শিরকুহ | |||||
---|---|---|---|---|---|
উত্তরসূরি | সালাহউদ্দিন (উজির) | ||||
জন্ম | দাভিন, আর্মেনিয়া | ||||
| |||||
রাজবংশ | আইয়ুবীয় | ||||
পিতা | শাযি বিন মারওয়ান (কুর্দি গোত্রপ্রধান) | ||||
ধর্ম | ইসলাম |
আসাদউদ্দিন শেরেকোহ বিন শাজি (আরবি: أسد الدين شيركوه بن شاذي) (শুধু শেরেকোহ নামেও পরিচিত) (কুর্দি ভাষায় অর্থ "পর্বতের সিংহ") (মৃত্যু ২২ মার্চ ১১৬৯) ছিলেন একজন কুর্দি সামরিক কমান্ডার এবং সুলতান সালাহউদ্দিনের চাচা। মিশরে আইয়ুবীয়দের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে তার সামরিক ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
শিরকুহ আর্মেনিয়ার দাভিন শহরের নিকটে একটি কুর্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুর্দি শাসক শাজি ইবনে মারওয়ান তার পিতা। আইয়ুবীয় রাজবংশের প্রধান নাজমুদ্দিন আইয়ুব তার ভাই।[১] এই পরিবার শাদিদি রাজবংশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। ১১৩০ সালে দাভিনে শাদিদিরা ক্ষমতাচ্যুত হলে শাজি তার পরিবার নিয়ে প্রথমে বাগদাদ ও পরে তিকরিতে চলে যান। সেখানের আঞ্চলিক প্রশাসক বিহরুজ তাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। পিতার মৃত্যুর পর আইয়ুব তার স্থানলাভ করেন। ১১৩৮ সালে তিকরিতে বাগবিতন্ডার সময় শিরকুহর হাতে এক খ্রিষ্টান নিহত হলে তাদের দুই ভাই বহিষ্কৃত হন।[২] যেদিন তারা চলে যান তার ভাইপো সালাহউদ্দিন সেই রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তারা নুরউদ্দিন জেনগির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং শিরকুহ নুরউদ্দিন জেনগির অধীনে কাজ করা শুরু করেন। শিরকুহকে পরে হিমস, আর রাহবাসহ কিছু অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়।[৩] আইয়ুব প্রথমে বালবিক ও পরে দামেস্কের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। ১১৫৪ সালে নুরউদ্দিনের কাছে দামেস্কের আত্মসমর্পণে তারা দুই ভাই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।
১১৬৩ সালে মিশরের উজির শাওয়ার ফাতেমীয় উজিরের দায়িত্ব বিষয়ে তার ও দিরগামের মধ্যে সমস্যা নিরসনের জন্য নুরউদ্দিনকে আবেদন জানান। নুরউদ্দিন এসময় শিরকুহকে পাঠারান। এসময় তার ভাইপো সালাহউদ্দিন উপদেষ্টা হিসেবে তার সাথে যান। শাওয়ারকে পুনরায় দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং দিরগাম নিহত হন। কিন্তু শিরকুহর সাথে মতপার্থক্যের পর তিনি জেরুজালেমের প্রথম এমালরিকের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। ১১৬৪ সালে এমালরিক মিশরের দিকে অগ্রসর হয়ে বিলবাইসে শিরকুহকে অবরোধ করেন।[৪] পাল্টা আঘাত হিসেবে নুরউদ্দিন ক্রুসেডার রাজ্যসমূহে আক্রমণ করেন এবং এন্টিওক প্রায় দখল করে ফেলেন।
১১৬৭ সালে ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শিরকুহকে পুনরায় মিশরে ফিরিয়ে আনেন। শাওয়ার পুনরায় এমালরিকের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। এমালরিক আলেক্সান্দ্রিয়ায় শিরকুহকে অবরোধ করেন। শিরকুহ ফিরে যেতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কার্যকর ছিল। এমালরিক বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে এবং সম্পূর্ণরূপে মিশর দখলের পরিকল্পনা করেন। মিশরে থেকে যাওয়া ক্রুসেডারদের ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য শাওয়ার মিত্রতা বদল করে শিরকুহর সাথে হাত মেলান। মুসলিমদের সাথে ক্রুসেডারদের লড়াই হয়। ক্রুসেডাররা রসদের অভাবে মিশর জয় করতে পারেনি। ফলে তারা পিছু হটে।
ধর্মীয় কারণে শিরকুহ ও তার সহযোগীরা মিশরের অভিজাতদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন। ফাতেমীয় শাসকরা শিয়া হলেও মিশরের অধিকাংশ জনগণই ছিল সুন্নি মতাবলম্বী।[৫] ১১৬৯ সালের জানুয়ারিতে শিরকুহ কায়রোতে প্রবেশ করেন এবং অবিশ্বস্ততার জন্য শাওয়ারকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তিনি কায়রোয় পৌছালে খলিফা আল আদিদ তাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন।[৬] তাকে উজিরের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে শিরকুহ তার দুই মাস পরে ২২ মার্চ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
শিরকুহর মৃত্যুর পর তার ভাইপো সালাহউদ্দিন উজির হন। একইসাথে তিনি নুরউদ্দিনের উত্তরসুরি হয়েছিলেন। একারণে মিশর ও সিরিয়া একত্রীত হয় এবং তা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন থেকে ক্রুসেডারদের মূলোৎপাটনে সালাহউদ্দিনের জন্য সহায়ক হয়।