শোভাবাজার | |
---|---|
কলকাতা অঞ্চল | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৫′৪৬″ উত্তর ৮৮°২১′৫৫″ পূর্ব / ২২.৫৯৬১১° উত্তর ৮৮.৩৬৫২৮° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
জেলা | কলকাতা |
মেট্রো লাইন ১ | শোভাবাজার-সুতানুটি |
সিটি কর্পোরেশন | কলকাতা পৌরসংস্থা |
কলকাতা পৌরসংস্থা ওয়ার্ড | ৯, ১৭, ১৮, ২০ |
উচ্চতা | ৩৬ ফুট (১১ মিটার) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | For population see linked KMC ward pages |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+০৫:৩০) |
এলাকা কোড | +৯২ ৩৩ |
লোকসভা নির্বাচনক্ষেত্র | উত্তর কলকাতা |
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র | শ্যামপুকুর |
শোভাবাজার (ইংরেজি: Shovabazar) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা জেলার অন্তর্গত উত্তর কলকাতার একটি অঞ্চল।
সুতানুটিতে প্রথম বসতি স্থাপনকারী ছিলেন সপ্তগ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শেঠ ও বসাক এবং তারা এই এলাকার বেশিরভাগ জঙ্গল পরিষ্কার করিয়ে ছিলেন। বসাকেদের গৃহদেবতা শ্যাম রায়ের(কৃষ্ণ) নাম অনুসারে পার্শ্ববর্তী এলাকার নাম শ্যামবাজার রাখা হয়। শোভারাম বসাক ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর কলকাতার এক বিশিষ্ট বাঙালি ধনী ব্যবসায়ী।[১] রামচরণ দেব মেদিনীপুর জঙ্গলে বর্গীদের( মারাঠা ডাকাতের) হাতে নিহত হলে তার বিধবা স্ত্রী তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের গোবিন্দপুরের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেই বাড়িটিও হুগলী নদীর গর্ভে যায়। তারা আড়পুলিতে আসেন, সেখান থেকে সুতানুটির শোভাবাজারে। ছোট ছেলে নবকৃষ্ণ মায়ের উত্সাহে ইংরেজি, ফারসি ও আরবি শিখে ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারসি শিক্ষক নিযুক্ত হন। পরে মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব বিখ্যাত ও প্রতিপত্তিশালী হন।[২]। ব্রিটিশদের পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর তাদের গোবিন্দপুরের বুকে নতুন ফোর্ট উইলিয়াম গড়ে তোলার সিদ্ধান্তের পর শোভাবাজারের মহিমান্বিত দিনগুলি শুরু হয়। গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এবং তালতলা, কুমোরটুলী ও শোভাবাজার এলাকায় জমি প্রদান করা হয়। [৩]
মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজারে শোভাবাজার রাজবাড়ি (প্রাসাদ) নির্মাণ করেন। অনেকে মনে করেন তিনি শোভারাম বসাকের থেকে এটা নেন এবং জাঁকজমক ও বিশালতার জন্য তার পছন্দ মিলিয়ে এটিকে বাড়িয়ে তৈরী করেন।[২] তিনি সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর রামচাদ রায়, আমীর বেগ ও মীরজাফরের সঙ্গে গোপন কোষাগার থেকে আট কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ অর্জন করেছিলেন।[৪]
মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব আপার চিতপুর রোড (এখন রবীন্দ্র সরণি) থেকে আপার সার্কুলার রোড (এখন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড) পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন এবং স্বনামে নামকরণ করেছিলেন। যাইহোক, রাস্তার অর্ধেক গ্রে স্ট্রীটের (এখন অরবিন্দ সরণি) সঙ্গে মিলে যায়, অন্য অর্ধেক শোভবাজার স্ট্রিট হয়ে যায়। এর উত্তরের রাস্তা রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট নামকরণ করা হয়।[১]
দেব পরিবারের মধ্যে যাঁদের নামে রাস্তা হয়েছিল তারা হলেন: রাজা গোপী মোহন দেব, রাজা স্যার রাধাকান্ত দেব, রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ, রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ, রাজা দেবেন্দ্র নারায়ণ (দত্তক পক্ষ), রাজা রাজ কৃষ্ণ, রাজা কালী কৃষ্ণদেব বাহাদুর[৫] মহারাজ কমল কৃষ্ণ, মহারাজা বাহাদুর, স্যার নরেন্দ্র কৃষ্ণ, এবং রাজা বাহাদুর হরেন্দ্র কৃষ্ণ (নিজের পক্ষ)।[১]
শোভাবাজার, কলকাতা পৌরসংস্থার ৯ নং ওয়ার্ডে বিস্তৃত এবং এর উত্তরে বাগবাজার, পূর্বে শ্যামবাজার, দক্ষিণে নিমতলা এবং পশ্চিমে হুগলী নদী।[৬]
১৭৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ির মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গা পূজা শুরু করেন। তিনি পূজার জন্য একটি ধারা তৈরি করেন যা কলকাতার উঠতি বণিক শ্রেণির মধ্যে একটি রেওয়াজ এবং আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। পারিবারিক দুর্গা পূজায় যোগদানকারী ইংরেজদের সংখ্যা প্রতিপত্তির একটি সূচক হয়ে ওঠে। ধার্মিক সঙ্কোচ দুরে সরিয়ে রাখা হয়। নর্তকীরা বেশিরভাগই মুসলিম ঘরানার থেকে ছিল। ইংরেজরা নর্তকীদের সাথে নাচে অংশগ্রহণ করতেন, উইলসন হোটেল থেকে আনা গরু এবং শুয়োরের মাংসর সাথে ভোজন করতেন এবং তাদের হৃদয়ের তৃপ্তি অনুযায়ী আকণ্ঠ পান করতেন।[৭]
শোভাবাজার দুর্গা পূজা কাছাকাছি দুটি বাড়ীতে দুই ভাগে বিভক্ত, কিন্তু পূজাগুলি তাদের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের সঙ্গে বিরাজমান। একটি রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দত্তক পুত্রের বংশধরদের, অন্যটি তার নিজের বংশধরদের। পুজাদুটি বর্তমানে বড় বাড়ীর পূজা ও ছোট বাড়ীর পূজা নামে বিখ্যাত। এখানে কার্তিক ইংরেজদের মত পাতলুন পরিহিত। বেশীরভাগ দুর্গাপুজায় গণেশ দেবতা প্রথাগত ধুতি চাদর পরিহিত হতেন, কিন্তু শোভাবাজারে তিনি জগৎ শেঠের মারোয়াড়ি পূর্বপুরুষদের দ্বারা পূজিত একটি মূর্তি এবং দুর্গামুর্তি মুঘল বা অবধের নবাবদের শৈলীতে নির্মিত গহনা পরিহিত ছিলেন।[৮] আগের দিনে নিধু বাবু ও অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এবং ভোলা ময়রার মত কবিয়ালরা নর্তকী এবং বাইজীদের সঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন।[৯] ঐতিহ্য অনুসারে শোভাবাজার রাজবাড়ীর অ-ব্রাহ্মণ পৃষ্ঠপোষকগণের, দেবীকে কোন রকম অন্নভোগ বা চালের নির্মিত কোন ভোগ দেওয়ার অনুমতি ছিলনা, তারা দেবীকে গৃহে নির্মিত মিষ্টি ভোগ দিতেন। গত ২৫০ বছর ধরে, বর্ধমান থেকে হালুইকর (ঐতিহ্যবাহী ময়রা) প্রজন্ম শোভাবাজার রাজবাড়ীতে আসেন এবং লোভনীয় জিবেগজা, খাজা এবং নিমকি তৈরি করেন।[১০]
শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় যোগদানের পর স্বামী বিবেকানন্দকে শোভাবাজার রাজবাড়ির দালানে নাগরিক অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। [৯]
শোভাবাজার রাজবাড়ি কলকাতা পৌরসংস্থা দ্বারা ঐতিহ্য ভবন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।[১১]
দেব পরিবার ছাড়াও, ভাগ্যকুলের রায় পরিবার এবং নট্য পরিবার (যাত্রার অগ্রদূত) আশপাশের বেশিরভাগ স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে অবদান দিয়েছেন। নট্টদের পুতুলবাড়ী (মূর্তি ঘর) পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ ছিল। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শোভাবাজার ক্লাবটি এখনও ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে এবং তরুণ প্রজন্মকে তাদের মূল শাখায় সংযুক্ত রাখে।[৯]
উইকিভ্রমণ থেকে শোভাবাজার ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।