শান্তা গান্ধী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ৬ মে ২০০২ | (বয়স ৮৪)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | নৃত্যশিল্পী, থিয়েটার পরিচালক, নাট্যকার |
পরিচিতির কারণ | জস্ম ওড়ান (নাটক) |
শান্তা গান্ধী (২০শে ডিসেম্বর ১৯১৭ – ৬ই মে ২০০২) একজন ভারতীয় থিয়েটার পরিচালক, নৃত্যশিল্পী এবং নাট্যকার ছিলেন। তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক বিভাগ, আইপিটিএএর সঙ্গে, ঘনিষ্ঠভাবে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩০ এর দশকের প্রথম দিকে, তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একটি আবাসিক স্কুলে পড়তেন, এবং পরবর্তী জীবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধী প্রশাসনের অধীনে অনেক সরকারি পুরস্কার এবং কর্মভারহীন পদ পেয়েছেন, এগুলোর মধ্যে আছে পদ্মশ্রী (১৯৮৪) এবং ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা র (১৯৮২–৮৪) সভাধিপতিত্ব। তিনি অভিনেত্রী দীনা পাঠক (বিবাহপূর্ব গান্ধী) এবং তরলা গান্ধীর (তিনি মঞ্চের অভিনেত্রী) বোন ছিলেন।
তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (আইপিটিএ) কেন্দ্রীয় ব্যালে দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, এবং ১৯৫০ এর দশকে ব্যাপকভাবে দেশ ভ্রমণ করেন। একজন নাট্যকার হিসেবে, তিনি প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষ করে সংস্কৃত নাটক, লোক থিয়েটার, আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারকে পুনরুজ্জীবিত করতে, অগ্রণী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে আছে রাজিয়া সুলতান[১] এবং জস্ম ওড়ান যেটি সতীদাহ প্রথা নিয়ে একটি গুজরাটি কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করে তৈরী। গুজরাটি ভাওয়াই শৈলীতে তার নিজস্ব নাটকের উৎপাদন, সমসাময়িক ভারতীয় থিয়েটারের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।[২] তার বোন দীনা গান্ধী (পরে পাঠক) দ্বারা 'মৈনা গুর্জরী', আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাওয়াইগুলোর মধ্যে একটি। [৩]
তিনি, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা সংস্থার কেন্দ্র, আবেহি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, এবং ১৯৮২-১৯৮৪ পর্যন্ত ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামার চেয়ারপারসন ছিলেন।[৪] তিনি ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ২০০১ সালে, নির্দেশনা বিভাগে, সংগীত, নৃত্য ও নাটকের জন্য ভারতের জাতীয় একাডেমী, সংগীত নাটক একাডেমীর দেওয়া সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার পান।[৫]
১৯৩২ সালে, তিনি পুনের একটি পরীক্ষামূলক আবাসিক বিদ্যালয়, পিপলস ওন স্কুলে যোগ দেন, সেখানে তিনি সহপাঠী হিসাবে পেয়েছিলেন ইন্দিরা নেহেরুকে।[৬] পরে তিনি বোম্বে চলে যান। যখন তার প্রকৌশলী বাবা দেখলেন, তিনি ১৯৩০ এর দশকের বাম ছাত্র আন্দোলনে খুব বেশি জড়িয়ে পড়েছেন, তাকে ডাক্তারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিলেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] লন্ডনে তিনি ফেয়ারফ্যাক্স রোড বোর্ডিং হাউসে ছিলেন, সেটি ইন্দিরার হলওয়ের রাস্তার ওপারেই ছিল। ফিরোজ গান্ধী কাছাকাছিই থাকতেন, এবং তারা তিনজন একসঙ্গে শহরের বাইরে বেড়াতে যেতেন।[৭] ১৯৩৬ সালে, যখন ইন্দিরা ও ফিরোজ গোপনে পরস্পরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন, তখন শান্তাই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি এটি জানতেন।[৮] খুব শীঘ্রই তিনি ইন্ডিয়া হাউসে যাতায়াত শুরু করেন, কৃষ্ণ মেনন এবং তার তরুণ 'ফ্রি ইন্ডিয়া' সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, এবং এমনকি স্পেনের গৃহযুদ্ধের জন্য তহবিল বাড়াতে একটি নৃত্য দলে যোগ দেন। কিন্তু ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তার বাবা তাকে আবার ডেকে নেন, এইভাবে একটি সম্ভাব্য চিকিৎসক জীবন শেষ হয়ে যায়।
তিনি উত্তরাখণ্ডের আলমোরা থেকে ৩ কিমি দূরে সিমটোলায় উদয় শঙ্করের 'উদয় শঙ্কর ভারত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' তে যোগ দেন এবং এক শিক্ষকের কাছ থেকে ভারত মুনির নাট্যশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৯৪২ সালে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।[৯] এর পরেই, বম্বের (এখন মুম্বই) ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নৃত্য বিভাগ, লিটল ব্যালে ট্রুপের পূর্ণসময়ের সদস্য হন। এখানে তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই বোন দীনা পাঠক, পূর্বনাম, গান্ধী (১৯২২–২০০২) এবং তরলা গান্ধী। ব্যালে দল ভারত, অমর, ম্যান ও মেশিন এবং অসংখ্য কিংবদন্তি ব্যালে তৈরী করে। এটি ১৯৫০ সালে, রবি শংকর, শান্তি বর্ধন এবং অন্যান্য অনেক অভিনেতা ও শিল্পীদের সঙ্গে ভারত ভ্রমণ করে। এঁরা সকলেই পরে আধুনিক ভারতীয় নৃত্য, থিয়েটার এবং সঙ্গীত জগতে নিজ নিজ ক্ষমতায় বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এই বোনেরাও বোম্বের গুজরাতি থিয়েটার পুনরুদ্ধারে জড়িত ছিলেন।[১০]
১৯৫২ সালে, দক্ষিণ গুজরাতে নর্মদা নদীর তীরে নিকোরা গ্রামে, শিশুদের একটি দলের সাথে তিনি কাজ শুরু করেন, তার কোন আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম ছিলনা। পরে, একটি পরীক্ষামূলক বিদ্যালয়, যেটি আহমেদাবাদের বি.এম. ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড ডেভোলপমেন্ট এর সাথে যুক্ত ছিল, এই বিন্যাস গ্রহণ করে। ১৯৭০ সালে দিল্লির বাল ভবনও এটি গ্রহণ করেছিল, অবশেষে আবেহি ১৯৮১ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৯০ সালে যখন আবেহি কর্মসূচী গ্রহণ করে, তখন এর নাম দেওয়া হয় অ্যাবাকাস এবং শান্তা গান্ধী এর পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১১]
১৯৫৮ সালে, এশিয়ান থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সময়, দিল্লি থেকে শান্তা গান্ধীকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি প্রাচীন ভারতীয় নাটকের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। পরের বছর, যখন এটি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার সাথে মিলিত হয়, তখনও তিনি অধ্যাপনা চালিয়ে যান এবং পরবর্তী বছরগুলোতে সংস্কৃত নাটক- কালিদাস, ভাস, বিশাখাদত্ত এবং ভবভূতি সহ প্রাচীন ভারতীয় নাটকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনিই প্রথম, খৃষ্ট জন্মের চারশত বছর আগের সংস্কৃত নাট্যকার, ভাস এর লেখাকে পুনরুজ্জীবিত করেন তার মধ্যমভয়যোগা (১৯৬৬) (মধ্যম জন) এবং ঊরুভঙ্গ প্রযোজনার মাধ্যমে। তিনি এই কাজ করেছেন, পানিক্কর এবং রতন থিয়াম কাজ শুরু করার দশ বছরেরও আগে।[১২] পরে তিনি বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস, বিক্রম বর্মনের ভগবদাজ্জুকম (১৯৬৭) নির্দেশনা করেন, সমস্তই হিন্দিতে।[১২] ১৯৬৭ সালে, তিনি একটি লোককথার ভিত্তিতে গুজরাটিতে জস্ম ওড়ান লেখেন, পরবর্তীতে তিনি ড. শ্যাম পারমারের সঙ্গে মালাবি হিন্দিতে এটি অনুবাদ করেন, এর ফলাফলটি ছিল, ১৯৬৮ সালে এনএসডি রিপারটরি কোম্পানির সঙ্গে ভাওয়াই ভিত্তিক সংগীতমূলক, তার সবচেয়ে সুপরিচিত প্রযোজনা জস্ম ওড়ান। এতে অভিনয় করেছেন মনোহর সিং এবং উত্তরা বাওকর। তিনি নাটকের নকশাটিও করেছিলেন এবং এটি গুজরাটের ভাওয়াই লোক নাটককে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। জস্ম ওড়ান আজ পর্যন্ত ভাওয়াই রূপরেখার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে[১৩] এবং বহু বছর ধরে মুম্বই, আহমেদাবাদ এবং দিল্লির মতো শহরগুলোতে সফলভাবে চলছে।[১৪] এটি লন্ডন, পোল্যান্ড এবং জিডিআর এও চলেছে।[১৫] পরে এটি নাদিরা বাব্বর এর দল এক জুট দ্বারা পুনরুজ্জীবিত হয়, এখন অনেক বছর ধরে এই দল এটি অভিনয় করছে।[১৬] তিনি ঐতিহাসিক নাটক 'রাজিয়া সুলতানা' লিখেছিলেন, যা বেশ জনপ্রিয় ছিল[১]। তিনি উত্তরপ্রদেশের নৌটঙ্কি লোক থিয়েটারের শৈলী ব্যবহার করেছিলেন, এটি অমর সিং রাঠোরএ, ব্যবহার কাজে লেগেছিল। তিনি জয়শঙ্কর প্রসাদের নাটকের প্রতি আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করেন, যেগুলো সাহিত্য বিষয়ক প্রশংসা পেয়েছিল, কিন্তু পণ্ডিতদের মতানুযায়ী মঞ্চে অভিনয়যোগ্য ছিলনা।[১৭] তিনি দিল্লির বাল ভবন এবং জাতীয় শিশু মাদুঘরের পরিচালক ছিলেন।
১৯৩৮ সালে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই)র মার্কসবাদী ঐতিহাসিক ভিক্টর কিয়েরনানের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু কিয়েরনান ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে, ১৯৪৬ সালে তারা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।[১৮]