শৈশবকালীন লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা' (CGN) হচ্ছে শিশুদের বয়সন্ধিকালের পূর্বে দেখা যাওয়া এমন একটি বৈশিষ্ট্যের প্রদর্শন করাকে বুঝায়; যা সেই সমাজে আশা করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ একটি ছেলে শিশু জন্মের পর বেড়ে উঠার সময়ে কেমন আচরণ করবে; তা নিয়ে সমাজে একটা অলিখিত বা লিখিত মনস্তাত্ত্বিক ধারা থাকে, যার দরূণ আশা করা হয়, ছেলে শিশুটিও ঠিক সেরূপ আচরণ করবে। কিন্তু যদি সে আশানূরুপ আচরণ না করে বা বিপরীত লিঙ্গের ন্যায় আচরণ করে, তবে সে বৈশিষ্ট্যকে শৈশবকালীন লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা বলে অভিহিত করা হয়।[১] সাধারণত এই ধরনের বৈশিষ্ট্য যারা দেখায়; তাদের মধ্যে বেশান্তর, জন্মগত লিঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে (যেমন ছেলেদের জন্য সংস্কৃতি নির্ধারিত খেলায় অংশগ্রহণ না করা) এবং বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীদের সাথে খেলার জন্য তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার মত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
প্রচুর সংখ্যক গবেষণা থেকে এই বিষয়টি উঠে এসেছে যে, যে সব মানুষেরা নিজেদের কে সমকামী হিসেবে মনে করেন তারা যখন ছোট ছিলেন বাল্যকালে তারা নিজেদের লিঙ্গ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতেন।[২][৩][৪] চিকিৎসকেরা বিষয়টির চিকিৎসা করা যাবে কী যাবে না; বা গেলেও তার চিকিৎসা কেমন হবে; তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। একটি গবেষণা মতে শৈশবকালীন লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা বিষয়টি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়।[৪]
শিশুদের মধ্যকার লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা বিভিন্ন রূপে দেখা যায়, যা থেকে বুঝা যায়, শিশুটি কার্যত কোন লিঙ্গকে প্রতিনিধিত্ব করে।[৫]
যেসব সমকামী পুরুষে শৈশবে লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা দেখা যায় তারা সমকামী নারীর তুলনায় মানসিক মর্মপীড়ায় বেশি ভুগেন বলে গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। এই গবেষণার পরিধি বিষমকামী পুরুষ ও নারীতেও বিস্তৃত করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, যৌন জীবনে বিষমকামী হওয়া পুরুষের যদি শৈশবে লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা দেখা গিয়ে থাকে; তবে তারা বিষমকামী নারীর তুলনায় বেশি মানসিক যাতায় ভুগেন।[৬] এই গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, যৌন অভিমুখিতা কোন প্রকার বিবেচ্য না হয়েই শৈশবকালীন লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা নারীর তুলনায় পুরুষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।[৬] এর অন্যতম কারণ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী। সমাজে নারীর মধ্যে পুরুষোচিত আচরণকে অনেকসময় মেনে নেওয়া হলেও পুরুষের মধ্যে নারীসুলভ আচরণকে সমাজ সাধারণত তীব্রভাবে নিরুৎসাহিত করে। এর ফলে শৈশবে ছেলে শিশু লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা দেখালে সমাজের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তার মনস্তত্ত্বে দাগ ফেলে দেয়; যা তার পরবর্তী জীবনে মানসিক মর্মপীড়ার অন্যতম কারণ হয়।[৬][৭]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Lippa 2008 684–93
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি