মে ডাম মে ফি 𑜉𑜦𑜧 𑜓𑜪 𑜉𑜦𑜧 𑜇𑜣 | |
---|---|
তারিখ (সমূহ) | ৩১ জানুয়ারি |
আরম্ভ | আহোম রাজার শাসনকালে |
পুনরাবৃত্তি | একবছর |
পৃষ্ঠপোষক(গণ) | আহোম |
মে-ডাম-মে-ফি (আহোম:𑜉𑜦𑜧 𑜓𑜪 𑜉𑜦𑜧 𑜇𑜣,ইংরাজি: Me-Dam-Me-Phi) হচ্ছে অসমের টাই-আহোম জাতির ধর্মীয় উৎসব। পূর্বপূরুষদের পূজা করার উদ্দেশ্যে এই উৎসব পালন করা হয়। এই পূজার মাধ্যমে নিজের, সমাজের ও দেশের মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়। মে-ডাম-মে-ফির কথাটির মে শব্দের অর্থ প্রার্থনা, উপাসনা বা পূজা করা, ডাম শব্দের অর্থ মৃত ব্যক্তি বা মৃত পূর্বপূরুষ এবং ফি শব্দের অর্থ দেবতা বা ভগবান অর্থাৎ ভগবানকে পূজা করা ও মৃত পূর্বপূরুষদের থেকে মঙ্গল প্রার্থনা করা।[১] এই উৎসবে আহোমরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন এবং বিশ্বশান্তির জন্য কামনা করেন। এই পরম্পরার মাধ্্যমে ঊর্ধ-পুরুষের সাথে অশারীরিক যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। অন্যান্য পরম্পরার মতো মে ডাম মে ফি পালনের জন্যও নীতি-নিয়ম আছে যাকে তাই আহোম ভাষায় খ্য়েক-লাই বলা হয়৷
লোক কথিত মতে অহোম রাজা চাও লুং চুকাফার সঙ্গে আসা ইতিহাস লেখক ম-মুন-ম-মাই অসমে এই প্রথার প্রচলন করেন। প্রতেক বৎসরের ৩১ জানুয়ারি তারিখে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আটটি কোণ বিশিষ্ট এক অস্থায়ী মন্দির বানিয়ে আটটি শরাই দিয়ে আহোমদের আদিপিতা লেংদেন দেবতার উপস্থিতিতে আটজন পূর্বপূরুষকে উপাসনা করা হয়। এই পূজায় ফু-রা-তা-রা-আ-নং অর্থাৎ নিকাকার ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঙি ডাম খাম অঙ্কিত পতাকা উত্তোলন করে ভোজন দেওয়া হয়। এই পূজা অসমে তিপামর ডাঙরিয়া থানে প্রথমবার অনূষ্ঠিত করা হয়েছিল। সার্বজনীন ভাবে আয়োজিত এই পূজা অহোমেরা ব্যক্তিগত ঘরোয়া ভাবেও পালন করে থাকেন।
টাই-অহোমেরা বিশ্বাস করেন যে পূর্বপূরুষ মারা যাওয়ার পর দেবতায় পরিণত হন ও স্বর্গে বাস করে নিজেদের বংশধরদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। অহোমেরা আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন না। অহোমদের ধারণা মতে মৃত্যুর পর আত্মা স্বল্পদিনের জন্য ঘুরে বেড়ায় ও আত্মীয়দের থেকে পূজা পাওয়ার পর পূর্বপূরুষের আত্মা দেবতার শ্রে্ণীতে উত্তীর্ণ হয়। বিবাহ, বিহু ও খেত থেকে ফসল পাওয়ার পর মৃত পূর্বপূরুষদের সম্মান প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে ঘরোয়াভাবে আরেক ধরনের পূজা অনুষ্ঠিত করা হয় যাহাকে "মৃতকক দিয়া পূজা" অর্থাৎ "মৃতকের পূজা" বলা হয়। এই পূজায় পূর্বপূরুষের ভোজনের উদ্দেশ্যে মাছ, মাংস, ভাত, মিষ্টান্ন ও অসমে প্রচলিত সুরা বা সাঁজ ইত্যাদি দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে মৃতকের পূজা করার মুল কারণ হচ্ছে পূর্বপূরুষের থেকে আশীর্বাদ পাওয়া। অহোমদের মতে মৃত পূর্বপূরুষের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ করা য়ায় ও পূর্বপূরুষেরা জীবিতদের সুরক্ষা প্রদান করেন। এই পূজা সমন্ধে তাদের ধারণা "গৃহ দেবতা রক্ষা না করিলে ঘরের বেড়া বা দেওয়াল সুরক্ষা প্রদান করতে পারেনা। মৃতেরা রক্ষা করলে সাঁপ কামড়ায় না, বাঘে খায়না এমনকি যমদেবও ভয় পায়।[২]
মৃতদের ঘাই ডাম, সি-রেন-ডাম, জাকরুয়া ডাম ও ন- ডাম ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় ।
জাকরুয়া ডাম বাদ দিয়ে বাকি সকলকে গৃহ ডাম বলে।
কার্ত্তিক মাসে ধানের ফসল, অগ্রহায়ণ মাসে শালীধান ও বিহু উৎসবে গৃহ ডামদের পূজা করা হয়। দেওধাই, বাইলুং ও মহন ইত্যাদি বিশেষ শ্রেণীর আহোম পুরোহিত দ্বারা মে-ডাম-মে-ফি পূজা সম্পূর্ণ হয় । মে-ডাম-মে-ফি উদ্যাপন করা স্থানে খড় ও বাঁশ দ্বারা আটটি কোন বিশিষ্ট অস্থায়ী প্রার্থনা ঘর নির্মাণ করা হয়। সাধারণতঃ তিন প্রকারের মে-ডাম-মে-ফি উৎযাপন করা দেখা যায়- রাজা, দেশ ও প্রজার মঙ্গলের জন্য অনুষ্ঠিত পূজা, ব্যক্তিগত ভাবে নিজেদের মঙ্গলের জন্য ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠিত ও বাঁশের চাং বানিয়ে তিনটি শরাই দিয়ে অনুষ্ঠিত পূজা। লেংদিন, লেংদন ও লাং জান-চাই-হাঙক ইত্যাদি দেবতারদেরকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে পূজা করা হয়। পূজার বেদিতে আহোমদের পবিত্র পুস্তক "পাক পেন কাকা" স্থাপন করা হয়।[২]
অহোম রাজা চুকাফা ইরাবতী নদী পার হয়ে অসমে প্রবেশ করে প্রথমবার অসমের মাটিতে মে-ডাম-মে-ফি উৎযাপন করন। একটি নতুন রাজ্য জয় করে সুশাসন করার উদ্দেশ্যে পূর্বপূরুষ লেংদন ও অন্যান্য দেবতার থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে তিনি নামরুপের বুঢ়ি দিহিঙের পাড়ে দ্বিতীয় বার মে-ডাম-মে-ফি উৎযাপন করেন এবং কালক্রমে অন্যান্য অহোম রাজারা রাজ্য জয় করে দেশের মঙ্গলের জন্য এই পূজা নিয়মিত ভাবে পালন করেন।
একটি প্রবাদমতে স্বর্গের দেবতা লেংদেন তাঁহার দুই নাতি খুন লং ও খুন লাইককে রাজত্বে করতে পৃথিবীতে পাঠান। যাত্রাকালে জাফিংফা তাদের ফিন হা মাসে চিনকরা ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার প্রবিত্র সময়ে একটি দিন নির্ধারণ করে ঠাকুরদা লেংদেন সহ অন্যান্য আটহাজার দেবতার জন্য ভোজন উৎসর্গ করতে উপদেশ দেন এবং তা করলে ঐদিন আট হাজার দেবতা সহ লেংদেন মর্ত্তে উপস্থিত হয়ে তাদের আশীর্বদ করবেন। এই বাণী শিরোধার্য করে খুন লং ও খুন লাইক সৃষ্টি করেন মে-ডাম-মে-ফি নামক পূজা অনুষ্ঠান। টাই-অহোম জাতিরা নিজেদের লেংদেন বংশের বংশধর ভেবে এই পূজার ধর্মীয় রূপ দেন।[২]
অহোমেরা ব্যক্তিগত ভাবে বিহু বা অন্যান্য মাঙ্গলিক তিথিতে মৃতকের এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সার্বজনীন ভাবে ৩১ জানুয়ারির দিনে মে-ডাম-মে-ফি অনুষ্ঠিত করা হয়। বর্ত্তমানে অহোম জনজাতি ও অসমের অন্যান্য জনজাতিরা মে-ডাম-মে-ফি পালন করেন। মে-ডাম-মে-ফি বর্ত্তমান দিনে অসমের জাতীয় উৎসব হওয়ার পথে।[২]