মালিকা-ই-মৌশিকি রোশন আরা বেগম | |
---|---|
জন্ম | ওয়াহিদ-উন-নিসা ১৯১৭ |
মৃত্যু | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২ |
পেশা | ধ্রুপদী গায়িকা, কণ্ঠশিল্পী |
কর্মজীবন | ১৯৩৮-১৯৮২ |
শৈলী | ঠুমরি, খয়াল, গজল |
টেলিভিশন | পিটিভি (পাকিস্তানি টেলিভিশন) |
উপাধি | মালিকা-ই-মৌশিকি (সঙ্গীতের রাণী) |
দাম্পত্য সঙ্গী | চৌধুরী আহমেদ খান |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | আব্দুল করিম খান |
সম্মাননা | প্রাইড অফ পারফরম্যান্স সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (স্টার অফ এক্সিলেন্স) |
রোশন আরা বেগম (উর্দু: رَوشن آرا بی) (১৯১৭ - ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮২) ছিলেন একজন পাকিস্তানি শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী। আবদুল হক হক খানের কন্যা রোশন আরা, তাঁর চাচাত ভাই আবদুল করিম খানের মাধ্যমে, শাস্ত্রীয় সংগীতের কিরানা ঘরানার (গানের শৈলী) সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। [১][২][১]
১৯১৭ সালে বা তার কাছাকাছি সময়ে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা রোশন আরা বেগম তাঁর কিশোরী বয়সে ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) অন্তর্গত লাহোরের চুন পীরে কয়েকজন ধনাঢ্য লোকের আয়োজন করা সঙ্গীত সন্ধ্যাতে অংশগ্রহণ করতে লাহোর গিয়েছিলেন।
শহরে সফরকালে মাঝে মাঝে তিনি তৎকালীন লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিও স্টেশন থেকে গান সম্প্রচার করেছিলেন। তাঁর পেশাদার নাম বোম্বেওয়ালি রোশন আরা বেগম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি এই জনপ্রিয় নামটি অর্জন করেছিলেন কারণ তিনি ১৯৩০ এর দশকের শেষদিকে মুম্বাইতে (তৎকালীন বোম্বে) আবদুল করিম খানের নিকটে বসবাস করতে চলে এসেছিলেন, যার কাছ থেকে তিনি পনেরো বছর ধরে হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীতের পাঠ গ্রহণ করেছিলেন।[৩][১]
বোম্বের একজন প্রবীণ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সংগীত প্রেমী চৌধুরী আহমেদ খান ১৯৪৪ সালে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিলেন। রোশন আরা বেগম এ সম্পর্কে নিজের শিক্ষক ওস্তাদ আবদুল করিম খানের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। অবশেষে তিনি এই শর্তে বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন যে বিয়ের পরে তাঁকে সঙ্গীত ছেড়ে দিতে হবে না। তাঁর স্বামী তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেছিলেন এবং তিনি সারা জীবন গান চালিয়ে যান।[৩]
মুম্বইয়ে তিনি তাঁর স্বামী চৌধুরী চৌধুরী আহমেদ খানের সাথে একটি বিশাল বাংলোয় থাকতেন।[৩]
ভারত বিভাজনের পরে ১৯৪৮ সালে রোশন আরা বেগম তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে গিয়ে সেখানকার একটি ছোট্ট শহর লালামুসাতে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই শহরটি পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী লাহোর থেকে বেশ দূরে, তারপরেও তিনি সঙ্গীতের কার্যসূচী, রেডিও ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রিত হতেন।[৩]
বহুল সন্মানিত পাকিস্তানের একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পৃষ্ঠপোষক হায়াত আহমেদ খান ১৯৫৯ সালে তাঁকে ‘অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স’-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে আহ্বান জানিয়েছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রসারের জন্য এই সংগঠনটি পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বার্ষিক সঙ্গীত সন্মিলনের আয়োজন করেছিল, যা এখনো চালু রয়েছে।[১][৪]
তাঁকে পাকিস্তানে ‘মালিকা-ই-মৌশিকি’ অর্থাৎ সঙ্গীতের রাণী বলে সম্বোধন করা হয়েছিল। তারপরেও ব্যক্তিজীবনে তিনি নম্র, সৎ ও লক্ষণীয় ভাবে সরল ব্যক্তি ছিলেন।[৩] তিনি একদম ভোরে উঠতেন ও ফজরের প্রার্থনার পরে রেওয়াজ আরম্ভ করতেন। তাঁর কোনো সন্তান না থাকায় তিনি একটি বালক ও একটি বালিকাকে দত্তক নেওয়ার মনস্থ করছিলেন।[৩][১]
তিনি বেশকয়েকটি চলচ্চিত্রে বিশেষকরে সঙ্গীত পরিচালক অনিল বিশ্বাস, ফিরোজ নিজামী, তসদ্দুক হুসেইনের তত্ত্বাবধানে পেহলি নজর (১৯৪৫), জুগনু (১৯৪৭), কিসমত (১৯৫৬), রূপমতী বাজবাহাদুর (১৯৬০), নীলা পর্বত (১৯৬৯) ইত্যাদি ছবিতে গান গেয়েছিলেন।[২]
পাকিস্তানে শীর্ষস্থানীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীরা, যেমন পাতিয়ালা ঘরানার বড়ে ফতেহ আলী খান, আমানত আলী খান ও শাম চৌরাসিয়া ঘরানার ওস্তাদ সালামত আলী খান, রোশন আরা বেগমের গান শুনে আনন্দ উপভোগ করতেন।[৩]
তিনি ১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানে আনুমানিক পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মারা যান। রোশন আরা বেগম ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার বা স্টার অফ এক্সিলেন্স পুরস্কার এবং প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা কণ্ঠশিল্পী।[৩]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "DailyTimes" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে