শাহ নওয়াজ ভুট্টো (উর্দু: شاہ نواز بهُٹو); (সিন্ধি: شھنواز ڀٽو) (১৮৮৮-১৯৫৭) সিআইই, ওবিই, ওবিআই জুনাগড় রাজ্যের দেওয়ান ছিলেন।
শাহ নওয়াজ ভুট্টো ব্রিটিশ ভারতের সিন্ধ অঞ্চলের এক রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা গুলাম মুর্তাজা ভুট্টো তাকে ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। শাহ নওয়াজ ভারতে ফিরে এসে জুনাগড় রাজ্যে নবাব তৃতীয় মহম্মদ মহবত খানজীর অধীনে প্রশাসনিক কাজে আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন। শাহ নওয়াজের উচ্চ শিক্ষা ও প্রতিভায় মুগ্ধ নবাব তাকে জুনাগড় রাজ্যের দেওয়ানের পদে উন্নীত করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে শাহ নওয়াজ সিন্ধ পিপলস পার্টি[২] প্রতিষ্ঠা করে পাকিস্তান আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশরা তাকে অর্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার, অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার, অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়া প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করেন।[৩]
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ পাশ হলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের জন্মের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশীয় রাজ্যগুলিকে এই দুই রাষ্ট্রে যোগ দেওয়া বা স্বাধীন থাকার মধ্যে একটি পথ বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়।[৪] তৃতীয় মহম্মদ মহবত খানজী ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে তার রাজ্যকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জুনাগড় রাজ্যে সামরিক অভিযানের পরিকল্পমা নিলে তিনি ২৪শে অক্টোবর সপরিবারে পাকিস্তান চলে যান। শাহ নওয়াজ ভুট্টো ২৭শে অক্টোবর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ও ২৮শে অক্টোবর পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের সচিন ইক্রমউল্লাহকে সাহায্যের অনুরোধ করে চিঠি পাঠান। ১লা নভেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী বাবারিয়াওয়াড় ও মাংরোল অধিকার করে নেয়। এই দিন ভুট্টো ভারতের তরফ থেকে সশস্ত্র আক্রমণের কথা উল্লেখ করে নবাবকে টেলিগ্রাম করেন। এর প্রত্যুত্তরে নবাব তাকে জুনাগড়ের মুসলিম জনগণের স্বার্থরক্ষা করার সমস্ত কর্তৃত্ব প্রদান করে টেলিগ্রাম পাঠান। ৫ই নভেম্বর জুনাগড় রাজ্য পরিষদ একটি সভায় ভুট্টোকে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার কর্তৃত্ব প্রদান করে। ভুট্টো ক্যাপ্টেন হার্ভে জনসন নামক মন্ত্রী পরিষদের একজন বরিষ্ঠ সদস্যকে ভারতীয় আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য রাজকোট পাঠান। ৭ই নভেম্বর জুনাগড় রাজ্য পরিষদের একটি সভায় স্থির হয় যে, ভারত সরকারকে জুনাগড় রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করার অনুরোধ করা হবে। সেই মতো ৮ই নভেম্বর, ভুট্টো জনসনকে রাজকোটে ভারত সরকারের প্রতিনিধি নীলম বুচের নিকট পাঠিয়ে জুনাগড়ে আইন শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের জন্য সহায়তার অনুরোধ করে পাকিস্তান চলে যান। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি আদেশনামায় লিখিত হয়, যেখানে দেওয়ান শাহ নওয়াজ ভুট্টোর অনুরোধে ভারত সরকার দ্বারা জুনাগড় অধিগ্রহণের ঘোষণা করা হয়। ৯ই নভেম্বর ভারতীয় সেনা সরদারগড় ও বন্তভা অধিকার করে নেয় এবং ভারতীয় আধিকারিকেরা জুনাগড় পৌঁছে রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[৫] ভুট্টো এরপর পাকিস্তানের লরকানা অঞ্চলে যান, যেখানে তাকে সরকারের তরফ থেকে বিপুল পরিমাণে জমি প্রদান করা হয়, যার ফলে তাঁর পরিবার সিন্ধ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ধনী রাজনৈতিক পরিবার হিসেবে পরিগণিত হতে শুরু করে।[২]
শাহ নওয়াজ ভুট্টো লখি বাঈ নামক এক হিন্দু রমণীকে বিবাহ করেন, যিনি বিবাহের পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে খুরশীদ বেগম নামগ্রহণ করেন।[৬] তাদের প্রথম পুত্র সিকন্দর ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাত বছর বয়সে মারা যান। দ্বিতীয় পুত্র ইমদাদ আলি ভুট্টো উনচল্লিশ বছর বয়সে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তৃতীয় পুত্র জুলফিকার আলী ভুট্টো পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।[১] এছাড়া শাহ নওয়াজ ও খুরশীদ বেগমের মুমতাজ নামে এক কন্যাসন্তান ছিল।[৭]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)