মনোজ কুমার | |
---|---|
![]() ২০১২ সালে মনোজ কুমার | |
জন্ম | হরিকিষণ গিরি গোস্বামী ২৪ জুলাই ১৯৩৭ |
মৃত্যু | ৪ এপ্রিল ২০২৫ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩৭–১৯৪৭) ভারতীয় (১৯৪৭-বর্তমান) |
অন্যান্য নাম | ভারত কুমার |
মাতৃশিক্ষায়তন | হিন্দু কলেজ, দিল্লি |
পেশা | অভিনেতা চলচ্চিত্র পরিচালক |
কর্মজীবন | ১৯৫৭-১৯৯৯ |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনতা পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | শশী গোস্বামী |
সন্তান | ২ |
আত্মীয় | রাজীব গোস্বামী (ভাই) মনীষ আর গোস্বামী (ভাই) |
সম্মাননা | পদ্মশ্রী (১৯৯২) দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (২০১৫) |
মনোজ কুমার (জন্ম: হরিকিষণ গিরি গোস্বামী;[১] ২৪ জুলাই ১৯৩৭ - ৪ এপ্রিল ২০২৫[২]), ভারত কুমার নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, ও লেখক। চার দশকের কর্মজীবনে তিনি ৫৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে একটি দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চলচ্চিত্রে আজীবন অবদানের জন্য ভারতের চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং দুটি রাজ্য সরকার পুরস্কার। এছাড়া তিনি ৮টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে।[৩]
১৯৫৭ সালে ফ্যাশন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি উপকার (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ কাহিনি, শ্রেষ্ঠ সংলাপ বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বেঈমান চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং ১৯৭৩ সালে শোর চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদনা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি রোটি কাপড়া অউর মাকান চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
মনোজ কুমার ১৯৩৭ সালের ২৪শে জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের (বর্তমান খাইবার পাখতুনখোয়া, পাকিস্তান) অ্যাব্টাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম হরিকিষণ গিরি গোস্বামী। তার যখন ১০ বছর বয়স, তার পরিবার দেশ বিভাজনের কারণে জন্দিয়ালা শের খান থেকে দিল্লিতে চলে আসে।[৪] তার পরিবার উদ্বাস্তু হিসেবে বিজয় নগর, কিংসওয়ে ক্যাম্প ও পরে নতুন দিল্লির পুরনো রাজেন্দ্র নগরে বসবাস করে।
কুমার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেন। স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৫৭ সালে ফ্যাশন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেকের পর মনোজ সাহারা (১৯৫৮), চান্দ (১৯৫৯) ও হানিমুন (১৯৬০) চলচ্চিত্রে ছোট কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি কাঁচ কি গুড়িয়া (১৯৬১) দিয়ে প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি পিয়া মিলন কি আস (১৯৬১), সুহাগ সিন্দুর (১৯৬১), রেশমি রুমাল (১৯৬১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যেগুলো বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তার প্রথম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হল ১৯৬২ সালে মালা সিনহার বিপরীতে বিজয় ভট্টরে হরিয়ালি অউর রাস্তা।[৫] এই চলচ্চিত্রের সফলতার পর তার অভিনীত শাদী (১৯৬২), ডক্টর বিদ্যা (১৯৬২) ও গ্রহস্তি (১৯৬৩) বক্স অফিসে সফল হয়।[৫]
মনোজ রাজ খোসলার রহস্য রোমাঞ্চকর ও কৌন থি? (১৯৬৪)-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন।[৬] চলচ্চিত্রটি এর চিত্রনাট্য এবং মদন মোহনের সুরারোপিত ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া "লাগ জা গলে" ও "নয়না বরসে রিমঝিল"-এর মত সুরেলা গানের জন্য সুপারহিট হয়।[৭][৬]
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তাকে জনপ্রিয় স্লোগান জয় জওয়ান জয় কিসান-এর উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বলেন।[১][৮] তার উপদেশ অনুসারে দেশাত্মবোধক উপকার (১৯৬৭) চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার পরিচালনায় অভিষেক ঘটে।[৯] চলচ্চিত্রটি বিপুল সমাদৃত হয় এবং সেই বছর বক্স অফিসে শীর্ষে অবস্থান করে সর্বকালেরর ব্লকবাস্টার হয়ে ওঠে।[১০] চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত ১৯৬০-এর দশকের ষষ্ঠ সর্বাধিক বিক্রীত হিন্দি অ্যালবাম ছিল।[১১] এই চলচ্চিত্র "মেরে দেশ কী ধর্তি" গানটি প্রতি বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে বাজানো হয়।[১২] চলচ্চিত্রটির জন্য মনোজ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ কাহিনি, শ্রেষ্ঠ সংলাপ বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[১৩][১৪] এরপর তার অভিনীত পাত্থর কে সনম চলচ্চিত্রটিও সফলতা লাভ করে, কিন্তু সাধনার বিপরীতে অনীতা ব্যর্থ হয়।[১৫] ১৯৬৮ সালে তিনি রাজ কুমার ও ওয়াহিদা রহমানের সাথে নীল কমল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হয় এবং ১৯৬৮ সালের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[১৬] একই বছর তিনি ওয়াহিদার সাথে আদমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার।[১৭] এই চলচ্চিত্রটিও ভাল ব্যবসা করে এবং প্রথম সপ্তাহেই ব্যবসাসফল ঘোষিত হয়।[১৮][১৯] ১৯৬৯ সালে তিনি মোহন সেহগলের পরিচালনায় ইংরেজি হ্যাপি গো লাভলি (১৯৫১)-এর হিন্দি চলচ্চিত্রায়ন সজন-এ আশা পারেখের বিপরীতে অভিনয় করেন।[২০] চলচ্চিত্রটি সফল হয় এবং এটি সেই বছরের দশম সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[২১]
১৯৭২ সালে তিনি বেঈমান চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং শোর চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদনা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[২২] এরপর তিনি সামাজিক নাট্যধর্মী রোটি কাপড়া অউর মাকান চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।[২৩] মনোজের পাশাপাশি এই চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন শশী কাপুর, অমিতাভ বচ্চন, জিনাত আমান ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়।[২৪] ১৯৭৪ সালের ১৮ই অক্টোবর মুক্তি চলচ্চিত্রটি সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র এবং প্রেক্ষাগৃহে চলা শেষে এটি সর্বকালের ব্লকবাস্টার ঘোষিত হয়।[২৫] মনোজ এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে মনোজ সোহানলাল কনওয়ারের পরিচালনায় সন্ন্যাসী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই বিপুল ব্যবসা করে এবং এটি সেই বছরে বক্স অফিসে তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[২৬] এই চলচ্চিত্রে ধার্মিক যুবক চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার চতুর্থ ও সর্বশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২৭] ১৯৭৬ সালে মারপিটধর্মী-অপরাধ চলচ্চিত্র দস নাম্বারি দিয়ে তিনি ব্লকবাস্টারের হ্যাট-ট্রিক করেন।[২৮]
মনোজ হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালের মৃত্যু সনদ অনুসারে তার মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ ছিল যকৃতের সিরোসিস।[২৯][৩০][৩১]
|1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)