উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্মত অবস্থায় আনতে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদের উইকিকরণ প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে সম্পর্কিত আন্তঃসংযোগ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধের উন্নয়নে সহায়তা করুন। |
লারস ভিকসের মুহাম্মদের ছবি আঁকা বিতর্ক শুরু হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যেখানে সুইডেনের কার্টুনিস্ট লারস ভিকস ইসলামের নবী মুহাম্মদচিত্রিত করেন।অনেল সুইডিশ শিল্প গ্যালারী তার আঁকা এসব কার্টুন প্রদর্শন করতে অস্বীকৃতি জানায় নিরাপত্তা ও সহিংশতার আশঙ্কায়।এই বিতর্ক একটা আন্তর্জাতিক রূপ পায় যখন নেরাইকস আল্লেহান্ডো নামের একটি পত্রিকা এসব কার্টুনের একটি ছাপায় ১৮ই আগস্ট একটি সম্পাকদীয়সহ যা ছিল ধর্মীয় মুক্তচিন্তা ও আত্ন-বিধিনিষেধ আরোপের ওপর।[১] যদিও অন্যসব সুইডিশ পত্র-পত্রিকা এইসব কার্টুন ছাপিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু এই কার্টুনটার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা প্রকাশ পায়।ঐ দেশের মুসলমান ছাড়াও বিভিন্ন বিদেশী দেশের সরকার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় বিশেষ করে ইরান [২], পাকিস্তান,[৩] আফগানিস্তান,[৪]মিসর [৫] জর্ডান[৬] এবং ওআইসি[৭]।এই বিতর্ক প্রায় দেড় বছর পরে শুরু হয় ২০০৬ সালে ডেনমার্কে জাইল্ল্যান্ডসের আঁকা মুহাম্মদের কার্টুন বিতর্কের পরে।
২০০৭ সালের ১১ই জুন লারস ভিকস শিল্পে কুকুর নামের একটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পান।ভিকস কলম ও কালিতে আঁকা তিনটি কার্টুন জমা দেন যেখানে ইসলামের নবী মুহাম্মদকে কুকুর হিসেবে চিত্রিত করা হয়।নরওয়েতে ওহ, আমার ঈশ্বর শিরোনামের একটি প্রদর্শনীতে তিনি ইতোমধ্যে কার্টুনগুলো প্রদর্শন করেন। লারস ভিকসের মতে রাজনৈতিক বিশুদ্ধতা যাচাই করাই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিল্প সম্প্রদায়ের সীমানার ভেতরে।[৮] তিনি আরও বলেন যে সুইডেনের শিল্প সম্প্রদায় আমেরিকা ও ইসরাইলের সমালোচনা করে বারবারই এজন্য যে তারা কেন ইসলামের মূল্যবোধগুলোকে প্রশ্ন করে না।[৯] ২০ শে জুলাই প্রদর্শনী শুরু হওয়ার আগের দিন আয়োজকরা ভিকসের আঁকা কার্টুন সরিয়ে ফেলে নিরাপত্তাজনিত ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে ইসলামিক মৌলবাদীদের ভয়ে।মার্তা ওয়েন্নেস্ট্রোম প্রদর্শনীর আয়োজক বলেন যে তিনি প্রথমে তিনি পরিস্থিতির ব্যাপকতা ও গুরুত্ব বুঝতে পারেননি এবং তিনি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত মানুষজনের সাথে আলাপ করে। [১০][১১]
ইরানের তেহরানে সুইডেনের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার গুন্নিলা ভন বাহরকে ২৭শে আগস্ট ডেকে পাঠায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেখানে তিনি একটি প্রতিবাদ লাভ করেন ইরান সরকার থেকে নেরাইকস আল্লেহান্ডো পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুন প্রসঙ্গে।২৮শে আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ এই ব্যাপারে বলেন যে ধর্মগুলো আহবান করে শান্তি, সমতা , ন্যায় বিচার, বন্ধুত্বতা এবং সম্মান স্বর্গীয় নবীর বিষয়ে।ইহুদিরা শুধু ভান করে যে তারা ধর্ম বিশ্বাস করে। তারা মিথ্যা বলছে। তারা সম্পাদন করছে অত্যাচার ও নির্যাতন ইউরোপীয়দের ওপর এবং ইউরোপের সম্মানের ওপর ঝুঁকি রাখছে।[১২][১৩] পাকিস্তানে সুইডেনের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার লেন্নাট হলোস্টকে ৩০শে আগস্ট ডেকে পাঠায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তিনি একই রকমের বার্তা পান তাদের থেকে।পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটা বিবৃতি প্রদান করে যেখানে তারা এটাকে নিন্দনীয় বলে অভিহিত করে শক্ত ভাষায়। ৩১শে আগস্ট পাকিস্তানে ইসলামী দলের সমর্থকরা সুইডেনের পতাকা পোড়ায় লাহোরে। করাচীতে তারা কার্টুনের প্রতিবাদে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর ছবি পোড়ায়।[১৪] ১লা সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের পত্রিকা কাবুল টাইমস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যা বিভিন্ন ইসলামিক গবেষক , ইমাম ও আফগানিস্তানের ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রাণালয়ের ।
নেরাইকস আল্লেহান্ডো পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনের প্রতিবাদে ২৫শে আগস্ট ৬০জন মুসলমানের একটি দল ঐ প্ত্রিকার অফিসের বাইরে প্রতিবাদ করে।৩১শে আগস্ট সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেড্রিক রেইনফেল্ডত এ ব্যাপারে বলেনঃ” আমি মনে করি দুইটা বিষয় বলা জরুরী। প্রথমত আমরা উদ্গ্রীব এটা নিশ্চিত করতে যে সুইডেন এমন একটি দেশ থাকবে যেখানে আল্লাহ বা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা মুসলিম ও খ্রিস্টান এবং যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী না তারা একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মান বজায় রেখে বসবাস করতে পারে। আবার আমরা উদ্গ্রীব এটা নিশ্চিত করতে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে যা আমাদের সংবিধানে বলা আছে এবং যা নিশ্চিত করছে যে আমরা কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না যে পত্রিকাগুলো কি প্রকাশ করবে। আমরা এই ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করতে চাই। “[১৫] ঐ দিনই প্রায় ৩০০ মুসলমানের একটি দল ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নেরাইকস আল্লেহান্ডো পত্রিকার অফিসের বাইরে। [১৬]
নেরাইকস আল্লেহান্ডো পত্রিকার অফিসের বাইরে পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে তোলে এবং এর কর্মকর্তাদের দেহরক্ষী রাখতে বাধ্য করা হয় প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর।কার্টুনিস্ট ভিকস অনেকগুলো প্রাণনাশের হুমকি পান।[১৭] পশ্চিম সুইডেনের একজন মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে কার্টুনিস্ট ভিকসকে ইমেইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করার জন্য।[১৮] ১৫ ই সেপ্টেম্বর ইসলামিক স্টেট অব ইরাক নামের একটি দল ১ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে ভিকসের মাথার জন্য এবং ৫০ হাজার ডলার ঐ পত্রিকার সম্পাদক উলফ জোহানসনের জন্য। দ্যা ইসলামিক কাউন্সিল ফর ফতোয়া এ্যান্ড রিসার্চ এবং ফেডারেশন অব ইসলামিক অরগানাইজেশন ইন ইউরোপ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান কার্টুনিস্ট ভিকস এবং উলফ জোহানসনের প্রতি প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শনের নিন্দা জানায়।[১৯]