লানা টার্নার | |
---|---|
Lana Turner | |
জন্ম | জুলিয়া জিন টার্নার ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ ওয়ালেস, আইডাহো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ২৯ জুন ১৯৯৫ লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৭৪)
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৩৭-১৯৮৫ |
দাম্পত্য সঙ্গী | আর্টি শ (বি. ১৯৪০; বিচ্ছেদ. ১৯৪০) স্টিভ ক্রেন (বি. ১৯৪২; নিষ্পত্তি ১৯৪৩) ১৯৪৩ (বি. ১৯৪৪) বব টপিং (বি. ১৯৪৮; বিচ্ছেদ. ১৯৫২) লেক্স বার্কার (বি. ১৯৫৩; বিচ্ছেদ. ১৯৫৭) ফ্রেড মে (বি. ১৯৬০; বিচ্ছেদ. ১৯৬২) রবার্ট ইটন (বি. ১৯৬৫; বিচ্ছেদ. ১৯৬৯) রোনাল্ড পেলার (বি. ১৯৬৯; বিচ্ছেদ. ১৯৭২) |
সন্তান | শেরিল ক্রেন |
স্বাক্ষর | |
লানা টার্নার[ক] (ইংরেজি: Lana Turner; জন্ম: জুলিয়া জিন টার্নার, ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ – ২৯ জুন ১৯৯৫) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেত্রী। পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের কর্মজীবনে তিনি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, মঞ্চ ও বেতারে কাজ করেছেন এবং পিন-আপ মডেল ও নাট্যধর্মী অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহীতা নারী ছিলেন এবং মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের সবচেয়ে বড় তারকা ছিলেন। এমজিএমের সাথে তার ১৮ বছরের চুক্তিতে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো স্টুডিওটিকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ এনে দেয়। তাকে প্রায়ই হলিউড গ্ল্যামারের প্রতীক হিসেবে উদ্ধৃত করা হত।
১৯৪০-এর দশকে টার্নার নিজেকে শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী এবং এমজিএমের শীর্ষ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং নোয়া চলচ্চিত্র জনি ইগার (১৯৪১), সঙ্গীতধর্মী জিগফেল্ড গার্ল (১৯৪১), মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড (১৯৪১), এবং প্রণয়মূলক যুদ্ধভিত্তিক নাটধর্মী সামহোয়ার আই উইল ফাইন্ড ইউ (১৯৪২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নোয়াধর্মী দ্য পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংস টুয়াইস (১৯৪৬) চলচ্চিত্রে তার অভিনয় সমাদৃত হয় এবং তাকে জাঁকজমকপূর্ণ নারী ও গম্ভীর নাট্যধর্মী অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৫০-এর দশকেও তার জনপ্রিয়তার ধারা চলতে থাকে এবং তিনি দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল (১৯৫২) ও পেটন প্লেস (১৯৫৭) ছবিতে অভিনয় করেন। দ্বিতীয় ছবিটিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৪০ সালে টার্নার তার প্রথম সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র টু গার্লস অন ব্রডওয়ে-তে অভিনয় করেন। এতে তিনি পোস্টারে ও পর্দায় নাম প্রদর্শনে প্রতিষ্ঠিত দুই অভিনয়শিল্পী জোন ব্লন্ডেল ও জর্জ মার্ফির উপরে স্থান পান।[৪] এটি দ্য ব্রডওয়ে মেলডি ছবির পুনর্নিমাণ, যা টার্নারের "যৌন উত্তেজক ও সবচেয়ে সাহসী" চরিত্র বলে প্রচার করা হয়েছিল।[৪] এই কাজের পর তিনি তার দ্বিতীয় সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র জিগফেল্ড গার্ল (১৯৪১)-এ জেমস স্টুয়ার্ট, জুডি গারল্যান্ড, ও হেডি ল্যামারের সাথে অভিনয় করেন।[৫] ছবিটিতে তাকে লিলিয়ান লরেইনের জীবনীর ভিত্তিতে চরিত্রায়ন করা একজন মদ্যপ উদীয়মান অভিনেত্রী শিলা রেগান চরিত্রে দেখা যায়।[৬] টার্নার জিগফেল্ড গার্ল ছবিটিকে তার ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের পরিবর্তন এনে দেওয়া ছবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং দাবী করেন এটি তার প্রথম কাজ যা তাকে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলে।[৭] স্টুডিও তার কাজের মুগ্ধ হয়ে এই ছবিতে তাকে "এই শিল্পের সেরা কোম্পানি কর্তৃক মুক্তি দেওয়া সেরা চলচ্চিত্রের সেরা চরিত্র" হিসেবে প্রচার করে।[৮] ছবিটির ব্যবসায়িক সফলতা টার্নারের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে দেয় এবং এমজিএম সপ্তাহ প্রতি তার বেতন ১,৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করে ও তাকে ব্যক্তিগত রূপসজ্জাকার দেয়। এই ছবিতে অভিনয়ের পর গারল্যান্ডের সাথে তার বন্ধুত্ব আজীবন রয়ে যায় এবং ১৯৫০-এর দশকে তারা প্রতিবেশী ছিলেন।[৯]
জিগফেল্ড গার্লের সফলতার পর টার্নার ফ্রেয়ডীয়-মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড (১৯৪১) ছবিতে স্পেন্সার ট্রেসি ও ইংরিদ বারিমানের সাথে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।[১০] এমজিএম শুরুতে প্রধান চরিত্রে টার্নারকে নির্বাচন করেছিল, কিন্তু ট্রেসি বিশেষভাবে বারিমানকেই সেই চরিত্রের জন্য নিতে বলেন।[১১] স্টুডিওটি তাকে ছোট চরিত্রে কাজের সুযোগ দেয় এবং নাম প্রদর্শনে তাকে শীর্ষে রাখে।[১১] ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং টাইম ম্যাগাজিন লিখে এটি রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের ভৌতিক চলচ্চিত্রের সদম্ভ পুনরুত্থান।[১২]
১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি গেবলের বিপরীতে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র সামহোয়ার আই উইল ফাইন্ড ইউ (১৯৪২)-এর কাজ শুরু করেন। এক বিমান দুর্ঘটনায় গেবলের স্ত্রী ক্যারল লম্বার্ডের মৃত্যুর জন্য কয়েক সপ্তাহ ছবিটির নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল।[১৩] ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে যে গেবল ও টার্নার পর্দার বাইরেও প্রেম করছেন, কিন্তু টার্নার তা অস্বীকার করে বলেন, আমি গেবলকে পছন্দ করি, কিন্তু আমরা শুধুই বন্ধু। তিনি পরবর্তী কালে বলেন, ছয়টা বাজলে তিনি তার পথে যেতেন, এবং আমি আমার পথে। তার পরবর্তী কাজ হল নোয়া চলচ্চিত্র জনি ইগার (১৯৪১)।[১৪][১৫] টাইম ম্যাগাজিনের জেমস অ্যাগি টার্নারের সহশিল্পী রবার্ট টেলরের কাজের সমালোচনা করেন এবং উল্লেখ করেন, টার্নারেরও তার মত সীমাবদ্ধতার মধ্যে ছিল।[১৬]
যুদ্ধের পর তিনি জেমস এম. কেইনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নোয়াধর্মী দ্য পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংস টুয়াইস (১৯৪৬) চলচ্চিত্রে জন গারফিল্ডের বিপরীতে অভিনয় করেন।[১৭] ছবিতে তাকে কোরা নামে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী চরিত্রে দেখা যায়, যিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন এবং উদ্দেশ্যহীন একজন ব্যক্তির প্রেমের পড়েন এবং তারা একত্রে থাকার জন্য তার স্বামীকে খুন করতে প্রবৃত্ত হন।[১৮] এই নব্য নোয়া ছবিটি তার কর্মজীবনের সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।[১৯] ছবিটি এবং টার্নারের অভিনয় সমাদৃত হয়। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বসলি ক্রাউদার বলেন, "এটি তার কর্মজীবনের সেরা চরিত্র।"[১৯] লাইফ ম্যাগাজিন ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে ছবিটিকে তাদের সপ্তাহ সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে উল্লেখ করে এবং টার্নার ও গারফিল্ডকে "দক্ষ কুশীলব" ও ছবিটিকে "জুলাইয়ের চার তারিখের চেয়ে বেশি আতশবাজি সম্পন্ন" কাজ বলে উল্লেখ করে।[২০]
১৯৪৭ সালের শেষভাগে তাকে দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স চলচ্চিত্রে লেডি দ্য উইন্টার চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়। এটি তার অভিনীত প্রথম টেকনিকালার চলচ্চিত্র।[১৯][২১] এই সময়ে তিনি হেনরি জে. "বব" টপিং জুনিয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। টপিং ছিলেন একজন মিলিয়নিয়ার এবং নিউ ইয়র্কের ইয়াঙ্কি মালিক ড্যান টপিঙের ভাই ও টিন-প্লেট ম্যাগনেট ড্যানিয়েল জি. রেইডের নাতী।[২২] টপিং তাকে নিউ ইয়র্ক সিটির টুয়েন্টি ওয়ান ক্লাবে তার মার্টিনিতে হীরার আংটি ফেলে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং ১৯৪৮ সালের এপ্রিলে কানেটিকাটের গিনউইচে টপিং পারিবারিক বাসভবনে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।[২৩][১৯]
টার্নারের পরবর্তী কাজ ছিল কার্ক ডগলাসের বিপরীতে ভিনসেন্ট মিনেলির দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল (১৯৫২)। নাট্যধর্মী এই ছবিটিতে একজন হলিউড মুঘলের উত্থান ও পতন চিত্রিত হয়েছে, এতে টার্নার একজন মদ্যপ চলচ্চিত্র তারকার চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৪] ছবিটি সমালোচনামূলক ও বাণিজ্যিক দুই দিক থেকেই সফল হয় এবং ইতিবাচক পর্যালোচনা অর্জন করে।[২৫] ১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে ছবিটি মুক্তির এক সপ্তাহ পূর্বে তার তৃতীয় স্বামী টপিঙের সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[২২] টার্নার পরবর্তী কালে বলেন যে টপিঙের মদপানের সমস্যা ও অতিরিক্ত জুয়া খেলা তাকে বিবাহ বিচ্ছেদে প্রণোদিত করে।[২৬]
তিনি টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের পেটন প্লেস (১৯৫৭) ছবিতে কনস্ট্যান্স ম্যাকেঞ্জি চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৭] মার্ক রবসন পরিচালিত ছবিটি গ্রেস মেটালিয়াসের একই নামের সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত।[১৯] ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি ব্লকবাস্টার হিট তকমা লাভ করে এবং এর বক্স অফিস সাফল্য টার্নারের পক্ষে যায়, কারণ তিনি এই কাজের পারিশ্রমিকের পরিবর্তে মোট আয়ের অংশ নেওয়ার চুক্তি করেছিলেন।[১৯] ছবিটিতে টার্নারের কাজ সমাদৃত হয় এবং ভ্যারাইটি লিখে, "টার্নারকে দেখতে সুন্দর লাগছিল" এবং "প্রাণবন্তভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।"[২৮] এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২৯] টার্নার পরবর্তী কালে বলেন, তার মনে হয়েছিল "এটি তার অন্যতম সেরা কাজ নয়।"[৩০]