মিশরের ইতিহাস | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ | ||||||||||||||||||||
![]() | ||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
|
||||||||||||||||||||
রাজবংশসমূহ প্রাচীন মিশরের |
---|
সকল সন দেওয়া আছে খ্রিস্টপূর্ব সাল গণনা হিসেবে |
See also: List of Pharaohs by Period and Dynasty |
মিশরের ইতিহাস বিশ্বের সবচেয়ে সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস হিসেবে আজও সমাদৃত। সুপ্রাচীন নিল নদের প্রবাহমানতা, শস্য উৎপাদনের জন্য এর উর্বর কূলবর্তী ভূমিসমূহ এবং সুপ্রশস্ত 'নিল' ব-দ্বীপের জন্য মিশর সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। মিশরের স্থানীয় বাসিন্দাদের আদিম শিক্ষাধারা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি মিশরকে করেছিল বিশ্ববাসীর কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দু। মিশরের প্রাচীন ইতিহাসের সিংহভাগ রহস্যে আবৃতই ছিল। এক পর্যায়ে রোসেটা স্টোন এর সহায়তায় মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্সের গুপ্ত সংকেতসমূহের পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে সেই রহস্যের খানিকটা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়।
পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি হল মিশরের দ্যা গ্রেট পিরামিড অব গিজা। তাছাড়া মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার সুবিখ্যাত পাঠাগারটিই ছিল সেই সময়ের একমাত্র লাইব্রেরি।
অন্তত ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরে নিল নদ উপত্যকায় প্রথম মানব বসতি স্থাপন করা হয়।[১] ৩১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম রাজবংশের 'ফারাও' রাজা নারমার অধীনে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন মিশরকে একই রাজ্যের আওতাভুক্ত করা হয়। মিশরের স্থানীয় আদিবাসীদের শাসন খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতকে হাখমানেশি সাম্রাজ্য বা আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের আক্রমণের আগ পর্যন্ত টিকে ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সনে মেসিডেনীয়ান শাসক আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট হাখমানেশিদের পরাস্ত করে মিশর দখল করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন হেলেনীয় টলেমাইক রাজবংশের শাসন, যার প্রথম শাসক ছিলেন আলেকজান্ডারের প্রাক্তন জেনারেলদের একজন টলেমি আই সোটার। কিন্তু টলেমাইক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বাঁধে এবং অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের কারণে এই রাজত্বের পতন ঘটে যে কারণে রোমান শাসকদের জন্য মিশর দখল করার পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পরে মিশরের নামমাত্র স্বাধীনতটুকুরও অবসান ঘটে যার ফলে মিশর রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হয়ে ওঠে।
মিশরে রোমান সাম্রাজ্যের শাসন ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর মাঝে অবশ্য ৬১৯-৬২৯ সনের সাসানীয় সাম্রাজ্যের সংক্ষিপ্ত শাসনকালও বিদ্যমান।[২]
মুসলিম শাসকদের হাতে রোমনদের পতনের মাধ্যমে মিশরে মুসলিম শাসনামল শুরু হয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.-র যুগে সেনাপতি হযরত আমর ইবনুল আস রা. এর নেতৃত্বে ৬৪১ সনে মিশর জয় করেন। আমর ইবনুল আস রা. মিশরীয় রাজধানী "ফুসতাত"-র গোড়াপত্তন করেন এবং এর কেন্দ্রে বিখ্যাত আমর ইবনে আস মসজিদ নির্মাণ করেন| এরপর থেকে মিশরে খেলাফতে রাশেদা(৬৩২-৬৬১), উমাইয়া খেলাফত(৬৬১-৭৫০), আব্বাসী খেলাফত(৭৫০-৯৩৫), ফাতেমী খেলাফত (৯০৯-১১৭১), আউয়ুবী সালতানাত (১১৭১-১২৬০), মামলুক সালতানাত(১২৫০-১৫১৭) এবং উসমানী শাসন (১৫১৭-১৮৬৭) অব্যাহত থাকে।
১৮৬৭ নাগাদ মিশর পুরোপুরি উসমানী সাম্রাজ্যের শাসনাধীনই থাকে শুধু মাঝখানের ১৭৯৮ থেকে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দব্যাপী ফ্রেঞ্চ আগ্রাসন বাদে।[৩] ১৮৬৭ এর শুরুর দিকে মিশর একটি নামমাত্র স্বায়ত্তশাসিত ট্রিবিউটারি রাজ্যে পরিণত হয় যার নাম দেওয়া হয় মিশরীয় খেদিভেত। ১৮৮২ সনে অ্যাংলো-ইজিপশিয়ান যুদ্ধের মাধ্যেমে মিশর ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯১৯ সনে সংঘটিত মিশরীয় অভ্যুত্থানের পর মোহাম্মদ আলী রাজবংশের হাতে 'মিশর-রাজ্য' প্রতিষ্ঠা হয়। যদিও এই সময় মিশরের বহিরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এভাবে ১৯৫৪ সাল নাগাদ অ্যাংলো-ইজিপশিয়ান চুক্তি সহকারে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী হয়।
আধুনিক গণপ্রজাতন্ত্রী মিশর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। আর ব্রিটিশ সৈন্যরা সম্পূর্ণরূপে মিশর ছেড়ে যায় ১৯৫৬ সনে সুয়েজ খালে সংঘটিত ইসরায়েল, ব্রিটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক ত্রিপক্ষীয় আগ্রাসনের পরাজয়ের পরে যা সুয়েজ সংকট নামে পরিচিত। এর পর থেকেই মিশর সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন এবং এর নিজস্ব অধিবাসীদের হাতে শাসিত একটি রাষ্ট্ররূপে পরিগণিত হয়। অভ্যন্তরীণ শাসক জামাল আব্দুন নাসের (১৯৫৬-১৯৭০ নাগাদ রাষ্ট্রপতি) মিশরে অনেক পরিবর্তন আনেন এবং তিনিই সিরিয়ার সাথে স্বল্পমেয়াদী ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক(১৯৫৮-১৯৬১) গঠন করেন। ১৯৬৪ সালের গঠিত প্যালেস্টাইন লিবারেশান ফ্রন্ট (পিএলও)-র প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যামের সংগঠনেও নাসেরের ভূমিকা প্রধান ছিল। ১৯৬৪ সালের গঠিত প্যালেস্টাইন লিবারেশান ফ্রন্ট (পিএলও)-র প্রতিষ্ঠায় নাসের প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতও(১৯৭০-১৯৮১) মিশরে অনেক পরিবর্তন আনেন। নাসেরবাদের অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধারাকে বিদায় দিয়ে বহুদলীয় প্রথার প্রবর্তন করেন এবং ইনফিতাহ নামক অর্থনীতি চালু করেন। ১৯৭৩ সালে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ উদ্ধারের জন্য ইয়ম কিপুর যুদ্ধে তিনি মিশরের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল তা দখল করে নিয়েছিল। এ কারণে মিশর ও আরব বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এরপর তিনি ইসরায়েলের সাথে আলোচনায় বসেন এবং মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির কারণে আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিম শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। চুক্তির ফলে মিশর সিনাই উপদ্বীপ ফিরে পায়।
বর্তমান মিশরের ইতিহাস সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের ত্রিশ বছরের শাসন পরবর্তী ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত। ২০১১-র মিশর বিপ্লবের মাধ্যমে হোসনি মুবারক পদত্যাগ করেন এবং মিশরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিকভাবে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন যিনি হলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মুহাম্মাদ মুরসি। মুহাম্মাদ মুরসি তার বিজয়ভাষণে ঘোষণা দেন, তিনি মিশরের বর্তমান আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, প্রত্যক্ষ ভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলবেন এবং ভূরাজনীতিকভাবে ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মনযোগী হবেন। তিনি সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ও বিদ্রোহীদের সাহায্য করার জন্য বিশ্ববাসীকে আহ্বান করেন।
নিল নদের তীরে এবং মিশরের মরুদ্যানগুলোতে আশ্চর্য ধরনের কিছু খোদাইচিত্র(পেত্রোগিফ)-র অনুসন্ধান পাওয়া গেছে। যেগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১০ সহস্রাব্দকালীন এইসব পাথুরে খোদাইচিত্রে শিকারী ও জেলেদের জীবনচিত্রের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে শস্যনির্ভর মিশরীয় কৃষক সমাজের ঘটনাবলি। জলবায়ু পরিবর্তন ও মাত্রাতিরিক্ত গ্রেজিংয়ের কারণে ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের বহু শস্যভূমি বিরান হয়ে গিয়ে সাহারা মরুভূমির জন্ম হয়। কিন্তু পূর্বেই যেসকল উপজাতি নিল নদে বসতি গড়েছিল তারাই গড়ে তোলে মিশরের স্থায়ী কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক অবকাঠামো এবং কয়েকটি একীভূত সমাজ।[৪]
প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে, নিল নদের উপত্যকায় নব্যপ্রস্তরযুগ গোড়াপত্তন হয়েছিল।[৫] নব্যপ্রস্তরযুগে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন মিশরে বিভিন্ন প্রক-রাজবংশীয় প্রথা গড়ে ওঠে। বাদারীয় সংস্কৃতি ও এর উত্তরসূরী নাকাদা বংশধারাসমূহকে সাধারণ মিশরের রাজবংশসমূহের মধ্যে প্রথম ধরা হয়। ঊর্ধ্ব মিশরের আসয়ুত গভর্নোরটের আল-বাদারি অঞ্চলে বাদারীয় সংস্কৃতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপরদিকে নিম্ন মিশরে জাযিরা গভর্নোরটের নিল ব-দ্বীপের পশ্চিমে মেরিমদা সংস্কৃতির অনুসন্ধান পাওয়া গেছে যা কিনা বাদারীয় সভ্যতার চেয়েও প্রায় ৬০০ বছরের বেশি প্রাচীন। সমসাময়িক নিম্ন মিশরীয় সম্প্রদায়গুলি তাদের দক্ষিণা প্রতিপক্ষের সাথে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্তিত্ব যায় যায় অবস্থায়ও বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়মিত সম্পর্ক বজায় রাখে। প্রাচীনতম মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি থেকে প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকের নাকাদা ২ প্রাক-বংশের মাটির মটকার উল্লেখ পাওয়া যায়।[৬]
মিশরীয় পুরোহিত মানেথো তার সময় পর্যন্ত মিশরের ফারাওদের ত্রিশটি রাজবংশে ভাগ করেন যা এখনো স্বীকৃত। তিনি তার ইতিহাস সূচনা করেন মেনি নামের একজন রাজাকে দিয়ে যার ব্যাপারে বিশ্বাস করা হত যে তিনি ঊর্ধ্ব এবং নিম্ন মিশরকে প্রায় ৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে একত্র করেন এবং তাঁর রাজবংশই পরবর্তী তিন সহস্রাব্দ পর্যন্ত মিশর শাসন করে। তবে মেনির ব্যাপারে সমসাময়িক কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না। অনেক পণ্ডিত মেনিকে প্রকৃতপক্ষে ফারাও নারমার মনে করেন। যাই হোক, এই সময়টায় মিশরীয় সভ্যতা আপন আঙ্গিকে বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মবিশ্বাস, শিল্পকলা, হায়ারোগ্লিফিক ভাষা ও অন্যান্য আচার-সমাচার নিয়ে প্রস্ফুটিত হতে থাকে। একীভূত মিশরের প্রথম দুই রাজবংশ প্রাচীন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। মিশরে প্রচুর পিরামিড নির্মাণে অবদান রাখে। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে এই যুগকে পিরামিডের যুগ বা পিরামিড নির্মাতাদের যুগ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মিশরের তৎকালীন রাজধানী মেমফিসের নিকটবর্তী অঞ্চলে এইসময়ে একের পর এক বৃহদাকার পিরামিড নির্মিত হয়। তৃতীয় রাজবংশের সময় থেকেই এইধরনের বৃহৎ নির্মাণকার্যের সূচনা ঘটেছিল। চতুর্থ রাজবংশের আমলে তা বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করে। মিশরের সুবিখ্যাত গিজার পিরামিড (চতুর্থ রাজবংশ কর্তৃক নির্মিত), খাফ্রীর পিরামিড, জোসার পিরামিড(তৃতীয় রাজবংশ কর্তৃক নির্মিত), মেনকাউরির পিরামিড, প্রভৃতি এই আমলেরই কীর্তি।
প্রথম অন্তর্বর্তী যুগের শুরুর দিকে প্রায় ১৫০ বছরের রাজনৈতিক উত্থান অব্যাহত থাকে।[৭] তাছাড়া নিল নদের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ এবং সরকারের স্থিতিশীলতা মধ্যরাজ্যে ব্যাপক উন্নয়নের ধারা বয়ে আনে। ফারাও রাজা আমেনেমহাট ৩য় এর রাজত্ব ২০৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ মিশর উন্নতির শিখরে পৌঁছে। কিন্তু সেমিটি ভাষাভষী হিক্সস জাতি মিশর দখল করার পর থেকে দ্বিতীয় অন্তবর্তীরাজত্বের শুরু হয়। অনুমান করা হয় হিক্সসরা এসেছিল পশ্চিম এশিয়া থেকে মিশর কাজ নিতে। আমেনেমহাত ৩ খনিজ উত্তোলন এবং নির্মাণকাজের শ্রমশক্তির যোগান দিতে নিকটপ্রাচ্যের সেমেটিকভাষী এইসব কানানীয়দের নিল ব-দ্বীপে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। তারা মিশরের নিল ব-দ্বীপগুলোতে বসতি স্থাপন করে। তারা ফারাওয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মিশরের ক্ষমতা নিয়ে নেয়। ১৬৫০ এর দিকে নিম্ন মিশরের আভারিসে একটি নতুন রাজধানী কায়েম করে। তবে হিসকোসরা মিশরীয় সরকার পদ্ধতি বহাল রাখে এবং নিজেদের ফারাও বলে পরিচয় দেয় এবং মিশরীয় সমাজ-সংস্কৃতির একীভূত হয়। তারা মিশরে কয়েকটি নতুন যুদ্ধাস্ত্র যেমন ঘোড়ায় টানা রথ, কম্পোজিট ধনুক প্রচলন করে। কিন্তু তারা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে নি। ফারাও রাজা আহমোস প্রথম যিনি অষ্টম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তার আক্রমণে হিক্সসরা পলায়ন করে। এরপর তিনি মেমফিস(নিম্ন মিশরস্থিত) থেকে রাজধানী সরিয়ে থিবসে(ঊর্ধ্ব মিশরস্থিত) নিয়ে যান।
নতুন রাজত্ব (১৫৫০-১০৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শুরু হয় অষ্টম রাজবংশের শাসনের মধ্য দিয়ে। এই শাসনকালেই মিশর একটি আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে উন্নিত হয়। মিশরের সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে উত্তরের লেভান্ট ও দক্ষিণে টম্বস পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এই রাজত্বকাল বিশেষভাবে পরিচিত বিভিন্ন খ্যাতিমান ফারাও যেমন, হাতশেপুত, থুতমোস ৩, তুতেন খামেন, রামাসেস ২, আখেনাতেন এবং তার স্ত্রী নেফেরতিতি এর কারণে। প্রথম একত্ববাদের বিশ্বাস(একেশ্বরবাদ) এর ঐতিহাসিক বিবরণ এই সময়কাল থেকেই লিপিবদ্ধ হয়। যদিও এই একেশ্বরবাদে সূর্যকে পূজা(আতেনিজম) করা হত। ফারাও আমেনহোটেপ ৪ এই ধর্মের প্রবর্তন করেন এবং নাম পাল্টে আখেনাতেন রাখেন যার অর্থ আতেন তথা সূর্যের পূজারী। কেউ কেউ অবশ্য সূর্যের উপাসনাকে একেশ্বরবাদ(monotheism) না বলে একদেবতাবাদ(monolatry) বলেন যা অনেকটা এককদেবভক্তিবাদ (Henotheism) এর সাথে মিল রাখে। যদিও এই সূর্যপূজা মাত্র বিশ বছরের মাথায় বিলুপ্ত হয়ে মিশরের আগের বহুঈশ্বরবাদ ফিরে আসে। তবে নতুন রাজত্বে বহিরাগত বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির সংমিশ্রণে নয়া নয়া প্রথার উদ্ভব ঘটে। পরবর্তীতে শহরটি লিবিয়ান, নুবিয়ান এবং আসিরিয়ানদের হাতে বিজিত হয়। কিন্তু মিশরের স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের হটিয়ে আবার রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।[৮]
জোহানেস ক্রুজের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৭ সালে ৯০ টি মমির জিনোমের প্রথম নির্ভরযোগ্য সিকোয়েন্স তৈরি করেন। তাদের এই গবেষণামতে, এই প্রাচীন মৃত মিশরীয়দের জিন পূর্বাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠীসমূহ বিশেষত লাভান্টের অধিবাসীদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার কারো ডিএনএ পাওয়া যায় নি। এমনকি অন্যান্য পরাশক্তি যেমন, নুবিয়ান, গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্যের মানুষের সাথে জিনগত মিল পরিলক্ষিত হয়েছে। অথচ এই সব জাতি বিভিন্ন সময় মিশর দখল করে শাসন করেছিল।[৯]
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে, হাখমানেশি শাসকরা মিশর দখল করে।[১০] মিশরের ২৭শ রাজবংশের(৫২৫-৪০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পুরোটাই, শুধু পেতুবাসতিস ৩ বাদে, ছিল পারস্যশাসিত যুগ।[১০] এমনকি হাখমানেশিরা ফারাও উপাধি নিয়েই রাজ্য শাসন করত।[১০] ১৩শ রাজবংশই ছিল মিশরের স্থায়ী অধিবাসীদের সর্বশেষ শাসনকাল। সর্বশেষ স্থানীয় ফারাও রাজা নেকতানেদো ২ এর ৩৪৩ খ্রিস্টপূর্ব সনে যুদ্ধপরাজয়ের পর মিশর আবার পারসিকদের হাতে চলে যায়।[১০]
মিশরের ৩১শতিতম রাজবংশ ৩৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত হাখমানেশি সাম্রাজ্যের ক্ষণস্থায়ী একটি প্রদেশ হিসেবে ছিল।[১১] মাঝখানে কয়েকবার অবশ্য মিশর স্বল্পকালীন স্বাধীনতা পায়। সেসময় তিনটি রাজবংশ(২৮শ, ২৯শ ও ৩০শতিতম) ক্ষমতা পুনর্দখল করে। এরপর আরটাক্সেরযেন ৩ (৩৫৮-৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পুনরায় নিল নদের উপত্যকা দখল করেন। ৩৪৩ থেকে ৩৩২ খ্রিস্টাপূর্ব অব্দ পর্যন্ত পারসিকদের শাসন অব্যাহত থাকে।[১২]
টলেমীয় রাজ্য ছিল পূর্বের সিরিয়া থেকে পশ্চিমে সাইরিন, লিবিয়া পর্যন্ত এবং দক্ষিণে নুবিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হেলেনীয় রাজ্য। তৎকালীন সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিকভাবে গ্রীক সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে যায় মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেকজান্দ্রিয়া। এই শহরেই মিশরের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর অবস্থিত। বিখ্যাত আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার এখানেই অবস্থিত। মিশরীয়দের স্বীকৃতি পেতে টলেমীয় গ্রীকরা তখন নিজেদেরকে ফারাওদের উত্তরসূরী নাম দিয়ে রাজ্য শাসন করতে থাকে। পরবর্তীতে তাদের অনেকে অবশ্য মিশরীয় ঐতিহ্য গ্রহণ করে। অনেকে মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে পর্যন্ত অংশগ্রহণ শুরু করে।[১৩][১৪]
টলেমীয় রাজত্বের সর্বশেষ শাসক ছিলেন রাণী ক্লিওপেট্রা যিনি স্বীয় প্রেমিক মার্ক এন্টনিয়ের কবরস্থানের পাশে আত্মহত্যা করেছিলেন সাপের কামড় খেয়ে। রোমান শাসক অগাস্টাস (আরেক নাম অক্টাভিয়াস) আলেকজান্দ্রিয়া বয়কট করার পরের ঘটনা। গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলে অনুষ্ঠিত হয় এই যুদ্ধ। অ্যান্টনিও ছিলেন স্থলযুদ্ধে পারদর্শী। কিন্তু কিওপেট্রার পরামর্শেই তিনি নাকি নৌযুদ্ধে নেমেছিলেন। নৌযুদ্ধের অত্যন্ত সন্ধিণে কিওপেট্রা হঠাৎ করেই তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। কেন তিনি এই বাহিনী সরিয়ে নিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এর ফলে যুদ্ধে অ্যান্টনিও পরাজিত হয়ে পালিয়ে আসেন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে অক্টাভিয়াস রোমের সম্রাট হন। ক্লিওপেট্রাও নতুন চাল শুরু করেন। এবার তার সব পরিকল্পনা রচিত হতে থাকে অক্টাভিয়াসকে তার মায়াজালে বন্দী করতে। কিন্তু এখানেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করেন। পরিণতিতে তিনি জীবন পর্যন্ত খোয়ান। তিনি বুঝতে পারলেন, অক্টাভিয়াসকে হাত করতে হলে অ্যান্টনিওকে বাদ দিতে হবে। অথচ অ্যান্টনিওকে হত্যা করার বা মিসর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার কোনো ক্ষমতা তখন তার নেই। তাই অ্যান্টনিও যাতে আত্মহত্যা করতে উদ্বুদ্ধ হয় তিনি সেই পথ বের করলেন। ভাবলেন, এতে অনায়াসেই স্বার্থ হাসিল করা যাবে। কিওপেট্রা এক দিন নিজের সুরতি মন্দিরে অবস্থান নিয়ে প্রচার করে দেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর খবর পেয়ে অ্যান্টনিওর বেঁচে থাকার সব ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার তরবারি নিজের বুকে বিদ্ধ করেন। পরক্ষণেই বুঝতে পারেন, তিনি ভুল শুনেছেন। কিন্তু ততক্ষণে তার পরপারের ডাক চলে এসেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কিওপেট্রার কাছে নেয়া হয়। তিনি তার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১০ মাস পরে বিজয়ী অক্টাভিয়াস আলেক্সান্দ্রিয়ায় আসেন। এ সময় ক্লিওপেট্রা অক্টাভিয়াসকে সম্মোহিত করতে চাইলেন। আগে তিনি দুবার দুই দোর্দণ্ড শক্তিশালী সম্রাটকে নিজের মায়াজালে মোহিত করে কব্জায় এনেছিলেন। কিন্তু তৃতীয়বার পুরোপুরি ব্যর্থ হন। তবে অক্টাভিয়াস চাইছিলেন, যেভাবেই হোক ক্লিওপেট্রাকে জীবিত ধরতে হবে। তাই তিনি তাকে নানা আশ্বাস দিচ্ছিলেন। অক্টাভিয়াস নিজেও জানতেন, তিনি যদি কিওপেট্রার চোখের দিকে তাকান, তবে সাথে সাথে তার সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই তিনি কিওপেট্রার সাথে কথা বলার সময় চোখ রেখেছিলেন মেঝের দিকে। তাই ক্লিওপেট্রা বুঝতে পারলেন এই রোমান সম্রাটকে বশ করা যাবে না। তার মনে হলো অক্টাভিয়াস বুঝি তাকে অপমানিত করবে। হয়তো মিসর বা রোমের রাজপথে যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী হিসেবে তাকে ও তার সন্তানদের লোহার শিকল পরিয়ে প্রদর্শন করবে। এটা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। অপমানের আশঙ্কায় তিনি ভেঙে পড়েন। এই অপমানের চেয়ে মৃত্যুই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। তাই তদানীন্তন রাজকীয় প্রথা হিসেবে বিষধর এক বিশেষ ধরনের সাপের (অ্যাস্প্ নামের এই সাপ হয় মাত্র কয়েক ইঞ্চি লম্বা, অথচ তাদের বিষ মারাত্মক। ডুমুরের ঝুড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থায় আনা হয়েছিল সাপ দু’টি) ছোবলে আত্মহত্যা করেন। ওই সময়ে মিসরে মনে করা হতো সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষ অমরত্ব লাভ করে। তাই কিওপেট্রা ওই পথই বেছে নিলেন। দিনটি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ সালের ৩০ আগস্ট। অ্যান্টনি ও কিওপেট্রা দু’জনকেই রোমে সমাহিত করা হয়।
পরবর্তীতে টলেমীয় শাসকদের বিরুদ্ধে মিশরের স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করে। এতে বিভিন্ন স্থানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তারপরও, মুসলিমদের বিজয় লাভের পরেও মিশরে হেলেনীয় সংস্কৃতির উন্নতি অব্যাহত ছিল। পাশাপাশি মিশরীয় সংস্কৃতিও ভাল মতই চর্চিত হত।
মিশর ক্রমাগত রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান উৎপাদনক্ষেত্রে পরিণত হয়। কাগজ, ফ্লাক্স, কাঁচ এবং অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ছাড়াও রাজ্যের সমস্ত ধান সরবরাহ করতে থাকে মিশর। আলেকজান্দ্রিয়া হয়ে যায় রোমান সাম্রাজ্যের বণিজ্যিক কুঠিতে পরিণত হয়। মিশর থেকে তখন মালবাহী জাহাজ নিয়মিত ভারত, ইথিওপিয়াসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক নৌবন্দরে যাতায়াত শুরু করে।[১৫] রোমান সাম্রাজ্যের জন্য এই শহরটিই ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কেন্দ্র। টলেমি, হাইপাটিয়া এবং হিরনের মত বিজ্ঞানীগণ জোতির্বিদ্যা, গণিত এবং অন্যান্য বিষয়ে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে থাকেন। সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আলেকজান্দ্রিয়া মাঝে মাঝে রোমকেও যেন প্রতিযোগিতায় হার মানিয়ে দিয়েছিল।[১৬]
মিশরে প্রথম খ্রিস্টধর্ম আসে প্রথম শতাব্দীর মার্ক দ্যা ইভানজেলিস্ট এর যুগে।[১৭] আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর ও আন্তিওক, সিরিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যেই খ্রিস্টবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়।[১৮] রোমান শাসক ডিওক্লেটিয়ানের সময় অনেক খ্রিস্টান মিশরীয়দের ওপর তখন নির্যাতন চালানোর কারণে মিশরে রোমান থেকে বাইজেন্টাইনযুগে স্থানান্তর ঘটে। তখন বাইবেলের নতুন সমাচার মিশরীয় ভাষায় অনুবাদও করা হয়েছিল। ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে চ্যালসডনের কাউন্সিলের পরে, একটি স্বতন্ত্র মিশরীয় কপটিক চার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।[১৯]
সাসানীয় শাসকগণ অল্প কিছুকাল মিশর এবং লিবিয়ার কিছু অংশ শাসন করেন। এই শাসন স্থায়ী হয় ৬১৯ থেকে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।[২০] এই শাসনের শেষ পর্যায়ে সাসানীয় বিদ্রোহী শাহারবাজ বাইজেন্টাইন শাসক হেরাক্লিয়াসের সাথে আঁতাত করে মিশরে তাঁকে ক্ষমতায় আসার রাস্তা করে দেন।[২০]
সাসানীয় পারসিকদের থেকে মিশর পুনর্দখলের পর ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন শাসকরা আবার ক্ষমতা হারায়। আরব মুসলিম শাসকগণ এবারে মিশর জয় করেন। এইবারই বাইজেন্টাইন শাসকরা মিশরের ক্ষমতা চিরতরে হারায়। মিশরের ওপর কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ায় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়ে।
সর্বপ্রথম ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. এর আদেশে হযরত আমর ইবনুল আস রা. এর নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে মুসলিমগণ মিশরে আসেন। মূলত নবী মুহাম্মদ সা. এর ভবিষ্যদ্বাণীই মুসলিমদের মিশর জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। নবী মুহাম্মদ সা. বলেছিলেন, "তোমরা অচিরেই মিশর জয় করবে। মিশর হল এমন ভূমি যাকে স্বর্ণমুদ্রার দেশ বলা হয়। তোমরা জয়লাভ করো তাহলে অবশ্যই সে দেশের স্থানীয়দের প্রতি সদাচারণ করবে। কারণ অবশ্যই তাদের নিজ দেশের প্রতি অধিকার এবং তোমাদের সাথেও আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে(যেহেতু মিশরীয়রা ইসমাঈল আ. এর বংশজাত)।" যাই সেই অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬৩৯ সনের শেষের দিকে আমর ইবনুল আস ‘সিনাই উপত্যকা’ পাড়ি দেন তার ৪,০০০ সৈন্যের সাথে। তিনি তার প্রথম সাফল্য-উৎসব উৎযাপন করলেন ১২ ডিসেম্বর ৬৪০ সনে ‘আরিশ’ এর ‘পিলগ্রিমাগা’য় । কিন্তু খুব দ্রুত তিনি পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়লেন। বিলবিসের নিকট থেকে বাজেন্টাইনরা ‘টাউন অফ পেলসিয়াম’ বা আল-ফারামায় আমর ইবনুল আসের উপরে আক্রমণ চালায়। আমর ইবনুল আস সিরিয়াবাসীদের নিকট থেকে সাহায্য পেলেন। তার সৈনবাহিনীতে ৬-ই জুন ৬৪০ এ সিরিয়া হতে ১২ হাজার সৈন্য যোগ দিল। তিনি ‘আলেকজান্দ্রিয়া’ ‘মেম্ফিস’ ‘হেলিপোলিস’ জয় করলেন। ৬৪১ সনে তার লক্ষ্য পূরণে পুরোপুরি সফল হলেন।
পুরো নতুন এই রাজ্যে শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন রাজধানীর প্রয়োজন ছিল। আমর ইবনুল আস খলিফা হযরত ওমরের কাছে প্রস্তাব পাঠালেন। অবশেষে ‘ব্যাবিলন দুর্গ’ এর কাছে আমর ইবনুল আস একটি নতুন শহর তৈরি করেন এবং সেখানে মিশরের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে আমর ইবনুল আস’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজো পুরনো কায়রোতে বিদ্যমান রয়েছে।
মুসলিম শাসকগণ মিশরে সুননি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিমদের যুগে মিশরীয়রা তাদের পূর্বের পৌত্তলিক বিশ্বাস, খ্রিস্টবাদে বিশ্বাসের সাথে অনেকটা মিশ্রভাবে ইসলামি বিশ্বাসকে পালন করতে থাকে।[১৭] তাদের মাঝে ইসলামি সূফিবাদ প্রবলভাবে জেঁকে বসে যা সাম্প্রতিককালে অনেক বেশি বিস্তার লাভ করেছে।[২১]
মুসলিম শাসকগণ রোমান টলেমাইক বা অন্যদের মত ফারাও নাম ধারণ না করে নিজস্ব খেলাফতের রীতিই মিশরে প্রচলিত করেন এবং পরবর্তী ছয় শতাব্দী পর্যন্ত মিশর ইসলামি খেলাফতের নিয়ন্ত্রণেই থাকে। এরপর থেকে মিশরে খেলাফতে রাশেদা(৬৩২-৬৬১), উমাইয়া খেলাফত(৬৬১-৭৫০), আব্বাসী খেলাফত(৭৫০-৯৩৫), ফাতেমী খেলাফত (৯০৯-১১৭১), আউয়ুবী সালতানাত(১১৭১-১২৬০), মামলুক সালতানাত(১২৫০-১৫১৭) এবং উসমানী শাসন(১৫১৭-১৮৬৭) অব্যাহত থাকে। ফাতেমী যুগে কায়রোকে করা হয় খেলাফতের সিংহাসন। ১৩শ শতকের শেষের দিকে মিশর লোহিত সাগরের মাধ্যমে ভারত, মালয় এবং উত্তর ইন্ডিজ এর সাথে সংযুক্ত হয়।[২২] এর মাঝে আরবী ভাষার ব্যাপক প্রচলনের কারণে মিশর থেকে গ্রীক এবং কোপটিক ভাষা হারিয়ে যেতে থাকে যদিও কোপটিক ভাষা কথ্যরূপে ১৭শ শতক পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং বর্তমানে মন্ত্রপাঠের জন্যও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। মামলুকদের পরে আসে তুর্কী অটোমান বা উসমানীয়া সাম্রাজ্য। এই সময়ে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে মিশরের প্রায় ৪০ শতাংশ লোক কালো মড়ক লেগে মারা যায়।[২১]
অটোমান আগ্রাসনের ফলে মিশরীয় ব্যবস্থার পতন ঘটে। মিশরের সিভিল সোসাইটি এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ক্ষতির মুখে পড়ে।[২২] একদিকে অর্থব্যবস্থার ধস তার ওপর মড়ক লাগার পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি একত্রে মিশে মিশরকে বহিরাক্রমণের শিকার হওয়ার বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে আসে। পর্তুগীজ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা সরিয়ে নেয় মিশর থেকে।[২২] ১৬৮৭ থেকে ১৭৩১ সালের মধ্যে মিশরে ছয় ছয়টি দুর্ভিক্ষ নামে।[২৩] ১৭৮৪-র দুর্ভিক্ষ মিশরের জনসংখ্যার প্রায় এক ষষ্ঠমাংশের প্রাণ কেড়ে নেয়।[২৪]
১৭৯৮তে নেপোলিয়নের আক্রমণের মাধ্যমে মিশরে অল্প কিছুকাল ফ্রান্সের শাসন চলে। ১৮০১ সনেই ফ্রেঞ্চদের আবার মিশর ছাড়তে হয় উসমানী, মামলুক এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আক্রমণে। এই যুদ্ধে উসমানী, মামলুক এবং আলবেনীয়রা একক শক্তিতে পরিণত হয়। এই যুদ্ধের পরে, আলবেনিয়ান রেজিমেন্টের অধিনায়ক মুহাম্মদ আলি পাশা (কাওয়ালি মেহেদী আলী পাশা) একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন এবং ১৮০৫সালে ইস্তানবুলের মিশরে সুলতান কর্তৃক স্বীয় ভাইসরয় হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপরে উসমানী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং সুযোগ্য নেতা মুহাম্মদ আলি পাশা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর রাজবংশ যা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত দাপটের সাথে মিশর শাসন করে। পরবর্তীতে অবশ্য ব্রিটিশদের চক্রান্তে এই রাজবংশটি ব্রিটিশদের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিল।[২৫]
বীর মোহাম্মদ আলি পাশার প্রধান লক্ষ্য ছিল মিলিটারি গঠন। তিনি উত্তরাঞ্চলীয় সুদান (১৮২০-১৮২৪), সিরিয়া (১৮৩৩), আর আরব ও আনাাতোলিয়ার অংশগুলো সংযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলোর কারণে তাঁকে অধিকাংশ বিজীত অঞ্চলই ছেড়ে দিতে। কেবল সুদান এবং মিশর তিনি ধরে রাখেন। মিলিটারি ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে মিশরকে তিনি আধুনিক একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেন। পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের প্রতিও তাঁর অনুরাগ ছিল লক্ষ্যণীয়। মিলিটারি প্রশিক্ষণ ও শিল্প-সাহিত্যে অগ্রগতির জন্য তিনি প্রাচ্যে ছাত্র পাঠাতেন এবং স্বদেশেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি অনেক শিল্পকারখানা, চাষাবাদ ও ট্রান্সপোর্টের জন্য ক্যানেল সিস্টেম তৈরি করেন এবং দেশকে আবার ঢেলে সাজান।[২৫]
১৮৮২ থেকে মিশরে ব্রিটিশদের পরোক্ষ শাসন শুরু হয়। ব্রিটিশ সৈন্যরা মিশরীয়দের তেল আল কাবিরে (সেপ্টেম্বর) পরাজিত করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ব্রিটিশদের শাসনকাল ১৯৫২ নাগাদ চলে এবং ৫২-র মিশরীয় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিশরীয় প্রজাতন্ত্রের সূচনা ঘটে আর ব্রিটিশরা মিশর ছাড়ে।
তবে ব্রিটিশ শাসনকালীন মোহাম্মদ আলি পাশার রাজবংশের ছোট ছোট কয়েকটি বিজয়ও সূচিত হয় এবং স্বল্পকাল তাদের হাতেও ক্ষমতা আসে যায়। মোহাম্মদ আলি পাশার পুত্র ইব্রাহিম (১৮৪৮এর সেপ্টেম্বরে) জয় লাভ করেন। তারপর মোহাম্মদ আলি পাশার দৌহিত্র আব্বাস প্রথম (১৮৪৮ এর নভেম্বরে), সাইদ পাশা (১৮৫৪ তে) এবং ইসমাঈল পাশা (১৮৬৩ তে) বিজয় লাভ করেন। আব্বাস প্রথম অত্যন্ত সর্তক ও সাবধানী মানুষ ছিলেন। সাইদ পাশা ও ইসমাইল পাশা উন্নয়নে বিশ্বাসে ছিলেন, কিন্তু তারা তাদের সামর্থের বাইরে অনেক খরচ করেছিলেন। বাদশাহ সাইদ পাশার অধীনে ফরাসিদের সাথে অংশীদারত্বে ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু এই খালে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের কারণে দুটো সমস্যা সৃষ্টি হয়: ইউরোপীয় ব্যাংকগুলিতে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা এবং ঋণপরিশোধ্যে জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল কর আরোপের কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ১৮৭৫ সনে ইসমাঈল পাশা বাধ্য হয়ে সুয়েজ খালের অশিদারিত্ব ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিক্রি করেন। ফলে তিন বছরের মধ্যেই মিশরীয় মন্ত্রিসভায় বসা ব্রিটিশ ও ফরাসি নিয়ন্ত্রকদের ক্ষমতাব্যবহার শুরু হয়ে যায়। শেয়ারহোল্ডারদের পেছনে থাকা অর্থই মূলত এই সময়টায় সরকার নীতিনির্ধারকরূপে কাজ করে। এজন্য তখন ফ্রান্স ও ব্রিটেনের দ্বৈত শাসন শুরু হয়।[২৬]
বাদশাহ ইসমাঈল পাশার সাথে ইউরোপীয়ানদের যোগসাজোশের প্রতি জনমনের অসন্তোষ থেকেই অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮৭৯ তে আহমাদ উরাবী (এক সময়কার বিদ্রোহী সেনা থেকে জননেতা হয়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব) প্রথম জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। ১৮৮২ সনে তিনি হয়ে যান জাতীয়তাবদী দল শাসিত মন্ত্রণালয়ের প্রধান। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্স দেশে মিলিটারি লেলিয়ে দেয়, আলেকজান্দ্রিয়ায় বোমা হামলা করে এবং তেল আল কবিরের যুদ্ধে মিশরীয় সেনাবাহিনীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।[২৭] তারা বাদশাহ ইসমাঈল পাশার পুত্র তাওফীক পাশাকে ক্ষমতায় আনে নিজেদের ক্ষমতার পুতুল করে।[২৮]
১৯১৪ সনে পরোক্ষ ব্রিটিশ শাসন প্রাশাসনিক হয়ে রাজ্যের প্রধানরূপে অভিসিক্ত হয়। ১৮৬৭ সনে রাজবংশের অভিধা পাশা থেকে খেদিব নামধারণ করে। পরবর্তীতে সুলতান নামকরণ করা হয়। আব্বাস দ্বিতীয়কে খেদিভ হিসাবে পদচ্যুত করা হয় এবং তার চাচা হুসেইন কামেলকে সুলতান হিসাবে তার স্থলবর্তী করা হয়।[২৯]
১৯০৬ সনে দিনশাওয়ার ঘটনা অনেক নিরপেক্ষ মিশরীয়কে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহিত করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাদ জগলুল এবং হিযবুল ওয়াফদ নামক সংগঠন স্থানীয় আইনসভায় মিশরীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সংখ্যাগরিষ্ঠ রূপ দান করে। ১৯১৯ সালের ৮ই মার্চ ব্রিটিশরা যখন জগলুল ও তার সহযোগীদের মাল্টায় নির্বাসিত করে তখন দেশটির প্রথম আধুনিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহের ফলে যুক্তরাজ্য সরকার ১৯২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মিশরের স্বাধীনতার একতরফা ঘোষণা জারি করে।[৩০]
নতুন সরকার ১৯৩৩ সালে একটি সংসদীয় পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে একটি সংবিধানের খসড়া তৈরি এবং তা বাস্তবায়িত করে। সাদ জগলুল ১৯২৪ সালে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে মিশরের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে অ্যাংলো-মিশরীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়। কিন্তু তদানিন্তন ব্রিটিশ প্রভাব বজায় থাকায় এবং ব্রিটিশ রাজার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টা বাড়তে থাকায় অস্থিতিশীলতা বাড়তে থাকে। ফলে ১৯৫২ সালের বিপ্লব নামে পরিচিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।
মিশরীয় জাতীয়বাদীদের একটি গ্রুপ ফ্রি অফিসার্স আন্দোলন রাজা ফারুককে তার ছেলে ফুয়াদেরই সমর্থনে সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
মিশরে ব্রিটিশ সৈন্যদের উপস্থিতি ১৯৫৪ অবধি স্থায়ী ছিল।[৩১]
১৯৫৩ সনের ১৮ই জুনে মিশরে গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয় যার প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন মুহাম্মদ নজিব। ১৯৫৪ সনে নাজিব জামাল আব্দুন নাসেরের(যিনিই ছিলেন ৫২-র গণঅভ্যুত্থানের মূলনায়ক) কাছে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং পরবর্তীতে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়।
১৯৫৬ সনে জামাল আব্দুন নাসের প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভ করেন। ১৯৫৬ সালের ১৩ই জুনেই ব্রিটিশরা তাদের অধিকৃত সুয়েজ খালের সেনাপ্রত্যাহার করে। ১৯৫৬ সনের ২৬ই জুলাই নাসের সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন যার ফলেই ৫৬-র সুয়েজ সংকট ত্বরান্বিত হয়।
১৯৫৮ সনে মিশর ও সিরিয়া একটি একীভূত সার্বভৌম সংঘ গঠন করে যা ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক নামে পরিচিত। সংঘটি স্বল্পকাল স্থায়িত্ব লাভ করে। ১৯৬১এর শেষের দিকে এর সমাপ্তি ঘটে যখন সিরিয়া পিছু হটে যায়। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক অবশ্য উত্তর ইয়ামানের সাথে একটি কনফেডারেশনে অধিভুক্তও ছিল যার নাম ইউনাইটেড আরব স্টেটস।
১৯৬৭ এর ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল মিশরের সিনাই উপদ্বীপ এবং গাজা ভূখণ্ড আক্রমণ করে দখল করে। এই অঞ্চলটি ১৯৪৮ এর আরব-ইসরাইলযুদ্ধ থেকে মিশরের অধিকৃত অঞ্চল হিসেবেই ছিল। তিন বছর পর (১৯৭০ এ) প্রধানমন্ত্রী নাসের মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর পরে ক্ষমতায় আসেন আনোয়ার সাদাত।
সাদাত মিশরের শিতলযুদ্ধের লাগামকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের উপদেষ্টাদেরকে ১৯৭২ সনে বরখাস্ত করার মাধ্যমে। নাসেরবাদের অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধারাকে বিদায় দিয়ে বহুদলীয় প্রথার প্রবর্তন করেন এবং ইনফিতাহ নামক অর্থনীতি চালু করেন। এসময় তাকে ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিপক্ষদের শক্ত হাতে দমন করতে হয়।
১৯৭৩ সনে মিশর এবং সিরিয়া অক্টোবরের যুদ্ধ পরিচালনা করে। অকস্ম্যাৎ তারা ইসরায়েলী বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমি অধিকার করে। বিগত ছয় বছর পূর্বে ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত সিনাই অঞ্চলে পুনঃঅধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল এই যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য। সাদাত প্রত্যাশা করেছিলেন যে, তিনি সামরিক শক্তির মাধ্যমে সিনাই উপদ্বীপের কিছু অংশ অধিকার করবেন এবং কূটনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এর বাকি অংশও আয়ত্বে আনবেন। এই সংঘর্ষ যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে একটি আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি করে। জাতিসংঘের উদ্যোগে সামরিক শক্তি প্রয়োগ বন্ধ হয়। যুদ্ধ শেষ হয় সাদাতের রাজনৈতিক বিজয়ের মাধ্যমেই। এর ফলে ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তিনি সিনাই অঞ্চলে ক্ষমতা পুনর্বহাল করেন।[৩২]
১৯৭৭ সনে সাদাত ইসরায়েলে একটি ঐতিহাসিক সফর করেন যার ফলে ১৯৭৯ সনের শান্তিচুক্তি সংঘটিত হয় যাতে ইসরায়েলী সরকার সিনাই অঞ্চল থেকে সেনাপ্রত্যাহারের। তবে সাদাতের এই উদ্যোগ আরব বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং এ কারণেই মিশরকে আরবলীগ থেকে বের করে দেয়া হয়।[৩৩] ১৯৮১ সনের ৬ই অক্টোবর ১৯৭৩ এর যুদ্ধবার্ষীকি স্মরণে একটি সামরিক মহড়ায় উপস্থিত অবস্থায় সাদাত এবং আরো ছয় কূটনীতিক আততায়ীর হাতে নিহত হন। তার পরবর্তীকালে ক্ষমতা লাভ করেন হোসনি মোবারক।
১৯৮০, ১৯৯০ এবং ২০০০ সনে মিশরে বেশ কয়েকটি জঙ্গিহামলা হয়। এইসব হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয় কিবতিদের এবং অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদেরকেও।[৩৪] এইসব আক্রমণকে উসকে দেয়ার পেছনে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং লেখক দায়ী করেছেন ইসলামী লেখক ইখওয়ানুল মুসলিমিন এর সম্পাদক সাইয়েদ কুতুবকে যাকে ১৯৬৭ সনে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৩৫][৩৬]
১৯৯০ সনে অনেক লেখক ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সন্ত্রাসী হামলার ক্যাম্প বাড়ানোর পেছনে ইসলামী গ্রুপ আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়ার যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া যায়। এইসব ক্যাম্পে বিদেশী পর্যটকদের বারংবার আক্রমণের ছক তৈরি করা হত। এইসব সন্ত্রাসী হামলার কারণে মিশরের অর্থব্যবস্থা (বিশেষত পর্যটক খাত[৩৭]) ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।[৩৮]
১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সরকার বিরোধী এইসব সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয় ১২০০[৩৯] মানুষ। কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের প্রধান মেজর জেনারেল রাউফ খায়রাত, সংসদ স্পিকার রিফাত আল-মাহজুবসহ আরও অনেক ইউরোপীয় পর্যটক এবং ১০০এর ওপরে মিশরীয় পুলিশ নিহত হয়।[৪০] এই সময়গুলোতে ঊর্ধ্ব মিশরের অংশে বিদেশীদের পর্যটন একেবারেই সংরক্ষিত করে দেয়া হয়।[৪১] ১৯৯৭ সনের ১৭ই নভেম্বরে লুক্সরের কাছে প্রায় ৬২ জন মানুষ, যাদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসী, নিহত হয়। আক্রমণকারীরা হাতশেপুতের মন্দিরে মানুষদেরকে ফাঁদে ফেলে। এই সময় আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া সংগঠনটি ইরান এবং সুদানের মদদ লাভ করে। এদের সহযোগিতা দেয় আল কায়েদা জঙ্গিসঙ্গঠনটিও।[৪২] ঐ সময়ে মিশরীয় সরকার জাতিসংঘের সহযোগিতা ও পূর্ণ সমর্থন পায়।[৪২]
২০১৩ সনে হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং গণতান্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেফায়াহ (মিশরীয় বিপ্লব) সংঘটিত হয়।
২০১১ সনের ১৫ই জানুয়ারি, হোসনি মোবারকের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই বিদ্রোহগুলোর মূল লক্ষ্যই ছিল হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করা। এই বিদ্রোহগুলোই পরে গণপ্রতিরোধের একটি শক্তিশালী অভিযানের রূপ ধারণ করে যার সমর্থনে ছুটে আসে বিপুলসংখ্যক আপামর জনতা এবং এটি মৌলিকভাবে সর্বজনীন গণজাগরণেরই বহিঃপ্রকাশ ছিল। ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, হোসনি মোবারকের সরকার দেশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এই সময় সরকারের জারিকরা কারফিউ জনগণ উপেক্ষা করে। সেনাবাহিনীও কারফিউতে শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আধানিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে।
২০১১সনের ১১ই ফেব্রুয়ারি মোবারক পদত্যাগ করেন এবং কায়রোতে পালিয়ে যান। উপপ্রধানমন্ত্রী ওমর সোলায়মান ঘোষণা দেন, মোবারক পদদত্যাগ করেছেন এবং মিশরীয় সেনাবাহিনী স্বল্প মেয়াদে জাতীয় বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করবে।[৪৩][৪৪] সংবাদমাধ্যমগুলো তাহরির স্কয়ারের উল্লসিত আনন্দোৎসবের আলোচনায় মুখর হয়ে ওঠে।[৪৫] মোবারক হয়তো পূর্বের রাতেই শরম এল-শেখ নগরীর উদ্দেশ্যে কায়রো ছেড়ে চলে যেতেন তবে তার আগেই একটি রেকর্ড করা বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে যাতে মোবারক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি পদত্যাগ করবেন না বা দেশ ছাড়বেন না।[৪৬]
১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০১১তে মিশরের উচ্চ সামরিক কমান্ড ঘোষণা করে যে, মিশরের সংবিধান ও সংসদ উভয়টিই ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।[৪৭]
১৯ মার্চ ২০১১ তারিখে একটি সাংবিধানিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ নভেম্বর ২০১১তে, মিশরে পূর্ববর্তী শাসন ক্ষমতার পর থেকে প্রথম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। টার্নআউট উচ্চ ছিল।[৪৮] তবে সহিংসতার কোনও খবর পাওয়া যায়নি; যদিও কিছু পার্টির সদস্যরা পাম্পলেট এবং ব্যানারগ লাগিয়ে পোলিংয়ের জায়গায় প্রচারণা নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছিল এবং অনিয়মের কিছু অভিযোগও ছিল।[৪৯]
মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ভাগ অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সনের ২৩ ও ২৪ মে। মুহাম্মাদ মুরসি ২৫% ভোট লাভ করেন এবং আহমদ শফিক, পদচ্যুত নেতা হোসনি মোবারকের অধীনে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ২৪% ভোট লাভ করেন। জুনের ১৬ ও ১৭ তারিখ দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুন ২০১২ তারিখে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে, মুহাম্মাদ মুরসি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। মুহাম্মাদ মুরসিকে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। নির্বাচনী ফল থেকে জানা যায়, মুহাম্মাদ মুরসি ৫১.৭% ভোট পেয়েছিলেন এবং আহমদ শফিক পেয়েছিলেন ৪৮.৩%।
৮ই জুলাই ২০১২ তারিখে মিশরের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসি ঘোষণা করেন যে, তিনি সামরিক শাসনকে অগ্রাহ্য করেন কারণ এটিই দেশের নির্বাচিত সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছিল এবং তিনি আইনপ্রণেতাদেরকে পুনরায় সংসদ অধিবেশনে আসার আহ্বান জানান।[৫০]
১০ই জুলাই ২০১২ তারিখে মিশরের সাংবিধানিক সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত(সুপ্রিম কনস্টিটিউশনাল কোর্ট) মুরসির জাতীয় সংসদকে আবার অধিবেশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দেয়।[৫১] ২ আগস্ট ২০১২ তারিখে মিশরের প্রধানমন্ত্রী হিশাম কানদিল তার ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভার ঘোষণা করেন যার মাঝে ২৮ জনই ছিল নবাগত এবং এদের মাঝে মুসলিম ব্রাদারহুডের দ্বারা প্রভাবিত চারজন সদস্যও বিদ্যমান ছিল।[৫২]
২২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মুরসি তার আইনকে চ্যালেঞ্জ থেকে বাঁচাতে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নকারী অ্যাসেম্বলির কাজকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে একটি ঘোষণা জারি করেন।[৫৩] ঘোষণাপত্রে হোসনি মোবারকের সময়ে প্রতিবাদকারীদের খুনি হিসেবে অভিযুক্তদের বিচার পুনরায় কার্যকর করার দাবি করা হয় এবং দুই মাসের জন্য সংবিধান প্রণয়নকারী অ্যাসেম্বলির মেয়াদ প্রসারিত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি এই পত্রটি মুরসিকে অভ্যুত্থান রুখতে যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দেয়। মানবাধিকারবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সংবিধান প্রণয়নকারী অ্যাসেম্বলি থেকে ওয়াক আউট করে কারণ তাদের বিশ্বাস, এই সংবিধানটি অবশ্যই ইসলামিক আইন দিয়ে ঠেসে দেয়া হবে অপরদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মী ও সমর্থকরা মুরসিকে পরিপূর্ণ সমর্থন শুরু করে।[৫৪]
এই পদক্ষেপটির সমালোচনা করেন মোহাম্মেদ এল বারাদেই, মিশরের সংবিধান প্রণেতা পার্টির নেতা, তিনি তার টুইটার বার্তায় লেখেন, "মুরসি আজ সকল রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছে এবং নিজেকে মিশরের নতুন ফারাও নিযুক্ত করেছে"।[৫৫][৫৬] এই পদক্ষেপটি মিশরজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংস কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে।[৫৭] ২০১২ সনের ৫ই ডিসেম্বরে দশ হাজার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে; পাথর ছোড়া হয় ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়, পুরো কায়রোর সড়কে সড়কে মিছিল ও সংঘর্ষ তৈরি হয়। এই সংঘর্ষটিকেই দেশটির অভ্যুত্থানের পর থেকে ইসলামপন্থী ও বিরোধীদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[৫৮] ছয়জন সিনিয়র উপদেষ্ট এবং তিনজন কর্মকর্তা সরকার থেকে ইস্তফা দেয় এবং দেশের নেতৃস্থানীয় ইসলামী প্রতিষ্ঠান মুরসিকে ক্ষমতা দখলের আহ্বান জানায়। প্রতিবাদকারীরা উপকূলীয় শহর থেকে মরুভূমির শহরগুলো পর্যন্ত মিছিল করে।[৫৯]
মুরসি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে একটি "জাতীয় সংলাপ" প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু একটি ইসলামপন্থী-শাসিত অ্যাসেম্বলি কর্তৃক লিখিত একটি খসড়া সংবিধানরচনার ১৫ ডিসেম্বরের ভোট বাতিল করতে অস্বীকার করেছিলেন যা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে।[৫৯]
২০১২ সনের ১৫ এবং ২২ ডিসেম্বরে দুই ধাপে একটি সাংবিধানিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুরসি ৬৪% সমর্থন লাভ করেন। ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মুরসির জারি করা রাষ্ট্রপতির ডিক্রি অনুসারে এটি স্বাক্ষরিত হয়। ৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মিশরীয় সংবিধান সেনাবাহিনীর দ্বারা স্থগিত করা হয়।
২০১৩ সনের ৩০ জুন মুরসির নির্বাচনের প্রথমবার্ষীকীতে লাখো বিদ্রোহী জনতা মিশরের রাস্তাঘাট দখল করে প্রেসিডেন্টের তড়িৎ পদত্যাগের দাবি জানায়। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতি জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য নিজ পরিকল্পনা অনুসরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভবন থেকে মিশরীয় সেনাবাহিনীর ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করা হয়। ৩ জুলাই, জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, মিশরীয় সেনাপ্রধান, ঘোষণা দেন যে, তিনি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন, সংবিধান বাতিল করেছেন এবং নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আহ্বান করা হবে এবং সাংবিধানিক সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন আদলি মনসুরের, ইনিই বর্তমান প্রেসিডেন্ট। মনসুর শপথ গ্রহণ করেন ৪ই জুলাই ২০১৩ সনে এবং তার প্রধানমন্ত্রী হন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
২০১৩ সনের সামরিক অভিযানের পর নতুন করে সংবিধান রচনা করা হয় যা ১৮ জুলাই ২০১৪ থেকে কার্যকর হয়। এরপর সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৪ এর জুনে। ২০১৪ এর ২৪ই মার্চ মুরসির বিচার চলাকালীন মুরসির ৫২৯ জন সমর্থকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।[৬০] সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৯২ জনের মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তন করা হয় এবং ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। ২৮ এপ্রিল, আরেকটি গণবিচার সংঘটিত হয় যেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে খুনের দায়ে ৬৮৩ জন মুরসি-সমর্থকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।[৬১] ২০১৫ সনে মিশর অংশগ্রহণ করে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপে।[৬২]
জুন ২০১৪ এর নির্বাচনে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, মিশরীয় সেনাপ্রধান, ৯৬.১% ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।[৬৩] আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির অধীনে গাজা স্ট্রিপ এবং সিনাইয়ের মধ্যে টানেলগুলি ধ্বংস করার পাশাপাশি মিশর গাজা স্ট্রিপ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি প্রয়োগ করেছে।
Partially independent from the UK in 1922, Egypt acquired full sovereignty with the overthrow of the British-backed monarchy in 1952.