ললিকন বা লোলিকন (জাপানি: ロリコン, ইংরেজি: lolicon অথবা ইংরেজি: lolikon), মাঝেমাঝে রোমানীকৃত ররিকন বা রোরিকন (ইংরেজি: roricon বা rorikon), জাপানের এক প্রকার সাহিত্য বা মাধ্যম যার মূলে রয়েছে অল্পবয়স্ক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের প্রতি আকর্ষণ। ললিকন শব্দটি একটি পিন্ডারিশব্দ যা "ললিতাকমপ্লেক্স" শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত।[১] এর দ্বারা অল্পবয়স্ক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের প্রতি আকর্ষণ, তদ্রূপ আকর্ষণ অনুভবকারী ব্যক্তি, অথবা ললিকন মাঙ্গা বা ললিকন আনিমে - এক ধারার মাঙ্গা ও আনিমে যেখানে শিশুসুলভ নারী চরিত্রকে প্রায়ই শৌজো মাঙ্গার (মেয়েদের কমিকস) স্মৃতিবহ শিল্প শৈলী অনুসারে "কামময়-মধুর" ভাবে চিত্রিত করা হয় (এরো কাওয়াঈ নামেও পরিচিত)।[২][৩][৪][৫]
জাপানের বাইরে ললিকন শব্দটির প্রয়োগ কম এবং সচরাচর মাঙ্গা ও আনিমের ধারাটিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। শব্দটির সূত্র ভ্লাদিমির নাবোকভের গ্রন্থ লোলিটা হতে, যেখানে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ এক বারো বছর বয়সী কিশোরীর প্রতি যৌন মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শব্দটি জাপানে প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৭০ এর দশকে এবং দ্রুতই কামভাবমূলক দৌজিনশি মাঙ্গায় (অপেশাদার কমিকস) অল্পবয়স্ক মেয়ের চিত্রাঙ্কন বোঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে।
শিশু বা শিশুসুলভ চরিত্র বিশিষ্ট উত্তেজক বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য জাপানসহ বিভিন্ন দেশে আইন পাস করা হয়েছে। ললিকন মাঙ্গা ও অনুরূপ মাধ্যমকে আরও শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর আইন প্রয়োগের জন্য জাপানের অভিভাবক ও নাগরিকগন সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। ললিকন ভক্তদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে তারা চরিত্রের বয়সের চেয়ে নান্দনিক মাধুর্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট,[৬] এবং ললিকন সংগ্রহ করা সমাজ থেকে বিযুক্তি ইঙ্গিত করে।[৭][৮][৯]
সাধারণত ললিকন বিশিষ্ট মাঙ্গা বা আনিমেতে অল্পবয়স্ক মেয়ে বা কৈশোরের বৈশিষ্ট্যধারী মেয়েদের প্রতি যৌন আকর্ষণ প্রদর্শিত হয়। এর প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি শ্রেণীর মাঝে সুনির্দিষ্ট বয়সের সীমার মধ্যের শিশু ও অল্পবয়স্কদের চিত্রের প্রতি যৌন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যনীয়।[১০] ললিকন বিশিষ্ট মাঙ্গা বা আনিমেতে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও তার আকাঙ্ক্ষিত বয়সের নারীর মাঝে প্রেমমূলক ও কামমূলক পারস্পরিক ক্রিয়ার চিত্র বা বর্ণনা থাকে।[৩]
সুনির্দিষ্টভাবে, জাপানি ভাষায়ললিতা কমপ্লেক্স বলতে সংশ্লিষ্ট যৌনবিকৃতিকেই বোঝান হয়, কিন্তু সংক্ষেপিত ললিকন শব্দটি দ্বারা উক্ত যৌনবিকৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও বোঝান হয়।[৪] জাপানে ললিকন বহুবিস্তৃত, যেখানে এটি প্রায়ই পাণ্ডিত্যপূর্ণ নিবন্ধ ও সমালোচনার বিষয়ভুক্ত।[১১] অনেক সাধারণ বই ও পত্রিকার দোকানে প্রকাশ্যেই সচিত্র ললিকন প্রকাশনা বিক্রি হয়, কিন্তু আবার ললিকন মাঙ্গার বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।[১১]
কাওয়াঈ (মিষ্ট) ও এরো কাওয়াঈ (কামময়-মধুর) রীতি জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয়, যেখানে এটি অনেক মাঙ্গা/আনিমে রীতিতে সহজলভ্য।[১২] স্কুলের পোশাকে স্কুলে যাবার বয়সী মেয়েও জাপানে যৌনাবেদনময়তার প্রতীক বলে গণ্য।[১৩] ললিতা কমপ্লেক্স বিশিষ্ট পুরুষদের জন্য বুরুসেরা দোকানে মেয়েদের আধোয়া ইজের বিক্রি হয়, তেরেকুরার (টেলিফোন ক্লাব) সাহায্যে পুরুষেরা কিশোরীদের সাথে ডেটিং এর আয়োজন করতে পারে,[১৪] এবং কিছু স্কুলছাত্রী পতিতাবৃত্তিকে খন্ডকালীন কাজ হিসেবেও গ্রহণ করে।[১৫] শ্যারন কিনসেলা পর্যবেক্ষণ করেন ১৯৯০ এর দশকে জাপানি প্রচার মাধ্যমে স্কুলছাত্রী পতিতাবৃত্তির (এনজো কৌসাই) অপ্রমাণসিদ্ধ বিবরণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এবং অনুমান করেন যে এই অপ্রমাণিত প্রতিবেদনগুলো, প্রমোদ বালাদের (ইয়ানফু) উপর তৎকালীন প্রতিবেদন বৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বিকশিত হয়। তিনি জল্পনা করেন যে, (বঙ্গানুবাদ) "হতে পারে যে মেয়েরা খুশীমনে নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিকিয়ে দেয়ার চিত্র এর অন্য দোষী ভাবমূর্তিকে নাকচ করে দেয়"।[১৬]
ললিকন মাঙ্গাগুলো সচরাচর ছোটগল্প আকারে দৌজিনশি (ভক্ত দ্বারা রচিত) হিসেবে অথবা ললিকন রীতির সাথে সম্পৃক্ত পত্রিকায়, যেমন লেমন পীপল্,[১৭]মাঙ্গা বুরিক্কো[১৮][১৯] এবং কমিক এলও (যেখানে "এল ও" হচ্ছে "ললিতা ওনলি" এর সংক্ষিপ্ত রূপ)[২০] ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়। এসব গল্পে সাধারণত নিষিদ্ধ সম্পর্ক, যেমন একজন শিক্ষক ও ছাত্রীর মাঝে অথবা ভাই ও বোনের মাঝে সম্পর্ক দেখান হয়, আবার কোন কোনটিতে শিশুদের মাঝে যৌনতা বিষয়ক পরীক্ষণ-নিরীক্ষণ দেখান হয়। কিছু ললিকন মাঙ্গায় অন্যান্য কামাত্মক রীতির, যেমন ক্রসড্রেসিং (বিপরীত লিঙ্গের বস্ত্র পরিধান) ও ফুতানারির (পুরুষাঙ্গ বিশিষ্ট নারী) সমন্বয় ঘটানো হয়।[১১] এসব গল্পের কাহিনীতে প্রায়ই চরিত্রগুলোর শিশুসুলভ বাহ্যিক রূপের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়।[২১]পানচিরা (অসাবধানতাবশত অন্তর্বাস প্রদর্শন) কারী স্কুলছাত্রির চরিত্র ললিকন রীতিতে সুপ্রচলিত।[২]
আকিরা আকাগির মতে ১৯৮০ এর দশকে ললিকন রীতি, অল্পবয়সী মেয়ের সাথে বয়স্ক পুরুষের যৌন সম্পর্কের কাহিনী হতে পরিবর্তিত হয়ে "মেয়েলীপনা" ও "মিষ্টতা" প্রকাশক কাহিনীতে পরিনত হয়।[১৭] আকাগি ললিকনের মাঝে ধর্ষমর্ষকাম, "কামক্রীড়ার বস্তু" (পুরুষাঙ্গ হিসেবে শুঁড় বা রোবটের ব্যবহার), "যন্ত্রভক্তি" ("মেকা ফেটিশ"; একটি যন্ত্র, যা সচরাচর কোন অস্ত্র - এর সাথে একটি মেয়ের সমন্বয়), মূলধারার আনিমে ও মাঙ্গার ব্যঙ্গ, এবং "শুধু অশ্লীল ও বিকৃত জিনিস" - এসব উপরীতিগুলো চিহ্নিত করেন। এছাড়াও ললিকনে স্বকামী ও হস্তমৈথুন সংশ্লিষ্ট বিষয়ও থাকতে পারে।[৬]
১৯৭০ এর দশকে জাপানের পুরুষেরা শৌজো মাঙ্গা পড়া আরম্ভ করে, যার মাঝে ছিল ২৪ বছর গোষ্ঠীর রচনা এবং মুৎসু এ-কোর "মেয়েলি" রচনাসমূহ।[১৭] দিনাহ্ জ়্যাঙ্কের মতে, "জাপানি সংস্কৃতিতে শিশু মেয়েদের গুণকীর্তন করার প্রথার মাঝেই" ললিকনের মূল উৎস নিহিত, এবং তাই এতে শৌজো মাঙ্গার শব্দভাণ্ডার ব্যবহৃত হয়।[২২] ললিকন শিল্পরীতি শৌজো মাঙ্গার শিল্পশৈলী হতে অনুপ্রাণিত এবং পুরুষদের জন্য যৌনতা বিষয়ক চিত্র রচনাকারী নারী শিল্পীদের দ্বারাও প্রভাবিত।[২৩]
পশ্চিমা বিশ্বে আনিমে, ওতাকু ও হেনতাই - এই শব্দগুলির মত ললিকনের অর্থও ক্রমশ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে।[২৭] "ললিকন" শব্দটি দ্বারা সরাসরি যেসব পণ্য, আনিমে বা মাঙ্গায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনাচার বা কামভাব স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয় তা বোঝান হয়। তবে, যেসব শিশুর ন্যায় চরিত্র অপ্রাপ্তবয়স্ক কিনা তা স্পষ্ট নয়, এবং যৌনোত্তেজক বিষয়বস্তু বিহীন কোন কিছুর ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞাটি প্রযোজ্য কি না, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।[১৬][২৭][২৮]
↑"ロリコン" (জাপানী ভাষায়)। SPACE ALC। জানুয়ারি ১২, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৭, ২০০৮।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
↑ কখMcCarthy, Helen and Jonathan Clements (1999). The Erotic Anime Movie Guide. Woodstock, NY: Overlook Press. See pp. 43, on lolikon anime.
↑ কখFeitelberg, Rosemary (জুন ২২, ২০০৭)। "On the drawing board. (Lehmann Maupin gallery)"। Women's Wear Daily। পৃষ্ঠা 13। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩০, ২০১২। His paintings include a garter-wearing prepubescent maid and a knock-kneed girl in a panty-exposing pose—apparent references to his Lolita complex, or what manga and anime followers refer to as being a 'lolicon.'
↑ কখShigematsu, Setsu (১৯৯৯)। "Dimensions of Desire: Sex, Fantasy and Fetish in Japanese Comics"। Lent, J.A.। Themes and Issues in Asian Cartooning: Cute, Cheap, Mad and Sexy। Bowling Green, OH: Bowling Green State University Popular Press। পৃষ্ঠা 129–130। আইএসবিএন978-0-87972-779-6।
↑Ito, K. (১৯৯২)। "Cultural Change and Gender Identity Trends in the 1970s and 1980s"। International Journal of Japanese Sociology। 1: 79–98। ডিওআই:10.1111/j.1475-6781.1992.tb00008.x।
↑Shigematsu, Setsu (১৯৯৯)। "Dimensions of Desire: Sex, Fantasy and Fetish in Japanese Comics"। Lent, J.A.। Themes and Issues in Asian Cartooning: Cute, Cheap, Mad and Sexy। Bowling Green, OH: Bowling Green State University Popular Press। পৃষ্ঠা 138। আইএসবিএন978-0-87972-779-6।
↑Shinpo, Nobunaga, সম্পাদক (ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০০০)। "すべてはエロから始まった"। 消えたマンガ雑誌 [Vanished Manga Magazines] (Japanese ভাষায়)। Tokyo, Japan: Media Factory। পৃষ্ঠা 30–37। আইএসবিএন4-8401-0006-3।অজানা প্যারামিটার |trans_chapter= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
↑Bouissou, Jean-Marie. (2010). Manga: Historire et Univers de la Bande Dessinée Japonaise. Arles, France: Editions Philippe Picquier. p. 289. The term "burikko" derives from buri = "style, manner" and ko, from kodomo = "child;" Bouissou, p. 289.
↑"COMIC LO エルオー最新刊"। Akane Shinsha। মার্চ ১২, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১০।
↑Zank, Dinah (2010). Kawaii vs. rorikon: The reinvention of the term Lolita in modern Japanese manga. In Comics as a Nexus of Cultures (Jefferson, NC: McFarland). pp.215-216
↑Shigematsu, Setsu (১৯৯৯)। "Dimensions of Desire: Sex, Fantasy and Fetish in Japanese Comics"। Lent, J.A.। Themes and Issues in Asian Cartooning: Cute, Cheap, Mad and Sexy। Bowling Green, OH: Bowling Green State University Popular Press। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন978-0-87972-779-6।
↑Jason DeAngelis (মে ২৯, ২০০৭)। "Seven Seas Entertainment Talks about Nymphet"। Anime News Network। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৮, ২০০৮। ...those who are speaking out against Nymphet seem to be disturbed by the relationship between two characters in the story, namely an elementary school student and her adult teacher.
Darling, Michael (Autumn ২০০১)। "Plumbing the Depths of Superflatness"। Art Journal। Art Journal, Vol. 60, No. 3। 60 (3): 76–89। আইএসএসএন0004-3249। জেস্টোর778139। ডিওআই:10.2307/778139। Lolicon imagery is well-documented in Superflat, and relies on the angelic stare of the young girl for its erotic charge. [...] Kinsella writes, "The little girl heroines of Lolicon manga simultaneously reflect an awareness of the increasing power and centrality of young women...
Kinsella, Sharon (Summer ১৯৯৮)। "Japanese Subculture in the 1990s: Otaku and the Amateur Manga Movement"। Journal of Japanese Studies। The Society for Japanese Studies। 24 (2): 289–316। জেস্টোর133236। ডিওআই:10.2307/133236। Titled "Amateur Manga Subculture and the Otaku Panic" by Kinsella on her website. Retrieved on January 14, 2008.
Shigematsu, Setsu (১৯৯৯)। "Dimensions of Desire: Sex, Fantasy and Fetish in Japanese Comics"। Lent, J.A.। Themes and Issues in Asian Cartooning: Cute, Cheap, Mad and Sexy। Bowling Green, OH: Bowling Green State University Popular Press। পৃষ্ঠা 127–163। আইএসবিএন978-0-87972-779-6।