শান্তদুর্গা | |
---|---|
অন্যান্য নাম | ললিতা, রুদ্রানি নারায়ণী, মহেষী শরবনী ভবানী ম্রুদানী সরস্বতী |
অন্তর্ভুক্তি | পার্বতী অম্বা সতী আদিশক্তি সান্তেরি দুর্গা |
আবাস | কেলশী কাবলেম শান্তদুর্গা মন্দির |
মন্ত্র | ওঁ শান্তদুর্গা বিজয়তে |
বাহন | সিংহ |
মন্দির | শ্রী শান্তদুর্গা মন্দির কাবলেম |
উৎসব | বসন্ত পঞ্চমী, মার্গশীর্ষ শুদ্ধ পঞ্চমী, ললিতা পঞ্চমী, মাঘ শুদ্ধ পঞ্চমী, যত্রৌস্তব |
সঙ্গী | শিব |
শান্তদুর্গা হলো হিন্দু দেবী দুর্গার একটি জনপ্রিয় রূপ। ভারতের গোয়া সহ পার্শ্ববর্তী কর্ণাটকের কিছু অংশে এই রূপটি পূজিত হয়। এটি সান্তেরি নামে পরিচিত প্রাচীন মাতৃদেবীর একটি রূপ।[১] গোয়ার প্রায় সব গ্রামেই তাকে পিঁপড়ার পাহার হিসেবে পূজা করা হয়। শান্তদুর্গাকে উৎসর্গ করা কিছু মন্দিরে এটি দেখা যায়।[২]
সংস্কৃত নাগব্য মহাত্ম্য (Nāgavya Mahātmya) দ্বিতীয় অধ্যায়, স্কন্দ পুরাণের সহ্যাদ্রিখণ্ডের একটি অংশ শান্তদুর্গা প্রাদুর্ভাবঃ (Śāntādurgā prādurbhāvaḥ) অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেয়।[৩] শুধু অধ্যায়ের শিরোনামে দেবী শান্তদুর্গার উল্লেখ আছে এবং দেবীর এই উপাখ্যানটি অন্য কোথাও উল্লেখ নেই। এই বিভাগটি নাগব্য (আধুনিক নাগোয়া) এর বাসিন্দা একজন নির্দিষ্ট ঋষি শান্তামুনি (Śāntāmuni) নির্দেশ করে। দেবী শান্তামুনির সামনে আবির্ভূত হন এবং তাই তিনি শান্তদুর্গা নামে পরিচিত। অনেক জায়গায় দুর্গাকে তার হিংস্র প্রকৃতিতে চিত্রিত করা হয়েছে, তবুও শান্তা (শান্তিময়) বিশেষণটি দুর্গার প্রায় সমস্ত নামাবলীতে পাওয়া যায়। সহ্যাদ্রিখণ্ডের ১৬,১৯,৩৪ শ্লোকে, দেবীকে শান্তাদেবী (Śāntādevi) বলা হয়েছে। এই অংশের ১৮ নং শ্লোকে পিঁপড়ার ঢেপিতে দেবীর অন্তর্ধানের কথা বলা হয়েছে।[৪] এই পিঁপড়ার পাহাড়গুলো প্রতীকীভাবে দেবী শান্তদুর্গা এবং সেইসাথে দেবী সান্তেরির প্রতিনিধিত্ব করে।
অন্য একটি উপাখ্যান অনুসারে, একবার দেবতা শিব এবং বিষ্ণুর মধ্যে একটি ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছিল। যার ফলে সমগ্র বিশ্ব ভারাক্রান্ত হয়েছিল। তাই দেবতা ব্রহ্মা প্রার্থনা করেছিলেন এবং শক্তিকে (দিব্য মাতা) হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। দেবী এক হাতে শিব ও অন্য হাতে বিষ্ণুকে ধরে তাদের মধ্যে মিলন ঘটান। এটি যুদ্ধ বন্ধ করে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনে। কাভেলের শান্ত দুর্গা মন্দিরের অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহে এমন একটি দেবীর মূর্তি পাওয়া যায়।[৫] ১৭ শতকের মারাঠি কঙ্কন মহাত্ম্য (Koṅkaṇa Mahātmya) বৈষ্ণব (বিষ্ণু উপাসকদের সম্প্রদায়) এবং শৈব (শিবের উপাসক) অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের একটি বিস্তৃত বিবরণ উপস্থাপন করে। এটা খুবই সম্ভব যে, শান্তদুর্গার এই উপাখ্যান প্রতীকীভাবে এই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের প্রতিনিধিত্ব করে।[১]
যদিও শান্তদুর্গাকে উত্সর্গীকৃত কয়েকটি মন্দিরে, গর্ভগৃহের ভিতরে একটি পিঁপড়ার পাহাড় পাওয়া যায়। যেখানে দেবতার একটি পাথর, ধাতব মূর্তি বা একটি কলশ পবিত্র করা হয়েছে। বিশেষ করে কাভালে মন্দিরে চার হাত বিশিষ্ট দেবীর ধাতব মূর্তি, নীচের হাতে দুটি পুরুষ মূর্তি (বিষ্ণু ও শিব) এবং উপরের হাতে সাপকে ধারণ করা হয়েছে।[৬] বেশিরভাগ শান্তদুর্গা মন্দিরে শক্তির এক রূপ মহিষাসুরমর্দিনীর প্রস্তর নির্মিত ভাস্কর্য রয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটি পাথর বা ধাতব নির্মিত মূর্তি, যাদের চার হাতে কখনও কখনও নিম্নলিখিতগুলোর যে কোনও একটি ধারণ করতে দেখা যায়: তলোয়ার (খড়গ), অমৃতের বাটি (পানপাত্র), একটি ঢাল (খেতক), ত্রিশূল, ডমরু, পদ্ম (পদ্ম), এবং সাপ (নাগ)। দেবীর হাতে অভয়মুদ্রা (Abhaya Mudrā) এবং বরদ (varada) দিয়েও চিত্রিত করা হয়েছে। বিরল ক্ষেত্রে একটি কলশকে দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয় (বিশেষ করে মার্সেলা, গোয়ার শান্তদুর্গা কুম্ভরজুভেকরিন মন্দিরে)। কয়েকটি মন্দিরে একটি মূর্তির পাশাপাশি পিঁপড়ার পাহাড়েরও পূজা করা হয়।[২]
দুর্গা ভার্লেকারিন[২]