লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত (ইংরেজি: Sex-selective abortion) বলতে কোনো অঞ্চলে মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর বেশি আকাঙ্ক্ষিত হওয়া ও বেশি প্রাধান্য দেওয়াকে বোঝানো হয়। এসব ক্ষেত্রে ভ্রূণের লিঙ্গকে প্রাধান্য দিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা বা জানা যায়। এ পদ্ধতিতে বাবা-মা অনেক সময়ই আগে থেকে বাচ্চার লিঙ্গ জানার করা মাধ্যমে, ভ্রূণটি মেয়ে হলে তা নষ্ট করে ফেলেন।
যে-সকল সমাজ, ও সংস্কৃতিতে ছেলেদের, মেয়েদের চেয়ে বেশি মূল্যবান ও আকাঙ্ক্ষিত মনে করা হয়, সচারচর সে সকল সমাজেই লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাতের প্রচলন দেখা যায়।[১] বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন ছেলের জন্য এ ধরনের গর্ভপাত যথেষ্ট প্রচলিত এবং এটি মূলত দেখা যায়, চীন, কোরিয়া, তাইওয়ান, ভারত,[১][২] ও বাংলাদেশে।[৩]
লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাতের কবলে পড়ে ২০০৫ সালে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং তাইওয়ানের প্রায় ৯ কোটি মেয়ে শিশু জন্মের আগেই মারা যায়।[২][৪] এই প্রথাটির প্রচলনের কারণ অর্থনৈতিক নয়, বরং মূলত সাংস্কৃতিক ও সামাজিক; কারণ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকলে সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের দেশগুলোতে, ল্যাটিন আমেরিকা, এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই প্রথার প্রচলন লক্ষ করা যায়।কারণ এই অঞ্চল গুলোতে মেয়ে সুখের জন্য তার স্বামীর দাবি মতো উপহার ও পণ বা যৌতুক প্রদান, প্রতিযোগিতা মূলক খরচ এবং অনুষ্ঠানের প্রচলিত আছে।তাই মেয়ে পালন করা তাদের কাছে বিপদজনক মনে হয়।[২]
বিশ শতকের পূর্বে লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাতের প্রচলন ছিলো খুবই সীমিত, কারণ তখন জন্মের পূর্বে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু শব্দোত্তর তরঙ্গের মাধ্যমে ভ্রূণের লিঙ্গ জানার প্রযুক্তি পরবর্তীতে যথেষ্ট সহজলভ্য হয়ে যায়।