মিরিক मिरिक | |
---|---|
শহর | |
অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৬°৫৩′১৩″ উত্তর ৮৮°১১′১৩″ পূর্ব / ২৬.৮৮৭° উত্তর ৮৮.১৮৭° পূর্ব | |
দেশ | India |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দার্জিলিং |
সরকার | |
• শাসক | মিরিক পৌরসভা |
উচ্চতা | ১,৪৯৫ মিটার (৪,৯০৫ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৯,১৭৯ |
ভাষা | |
• সরকারী | নেপালী, হিন্দি, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+5:30) |
লোকসভা নির্বাচনকেন্দ্র | দার্জিলিং |
বিধানসভা নির্বাচনকেন্দ্র | কার্শিয়াং |
মিরিক ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত ছবির মত সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র।[১] মিরিক নামটি এসেছে লেপচা কথা মির-ইওক থেকে যার অর্থ "অগ্নিদগ্ধ স্থান"।
মিরিক ভ্রমণপিপাসুদের মানচিত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছে তার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং যাতায়াতের সুব্যবস্থার জন্য। সুমেন্দু লেক এখানকার প্রধান আকর্ষণ যার একদিক বাগান এবং অন্যদিক পাইন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। এই দুটিকে একসঙ্গে যুক্ত করছে পায়ে হাঁটা খিলান সাঁকো ইন্দ্রেনি পুল। লেকটিকে ঘিরে থাকা সাড়ে তিন কিমি লম্বা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সূদূর দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ ভ্রমণার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। লেকের জলে নৌকাবিহার এবং টাট্টু ঘোড়ায় চেপে লেকের চারপাশ প্রদক্ষিণ করায় আছে এক অনাবিল আনন্দ।
মিরিক বাজার, আশেপাশের গ্রাম ও চা বাগানের মানুষদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে যেখানে লেকটি আছে সেই অঞ্চল আগে বচ(Acorus calamus, স্থানীয় নাম বোজো) দিয়ে ঢাকা জলাভূমি ছিল। এখন যেখানে বাগান রয়েছে সেই এলাকায় আগে একটি মাঠ ছিল যেটিতে ব্রিটিশ আধিকারিকরা পোলো খেলত। ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর পার্শ্ববর্তী থুর্বো চা বাগানের ৩৩৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই অঞ্চলটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ১৯৭৪ সাল থেকে যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। নবনির্মিত লেকটি এবং কাছেই অবস্থিত রেস্তোরাঁ "ডে সেন্টার" সহ এই পর্যটন কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, ১৯৭৯-এর এপ্রিলে। পর্যটনের বিকাশের সাথে সাথে সুমেন্দু লেকের অপরপ্রান্তে কৃষ্ণনগর গড়ে ওঠে যেখানে অনেকগুলি হোটেল ও রেস্তোরাঁ আছে।
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৬°৫৪′ উত্তর ৮৮°১০′ পূর্ব / ২৬.৯° উত্তর ৮৮.১৭° পূর্ব।[২] সমুদ্র সমতল থেকে মিরিকের গড় উচ্চতা ১৪৯৫ মিটার (৪৯০৫ ফুট)। এখানকার উচ্চতম স্থান বোকার গোম্ফার উচ্চতা প্রায় ১৭৬৮ মিটার (৫৮০১ ফুট)। নিম্নতম স্থান মিরিক লেক ১৪৯৪ মিটার (৪৯০২ ফুট) উচ্চতায় অবস্হিত।
মিরিকের দূরত্ব শিলিগুড়ি থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৫২ কিমি (৩২ মাইল) এবং দার্জিলিং থেকে ৪৯ কিমি (৩০ মাইল) দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে।
এখানকার জলবায়ু সারাবছরই মনোরম থাকে। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াস এবং শীতে সর্বোনিম্ন ১° সেলসিয়াস।
ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুসারে মিরিক নগর পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংখ্যা ১১৫১৩। এর মধ্যে ৫৬৮৮ জন পুরুষ এবং ৫৮২৫ জন মহিলা।[৩] মিরিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোট জনসংখ্যা ৪৬৩৭৪ যার মধ্যে পুরুষ ২৩৩৯৪ এবং মহিলা ২২৯৮০।[৪]
ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মিরিক শহরের জনসংখ্যা হল ৯১৭৯ জন।[৫] এর মধ্যে পুরুষ ৫০% এবং নারী ৫০%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৭৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮২% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬৫%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে মিরিক এর সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
মিরিক, দার্জিলিং জেলার কার্সিয়াং মহকুমার অন্তর্গত একটি সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ। শহরের ব্যবস্থাপনা দেখাশোনা করে মূলত ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে ওঠা পৌরসভা আর প্রান্তিক গ্রামগুলি দেখাশোনা করে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত :[৬] ছেংগা পানিঘাটা, পাহিলাগাঁও স্কুল দারা - I, পাহিলাগাঁও স্কুল দারা - II, সৌরেনি - I, সৌরেনি - II এবং ডুপতিন। অনেকদিন ধরেই মিরিককে দার্জিলিং জেলার একটি পৃথক মহকুমা হিসাবে দাবি করা হচ্ছে। এখানে একটি তালুক আদালত আছে যা একজন দেওয়ানি বিচারক ও বিচারবিভাগীয় আধিকরণিক দ্বারা পরিচালিত।
মিরিকে একটি সরকারি হাসপাতাল আছে যেখানে ছয় জন সাধারণ এবং এক জন দাঁতের ডাক্তার কর্তব্যরত আছেন। যদিও এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই তবে চোখের জন্য একজন অপ্টোমেট্রিশিয়ান আছেন। এখানে, কৃষ্ণনগরে দুটি ওষুধের দোকান এবং একটি রোগনিদান পরীক্ষাগার তথা চশমার দোকান আছে। মিরিক বাজারে আরো কয়েকটি ওষুধের দোকান আছে।
মিরিকের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর বাগডোগরার দূরত্ব ৫২ কিমি(৩০ মাইল) এবং শিলিগুড়ি সন্নিহিত নিউ জলপাইগুড়ি- সবচেয়ে কাছের রেলওয়ে স্টেশন।
মিরিক থেকে অল্পসংখ্যক বাস শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং যাতায়াত করে। মিরিক থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত শেয়ার টাক্সি চালু আছে যার ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৬০ টাকা। ব্যক্তিগতভাবে টাক্সি ভাড়া করা যায় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। দার্জিলিং মোটর স্টান্ড থেকে মিরিকের কৃষ্ণনগর(মিরিক লেকের ঠিক পাশেই) পর্যন্ত শেয়ার টাক্সি চালু আছে (ভাড়া একই)। এটি মিরিক ট্যুর ও ট্রাভেলস দ্বারা পরিচালিত। মিরিকের মধ্যেও ভ্রমণ করার জন্য শেয়ার টাক্সি চালু আছে মিরিক লেক থেকে মিরিক বাজার পর্যন্ত যার ভাড়া যাত্রী প্রতি ৫ টাকা।
মিরিকের কয়েকটি সাধারণ এলাকা হচ্ছে মিরিক বাজার, থানা লাইন, কৃষ্ণনগর, দেওসিদারা, থুরবো, মিরিক বস্তি এবং ব্যাপারি গোলা। যদিও, বেশির ভাগ হোটেল ও রেস্টুরান্ট কৃষ্ণনগর এলাকায় আছে। ডিজিএইচসি (একটি সরকারি সংস্থা) পরিচালিত, আলায় হেলিপাডের কাছে একটি মোটেল এবং লেকের কাছে একটি টুরিস্ট লজ আছে। এছাড়াও অনেকগুলি ভালো হোটেল আছে কৃষ্ণনগরে যেমন জগজিৎ, সদভাবনা, রত্নাগিরি, মেহলুং, দ্য পার্ক হোটেল, ভিরাস, পারিজাত এবং ব্লু লেগুন। মিরিক বাজারে আছে বৌদির হোটেল ও হোটেল পায়েল। নিঘা, আশীর্বাদ ও বুদ্ধ - এর মত লজ ও প্রাইভেট গেস্ট হাউসও আছে এখানে। মিরিকে একটি সুন্দর বনবাংলো আছে যেটি কার্সিয়াং জেলা বনদপ্তর থেকে বুক করতে হয়। লেকের কাছে একটি পি ডব্লু ডি (পাবলিক ওয়র্কস ডিপার্টমেন্ট) ইন্সপেক্সন বাংলো আছে যেটি বুক করতে হয় শিলিগুড়ি পি ডব্লু ডি অফিস থেকে। রংভং হোমস্টে - মিরিক উপত্যকার প্রথম হোমস্টে এবং এখানে থাকার অভিজ্ঞতাও অনন্য।
এখানে ভিন্ন ভিন্ন রসনার বিভিন্ন খাবার দোকান আছে। কোলকাতা হোটেল পরিবেশন করে বিশুদ্ধ বাঙালী খাবার। টি প্লাস একটি আদর্শ ফাস্ট ফুড কেন্দ্র। এছাড়াও অন্য রেস্তোঁরাগুলি হল গীতাঞ্জলি নেপালী হোটেল ও হিলস্ রেস্তোঁরা। মিরিকে কয়েকটি বিদেশি পানীয়ের দোকান ও বার আছে। হোটেল লোহিত সাগর এবং তেজশ্বী ফাস্ট ফুড বিশুদ্ধ নিরামিশ খাবার পরিবেশন করে যার মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারও আছে। আহার্য সামগ্রী ও নরম পানীয়ের জন্য মিরিক পেট্রল পাম্পের সাথেই একটি বিভাগীয় সমবায় বিপণি আছে। মিরিক লেকের কাছেই অনেকগুলি খাবারের দোকান আছে যারা সূর্য ডোবার আগে অবধি গরমগরম ফাস্ট ফুড পরিবেশন করে।
মিরিকে পাঁচটি ব্যাঙ্কের শাখা আছে, এগুলি হল, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া(ব্রাঞ্চ কোডঃ ৭৩৩৬)(কৃষ্ণনগর), ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া(কৃষ্ণনগর), ইণ্ডিয়ান ওভারসিস ব্যাঙ্ক(কৃষ্ণনগর), সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া(মিরিক বাজার), উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক(শিলিগুড়ির পথে ৬কিমি দূরত্বে সৌরেনী বাজারে)। এখানে ৭টি এ.টি.এম আছে, যার মধ্যে দুটি স্টেট ব্যাঙ্কের(একটি মিরিক বাজারে এবং আরেকটি কৃষ্ণনগরে), একটি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের(মিরিক বাজারে), একটি এইচ.ডি.এফ.সি., একটি আক্সিস ব্যাঙ্ক(দুটিই রয়েছে কৃষ্ণনগরে) এবং বাকি দুটি ইণ্ডিক্যাস এ.টি.এম(একটি মিরিকের থানা লাইনে ও আরেকটি সৌরেনী বাজারে)।
অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ডাক বিভাগের সঞ্চয় প্রকল্প, নাবার্ড, বন্ধন ফাইন্যান্স এবং বহু বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা পরিষেবা কেন্দ্র মিরিকে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |