আসমাউর রিজাল বা ইলমুর রিজাল বা রিজাল শাস্ত্র (আরবি: اسماء الرجال), যা ইংরেজিতে Biographical evaluation বা জীবনী/জীবনবৃত্তান্ত মূল্যায়ন/মান যাচাইকরণ হল ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস আল হাদিস সম্পর্কিত এক বিশেষ 'চরিত বিজ্ঞান'। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের নবি ও রাসুল মুহাম্মাদ এর প্রদত্ত ধর্মীয় পথনির্দেশনা, তার আদেশ নিষেধ উপদেশ কথা-কাজ ও মৌনসম্মতির বর্ণিত রুপ আল হাদিস সমুহের বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতার সঠিকত্ব মান যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে সুবিজ্ঞ হাদিসবেত্তাগণ যুগে যুগে তাদের মেধা ও মনন দিয়ে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ আর বিস্তর গবেষণায় হাদিস সংরক্ষণের জন্য যে বিশেষ শাস্ত্র উদ্ভাবন করেন তার নাম আসমাউর রিজাল বা রিজাল শাস্ত্র। ইলমে হাদিসের বহুবিধ শাখার মধ্যে এটি অন্যতম।
আসমাউর রিজাল কথাটি আরবি দু'টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে যেমন : اسماء الرجال - এর প্রথম শব্দটি 'আসমা' (اسماء) এটি 'ইসম্' (اسم) শব্দের বহুবচন যার অর্থ : 'নাম সমুহ'। আর দ্বিতীয় শব্দটি 'রিজাল' (رجال) এটি 'রাজুল' (رجل) শব্দের বহুবচন - যার অর্থ হল 'ব্যক্তিবর্গ'।[১][২] সুতরাং আসমাউর রিজাল (اسماء الرجال) কথাটির অর্থ হল : 'ব্যক্তিবর্গের নামসমুহ'। আর এখানে 'ব্যক্তিবর্গ' বলতে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর হাদিস সমুহ যারা বর্ণনা করেছেন - ঐসব বর্ণনাকারীগণই এই 'রিজাল' শব্দের অন্তর্ভুক্ত। তাদের গ্রহণযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিরুপনে তাদেরকে নিয়েই রচিত হয়েছে এই চরিত বিজ্ঞান।[৩]
যে শাস্ত্রে রাবীগণের (হাদিস বর্ণনাকারীদের) জীবনী সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ইলমে আসমাউর রিজাল বলা হয়।[১][৪]
ইলমে হাদিসের খেদমত আঞ্জাম দিতে গিয়ে হাদিসের রাবীদের পরিচয় জানা ও তাদের মানগত স্থান নিরুপণ করতে শত সহস্র মনীষী তাদের স্বীয় জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা দেশে দেশ পায়ে হেঁটে দূর দূরান্ত অতিক্রম করেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গিয়ে রাবীদের (হাদিস বর্ণনাকারী) সাথে সাক্ষাৎ করে বর্ণনার সকল তথ্য সংগ্রহ করেন। যেসব রাবী তথ্য অনুসন্ধানকারীদের সমসাময়ীক ছিলেননা, তাদের সম্পর্কে তাদের সমসাময়িক অথবা তাদের মাধ্যমে আরও পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এভাবে ইলমে হাদিসের গৌরবান্বিত যে শাখাটি অস্তিত্বে আসে তা-ই 'আসমাউর রিজাল' বা রিজাল শাস্ত্র নামে অভিহিত।
আসমাউর রিজাল-এর উপর এ পর্যন্ত অসংখ্য বই রচিত হয়েছে। শুধু এই বিষয়ের বইগুলো যদি একত্রে সংগৃহীত করে কোথাও রাখা হয় - দৈর্ঘ্য-প্রস্থে স্থান সংকুলানে বিশাল আয়তনে একটি বড় লাইব্রেরির প্রয়োজন হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। এ সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য প্রসিদ্ধ কিছু গ্রন্থের নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো।
এতে সাহাবি অ-সাহাবি, সিকাহ্ ও যঈফ সকল শ্রেনির রাবীর (বর্ণনাকারী) সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এদের জীবনের খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করে এতে তুলে ধরা হয়েছে।
গ্রন্থের নাম | লেখক | সময়কাল |
---|---|---|
কিতাবু তাবাকাতিল কুবরা | ইবন সা'দ | ২য় শতাব্দী |
আত-তারিখুল কাবির | ইমাম বুখারী | ২য় শতাব্দী |
আল জারহু ওয়াত তা’দীল | ইবন আবি হাতেম | ৩য় শতাব্দী |
আল কামিল ফি যুআফাঈর রিজাল | ইবনে আদি | ৪র্থ শতাব্দী |
আল কামাল ফি আসমাইর রিজাল | আবদুল গণি আল মাকদিসি | ৬ষ্ঠ শতাব্দী |
মিজানুল ইতিদাল | ইমাম আয-যাহাবি | ৮ম শতাব্দী |
সিয়ারু আলামিন নুবালা | ইমাম আয-যাহাবি | ৮ম শতাব্দী |
তাযকিরাতুল হুফফাজ | ইমাম আয-যাহাবি | ৮ম শতাব্দী |
তাহযিবুত তাহযীব | ইমাম আয-যাহাবি | ৮ম শতাব্দী |
লিসানুল মিজান | ইবনে হাজার আসক্বালানী | ৯ম শতাব্দী |
তাকরিবুত তাহযীব | ইবনে হাজার আসক্বালানী | ৯ম শতাব্দী |
আল ইসাবাহ ফিত তামঈযিস সাহাবা | ইবনে হাজার আসক্বালানী | ৯ম শতাব্দী |
তাবাকাতুল মুদাল্লিসিন | ইবনে হাজার আসক্বালানী | ৯ম শতাব্দী |
তাদরিবুর রাবী | জালালুদ্দীন সুয়ুতী | ১০ম শতাব্দী |
এতে সাহাবি, সিকাহ্ বা যঈফ এরকম আলাদা আলাদা শুধু এক শ্রেনির রাবীগণের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।