শহিদুল আলম | |
---|---|
জন্ম | ১৯৫৫ ঢাকা, বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আলোকচিত্রশিল্পী, শিক্ষক |
পরিচিতির কারণ | আলোকচিত্রশিল্পী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী, দৃক গ্যালারি, পাঠশালা |
অফিস | দৃক গ্যালারি |
পুরস্কার | হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ শিল্পকলা পদক, ২০১৪ লুসি পুরস্কার |
ড. শহিদুল আলম (জন্মঃ ১৯৫৫) একজন বাংলাদেশী আলোকচিত্রশিল্পী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। তিনি দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা।[১] তিনি ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগজিনের টাইম বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব ২০১৮ হিসেবে নির্বাচিত হন।[২]
শহিদুল আলমের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৫ সালে। তার বাবার নাম কাজী আবুল মনসুর এবং মায়ের নাম কাজী আনোয়ারা মনসুর। তিনি রসায়ন নিয়ে লেখাপড়া করলে পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে পিএইচডি করেন।[৩]
১৯৮৯ সালে দৃক ফটো গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন শহিদুল আলম। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ এশিয়ার ফটোগ্রাফি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠশালা। তিনি ছবি মেলারও পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪] তিনি নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ডপ্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম এশীয় হিসাবে তিনি এ সম্মান অর্জন করেন।[৫] ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার অ্যাট লার্জ' বা দূত হিসেবে নিযুক্ত হন।[৬]
৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার সংবাদে লাইভে ২০১৮-র নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সম্পর্কে বাংলাদেশ হতে সংবাদ উপস্থাপকের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কলে কথা বলেন। একই দিন রাত সাড়ে ১০টার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়িতে করে শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।[১৪][১৫] পরিবার ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম কর্তৃক অপহরণের অভিযোগ আনার প্রেক্ষিতে পরের দিন গোয়েন্দা পুলিশ স্বীকার করে যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে[১৬] এবং পরবর্তীতে তাকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।[১৭][১৮] ৬ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তার সাতদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। রিমাণ্ড শেষে ১২ আগস্ট তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।[১৯]
১৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হলে ১১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন। এর পর ১৯ আগস্ট শুনানির তারিখ এগোনোর জন্য আবেদন করা হলে তা গ্রহণ করেননি আদালত। এ অবস্থায় ২৬ আগস্ট শহিদুল আলমের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাইলে ওই আদালত শুনানির জন্য তা গ্রহণ করেননি। এ অবস্থায় ২৮ আগস্ট মঙ্গলবার হাইকোর্টে তার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।[২০] ৩ সেপ্টেম্বর আপীলের রায়ের শুনানি ৪ সেপ্টেম্বর করা হবে বলে জানানো হয়।[২১][২২] ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে জামিনের শুনানিতে উচ্চ আদালতের দুইজন বিচারপতির একজন বিব্রত বোধ করায় সেই জামিন আবেদনের শুনানী হয় নি।[২৩] প্রথম শ্রেণির বন্দির সুবিধা না দেওয়ার জন্য দুইবার আবেদন করার পর, তা উচ্চ আদালত খারিজ করে, তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির সুবিধা দেওয়ার আদেশ উচ্চ আদালত বহাল রাখে।[২৪] ওই মামলায় ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ শহিদুল আলমের জামিন নাকচ করেন। পরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। মামলায় শহিদুল আলমের জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দেন। কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর ১৪ নভেম্বর ২০১৮ শুনানি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।[২৫] ১৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বহুল বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন এবং শহিদুল আলম কারাগার থেকে ছাড়া পান।[২৬] বিবিসি বাংলাকে শহিদুলের আইনজীবী জানান, "মি: আলমের বিপক্ষে পুলিশ যে এফআইআর দাখিল করেছে সেটির সাথে আল-জাজিরাতে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারের কোন মিল নেই" এই বিষয়টিকে বিবেচনা করে হাইকোর্টে জামিন দেওয়া হয়।[২৭]
শহিদুল আলমকে গ্রেফতারের পরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। গ্রেফতারের পরপরই নিঃশর্তে শহিদুলের মুক্তির দাবিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্সের মত দেশি বিদেশি ২৪টি সংস্থা বিবৃতি দেয়।[২৮] ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা টিউলিপ সিদ্দিকী,[২৯] বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন,[৩০] নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন,[৩১]ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ সম্মাননা পাওয়া আলোকচিত্রী রঘু রাই,[৩২] ব্রিটিশ টিভি তারকা কনি হক[৩৩] তার মুক্তি চান ও শহিদুলকে সমর্থন করেন। শহিদুল আলমের মুক্তির দাবি সংবলিত এক বিবৃতিতে ১১ জন নোবেল বিজয়ী ও ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক সই করেন।[৩৪] নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিরা ছিলেন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, তাওয়াক্কল কারমান, মাইরিয়াড ম্যাগুইরে, বেটি উইলিয়ামস, অস্কার এরিয়াস, রিচার্ড যে. রবার্টস, হোসে রামোস-হর্তা, জোডি উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি, মোহাম্মদ ইউনূস, লেহমাহ বয়ই। নোম চম্স্কি, অরুন্ধতী রায় সহ পাঁচজন বিশ্ববরেণ্য লেখক তার মুক্তির দাবী করেন।[৩৫] যুক্তরাজ্যের সৃজনশীল অঙ্গনের ৪৯ জন শিল্পবোদ্ধা তার মুক্তির দাবি করেন। তারা একই সঙ্গে ন্যায়বিচার ও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন। শহিদুল আলমের ভাগনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত স্থপতি সোফিয়া করিম চিঠিতে শহিদুল আলমের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার আহ্বান জানিয়ে তার মুক্তির দাবি করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন লেখক চার্লি ব্রুকার, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আকরাম খান সহ প্রখ্যাত বিভিন্ন শিল্পবোদ্ধারা।[৩৬] বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের দুইজন এমপি রুশনারা আলি ও রূপা হক ও শহিদুল প্রসঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার আহ্বান করেন।[৩৭] কারারুদ্ধ হওয়ার ১০০ তম দিনে অরুন্ধতী রায় শহিদুলের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিতে লিখেন, যারা তাকে গ্রেফতার করেছে, তারা শহিদুলের কাজের ক্ষেত্র সম্বন্ধে অজ্ঞাত এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উভয়েরই ঢাকায় খুব দ্রুত দেখা হবে।[৩৮]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; মানব
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি