শুক্লাফাঁটা জাতীয় উদ্যান | |
---|---|
আইইউসিএন বিষয়শ্রেণী II (জাতীয় উদ্যান) | |
Rani Tal, a lake inside Shuklaphanta National Park | |
অবস্থান | নেপাল, প্রাদেশিক সংখ্যা ৭ |
নিকটবর্তী শহর | ভীম দত্ত |
স্থানাঙ্ক | ২৮°৫০′ উত্তর ৮০°১৪′ পূর্ব / ২৮.৮৪° উত্তর ৮০.২৩° পূর্ব |
আয়তন | ৩০৫ কিমি২ (১১৮ মা২) |
স্থাপিত | ১৯৭৬ বন্যপ্রাণী রিজার্ভ হিসাবে, ২০১৭ জাতীয় উদ্যান হিসাবে |
কর্তৃপক্ষ | জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ |
শুক্লাফাঁটা জাতীয় উদ্যান নেপালের সুদূর-পশ্চিমাঞ্চলে তরাই এর একটি সংরক্ষিত এলাকা, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৪ থেকে ১,৩৮৬ মি (৫৭১ থেকে ৪,৫৪৭ ফু) উপরে উন্মুক্ত তৃণভূমি, বনাঞ্চল, নদীগর্ভ ও ক্রান্তীয় জলাভূমির ৩০৫ বর্গ কিমি (১১৮ বর্গ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত। এটি ১৯৭৬ সালে রাজকীয় শুক্লাফান্টা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে সরকারী নথিভুক্ত হয়। সংরক্ষণ কেন্দ্রের একটি ছোট অংশ সিভালিক পাহাড়ে বন্যপ্রাণীদের মরশুমী প্রব্রজনের জন্য সংযোগ-স্থাপক পথ সৃষ্টি করার জন্য পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের উত্তর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। . শ্যালি নদী ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা, যা সংরক্ষণ কেন্দ্রের দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমানা নির্দেশ করে, তার দক্ষিণ দিকে গিয়ে সংরক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব সীমানা গঠন করে।
ভারতীয় বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র কিশানপুর বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থল এর দক্ষিণদিক ঘেঁষে অবস্থিত; এই ৪৩৯ বর্গ কিমি (১৬৯ বর্গ মাইল) শুক্লাফাঁটা-কিশানপুর নামক বাঘ সংরক্ষণ একক নির্দেশ করে, যা পাললিক তৃণভূমি এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্যাঁতসেঁতে পাতাঝরা বনাঞ্চলের ১.৮৯৭ বর্গ কিমি (০.৭৩২ বর্গ মাইল) খণ্ড জুড়ে অবস্থিত।
এই সংরক্ষিত এলাকাটি তরাই-ডুয়ার নিষ্পাদপ-প্রান্তর ও তৃণভূমি বাস্তু-অঞ্চলের একটি অংশ এবং সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত প্লাবন-তৃণভূমিগুলোর মধ্যে একটি। এটি তরাই-ধনু্র্সদৃশ ভূদৃশ্যের অন্তর্ভুক্ত।
এই এলাকাটি নেপালের শাসনকর্তাদের শিকারের প্রিয় ক্ষেত্র ছিল এবং ১৯৬৯ সালে রাজকীয় শিকারের জন্য সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭৩ সালে এই এলাকাটি রাজকীয় শুক্লাফাঁটা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে সরকারী নথিভুক্ত হয়, যা প্রাথমিকভাবে ১৫৫ বর্গ কিমি (৬০ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে ছিল এবং আশির দশকের শেষের দিকে এটি বর্তমান আকার ধারণ করে। ২০০৪ সালের মে মাসে ২৪৩.৫ বর্গ কিমি (৯৪ বর্গ মাইল) সংরক্ষিত এলাকা এতে যুক্ত হয়। ২০১৭ সালে এই সংরক্ষিত এলাকাটির মর্যাদা জাতীয় উদ্যানে পরিবর্তিত হয়।
শুক্লাফাঁটা নামটি সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে অবস্থিত তৃণভূমিগুলোর একটি থেকে নেয়া হয়েছে। শুক্লাফান্টা নামক মূল তৃণভূমিটি নেপালের সবথেকে বড় অবিচ্ছিন্ন এক টুকরো জমি, যা ১৬ বর্গ কিমি (৬.২ বর্গ মাইল) জুড়ে অবস্থিত।
শুক্লাফাঁটা জাতীয় উদ্যানের বনগুলো এককালে প্রাচীন রাজ্যের স্থান ছিল। এখনো সেখানে সেই রাজ্যের ধ্বংসস্তূপ কিছু জায়গায় দেখা যায়। সংরক্ষিত এলাকার ভিতরে একটি হ্রদ, রাণী তালের কাছে এখনো একটি ইটের ঘের আছে, যা পরিধিতে ১,৫০০ মি (৫৯,০০০ ইঞ্চি)। এটিকে স্থানীয়রা থারু রাজা সিংপাল এর দুর্গের অবশেষ হিসেবে ধারণা করে।
এই অঞ্চলটি উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত এবং এখানে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে প্রতিবছর ১,৫৭৯ মিমি (৬২.২ ইঞ্চি) ও আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারী এই শীতের মাসগুলো বেশ ঠাণ্ডা এবং দিনের সময় তাপমাত্রা ৭–১২ °সে (৪৫–৫৪ °ফা) থাকে এবং মাঝে মাঝে হিমও হয়। ফেব্রুয়ারি থেক তারপর তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে মার্চের দিকে ২৫ °সে (৭৭ °ফা) পর্যন্ত হয় এবং এপ্রিলের শেষের দিকে ৪২ °সে (১০৮ °ফা) এ পৌঁছায়। মে মাসে যখন অঞ্চলটিতে প্রাক-বর্ষাকালীন মেঘ পৌঁছায়, তখন আর্দ্রতা বাড়তে থাকে।
উদ্যানটিতে প্রায় ৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদকূল রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫৩ প্রজাতির সংবহনতান্ত্রিক উদ্ভিদ, ১৮ প্রজাতির টেরিডোফাইট, ৪১০ প্রজাতির দ্বিবীজপত্রী ও ১২৫ প্রজাতির একবীজপত্রী উদ্ভিদ রয়েছে।[১] সংরক্ষণকেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক উদ্ভিদ তৃণভূমির অন্তর্গত। প্রধান প্রধান ঘাসের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে Imperata cylindrical এবং Heteropogon contortus. নলখাগড়া(Phragmites karka) এবং Saccharum spontaneum সাতটি ছোট হ্রদের আশেপাশের জলাভূমিতে জন্মে। সবচেয়ে বেশি পাওয়া বনাঞ্চল হচ্ছে শাল। খয়ের ও শিশু নদীগুলোর পাশে জন্মে। তৃণভূমিতে বড় গাছপালা ও গুল্মচারার অনধিকার প্রবেশ প্রধান ঔষধি গাছসমূহের অস্তিত্বের জন্য বিশাল হুমকি। বড় গাছগুলো তাদের নিচে বাড়তে থাকা ঘাসগুলোকে পরিপূর্ণ হতে দেয় না।, বিশেষ করে সেগুলোকে যাদের বেশি সূর্যালোক লাগে। গাছের বীজগুলো তৃণভূমির সর্বত্র ছড়িয়ে যায় এবং সাধারণত বিদ্যমান গাছগুলোর কাছেই অঙ্কুরিত হয়। উপরন্তু, বড় গাছগুলো ছায়াপ্রিয় ঘাসের বৃদ্ধি ঘটতে সাহায্য করে। এই ধরনের পরম্পরা তৃণভূমিকে সময়ের সাথে বড় গাছের জঙ্গলে রুপান্তর করে।[২]