রনে গেনো (আব্দুল ওয়াহিদ ইয়াহিয়া) | |
---|---|
জন্ম | ব্লুয়িস, লয়্যির-এ্যাট-চীর, ফ্রান্স | ১৫ নভেম্বর ১৮৮৬
মৃত্যু | ৭ জানুয়ারি ১৯৫১ কায়রো, মিশর | (বয়স ৬৪)
যুগ | ২০ শতকের দর্শন |
অঞ্চল | |
ধারা | |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য অবদান |
|
রনে গেনো[১] René Guénon (নভেম্বর ১৫, ১৮৮৬- জানুয়ারী ৭, ১৯৫১) যিনি শেখ আব্দুল ওয়াহিদ ইয়াহিয়া Shaykh 'Abd al-Wahid Yahya নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন মূলত একজন ফরাসি বংশদ্ভূত প্রভূতত্ত্ববিদ, আধ্যাত্মবাদী লেখক ও সুফি দীক্ষাগুরু[২][৩][৪][৪][৫][৬][৭] বা দার্শনিক। তার ফরাসি ভাষায় লেখা বই ও প্রবন্ধ সমূহ বিশটিরও অধিক ভাষায় ইতিমধ্যে অনুদিত হয়েছে।
রনে গেনো প্যারিস হতে আনুমানিক ১০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত ব্লুয়িস Blois নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। সে সময়কার ফরাসি সমাজের অপরাপর বেশির ভাগের ন্যায় তিনিও জন্ম গ্রহণ করেছিলেন একটি রোমান ক্যাথলিক পরিবারে। তার পিতা ছিলেন একজন স্থপতি এবং দার্শনিক।
১৯০৪ সালের দিকে প্যারিসে অধ্যয়নকালে আধ্যাত্মবাদ ও দর্শনশাস্ত্র তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ক্ষীণদেহী গেনো শুরু হতেই একজন মেধাবী ছাত্র ও আধ্যাত্মবাদী ব্যক্তি হিসাবে গড়ে উঠেনে।.[৮]
তিনি তাও প্যালিনডিনিয়াস Tau Palingenius নামে একটি সাময়িকীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদনাকারী হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেন এবং ১৯২২ সাল পর্যন্ত এ সাময়িকীর জন্য নিবন্ধ রচনা করেন।[৯][১০]
এ সময়কালে (পি চকোরনাথ রচিত তার জীবনী অনুযায়ী)[৮] সম্ভবত, তিনি হিন্দু ধর্মে বিশেষত শংকরাচার্যের আত্যাত্মবাদী ধারা এবং তাওবাদ বা জৈন বৌদ্ধবাদী মতবাদ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। অতপর ১৯১০ খৃষ্টাব্ধে [১১] ইসলামিক সুফিবাদ বা আধ্যাত্মবাদের দীক্ষা গ্রহণ করে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন শেখ আব্দুল ওয়াহেদ ইয়াহিয়া Sheikh 'Abd al-Wahid Yahya.
ইসলামী সুফিবাদে দীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইভান আগুইলির (আব্দুল হাদী) ও শেখ আব্দুল রহমান ইলিয়াছ আল কবীরের Sheikh Abder Rahman Elish El-Kebir ভূমিকা ও অনুপ্রেরণাই ছিল মূখ্য। শেখ আব্দুল রহমান ইলিয়াছ আল কবীর ছিলেন শরীয়ত ও তরীকত উয়ভ বিষয়ে তৎকালীন মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মালেকী মাযহাবের প্রধান বা ইমাম। পরবর্তীতে গেনো নিজের লেখা দ্যা সিম্বলিজম অব দ্যা ক্রস নামক গ্রন্থটি তার প্রতি উৎসর্গ করেন।
১৯১৭ সালে গেনো আলজেরীয়ার ষ্টিফ অঞ্চলে এক বছর কলেজ ছাত্রদের দর্শন শাস্ত্রে পাঠদান করেন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর তিনি গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করার জন্য শিক্ষকতা পেশা ত্যাগ করেন। তার প্রথম গ্রন্থ হিসাবে ইন্ট্রুডাকশন টু দ্যা ষ্ট্যাডি অব হিন্দু ডকট্রাইন Introduction to the Study of the Hindu Doctrines প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালে। ১৯২৫ সাল হতে তিনি পি চকোরনাক সম্পাদিত লি ভয়্যিল ডি’লিসিস Le Voile d'Isis ("The Veil of Isis") নামক সাময়িকির নিয়োমিত লেখক হয়ে উঠেন। পরে ঐ সাময়িকীটি তারই তত্ত্বাবধানে লেস ইথ্যূদ্যিস ট্রেডিশন্যালিস Les Études Traditionnelles ("Traditional Studies") নামে পরিচিতি লাভ করে।[১২][১৩][১৪]
১৯৩০ সালে, গেনো ইসলামীক আধ্যাত্বিক লিখিত নথি পত্রাদী সংগ্রহ ও অনুবাদ করার সংকল্প নিয়ে কায়রোর উদ্দেশ্যে প্যারিস ত্যাগ করেন। এ প্রকল্পটি সম্পাদকের হঠাৎ সিদ্ধান্তে পরিত্যক্ত হয়। বন্ধুদের দেয়া ফ্রান্সে ফিরে যাবার সকল প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে গেনো রয়ে গেলেন কায়রোতে। আর্থিক দৈন্যদশাগ্রস্থ হওয়া সত্বেও তিনি বিশ্বব্যাপী তার সকল প্রতিপক্ষের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা এবং নিজ উদ্যোগে স্বীয় প্রবন্ধ রচনার কাজে লিপ্ত থাকনে। সৌভাগ্যক্রমে এর মধ্যে তিনি হামিদিয়া তরীকার পীর শেখ সালামা হাসান আল রাদির (Sheikh Salama Hassan ar-radi) সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তাতে সহসা যুক্ত হন। ১৯৩৮ সালে তার মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি তার সহচর্যে থাকেন। এদিকে সমসাময়িক কালে তিনি সংস্পর্শে আসেন অপর সুফি সাধক শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের (Sheikh Mohammad Ibrahim), ১৯৩৪ সালে গেনো তার কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চার সন্তানের পরিবারে সর্বকনিষ্ঠ আব্দুল ওয়াহেদ জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫১ সালে। মিশরে যাপিত জীবনে গেনো অত্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন তার তরীকার আধ্যাত্মিক সাধনা ও প্রবন্ধ রচনায় উৎসর্গিত প্রাণ।[১৫] তিনি ১৯৪৯ সালে মিশরের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
কতিপয় বন্ধু ও অনুগামীদের বারংবার অনুরোধে অবশেষে তিনি ফ্রান্সে একটি আধ্যাত্ম চর্চাকেন্দ্র বা খানকাহ Masonic lodge স্থাপনে সম্মত হন। নিজেরই একটি বইয়ের নামানুসারে তার প্রতিষ্ঠিত খানকাহ লা গ্রান্ড ট্রাইডি La Grande triade ("The Great Triad") স্থাপিত হওয়ার কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠাকালীন সহযোগিরা পৃথক হয়ে গেলেও গ্রান্ড লজ ডি ফ্রান্স Grande Loge de Franc নামে তা আজও পরিচালিত হচ্ছে।[১৬]
রেনে গেনো জানুয়ারি ৭, ১৯৫১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। এ তথ্য প্রতিষ্ঠিত যে, মৃত্যুকালে তার শেষ উচারিত শব্দ ছিল আল্লাহ.[১৭]