মিহরিমাহ সুলতান মসজিদ | |
---|---|
স্থাপত্য | |
স্থপতি | মিমার সিনান |
ধরন | মসজিদ |
ভূমি খনন | ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ |
সম্পূর্ণ হয় | ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দ |
বিনির্দেশ | |
গম্বুজের উচ্চতা (বাহিরে) | ৩৭ মিটার (১২১ ফু) |
গম্বুজের ব্যাস (বাহিরে) | ২০ মিটার (৬৬ ফু) |
মিনার | ১ |
উপাদানসমূহ | গ্রানাইট, মার্বেল |
মিহরিমাহ সুলতান মসজিদ (তুর্কি:Mihrimah Sultan Camii) তুরস্কের ইস্তাম্বুলের এডিরনেকাপি এলাকায় কনস্টান্টিনোপলের দেয়ালের কাছে অবস্থিত একটি ১৬ শতকের উসমানীয় মসজিদ। সুলতান সুলাইমানের কন্যা মিহরিমাহ সুলতান এটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং রাজ দরবারের প্রধান স্থপতি মিমার সিনান এটির নকশা করেছিলেন। এটি ইস্তাম্বুল শহরের সর্বোচ্চ কেন্দ্রের নিকটে, ষষ্ঠ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। মসজিদটি বিশিষ্ট শহুরে বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্থাপনা।
ইস্তাম্বুলের এডিরনেকাপিতে অবস্থিত মিহরিমাহ সুলতান মসজিদটি সুলতান সুলাইমানের একমাত্র কন্যা মিহরিমাহ সুলতান কর্তৃক নামকরণকৃত এবং চালুকৃত দুটি মসজিদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম। এটির নকশা করেছিলেন মিমার সিনান। এই মসজিদটির কোনও ভিত্তি শিলালিপি না থাকলেও টিকে থাকা পাণ্ডুলিপিগুলি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে এটির নির্মাণ কাজ ১৫৬৩ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৫৭০ সালের মধ্যে শেষ হয়েছিল [১]
ভূমিকম্পের কারণে মসজিদটি একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৭১৯ সালে মিনারের কিছু সিঁড়ি ধ্বংস হয়ে যায়; ১৭৬৬ সালে, একটি ভূমিকম্পের ফলে মসজিদের মিনার এবং প্রধান গম্বুজ ধসে পড়ে; [২] ১৮৯৪ সালের তীব্র ভূমিকম্পে মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণের মিনারটি ভেঙে পড়ে। [৩]তা সত্ত্বেও এটিকে সংস্কারের জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এবং অন্যান্য ভবনের তুলনায় এটি সকলের মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করেছে। মসজিদটি ১৯৫৬-৫৭ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৯৯ সালে ইজমিট শহরে উৎপন্ন ভূমিকম্পে মসজিদের গম্বুজটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সম্প্রতি ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মসজিদটি পূণরায় সংস্কার করা হয়। এই সংস্কারকাজের প্রথম পর্যায়ে মসজিদ ও মিনারের উপরের অংশ মেরামত করা হয়। [৪] [৫] দ্বিতীয় পর্যায়ে এটির প্রাঙ্গণ প্রশস্ত করা, প্রধান ঝর্ণা পুনরুদ্ধার করা এবং একটি বাইরের পোর্টিকো পুনর্নির্মাণ (মসজিদটির মূলত দুটি পোর্টিকো ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র ভিতরের অংশটি টিকে ছিল) করার কাজ করা হয়েছিল। [৬]
মসজিদটি প্রধান রাস্তার দিকে একটি ছাদের উপর নির্মিত হয়েছিল। এটির একটি পৃথক পোর্টিকো রয়েছে, যেখানে একটি মাদ্রাসা (ইসলামি বিদ্যালয়) অবস্থিত। মাদ্রাসাটি মসজিদের বড় উঠানকে ঘিরে রয়েছে। উঠানের মাঝখানে একটি বৃহৎ ওযুর ঝর্ণা (সাদিরভান) রয়েছে। মসজিদের প্রবেশমুখে মার্বেল ও গ্রানাইট স্তম্ভ সহ সাতটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মনোরম বারান্দা রয়েছে। [৭] মসজিদটির মূল অংশটি একটি ঘনক্ষেত্র যার উপরে একটি অর্ধ-গোলক রয়েছে। এটির চারপাশে প্রতিসাম বহু-জানালাযুক্ত টাইম্পানা রয়েছে। গম্বুজটি চারটি খুঁটির উপর স্থাপিত, যার প্রতিটি কোণে একটি করে ভিত্তি জানালা রয়েছে। মসজিদের একক মিনারটি লম্বা এবং সরু; ১৮৯৪ সালের ভূমিকম্পের সময় এটি মসজিদের ছাদের সাথেই ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে এটি বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
মসজিদের গম্বুজটি ২০ মিটার (৬৬ ফুট) ব্যাস এবং ৩৭ মিটার (১২১ ফুট) উঁচু। [৮] উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে, গ্রানাইট স্তম্ভ দ্বারা স্থাপিত ট্রিপল আর্কেডগুলি উপরে দরদালান সহ পাশের করিডরগুলিতে উন্মুক্ত রয়েছে। এর প্রতিটিতে তিনটি গম্বুজযুক্ত অংশ রয়েছে। দেয়ালের উপরিভাগের বেশিরভাগ অংশেই জানালা রয়েছে। এটির কারণে মসজিদটি সিনান দ্বারা নির্মিত যেকোনো স্থাপত্যের মধ্যে সবচেয়ে হালকা শৈলীর করেবলে বিবেচিত হয়। [৯] এটির কিছু জানালায় দাগযুক্ত কাচ রয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরীণ স্টেনসিল সজ্জা সম্পূর্ণভাবে আধুনিক শৈলীতে নির্মিত। তবে খোদাই করা সাদা মার্বেলে মিম্বরটি মূল নির্মাণের অংশ, যা এখনো টিকে আছে।
প্রথম নির্মিত সংস্করণে, মিহরিমাহ সুলতান মসজিদটি একটি কমপ্লেক্সের (কুল্লিয়ে ) কেন্দ্র ছিল যার মধ্যে একটি মেদরেস (মাদ্রাসা), এক জোড়া হামাম (গোসলখানা), একটি সমাধি (তুরবে) এবং ছাদের নীচে সারি সারি দোকান (আরাস্তা) ছিল। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে কমপ্লেক্সটি আর্থিকভাবে সহায়তা পেত। হামামটি আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
মিহরিমাহ সুলতানাকে সুলাইমানি মসজিদে সমাহিত করা হয়েছে, কিন্তু এই মসজিদের পিছনে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত তুরবেতে তার জামাতা উজিরে আজম সেমিজ আলী পাশা, তার মেয়ে আয়েসে হুমাসাহ সুলতান, তার নাতি মেহমেদ বে, পাশাহিদ মুস্তাফা, ওসমান বে এবং তার পরিবারের আরও অনেক সদস্য সমাধিস্থ রয়েছেন।