪] [১৫]

চার্লস লুটউইজ ডজসন (যিনি লুইস ক্যারোল নামেও পরিচিত) "ক্যারোল স্কয়ার" নামের একটি পাঁচ সেটের রেখাচিত্র উদ্ভাবন করেছিলেন।

সম্পর্কিত ধারণাবলি

[সম্পাদনা]
সত্য সারণি রূপে ভেন রেখাচিত্র।

ভেন রেখাচিত্র , ইত্যাদি প্রতিজ্ঞার জন্য সত্য সারণি নির্দেশ করে যেখানে ভেন রেখাচিত্রের প্রতিটি এলাকা সত্য সারণির একেকটি সারিকে প্রকাশ করে। এ ধরনের ভেন রেখাচিত্রকে জনসন রেখাচিত্র বলা হয়। সেটগুলোকে জন এফ. র‌্যানডলফ প্রণীত "আর-রেখাচিত্র" দিয়েও প্রকাশ করা যায়। [১৫][১৬]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Venn, John (জুলাই ১৮৮০)। "I. On the Diagrammatic and Mechanical Representation of Propositions and Reasonings" (পিডিএফ)The London, Edinburgh, and Dublin Philosophical Magazine and Journal of Science। 5। Taylor & Francis10 (59): 1–18। ডিওআই:10.1080/14786448008626877। ২০১৭-০৫-১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।  [১] [২]
  2. Ruskey, Frank; Weston, Mark (২০০৫-০৬-১৮)। "A Survey of Venn Diagrams"The Electronic Journal of Combinatorics 
  3. Sandifer, Ed (২০০৩)। "How Euler Did It" (pdf)MAA OnlineThe Mathematical Association of America (MAA)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-২৬ 
  4. Venn, John (১৮৮০)। "On the employment of geometrical diagrams for the sensible representations of logical propositions"Proceedings of the Cambridge Philosophical Society4: 47–59। 
  5. Lewis, Clarence Irving (১৯১৮)। A Survey of Symbolic Logic। Berkeley: University of California Press 
  6. Mac Queen, Gailand (অক্টোবর ১৯৬৭)। The Logic Diagram (পিডিএফ) (Thesis)। McMaster University। ২০১৭-০৪-১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৪  (NB. Has a detailed history of the evolution of logic diagrams including but not limited to the Venn diagram.)
  7. Leibniz, Gottfried Wilhelm (১৯০৩) [ca. 1690]। "De Formae Logicae per linearum ductus"। Couturat, LouisOpuscules et fragmentes inedits de Leibniz (Latin ভাষায়)। পৃষ্ঠা 292–321। 
  8. Baron, Margaret E. (মে ১৯৬৯)। "A Note on The Historical Development of Logic Diagrams"The Mathematical Gazette53 (384): 113–125। জেস্টোর 3614533ডিওআই:10.2307/3614533 
  9. Henderson, D. W. (এপ্রিল ১৯৬৩)। "Venn diagrams for more than four classes"American Mathematical Monthly70 (4): 424–6। জেস্টোর 2311865ডিওআই:10.2307/2311865 
  10. Ruskey, Frank; Savage, Carla D.; Wagon, Stan (ডিসেম্বর ২০০৬)। "The Search for Simple Symmetric Venn Diagrams" (PDF)Notices of the AMS53 (11): 1304–11। 
  11. Venn, John (১৮৮১)। Symbolic logicMacmillan। পৃষ্ঠা 108। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০৯ 
  12. "Strategies for Reading Comprehension Venn Diagrams"। ২৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  13. "Euler Diagrams 2004: Brighton, UK: September 22–23"। Reasoning with Diagrams project, University of Kent। ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-১৩ 
  14. Edwards, Anthony William Fairbank (২০০৪), Cogwheels of the Mind: The Story of Venn Diagrams, Baltimore, Maryland, USA: Johns Hopkins University Press, পৃষ্ঠা 65, আইএসবিএন 0-8018-7434-3 .
  15. Grimaldi, Ralph P. (২০০৪)। Discrete and combinatorial mathematics। Boston: Addison-Wesley। পৃষ্ঠা 143আইএসবিএন 0-201-72634-3  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Grimaldi_2004" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  16. Johnson, D. L. (২০০১)। "3.3 Laws"Elements of logic via numbers and sets। Springer Undergraduate Mathematics Series। Berlin, Germany: Springer-Verlag। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 3-540-76123-3