মনোরমা | |
---|---|
জন্ম | গোপীশান্তা ২৬ মে ১৯৩৭ |
মৃত্যু | ১০ অক্টোবর ২০১৫ | (বয়স ৭৮)
অন্যান্য নাম | আচি |
কর্মজীবন | ১৯৫৮-২০১৫ |
দাম্পত্য সঙ্গী | এস. এম. রামনাথন (বি. ১৯৬৪; বিচ্ছেদ. ১৯৬৬) |
সন্তান | ১ |
মনোরমা নামে পরিচিত গোপীশান্তা (২৬ মে ১৯৩৭ - ১০ অক্টোবর ২০১৫)[১][২] হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী, নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী ও কৌতুকাভিনেত্রী। তিনি ১৫০০-এর অধিক চলচ্চিত্রে, ৫০০০-এর অধিক মঞ্চ পরিবেশনা ও কয়েকটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। ১৯৮৫ সালে ১০০০-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য গিনেজ বিশ্ব রেকর্ড বইতে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালে পুদিয়া পাদাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার - দক্ষিণ লাভ করেন। তিনি কালাইমামনি পুরস্কার প্রাপক। ২০০২ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।
মনোরমা ১৯৩৭ সালের ২৬শে মে ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের তাঞ্জাবুর জেলার মন্নরগুড়িতে (বর্তমান তামিলনাড়ু, ভারত) জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪] তার পিতা রামামির্থম ও মাতা কাসিয়াপ্পান কিলাকুডাইয়ার। তার মাতা গৃহপরিচারিকার কাজ করে তাকে লালনপালন করেন।[৫] তিনি তার সফলতার পিছনে তার মায়ের অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন যে তার অনেক চলচ্চিত্রে মায়ের চরিত্রের পিছনে তার মায়ের অনুপ্রেরণা রয়েছে। তার পরিবার দারিদ্রের কারণে কারাইকুডির নিকটবর্তী পাল্লাতুরে চলে যায়।[৬] পাল্লাতুরে থাকাকালীন তার মাতা একদিন রক্তবমি শুরু করেন, ফলে মনোরম গৃহপরিচারিকার কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১১ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করেন। একদা পাল্লাতুরে এক মঞ্চদল আসে, কিন্তু একজন অভিনেত্রী গান গাইতে না পারার কারণে বাদ পরেন এবং দলটি এমন একজনকে খুঁজছিল যে অভিনয় করতে পারে এবং গান গাইতে পারে। দলটি অন্ধমন কাদলি নাটকে তাকে এই চরিত্রে কাজের সুযোগ দেন। এই ভাবে ১২ বছর বয়সে মঞ্চে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এই সময়ে, তার এক মঞ্চনাটকের পরিচালক তিরুভেঙ্গদম এবং সুরেলা থিয়াগরাজন তাঁকে মনোরমা নাম দেন। তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় অব্যাহত রাখেন এবং পাশাপাশি আবহ গায়িকা হিসেবেও গান গাওয়া চালিয়ে যান। মঞ্চনাটকে তার অভিনয় দেখে, পরিচালক জনকীরামন তার ইনবাভাজহু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তাঁকে প্রস্তাব দেন, যা ৪০% অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং পরবর্তীতে পরিচালক কন্নদাসন তার উমাইঙ্কোটাইয় চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তাঁকে প্রস্তাব করেন, যা কিনা প্রায় ৪০% শ্যুটিং হওয়ার পর বাতিল হয়ে যায়। এই দুটি চলচ্চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার ফলস্বরূপ তখন তিনি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেন।
মঞ্চনাটক করার সময় মনোরমা তার পরিচালকের প্রেমে পড়েছিলেন, যার নাম ছিল এস এম রমনাথন এবং ১৯৬৪ সালে তিনি তাকে বিয়ে করেছিলেন। এই দম্পতির ভুপপ্যাথি নামে একটি পুত্র হয়। তবে, ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এবং চেন্নাইতে তারা পৃথকভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন যে, "আমার মা আমাকে মেডিসিন বিভাগে পড়াতে চেয়েছিলেন। তবে সেই দিনগুলিতে ডাক্তার হওয়া সহজ ছিল না। শেষে আমি অভিনেত্রী হয়েছি। সুতরাং, যদি আমি অভিনয় না করতাম, তবে আমার মা যেমন ইচ্ছা করেছিলেন তেমনই আমি ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করতাম। তবে এখন, ভাগ্যক্রমে, আমার নাতি একজন ডাক্তার, এবং আমি এতে গর্বিত।"
মনোরমা ১৯৫৮ সালে কন্নদাসনের তামিল ভাষার মলয়িত্তা মঙ্গই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মঞ্চনাটক থেকে চলচ্চিত্রে আগমন করেন।[৭] তার চলচ্চিত্রে আসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কন্নাদাসন ১৯৫৭ সালে মালায়িত্তা মঙ্গই চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ দিয়ে আমার জীবন পরিবর্তন করে দেয়। এটি কৌতুক চরিত্র ছিল, এবং তিনি আমার প্রতি এতটাই আস্থা রেখেছিলেন যে আমি এই কাজটি করতে পারব। আমি নিজের সম্পর্কে সন্দিহান ছিলাম।" কিন্তু কন্নাদাসন তাকে এই চলচ্চিত্রে কাজ করতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেন।[৮] ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কৌতুকাভিনয়ে মনযোগী হন। তিনি প্রখ্যাত কৌতুকাভিনেতা নগেশের পাশাপাশি ৫০টি চলচ্চিত্রে সমমানের ভূমিকায় কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কঞ্জুম কুমারী চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।[৯]
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অসুস্থতার কারণে মনোরমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।[১০][১১] তিনি ২০১৫ সালের ১০ই অক্টোবর ৭৮ বছর বয়সে চেন্নাইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[১২] তার এক পুত্র রয়েছে, তিনি হলেন সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা ভূপতি।[১৩]