মোদিবো কেইতা

মোদিবো কেইতা
১৯৬১ সালে কেইতা
মালির প্রথম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২০শে জুলাই, ১৯৬০ – ১৯শে নভেম্বর, ১৯৬৮
পূর্বসূরী--
উত্তরসূরীমৌসা ট্রাওরে
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯১৫-০৬-০৪)৪ জুন ১৯১৫
বামাকো কৌরা, সেনেগালনাইজার
মৃত্যু১৬ মে ১৯৭৭(1977-05-16) (বয়স ৬১)
বামাকো, মালি
জাতীয়তাফ্রেঞ্চ,[] ১৯৬০ থেকে মালিয়ান
রাজনৈতিক দলসুদানীস ইউনিয়ন আফ্রিকান ডেমোক্রাটিক র্যালি
দাম্পত্য সঙ্গীমারিয়াম ট্রাভেলে

মোদিবো কেইতা (৪ঠা জুন ১৯১৫ - ১৬ই মে ১৯৭৭) ছিলেন মালি ফেডারেশনের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীন মালির প্রথম রাষ্ট্রপতি (১৯৬০-১৯৬৮)। তিনি আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের একজন প্রথমসারির প্রবক্তা ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

মোদিবো কেইতা ১৯১৫ সালের ৪ঠা জুন, তদানীন্তন ফরাসী সুদানের রাজধানী বামাকোর একটি অঞ্চল বামাকো-কউরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পরিবার মালিয়ান মুসলমান যারা মালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার সরাসরি বংশধর বলে নিজেদের দাবি করতেন। তিনি বামাকোতে এবং ডকারের ইকোলে নরমলে উইলিয়াম-পন্টিতে পড়াশোনা করেছিলেন; ভালো ছাত্র হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল এবং তিনি তাঁর ক্লাসের শীর্ষে ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ার সময় তাঁর ডাকনাম ছিল 'মোডো'। ১৯৩৬ সালে তিনি শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন; বামাকো, সিকাসো এবং টিমবাক্টুতে তিনি শিক্ষকতা করেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি

[সম্পাদনা]

সমাজসচেতন কেইতা প্রথম থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কাজ এবং সংঘে জড়িত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি আর্ট অ্যান্ড থিয়েটার গ্রুপের সমন্বয়ক ছিলেন। ওয়েজিন কুলিবলির পাশাপাশি তিনি ফরাসী পশ্চিম আফ্রিকান শিক্ষকদের ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কেইতা বামাকোতে কমিউনিস্ট স্টাডি গ্রুপেও (জিইসি) যোগদান করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে, তিনি 'ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচক একটি ম্যাগাজিন ল'এল ডি কানাডুগু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর ফলে ১৯৪৬ সালে প্যারিসের প্রিজন দে লা সান্টিতে তাঁর তিন সপ্তাহ কারাদণ্ড হয়। ১৯৪৫ সালে কেইটা ফরাসী চতুর্থ প্রজাতন্ত্রের গণপরিষদের পক্ষে প্রার্থী ছিলেন, এটি জিইসি এবং সুদানিজ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সমর্থিত। পরে একই বছর, তিনি এবং মামাদৌ কোনাটি ব্লক সৌদানাইস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে সুদানীস ইউনিয়নে উন্নীত হয়েছিল।

পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক নেতা রূপে জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৪৬ সালের অক্টোবরে ফরাসী ঔপনিবেশিক আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বামকোতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এখানেই আফ্রিকান গণতান্ত্রিক সমাবেশ(আরডিএ) গঠন করা হয়। এই জোটটির নেতৃত্বে ছিলেন ফলিক্স হাফৌত-বোইনি; কেইতা আরডিএর ফ্রেঞ্চ সুদান অঞ্চলের সেক্রেটারি-জেনারেল এবং সুদানীস সহযোগী সংগঠন ইউএস-আরডিএর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ফরাসী সুদানের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি বামাকোর মেয়র নির্বাচিত হন এবং ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। তিনি দু'বার মরিস বার্গোস-মাউনুরি এবং ফলিক্স গেইলার্ডের সরকারগুলিতে পররাষ্ট্রসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোদিবো কেইতা ১৯৬০ সালের ২০শে জুলাই মালি ফেডারেশনের নির্বাচনী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ফরাসি সুদান এবং সেনেগাল এই ফেডারেশনের অংশ ছিল যদিও সেনেগাল পরে ফেডারেশন ছেড়ে চলে যায়।

মালির রাষ্ট্রপতিরূপে জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৬০ সালে ফেডারেশন ভেঙে যাওয়ার পরে ইউএস-আরডিএ মালি প্রজাতন্ত্র হিসাবে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। কেইতা মালি প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন এবং এরপরেই ইউএস-আরডিএকে দেশের একমাত্র আইনি দল হিসাবে ঘোষণা করেন। সমাজতান্ত্রিক হিসাবে তিনি তার দেশকে অর্থনীতির প্রগতিশীল সামাজিকীকরণের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে কৃষি ও বাণিজ্য দিয়ে শুরু করে ১৯৬০ সালের অক্টোবরে সোমিরেক্স (মালিয়ান আমদানি ও রফতানি সংস্থা) তৈরি করা হয়েছিল, যাদের মালির পণ্য আমদানি ও রফতানির উপর একচেটিয়া অধিকার ছিল। এমনকি খাদ্যপণ্য আমদানিতে (যেমন চিনি, চা, গুঁড়ো) দুধ) এবং দেশের মধ্যে তাদের বিতরণেও তাদের মুখ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৬২ সালে ম্যালিয়ান ফ্র্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা হয়, রেশনিং এবং গণবণ্টন ব্যাবস্থার অব্যবস্থার ফলে দেশে মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতি হয় এবং জনগণের বিশেষত কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ঘটে।

অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের জুনে তিনি যুক্তরাজ্যে একটি রাষ্ট্রীয় সফর করেছিলেন, যেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ সেন্ট মাইকেল এবং সেন্ট জর্জ উপাধিতে ভূষিত করেন[]। তার সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা সতর্কতার সাথে দেখেছিল, তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তিনি ওয়াশিংটনের সাথে সুসম্পর্ক চেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি সুকর্ণর সাথে আমেরিকা যান এবং রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির সাথে সাক্ষাত করেন।

একনায়কতন্ত্র ও কারাবরণ

[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক স্তরে, মোদিবো কেইতা দ্রুতই ফিলি ড্যাবো সিসসোকোর মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বন্দী করে ফেলেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম নির্বাচন, ১৯৬৪ সালে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবে ইউএস-আরডিএর ৮০ জন প্রার্থীই একক জাতীয় পরিষদে ফিরে আসে এবং কেইতা আইনসভা দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদে যথাযথভাবে নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি 'বিদ্রোহ প্রতিরক্ষা জাতীয় কমিটি (সিএনডিআর)' গঠন করে সংবিধান স্থগিত করে দেন। মালিয়ান ফ্র্যাঙ্কের অবমূল্যায়নের ফলে এবং কেইতার একনায়কতন্ত্রের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৯৬৮ সালের ১৯শে নভেম্বর, জেনারেল মোসা ট্রোরি একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোদিবো কেইতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং তাকে উত্তর মালিয়ান শহর কিদালের কারাগারে প্রেরণ করেন। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মুক্তির প্রস্তুতির জন্য তাঁকে রাজধানী বামাকোতে আনয়ন করা হয়, যদিও ১৯৭৭ সালের ১৬ই মে মোদিবো কেইতা রাজনৈতিক বন্দি হিসেবেই মারা যান। [][]

১৯৯২ সালে মুসা ট্রোয়ের পতন ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি আলফা ওমর কোনারির নির্বাচনের পরে কেইতা মালির ইতিহাসে পুনরায় সম্মান ফিরে পান। ১৯৯২ এর ৬ই জুন মোদিবো কেইতার একটি স্মৃতিস্তম্ভ বামাকোতে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্যান-আফ্রিকানবাদী হিসেবে কেইতা

[সম্পাদনা]

সারা জীবন কেইতা আফ্রিকান সংহতির পক্ষে কথা বলেছেন। ১৯৬৩ সালে, তিনি আফ্রিকান ঐক্যের জন্যে 'অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিয়ন' (ওএইউ) এর সনদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে, তিনি দুটি দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত- বালুযুদ্ধের সমাপ্তির প্রত্যাশায় মরক্কোর রাজা এবং আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতিকে বামাকোতে আমন্ত্রণ জানান। ইথিওপিয়ার সম্রাট হেইল স্লাসির সহায়তায় কেইতা বামাকো চুক্তির রূপায়ণে সফল ভূমিকা নেন, যা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছিল। ফলস্বরূপ, তিনি সে বছর লেনিন শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেনেগাল, আপার ভোল্টা এবং আইভরি কোস্টএর দেশগুলির সাথে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করেছিলেন। নিরপেক্ষ আন্দোলনের একজন আইনজীবী, মোদিবো আলজেরিয়ান জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের (এফএলএন) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. The fact that Keïta was deputy in the French National Assembly, then member of the French government, implies that he was not only a French colonial subject, but even that he legally benefited of full French citizenship.
  2. The Times, 8 June 1961, p. 16; Issue 55102; col. B.
  3. P. J. Imperato, Mali: a search for direction, p. 69
  4. P. Diarra, Cent ans de catholicisme au Mali, p. 273

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]