রুকইয়াহ শারইয়াহ

রুকইয়াহ অর্থ হলো ঝাড়ফুঁক করা, টোটকা, তাবিজে ফু দেয়া ইত্যাদি।

রুকইয়াহ শরয়ী হতে পারে গায়রে শারয়ীও হতে পারে৷ রুকইয়াহ শারইয়াহ মানে শরিয়াত সম্মত ঝাড়ফুঁক, তথা কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া, আল্লাহর নাম ও জায়েয দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। আর গায়রে শরয়ী রুকইয়াহ মানে শরীয়তে নিষিদ্ধ পন্থায় ঝাড়ফুক ইত্যাদি করা৷ তবে রুকইয়া শব্দটি সচরাচর শরয়ী রুকইয়াহ বোঝাতে ব্যবহার হয়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। এর দ্বারা জিন যাদু নজর ইত্যাদি প্যারানরমাল জনিত সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।[]

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা]

ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক।

  1. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
  2. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কিছু বিশ্বাস না করা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
  3. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
  4. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

ইসলামি পন্ডিতদের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নয়তো হবে না।’

রুকইয়ার পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

জ্বীনের এমন ভর করাকে দুর করতে, প্রায় সকল ঐতিহ্যবাহী ইসলামী পণ্ডিত ও আইনবিদ ইসলামী ঝাড়ফুঁক করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করা হয় আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারা, সূরা ফাতিহা, সূরা জিন এবং তিন ক্বুল (সূরা নাস, সূরা ফালাকসূরা ইখলাস) পড়ার মাধ্যমে।[][][]

রুকইয়ার আয়াত

[সম্পাদনা]

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে[]

  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫ আয়াত।
  3. সুরা বাকারাহ ১০২ আয়াত
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪ আয়াত।
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫ আয়াত
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬ আয়াত।
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯ আয়াত।
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬ আয়াত।
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ আয়াত।
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২ আয়াত।
  11. সুরা ত্বহা ৬৯ আয়াত।
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮ আয়াত।
  13. সুরা সফফাত ১-১০ আয়াত।
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২ আয়াত।
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬ আয়াত।
  16. সুরা হাশর ২১-২৪ আয়াত।
  17. সুরা জিন ১-৯ আয়াত
  18. সুরা ইখলাস।
  19. সুরা ফালাক।
  20. সুরা নাস।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. রুকইয়াহ। বাংলাবাজার,ঢাকা।: মাকতাবাতুল আসলাফ - আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। ২০১৮। পৃষ্ঠা ১৫। আইএসবিএন 978-984-94065-3-2 
  2. Rayan, Abu। Ruqyah - Islamic Exorcism (ইংরেজি ভাষায়)। Abu Rayan। পৃষ্ঠা 120। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  3. BALI, WAHID ABDULSALAM (২০১৪)। MAN'S PROTECTION AGAINST JINN AND SATAN: وقاية الإنسان من الجن والشيطان إنكليزي/عرب (ইংরেজি ভাষায়)। DMC। পৃষ্ঠা 132। 
  4. Bowen, John R. (২০২০)। Muslims through Discourse: Religion and Ritual in Gayo Society (ইংরেজি ভাষায়)। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 167। আইএসবিএন 978-0-691-22158-8। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  5. الصارم البتار في التصدي للسحرة الأشرار (২০তম সংস্করণ)। মিসর: শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম।