অ্যানাটমি বিষয়ে দক্ষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়ই অ্যানাটমি পরিভাষা ব্যবহার করে থাকেন।এই ভাষাগুলি অদ্ভুত হলেও এর উদ্দেশ্য হতবুদ্ধি করা নয়,বরং সঠিক অর্থ ব্যবহার করে ভুলের মাত্রা হ্রাস করা।এই পরিভাষাগুলি প্রাচীন গ্রিক এবং ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে।[১]
দেহের বিভিন্ন গঠনের তুলনামূলক অবস্থান নির্দেশ করতে শারীরস্থানিক পরিভাষা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।যেমন,একজন ব্যক্তি কোন অঙ্গকে অন্য কোন অঙ্গের অবস্থান সাপেক্ষে "অ্যান্টেরিওর" বা "পোস্টেরিয়র" বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন।তবে এসব পরিভাষা শারীরস্থানিক অবস্থান(Anatomical Position) এর সাপেক্ষে মানবদেহের সকল কিছুর অবস্থান নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়,যেখানে একজন দাঁড়িয়ে মুখমন্ডল সামনের রেখে,হাতের তালু উপরে,সম্মুখে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি বাহিরের দিকে নির্দেশ করে থাকবে। [২]
এটি মনে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে,যখন কোন বিশেষজ্ঞ দেহের ডান-বাম নির্দেশ করেন,তখন এটি সাবজেক্টের ডান-বামকে বুঝায়,পর্যবেক্ষকের নয়।শারীরস্থানিক অবস্থানে দেহের বাম পাশ পর্যবেক্ষকের ডান পাশ এবং বিপরীতক্রমে।
বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কিছু প্রমিত পরিভাষা এবং উদাহরণ :[৩]:৪
অ্যান্টেরিয়র এবং পোস্টেরিয়র, বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর সামনের দিকে বা পিছন দিকে অবস্থান বুঝায়।যেমন,হাতের আঙ্গুল কব্জির "অ্যান্টেরিয়র" এবং পিঠ,বুকের "পোস্টেরিয়র" ।
সুপিরিয়র এবং ইনফেরিয়র, বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর উপরের দিকে(ঊর্ধ্ব) এবং নিচের দিকে(নিম্ন) অবস্থান বুঝায়।যেমন,মাথা ধড়ের "সুপিরিয়র" এবং পা, ধড়ের "ইনফেরিয়র" ।
প্রক্সিমাল এবং ডিস্টাল, বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর নিকটবর্তী বা দূরবর্তী অবস্থান বুঝায়।যেমন,কাঁধ বাহুর "প্রক্সিমাল" এবং চরণ হাঁটুর "ডিস্টাল" ।
সুপারফিশিয়াল এবং ডিপ,বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর উপরের তলে (কিংবা পৃষ্ঠতলীয়) এবং অন্তস্তলে (কিংবা ভেতরকার) অবস্থান বুঝায়।যেমন,ত্বক মাংসপেশীর "সুপারফিশিয়াল" বা পৃষ্ঠতলে এবং হাড় মাংসপেশীর "ডিপ" বা অন্তস্তলে অবস্থান করে। মাঝেমাঝে,"ডিপ" এর বদলে "প্রফাউন্ড" ব্যবহৃত হয়।
মিডিয়াল এবং ল্যাটেরাল,বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর শরীরের মধ্যরেখা হতে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী অবস্থান বুঝায়।যেমন,নাক চোখের "মিডিয়াল" বা ভেতরপার্শ্বে এবং কান চোখের "ল্যাটেরাল" বহির্পার্শ্বে অবস্থিত ।
ভেন্ট্রাল এবং ডর্সাল,বলতে ভ্রূণের যথাক্রমে কোন কাঠামোর অঙ্কীয় বা সামনের দিকে এবং পৃষ্ঠীয় বা পিছন দিকে অবস্থান বুঝায়।
ক্রেনিয়াল এবং কডাল, বলতে যথাক্রমে কোন কাঠামোর মাথার খুলির নিকটবর্তী(শিরোদেশীয়) এবং দেহের নিচের দিকে বা লেজের দিকে(পুচ্ছদেশীয়) অবস্থান বুঝায়।
ক্ষেত্রবিশেষে সিনিস্টার বাম দিকের জন্য এবং ডেক্সটার ডান দিকের জন্য ব্যবহৃত হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Ascending এবং Descending বলতে যথাক্রমে ঊর্ধ্বমুখী গমন (আরোহী) এবং নিম্নমুখী গমন (অবরোহী) বোঝায়। যেমন মহাধমনী উৎসস্থল থেকে প্রথমে আরোহী হয়, পরে বাঁক নিয়ে অবরোহী হয়।
অ্যানাটমিকে প্রায়ই তল দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়,যা শরীরে সাপেক্ষে দ্বিমাত্রিক ছেদ।ত্রিমাত্রিক গঠনে দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠ কাটাকে ছেদ বলে।অ্যানাটমি, রেডিওলজি এবং মেডিসিনে তিনটি তল অহরহ ব্যবহার করা হয়। [৩]:৪
যে তল দ্বারা শরীরকে লম্বালম্বিভাবে ডান এবং বাম পাশে ভাগ করা যায়,তাকে স্যাজাইটাল তল বলে।এই তল সরাসরি শরীরের মাঝখান দিয়ে যায়,তবে তাকে মধ্যতল বা মিডিয়ান তল বলে।আর যদি এটি শরীরকে ডান ও বাম পাশে অসমানভাবে ভাগ করে,তবে তাকে প্যারাস্যাজাইটাল তল বলে। একে পার্শ্বতল বলা যায়।
যে তল দ্বারা শরীরকে সামনে এবং পিছনে ভাগ করা যায়,তাকে ফ্রন্টাল তল বলে।একে প্রায়ই করোনাল তল বলা হয়,যা ল্যাটিনcorona থেকে এসেছে,যার অর্থ মুকুট।এটি স্যাজাইটাল তলের সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণে অবস্থিত। একে অগ্রতল বা সম্মুখতল বলা যায়।
যে তল দ্বারা শরীরকে অনুভূমিকভাবে উপর এবং নিচের অংশে ভাগ করা যায়,তাকে আনুভূমিক তল বলে। এটি আড়াআড়িভাবে ভাগ করে বলে একে আড়তল বলা যায়। রেডিওলজি বা বিকিরণবিদ্যায় প্রায়শই একে এক্সিয়াল প্লেন বা অক্ষতল বলা হয়।
ফ্লেক্সন এবং এক্সটেনশন দ্বারা যথাক্রমে শরীরের একাধিক অংশের অন্তর্বর্তী কোণ হ্রাস (ফ্লেক্সন) বা ভাঁজ করা এবং বৃদ্ধি পাওয়া (এক্সটেনশন) বা মেলে ধরা বা প্রসারণ বুঝায়।উদাহরণস্বরূপ,দাঁড়ানোর সময় হাঁটু প্রসারিত বা এক্সটেনশন অবস্থায় থাকে। আর ডান হাতে ডান কান ধরলে কনুই ফ্লেক্সড বা ভাঁজ করা অবস্থায় থাকে।
অ্যাবডাকশন এবং অ্যাডাকশন দ্বারা কোন অংশকে শরীর থেকে দূরে (অ্যাবডাকশন) বা কাছে (অ্যাডাকশন) আনা বুঝায়।যেমন হাত পাশাপাশি নিচ থেকে উপরে উঠালে তাকে অ্যাবডাকশন বলে। পাশাপাশি অন্যের কাঁধে হাত রাখতে হলে বাহু অ্যাবডাক্ট করতে হবে, আর নিজের উরুপাশে হাতের তালু লাগাতে হলে অ্যাবডাক্ট করতে হবে।
অন্তর্মুখী ঘূর্ণন(বা মিডিয়াল রোটেশন) এবং বহির্মুখী ঘূর্ণন(বা ল্যাটেরাল রোটেশন) বলতে কোন অংশকে শরীরের ভেতরের দিকে (অন্ত) বা বাইরের দিকে (বহি) ঘূর্ণন বা মোচড়কে বুঝায়।
এলিভেশন বা উত্তোলন এবং ডিপ্রেশন বা অবতরণ বলতে শরীরের কোন অংশকে উপরে বা নিচে নামানো বুঝায়।উদাহরণস্বরূপ স্যালুট করার সময় বাহুকে অবশ্যই উত্তোলন করতে হবে।
এই পরিভাষাগুলি শুধুমাত্র হাত এবং পায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।[৪]:৫৯০–৭
ডর্সিফ্লেক্সন এবং প্ল্যান্টারফ্লেক্সন বলতে গোড়ালিতে পায়ের পাতার ফ্লেক্সন/সংকোচন (ডর্সিফ্লেক্সন) বা এক্সটেনশন/প্রসারণ (প্ল্যান্টারফ্লেক্সন) বুঝায়।যেমন,গাড়ি চালানোর সময় ব্রেকে পায়ের পাতার চাপ দেওয়াকে প্ল্যান্টারফ্লেক্সন বলে।
পামারফ্লেক্সন এবং ডর্সিফ্লেক্সন বলতে হাতের ফ্লেক্সন/সংকোচন (পামারফ্লেক্সন) বা এক্সটেনশন/প্রসারণ (ডর্সিফ্লেক্সন) বুঝায়।যেমন,প্রার্থনা করার সময় হাত ডর্সিফ্লেক্সনে থাকে।
প্রোনেশন এবং সুপাইনেশন বলতে অগ্রবাহুর অঙ্কদেশীয় (প্রোনেশন) বা পৃষ্ঠদেশীয় (সুপাইনেশন) ঘূর্ণনকে বুঝায়।যেমন,সাইকেল চালানোর সময় হ্যান্ডেল ধরতে একজন ব্যক্তির অগ্রবাহুকে অবশ্যই প্রোনেশন অবস্থায় রাখতে হবে। অর্থাৎ সুপাইনেশন মানে চিৎ করা, প্রোনেশন মানে উপুড় করা।
ইভার্শন এবং ইনভার্শন বলতে পায়ের পাতার ভিতর দিকে (ইনভার্শন) বা বাহির দিকে (ইভার্শন) ঘূর্ণনকে বুঝায়।
অ্যান্টেরোগ্রেড এবং রেট্রোগ্রেড প্রবাহ বলতে যথাক্রমে স্বাভাবিক(অ্যান্টেরোগ্রেড) সম্মুখবর্তী প্রবাহ এবং বিপরীতমুখী (রেট্রোগ্রেড) দিকে প্রবাহ হওয়াকে বুঝায়।
সারকামডাকশন বলতে শরীরের কোন অংশের বৃত্তাকার বা ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণন বুঝায়।যেমন ,বল এবং কোটর অস্থিসন্ধি বা চোখ।এমনতর সঞ্চালন ফ্লেক্সন,এক্সটেনশন,অ্যাবডাকশন,অ্যাডাকশন এর সমন্বয় বুঝায়।কব্জিতে হাতের বিভিন্ন দিকে ঘূর্ণন আরেকটি উদাহরণ।
অপজিশন- (থাবা) বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা এবং অন্যান্য আঙ্গুলের(বিশেষত কনিষ্ঠা) অগ্রভাগ স্পর্শ করা।
রিপজিশন- কোন বস্তুকে ধরা বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং অন্যান্য আঙ্গুল প্রসারিত করা।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Openstax Anatomy & Physiology নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑ কখগDrake, Richard L. (২০০৫)। Gray's anatomy for students (Pbk. সংস্করণ)। Philadelphia: Elsevier/Churchill Livingstone। আইএসবিএন978-0-443-06612-2।অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)