মালবিকাগ্নিমিত্রম্‌

মালবিকাগ্নিমিত্রম (সংস্কৃত: मालविकाग्निमित्रम्) অর্থ মালবিকা ও অগ্নিমিত্র) সংস্কৃত কবি তথা নাট্যকার কালিদাস রচিত একটি নাটক। অধিকাংশ গবেষকের মতে এটি তার প্রথম নাটক। এই নাটকের মূল উপজীব্য বিদিশার শুঙ্গবংশীয় রাজা অগ্নিমিত্র [] ও তার প্রধান মহিষীর পরিচারিকার প্রেমকাহিনি। রাজা মালবিকা নাম্নী এক নির্বাসিতা পরিচারিকার ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েন। মেয়েটির প্রতি রাজার আকর্ষণের কথা রাজমহিষী জানতে পারলে, মালবিকাকে কারারুদ্ধ করা হয়। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে শেষ পর্যন্ত জানা যায় যে মালবিকা রাজবংশজাত। তখন রাজা তাকে বিবাহ করে রানির মর্যাদা দেন।

এই নাটকে পুষ্যমিত্রের রাজসূয় যজ্ঞের একটি বর্ণনা আছে। সঙ্গীত ও অভিনয়ের একটি তত্ত্বমূলক ব্যাখ্যাও এই নাটকে সংযোজিত হয়েছে। মনে করা হয়, মালবিকাগ্নিমিত্রম একটি মঞ্চসফল নাটক।

আখ্যানবস্তু

[সম্পাদনা]

বিদিশার রাজা অগ্নিমিত্র তার প্রধানা মহিষী ধারিণীর পরিচারিকা মালবিকার চিত্র দেখে মুগ্ধ হলেন। বিদূষক মালবিকাকে রাজসমক্ষে আনার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন। ধারিণীর সহচরী পরিব্রাজিকা পণ্ডিতকৌশিকীর সহায়তায় তিনি নাট্যাচার্য গণদাস ও হরদত্তের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত করলেন। পরিব্রাজিকা উভয় নাট্যাচার্যের পরীক্ষা নিতে বললে, গণদাসের শিষ্যা মালবিকা রাজসমক্ষে নৃত্য প্রদর্শন করল। মালবিকাকে দেখে রাজা মোহিত হলেন। ধারিণীর অপর পরিচারিকা বকুলাবলিকার সহায়তায় প্রমোদকাননে রাজা ও মালবিকার মিলনের পরিকল্পনা করলেন বিদূষক। কিন্তু তখনই রাজার দ্বিতীয়া মহিষী ইরাবতী রাজার সঙ্গে দোলারোহণের বাসনায় উপস্থিত হলেন প্রমোদকাননে। রাজাকে সংকেত স্থানে না পেয়ে মালবিকা ও বকুলাবলিকা এবং রাজা ও বিদূষককে আড়াল থেকে লক্ষ্য করতে লাগলেন তিনি। মালবিকা ও বকুলাবলিকার কথোপকথন থেকে বুঝলেন যে সে রাজার প্রতি অনুরক্ত। পরে রাজা মালবিকাকে আলিঙ্গনে উদ্যত হলে আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাজাকে কটূক্তিতে অপদস্থ করলেন ইরাবতী। পরে কথাটি তুলে দিলেন ধারিণীর কানে। ধারিণী মালবিকাকে কারারুদ্ধ করলেন। কিন্তু বিদূষক মালবিকাকে মুক্ত করলেন। এদিকে এক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে প্রকাশিত হল মালবিকা আসলে বিদর্ভরাজ মাধবসেনের ভগিনী এবং পরিব্রাজিকা পণ্ডিতকৌশিকী মাধবসেনের মন্ত্রী আর্যসুমতির ভগিনী। অগ্নিমিত্রের সেনাপতি বীরসেন দস্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে মালবিকাকে ধারিণীর হাতে সমর্পণ করেছিলেন। আর্যসুমতির ভগিনীও একই বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে পরিব্রাজিকারূপে রাজ অন্তঃপুরে আশ্রয় নেন।

এর পরেই অগ্নিমিত্র ও ধারিণীর পুত্র বসুমিত্র দুরন্ত যবনসেনাদের পরাস্ত করে পিতামহ পুষ্যমিত্রের যজ্ঞাশ্ব ফিরিয়ে আনে। এই আনন্দের মুহুর্তে ধারিণীই মালবিকাকে বধূরূপে রাজহস্তে সমর্পণ করেন। বসুমিত্রের বিজয়বার্তায় ইরাবতীও ঈর্ষা ভুলে যান।

পাদটীকা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • কালিদাস সমগ্র, জ্যোতিভূষণ চাকী সম্পাদিত, নবপত্র প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৮২

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]