রে মিলান্ড | |
---|---|
Ray Milland | |
জন্ম | আলফ্রেড রেজিনাল্ড জোন্স ৩ জানুয়ারি ১৯০৭ নিথ, গ্লামরগান, ওয়েল্স |
মৃত্যু | ১০ মার্চ ১৯৮৬ টরেন্স, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৭৯)
জাতীয়তা | ওয়েলশ |
অন্যান্য নাম | রেমন্ড মিলান্ড, স্পাইক মিলান্ড |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ মার্কিন (naturalised 1940s) |
শিক্ষা | কিংস কলেজ স্কুল, কার্ডিফ |
পেশা | অভিনেতা, পরিচালক |
কর্মজীবন | ১৯২৯-১৯৮৫ |
দাম্পত্য সঙ্গী | মুরিয়েল ওয়েবার (বি. ১৯৩২; মৃ. ১৯৮৬) |
সন্তান | ২ |
রে মিলান্ড (ইংরেজি: Ray Milland, জন্ম: আলফ্রেড রেজিনাল্ড জোন্স; ৩ জানুয়ারি ১৯০৭ - ১০ মার্চ ১৯৮৬)[১][২] হলেন একজন ওয়েলসীয়-মার্কিন অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক।[৩][৪] তিনি পাঁচ দশকের অধিক সময় চলচ্চিত্রের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি একজন মদ্যপ লেখক চরিত্রে তার একাডেমি পুরস্কার জয়ী কাজ দ্য লস্ট উইকেন্ড (১৯৪৫), জন ওয়েনের সাথে আধুনিক মননসম্পন্ন ব্যক্তি চরিত্রে রিপ দ্য ওয়াইল্ড উইন্ড (১৯৪২), অ্যালফ্রেড হিচকক পরিচালিত ডায়াল এম ফর মার্ডার (১৯৫৪) এবং তৃতীয় অলিভার ব্যারেট চরিত্রে লাভ স্টোরি (১৯৭০) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রসিদ্ধ।[৫]
মিলান্ড ১৯০৭ সালের ৩রা জানুয়ারি ওয়েল্সের নিথ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অ্যালফ্রেড জোন্স একজন স্টিল মিলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন এবং তার মাতা এলিজাবেথ অ্যানি ট্রাসকট।[১] কিশোর বয়সে মিলান্ড নিজ বাড়িতেই শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে কার্ডিফের কিংস কলেজ স্কুলে পড়াশোনা করেন।[৫] ২১ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়ার পূর্বে তিনি তার চাচার ঘোড়ার প্রজনন খামারে কাজ করতেন।[৬]
মঞ্চে অভিনয়কালে দ্য ফ্লাইং স্কটসম্যান নাটক দেখার পর মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের সহ-সভাপতি রবার্ট রুবিন মিলান্ডের সাথে দেখা করেন।[৭] এমজিএম তার সাথে নয় মাসের চুক্তির প্রস্তাব করে। তিনি রাজী হন এবং ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্য ছেড়ে হলিউডে আগমন করেন।[৮] এমজিএম তাকে মজুদ রাখে এবং মূলধারার চলচ্চিত্রে ক্ষুদ্র চরিত্রে কাজ দেয়।[৯] হলিউডের চলচ্চিত্রে তার প্রথম কাজ ছিল সন অব ইন্ডিয়া (১৯৩১) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে, যার জন্য ছবির সেটে পরিচালক জ্যাক ফেডার সমগ্র কলাকুশলীদের সামনে মিলান্ডের অভিনয়ের তীব্র ভর্ৎসনা করে।[১০] এ স্বত্ত্বেও স্টুডিও নির্বাহীরা মিলান্ডকে হলিউডে থেকে যেতে বলেন এবং ১৯৩০ সালে তিনি তার প্রথম মার্কিন চলচ্চিত্র প্যাশন ফরেভার-এ অভিনয় করেন।[১১]
পরের দুই বছরে মিলান্ড এমজিএমের কয়েকটি ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং ধারে ওয়ার্নার ব্রস স্টুডিওর হয়েও কয়েকটি অনুল্লেখিত চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সময়ে তার সবচেয়ে বড় চরিত্র ভূমিকা ছিল পেমেন্ট ডিফারড (১৯৩২)-এ চার্লস লটনের ভাইপো চরিত্রে। এই সময়ে তিনি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুরিয়েল ফ্রান্সেস ওয়েবারের সাথে পরিচিত হন। মিলান্ড তাকে ম্যাল নামে ডাকতেন। তার সাথে পরিচিত হওয়ার ৮ মাসের মধ্যে ১৯৩২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর রিভারসাইড মিশন ইনে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১২] তাদের এক পুত্র ড্যানিয়েল এবং এক দত্তক নেওয়া কন্য ভিক্টোরিয়া। পেমেন্ট ডিফারেড-এর অল্প কিছুদিন পর, এমজিএম তার সাথে চুক্তি নবায়ন না করলে মিলান্ড কর্মহীন হয়ে পড়েন। তিনি নতুন কোন কাজ পাওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও পাঁচ মাস অপেক্ষা করেন। কিন্তু সফলতা অর্জন করতে না পারায় ও তার শ্বশুরের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় তিনি ব্রিটেন ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই ভেবে যে হলিউডে কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে হয়ত ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় কাজ করার সুযোগ পাবেন।[১৩] মিলান্ড ব্রিটেনে ফিরে যান এবং মুরিয়েল তার পড়াশোনা শেষ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। লন্ডনে মিলান্ড আর্লস কোর্টে সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন।
মিলান্ড দেখেন ব্রিটেনে তার জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠেছে, তিনি নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। অবশেষে তিনি ১৯৩৩ সালে দুটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে কাজ পান, চলচ্চিত্র দুটি হল দিস ইজ দ্য লাইফ এবং অর্ডারস ইজ অর্ডারস। দুটির কোনটি দিয়েই তিনি সফলতা পান নি। ১৯৩৩ সালে রুজভেল্টের মার্কিন ব্যাংকিং খাত সংস্কারের ফলে ডলারের মূল্য সাময়িকভাবে কমে গেলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন।[১৪] তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে আসেন এবং সানসেট বুলেভারে একটি ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া করেন। তিনি মুরিয়েলকে প্রতিজ্ঞা করেন তিনি আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হয়ে ওঠলে তিনি বড় বাড়ি কিনবেন। অভিনয় সম্পর্কিত কাজ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে মিলান্ড ভৃত্য ধরনের কাজ শুরু করেন। তিনি নিয়মিত কোন কাজ খুঁজার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে সময়ে যুক্তরাজ্যে তার পরিচিতির জের ধরে তিনি শেল গ্যাস স্টেশন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কাজ পান।[১৫] শেলের দপ্তর থেকে চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর তিনি প্যারামাউন্ট পিকচার্সের স্টুডিওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। প্যারামাউন্টের কাস্টিং পরিচালক জো এগলি তাকে তাদের স্টুডিওতে কাজের প্রস্তাব দেন। সে সময়ে জর্জ র্যাফ্ট প্যারামাউন্ট স্টুডিও থেকে বোলেরো ছবির নির্মাণ করছিলেন, কিন্তু একজন ব্রিটিশ অভিনেতা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তার স্থলাভিষিক্তের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একজন অভিনেতা প্রয়োজন ছিল। এগলি মিলান্ডকে দুই সপ্তাহের একটি চুক্তির প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি সহকারী ব্যবস্থাপকের চাকরির বেতন থেকে দশগুণ বেশি পারিশ্রমিক পাবেন। মিলান্ড এই চরিত্রে কাজ করতে সম্মত হন।
প্যারামাউন্টের সাথে তার প্রথম চুক্তির সময় তিনি কথোপকথনমূলক কিছু ছোট চরিত্রে কাজ করেছেন এবং তখনো শীর্ষ পারিশ্রমিক গ্রহীতা হিসেবে কাজ করেন নি। এই সময়ে জো প্যাস্টারনাক তার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি তার নতুন চলচ্চিত্র থ্রি স্মার্ট গার্লস (১৯৩৬)-এর জন্য একজন ইংরেজ অভিনেতা খুঁজছিলেন। প্যাস্টারনাক ইউনিভার্সাল স্টুডিওজের হয়ে কাজ করতেন, তা স্বত্ত্বেও প্যারামাউন্ট মিলান্ডকে ধারে এই চলচ্চিত্রে কাজ করার অনুমতি দেয়।[১৬] একই সময়ে নেক্সট টাইম উই লাভ চলচ্চিত্রের জন্য তাকে ইউনিভার্সালের সাথে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। থ্রি স্মার্ট গার্লস চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর প্যারামাউন্টে ফিরে আসলে তিনি পুনরায় ছোট ভূমিকায় কাজে অংশ নেন। তাকে দ্য জাঙ্গল প্রিন্সেস (১৯৩৬) ছবিতে তাকে নতুন তারকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য পর্যবেক্ষণমূলক অভিনেতা হিসেবে সুযোগ দেওয়া হয়। মিলান্ড তার আত্মজীবনীতে লিখেন স্টুডিও ডরোথি লামুরকে প্রধান নারী চরিত্রে নির্বাচন করে এবং লামুর তার বিপরীতে প্রধান অভিনেতার বিষয়ে সংশয়ে ছিলেন, তখন তিনি মিলান্ডকে তার সহশিল্পী হিসেবে নেওয়ার অনুরোধ করেন। প্যারামাউন্ট এই ব্যাপারে উৎসুক ছিল না, তবে থ্রি স্মার্ট গার্লস মুক্তির পর বিপুল প্রশংসিত হলে তারা মিলান্ডকে এই চরিত্রের জন্য সুযোগ দেয়।[১৭] ১৯৩৬ সালের শেষদিকে মিলান্ডকে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিবেচনা করা হয়। প্যারামাউন্ট তার সাথে চুক্তি নবায়ন করে এবং তার বেতন তিনগুণ করে দেয়।[১৮]
বিরতি নিয়ে ইউরোপ থেকে ঘুরে আসার পর মিলান্ডকে বুলডগ ড্রামন্ড এসকেপস (১৯৩৭) ছবিতে ক্যাপ্টেন হিউ বুলডগ ড্রামন্ড চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়। এরপর তাকে ওয়েসলি রাগলসের দ্য গিল্ডেড লিলি ছবিতে আরেকটি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। এই সময়ে তার কাজের চাপ বেড়ে যায়। তিনি প্যারামাউন্টের এব টাইড (১৯৩৭) এবং ধারে ইউনিভার্সাল ও কলাম্বিয়া পিকচার্সের কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩৯ সালে হোটেল ইম্পেরিয়াল ছবির সেটে তিনি মারাত্মক দুর্ঘটনার আহত হন। ঘোড়া চালনার একটি দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে তার বাম হাতে ব্যাথা পান এবং মাথায় তিন ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষত হয় এবং মস্তিষ্কে আঘাত পান।[১৯] একই সময়ে তিনি বো গেস্তে ছবিতে গ্যারি কুপার ও রবার্ট প্রেস্টনের সাথে এবং টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের এভরিথিং হ্যাপেনস অ্যাট নাইট ছবিতে সঞ্জা হেনির সাথে অভিনয় করেন।
মিলান্ড তার কর্মজীবনের শিখরে পৌঁছান দ্য লস্ট উইকেন্ড (১৯৪৫) ছবি দিয়ে এবং নাট্যধর্মী কাজে তার একাগ্র অভিনয়ের প্রকাশ ঘটে। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নাট্য চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন। মিলান্ড এই ছবিটি প্রসঙ্গে বলেন যে পেরু থেকে ফিরে এসে তিনি তার বাড়িতে প্যারামাউন্টের প্রযোজনা প্রধান বাডি ডিসিলিভার চিরকুটসহ একটি বই পান, চিরকুটে লেখা ছিল "পড়েন, অধ্যয়ন করেন। আপনি এই চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন।"[২০] ছবিটি প্রযোজনা করেন চার্লস ব্র্যাকেট এবং পরিচালনা করেন বিলি ওয়াইল্ডার, তারা দুজন এর চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন। মিলান্ড পূর্বে তাদের সাথে হাস্যরসাত্মক দ্য মেজর অ্যান্ড দ্য মাইনর (১৯৪২) ছবিতে কাজ করেছিলেন, ফলে তিনি পুনরায় তাদের সাথে কাজ করার জন্য আগ্রহী ছিলেন।