রৎলাম রাজ্য रतलाम | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য | |||||||
১৬৫২–১৯৪৮ | |||||||
রৎলাম ও সৈলানা রাজ্যের মানচিত্র | |||||||
রাজধানী | রৎলাম | ||||||
আয়তন | |||||||
• ১৯০১ | ২,৩৩৬ বর্গকিলোমিটার (৯০২ বর্গমাইল) | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৯০১ | ৮৩,৭৭৩ | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৬৫২ | ||||||
১৯৪৮ | |||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | মধ্যপ্রদেশ, ভারত |
রৎলাম রাজ্য[১] ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি ২১ তোপ সেলামী সম্মানপ্রাপ্ত দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ভারতে এটি মধ্য ভারত এজেন্সির মালব এজেন্সিতে অবস্থিত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিলো।
রাজ্যটির সদর ও প্রশাসনিক দপ্তর ছিল রৎলাম শহরে, যা বর্তমান মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের রৎলাম জেলায় অবস্থিত। রৎলাম শুরু থেকেই একটি সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল, এটির পরগনাগুলি হল যথাক্রমে ধারাদ (রৎলাম), রাউতি, ধামনোড়, বাদনাবাড়, দগপরবা, আলোট, তাতরোড়, কোটরি, গড়গুচা, আগর, নাহরগড়, কানার, ভিলাড়া এবং রামঘরিয়া। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে এই রাজ্যটির মোট রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৫৩,০০,০০০ ভারতীয় মুদ্রা। মহারাজার রতন সিং রাঠোর মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের সময়কালে সম্রাট দারা শিকোহকে সমর্থন করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে দারা শিকোহ যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং রতন সিং রাঠোর নিহত হন। নতুন সম্রাট ঔরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহণের পর এই রাজ্যটিকে আত্মসাৎ করেন এবং যতদূর সম্ভব রাজ্যটির আয়তন হ্রাস করেন। রাজ্যটি গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়াদের কাছেও যথেষ্ট পরিমাণ জমি হারায়। ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এই রাজ্যটি আয়তন ছিল ১,৭৯৫ বর্গ কিলোমিটার এবং বার্ষিক রাজস্বের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫,০০,০০০ ভারতীয় মুদ্রা।[১][২]
রৎলাম রাজু শাসকরা মূলত ছিলেন মারোয়ার রাজবংশ এবং জায়গীরদার। মারওয়ার এর রাজা উদয় সিংয়ের পুত্র দলপত সিং বলহেড়া, পিসাঙ্গন এবং খেরোয়া জায়গীরগুলি পান। দলপত সিংয়ের পুত্র মহেশদাস রাঠোর মুঘল সম্রাট শাহজাহানের নিকট থেকে আফগানিস্তানের পাঠান জাতি বিরুদ্ধে সফল অভিযানের জন্য জালোরের জায়গীর উপহার হিসেবে পান। মহেশদাস রাঠোর এর পুত্র রতন সিং তার পিতার মত মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আফগানিস্তানে মুঘল সেনাধ্যক্ষের কাজে নিযুক্ত হন। মুঘল সম্রাট দারা শিকোহের সময় তিনি কেন্দ্রীয় এশিয়া থেকে পারস্য সফবিদদের আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হন।[৩]
শাহজাহান রতন সিংকে তার সাহসিকতা ও পরাক্রমশীতার মাধ্যমে খোরাসরছর নিকট পারসিকদের এবং কান্দাহারের নিকট উজবেকদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ধারাদের মহারাজা ঘোষণা করেন। দ্বীনি সম্রাটের প্রিয় হাতিকে হত্যা করেও নিজের সাহসিকতার উদাহরণ রাখেন। জনশ্রুতি অনুসারে তার এই হাতিটি আগ্রা অঞ্চলে বহু ক্ষতি করলেও কারোর পক্ষে সেটিকে দমন করা সম্ভব হচ্ছিল না। রাজা রতন সিং দ্রুতগতিতে তার পিঠে চড়ে ঘাড়ের কাছে কাটারি দিয়ে আঘাত করে হাতিটিকে হত্যা করে রাজ্যবাসীকে স্বস্তি দেন। এই ঘটনার পর শাহজাহান তাকে আরো কিছু পরগনা তথা রাউতি, ধামনোড়, বাদনাবাড়, দগপরবা, আলোট, তাতরোড়, কোটরি, গড়গুচা, আগর, নাহরগড়, কানার, ভিলাড়া এবং রামঘরিয়া প্রদান করেন। ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে এইভাবে মহারাজার রতন সিংহ ধারাদ রাজ্যের পত্তন ঘটান, যা পরবর্তীকালে রৎলাম নামে স্বীকৃতি পায়। রতন সিং মহারাজাধিরাজ, শ্রী হুজুর, এবং মহারাজা বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি উপহার স্বরূপ "চৌর", "মোরছাল", "সুরজমুখী" এবং মাহি-মারাতিব পান।[৪] ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানের ধুরন্ধর ও বিশ্বাসঘাতক পুত্র ওরঙ্গজেব ধর্মতপুরের যুদ্ধে রতন সিং কে হত্যা করেন, তার স্ত্রী মহারানী সুখরূপড়ে কানবার শেখাওয়াত জি সাহেবা ওই বছরই সহমরণে যান। রতন সিংয়ের পুত্ররা মালব অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল শাসন করতেন। রৎলাম, সৈলানা এবং সীতামউ রাজ্যের শাসকরা ছিলেন রাজা রতন সিংয়ের উত্তরসূরী।
প্রাথমিকভাবে গোয়ালিয়রের রাজারা রৎলামে বহুবার অভিযান চালান। তবে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি তারিখে এটি একটি ব্রিটিশ করদ রাজ্যে পরিণত হয়। এর ফলে গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়াদের থেকে রাজ্যবাসী মুক্তি পায় এবং বার্ষিক বিপুল রাজস্ব দানের প্রভাবে রাজ্যটির হাল ফিরতে থাকে। ব্রিটিশ ভারতে গোয়ালিয়রকে এই রাজ্যটি সামন্ত হিসেবে রাখার জন্য অতিরিক্ত ৪২,৭০০ ভারতীয় মুদ্রা রাজস্ব হিসেবে দিতে হত।[৫] ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এটি পুরোপুরি ভাবে গোয়ালিয়র থেকে ব্রিটিশদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। [৫]
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ১,১৯৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই রাজ্যটির মোট জনসংখ্যা ছিল ৮৩,৭৭৩ জন; এবং রৎলাম শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩৬,৩২১ জন। শহরটি ছিল রাজপুতানা-মালব রেলওয়ে জংশন এবং গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন। মূলত পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্র হিসেবে এই শহরটির গুরুত্ব ছিল।[৫]
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর এই রৎলাম রাজ্য ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বাধীন ভারতে প্রাথমিকভাবে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জুন এটিকে মধ্যভারত ও পরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের পয়লা নভেম্বর তারিখে নবগঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অংশীভূত করা হয়।
রৎলাম দেশীয় রাজ্যের শাসকগণ ছিলেন রতনওয়াত রাঠোর রাজপুত।[১][৬]