রীতা গঙ্গোপাধ্যায়

রীতা গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম
পেশাধ্রুপদী সংগীতশিল্পী
পরিচিতির কারণহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
দাম্পত্য সঙ্গীকেশব কোঠারি
সন্তানএক ছেলে ও এক মেয়ে মেঘনা কোঠারি
পিতা-মাতাকে. এল. গাঙ্গুলি
মীনা
পুরস্কারপদ্মশ্রী
সংগীত নাটক একাদেমি পুরস্কার
প্রিয়দর্শী পুরস্কার
রাজীব গান্ধী শিরোমণি পুরস্কার
সার্কেল অফ ইন্ডিয়া সমালোচক পুরস্কার
ব্রডকাস্টার এসোসিয়েশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার

রীতা গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় শাস্ত্রীয় শিল্পকলার এক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী এবং কণ্ঠশিল্পী। তিনি ২০০০ সালে সংগীত নাটক একাদেমি পুরস্কার[] এবং ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী পদকে সম্মানিত হন।[] তিনি অভিনেত্রী মেঘনা কোঠারির মাতা।

জীবনী

[সম্পাদনা]

রীতা গঙ্গোপাধ্যায় উত্তর প্রদেশের লখনৌয়ের একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কে. এল. গঙ্গোপাধ্যায়, তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁর মাতার নাম মীনা গঙ্গোপাধ্যায়। কে. এল. গঙ্গোপাধ্যায় একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৩৮ সালে জওহরলাল নেহেরু তাঁকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রথম সম্পাদক হওয়ার জন্য নির্বাচিত করেন।[][] রীতা লখনৌতেই বড় হয়ে উঠে, কারণ এখানেই পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ১২ বছর বয়সে গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে রবীন্দ্রসংগীত শিখতে শুরু করেন।[] পরে তিনি তাঁর বড় বোন গীতা ঘটক সহ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কথাকলিমণিপুরীর মতো ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের উপর অধ্যয়নকালে তাঁরা শিল্পকর্মেও জোর দেন।[] উপরন্তু তিনি খ্যাতিমান গুরু কুঞ্চু কুরুপ এবং চান্দু পান্নিকরের[] অধীনে কথাকলিতে আরও পড়াশোনা করেন এবং নিউইয়র্কের মার্থা গ্রাহাম স্কুলে আধুনিক নৃত্যের উপর প্রশিক্ষণ নেন।[][] তিনি রাশিয়ার বোলশোই থিয়েটার সহ বিভিন্ন মঞ্চে তাঁর শৈলী প্রদর্শন করেন এবং ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা (এনএসডি) তে নৃত্য অনুষদের সদস্য হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি মুভমেন্ট এবং মাইম এর একটি নতুন কোর্স চালু করেন বলে জানা যায়।[][][] তিনি ত্রিশ বছর এনএসডিতে শিক্ষকতা করেছেন[] এবং সেখানে তাঁর কার্যকালে তিনি প্রযোজনা এবং পোশাক পরিকল্পনায় অবদান রেখেছিলেন বলে জানা যায়।[] ধ্রুপদী থিয়েটারের বিকাশ ও ভিক্রিস্থ মাধ্যম মিলনায়তন নির্মাণের প্রচেষ্টার কৃতিত্বও তাঁর।[] এনএসডির অধীনে তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ইস্রায়েলের মতো অনেক দেশ ভ্রমণ করেনে এবং সেখানে তিনি পরিবেশনা করেন এবং ভারতীয় ধ্রুপদী থিয়েটারের কর্মশালাও করেন।[]

পঞ্চাশের দশকে দিল্লিতে একটি প্রদর্শনী চলাকালে গান করার সুযোগ তাঁর কর্ম জীবনের দিশা বদলে দেয় এবং তিনি গান গাওয়ার প্রতি আরও মনোনিবেশ করেন।[] খ্যাতিমান কত্থক গুরু শম্ভু মহারাজের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তিনি বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী সিদ্ধেশ্বরী দেবীর সাথে ভারতের অনেক জায়গায় প্রদর্শনী করেন।[][] এরই মধ্যে একটি অনুষ্ঠানের সময় বিখ্যাত হিন্দুস্তানি গায়ক বেগম আখতারের সাথে রীতার সাক্ষাত হলে তিনি তাঁকে তাঁর শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন।[][] ১৯৭৪ সালে আখতারের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই দুই গায়কের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।[]

গঙ্গোপাধ্যায় ফোর্ড ফাউন্ডেশনের ফেলো ছিলেন এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মহিলা গায়কদের উপর গবেষণার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।[] তিনি ১৯৯৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে সুফিবাদের সাতটি পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে রুহ-ই-ইশক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া নির্মাণ কাজ প্রযোজনা করেন।[] তিনি উর্দু কবিতার একটি ধারা নজম এর ভক্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তিনি বাঙালী কবিদের যেমন জীবনানন্দ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয় গোস্বামীদের কবিতার জন্য সুর রচনা করেছেন।[] তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা হোমাপাখির সাথে জড়িত ছিলেন, এর জন্য তিনি সূচনা সঙ্গীত রচনা করেন।[] তিনি কল্পনা লাজমির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দরমিয়াঁ তে অভিনয় করেছেন।[]

গঙ্গোপাধ্যায় যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফেস্টিভাল অফ ইন্ডিয়া ইভেন্টেও পারফর্ম করেছেন। তিনি শিল্প ও সংগীত সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন যেমন- বিসমিল্লাহ খান ও বেনারস, দি সীট অব শানাই[] এবং আয়ে মহব্বত... বেগম আখতারের স্মৃতিচারণ[][] তিনি শিল্পকলার তরুণ প্রতিভাদের উন্নয়নের জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা কলাধর্মী প্রতিষ্ঠা করেন[] এবং গজলের ঐতিহ্যকে[] লালন করার জন্য বেগম আখতার গজল একাডেমি[১০] নামে একটি একাডেমি স্থাপন করেন, যারা গজল সংগীতে দক্ষতা অর্জনের জন্য বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে থাকে।[১১] বেগম আখতারের উপর নির্মিত তাঁর নাটক জামাল-ই-বেগম আখতার[১২] অনেক অনুষ্ঠানে মঞ্চায়িত হয়েছে[] এবং তিনি পরিচালক কেতন মেহতা এবং সংগীত পরিচালক এ আর রহমান কে দিয়ে বিখ্যাত গজল সংগীতশিল্পী অনুপ জালোটার সহযোগিতায় বেগম আখতারের জীবন ভিত্তিক[] একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।[১১]

রীতা গঙ্গোপাধ্যায় ২০০০ সালে সংগীত নাটক একাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।[] ভারত সরকার ২০০৩ সালে তাঁকে বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। তিনি প্রিয়দর্শী পুরস্কার, রাজীব গান্ধী শিরোমণি পুরস্কার, সার্কেল অব ইন্ডিয়া সমালোচক পুরস্কার এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সম্মাননা পুরস্কারও লাভ করেন।[]

রীতা গাঙ্গুলি প্রতিপাদক শিল্পকলা উন্নয়নের জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা কলাধর্মী[] এবং বেগম আখতার গজল একাডেমী (বিএএজি)[১০] নামে একটি গজল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা।[]

রীতা গঙ্গোপাধ্যায় সংগীত নাটক একাদেমির প্রাক্তন সচিব কেশব কোঠারির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং এই দম্পতির দুটি সন্তান আছে, এক ছেলে অরিজিৎ এবং এক মেয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মেঘনা কোঠারি[]

তিনি পরিণীতা (২০০৫ সালের চলচ্চিত্র) এর মতো কয়েকটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "SNA Award"। Sangeet Natak Akademi। ২০১৫। ২৫ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  2. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Padma Awards। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  3. "ITC Sangeet Research Academy"। ITC Sangeet Research Academy। ২০১৫। ১৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  4. "Telegraph India"। Telegraph India। ৬ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  5. "Chandu Panikkar"The Hindu। ২৭ জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  6. "Portrait of the artist"The Hindu। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  7. Rita Ganguly (১৯৯৪)। Bismillah Khan and Benaras, the Seat of Shehnai। Cosmo Publications। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978-8170206798 
  8. Rita Ganguly (২০১৩)। AE MOHABBAT... Reminiscing Begum Akhtar। Stellar Publishers। এএসআইএন B00DHIZEXA 
  9. "Kaladharmi"। Kaladharmi। ২০১৫। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  10. "BAAG"। Kaladharmi। ২০১৫। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  11. "The Hindu"The Hindu। ৩ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  12. "NSD"। NSD। ২০১৫। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]